মার্ক্সবাদের প্রথম সোনার ফসল হলো ``মে দিবস”বা (Laber day) অথবা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।আর দ্বিতীয়টি হলো দেশে দেশে স্বাধিনতার বিপ্লব।আর তৃতীয়টি হলো বিংশ সতাব্দীতে সমগ্র বিশ্বকে নাড়া দিয়ে বিশ্বের ২৮টা দেশ স্বসস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে শ্রেণী সংগ্রাম ও সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট হিসেবে ঘোষনা।যদিও স্বৈরতন্ত্রের কবলে পড়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্টা পরবর্তিতে লক্ষচ্যুত হয়ে পড়ে।
আমরা সবাই কমবেশি জানি মে দিবসের ইতহাস।এই দিবসটি কোন আনন্দ বা খুশির দিবস নয়,এই দিবসটি একটি মর্মান্তিক শোকাবহ দিবস। ১৮৮৬ সালে মে মাসের তিন কিংবা চার তারিখে , আমেরিকার শিকাগো শহরের ``হে মার্কেট এর সামনে সাধারন শ্রমিকের বুকে পুলিশের বর্বরোচিত ব্রাশফায়ারে হতাহত শ্রমিকের রক্তে রঞ্জিত হয় এই দিবসটি।
ফ্রেড্রিক এঙ্গেলস |
* কেন কি অপরাধ করেছিল তারা?
* কেন পুলিশ অতর্কিতে গুলি চালিয়েছিল নিরীহ নিরপরাধী শ্রমিকের বুকে?
* কেনই বা তারা সেদিন মিছিল করার সাহস ফেল?
* কে তাদেরকে উসকে দিয়ে, উদ্ভোদ্ধ করেছিল ন্যয্য পাওনা আদায়ের জন্য।
* দুনিয়ার মজদুর এক হও” বিশ্বকে একবার নাড়া দেওয়া এই মহিনী মন্ত্রের প্রবক্তা কে?
* প্রলেতারীয়েত কারা?
* সাম্যবাদ কি?
* সমাজতন্ত্র কি?
* সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা কে ছিলেন?
* কার্লমাক্স কে ছিলেন?
* কমিনিষ্ট শব্দের অর্থ কি?
* কমরেড কাকে বলে?
* সামরাজ্যবাদ কাকে বলে?
* সামন্তবাদ কাকে বলে?
* ঐতিহাসিক দ্বান্দিক বস্তুবাদ কাকে বলে?
* কমিনিষ্ট এবং কমিনিউজম কাকে বলে?
এই সব প্রশ্নের উত্তর ছোট করেও দেওয়া যায়,আবার বিচার বিশ্লেসন করে অনেক বড় করেও দেওয়া যায়।বিস্তারিত জানতে হলে আমাদেরকে যেতে হবে আরো অনেক গভিরে।যেতে হবে মানব সভ্যতার ইতিহাসে ও।আমি সে দিকে আপাতত না গিয়ে এখানে শুধু মে দিবসের ব্যাপারে কিছু লিখছি।
ছোট করে উত্তর দিলে এমন হয়, সেদিন হাজার হাজার শ্রমিক সমবেত হয়ে নিত্য ৮ঘন্টা কাজের এবং ন্যয্য বেতনের দাবিতে সাদা পতাকা হাতে করে শান্তিপুর্ন মিছিল লয়ে আমেরিকার শিকাগো শহরে অবস্হিত ,তখনকার বিখ্যাত, হে মার্কেটের সামনে জড়ো হতেই পুলিশ অতর্কিতে নির্বিচারে গুলি চালালে সাথে সাথে ১১, ১২ জন শ্রমিক নিহত হয়, এবং আহত হয় অসংখ্য শ্রমিক, আবার এরেস্টও হয় ১৫ জন।তন্মধ্যে পরবর্তিতে বিচার করে উন্মুক্ত স্হানে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় আরো ৫ জনকে, আবার বন্দি অবস্হায় ও একজন আত্মহত্যা করে। বাদ বাঁকিদেরকে ১০, ১৫,বছরের করে ভিবিন্ন মেয়াদের সাজা দেওয়া হলেও ১৯৯৩ সালের দিকে এসে বিশ্বব্যপি প্রচুর গন দাবির কাছে পদানত করে মার্কিনি সরকার সবাইকে বেকসুর খালাস করে দিতে বাদ্য হয়।
সেদিন শ্রমিকের হাতে শান্তির প্রতিক সাদা পতাকা তাদের রক্তে ভিজে লাল হয়ে যায়। অতচ পরিতাপের বিষয়, তৎকালিন মার্কিনি সরকার একদিনের তো দুরের কথা এক মিনিটের জন্য ও শোক পালন করে নাই।আন্তর্জাতিক ভাবেও কোন প্রতিষ্টান কোন উদ্যেগ গ্রহন করে নাই।
সেদিন সমগ্র বিশ্বের শ্রমজিবী মানুষের আপন জন, যিনি ভালবেসে যাদেরকে ডাকতেন প্রলেতারিয়েত,যিনি সাজতন্ত্রের প্রবক্তা, যার অমোঘ বাণী, দুনিয়ার মজদুর এক হও, তে সারা বিশ্বের কুঠি কুঠি শ্রমিক উজ্জিবিত হতো, মেহনতি মানুষের নয়ন মনি সেই মহামতি কার্ল মাক্স সেদিন জিবীত ছিলেন না।
কিন্তূ তিনি জিবিত না থাকলে কি হবে, তিনি তো জিবিত থাকা কালেই কমিনিষ্ট পার্টির ইশতেহার প্রকাশ করে ১৮৫০, ৬০ এর দশকেই দেশে দেশে শ্রমিকদেরকে তাঁর মাক্সবাদি আদর্শে উজ্জিবিত করে তোলেন। সেই থেকেই দিকে দিকে তারা তাদের ন্যয্য দাবি আদায়ের লক্ষে সংগঠিত হতে থাকে।আস্তে আস্তে শ্রমিকরা বুঝতে পারে, গুটি কয়েক বণিক আর মালিক মিলে তাদেরকে ঝোঁকের মত শোষন করে যাচ্ছে।তাত্বিক দিক দিয়ে মার্ক্স বাদই তাদের আদর্শ হয়ে উঠে।
শ্রমিকদের এই সংঘঠিত হওয়া ও দাবিকে তৎকালিন নব্য সামরাজ্য বাদি রাষ্ট আমেরিকা ও তার গুরু ইউরোপের সামরাজ্যবাদি এবং রাজতন্ত্র শাসিত রাষ্ট গুলি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তারা শ্রমিকের ন্যয্য দাবিকে অশ্বিকার করে অন্যায় দাবি হিসেবে আখ্যা দিতে থাকে। তারা দোষারোপ করতে থাকে মাক্সবাদি বিপ্লবিদেরকে।বণিক, মালিক,বুর্জোয়া, পেটি বুর্জ্যুয়া, পুঁজিপতি, সামরাজ্যবাদি, সামন্তবাদি, নৈরাজ্যবাদি, মৌলবাদি আর স্বৈরতন্ত্রিবাদি দুষ্ট চক্ররা উঠে পড়ে লাগে দুনিয়ার মজদুর খেত মজুর ও মেহনতি মানুষের অকৃতিম বন্ধু মাক্সবাদি বিপ্লবিদেরকে ধমন পিড়ন এবং হত্যা করতে।তারা সন্মিলিত ভাবে না জেনে শুনে না বুঝে মাক্সবাদিদেরকে নাস্তিক বলে প্রচারনা প্রপাগান্ডা করতে থাকে।সমস্ত মানব কল্যানের একমাত্র বৈজ্ঞানিক মতবাদ ও সমাধান সমাজতন্ত্র এর মতবাদ বা ব্যবস্হাকে তারা নাস্তিকের মতবাদ বলতে থাকে।কমিনিষ্ট বলতে তারা টেঁডা ত্রিসূল কিংবা বল্লম সাদৃশ্য কোন জগন্য কিছুকে বুঝতে থাকে।কমরেড বলতে তারা কোন দস্যু কিংবা ডাকাতকেই বুঝে।দ্বান্দিক বস্তুবাদ কি জিনিস তারা বুঝতেই চায় না।না বুঝে শুনেই তারা দেশে দেশে হাজার হাজার কমরেডদেরকে গোপনে এবং বন্ধিখানায়ও নির্মম ভাবে হত্যা করতে থাকে।
গনতন্ত্র আর ধর্মের মুখোশ পরে সামরাজ্য আর সামন্তবাদিরা প্রভূর মত বছরের পর বছর যুগের পর যুগ এমন কি সতাব্দীর পর সতাব্দী ধরে দুনিয়ার মজদুরকে পদনত করে রেখেছিল।তারা মানুষকে কৃতদাস আর পন্যতে পরিনত করে ব্যবহার করতো। আফ্রিকান অনেক জাতিকে তার স্বজাতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে জবরদস্তি মানব বলে চালিত নৌকার পাটাতনে বেঁধে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে দুই আমেরিকা কন্টিনেন্টে নিয়ে কঙ্কালসার মানুষকে দু চার ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দিত।আর মালিকরা তো বছরের পর বছর বিনা মজুরিতে এমন কি ঠিক মতপেট পুরে খাবার না দিয়ে দৈনিক ১৪ থেকে ১৮ ঘন্টা অমানুষিক খাটাতো।সে সময় আমেরোপার মানুষ বর্বরের চেয়েও বর্বর জাতি ছিল।মানবতা তো দুরের কথা তাদের মধ্যে মনুষ্যবোধ বলতে ও কিছু ছিলনা।তারা মানুষের মাঝে বর্ণবাদ বৈশম্য সৃষ্টি করে ভয়ানক রুপ ধারন করেছিল।কথায় কথায় তারা গুলি চালাতো কালো কৃতদাস কিংবা সাধারণ শ্রমিকের উপর।
কার্লমাক্সের আবির্ভাবের পর ঐ সব মুখোশ পরা স্যাটারদের ঘৃন্য মুখোশ খশে পড়ে গেল।সামরাজ্যবাদি আর সামন্তবাদিদেরকে বিলাসিতা ও বাল্যখিল্য পরিত্যগ করে নিজ দেশের খুপড়িতে পিরে যেতে বাদ্য হলো।আর মৌলবাদি এবং বুর্জ্যুয়া পুঁজিপতিদের গালে পড়ল চপেটাঘাত।অবশেষে তাদের গনতন্ত্রই গনতন্ত্রের কাছে হুমকি স্বরুপ হয়ে দেখা দিল। কারণ খুন গুম ধর্ষন ধর পাকর ভয়ভিতী বল প্রয়োগ করে কোন দিন গনতন্ত্র হয় না।আগে বাঁচতে হবে পাবলিক, তার পরে রিপাবলিক, তার পরে গিয়ে ডেমোক্রেটিক।
১৮৭৭ সালে সালে প্রথমবারের মত শ্রমিকরা একবার রেলপথ অবরোধ করে বসে। সেদিনও পুলিশ এবং ইউ এস আর্মি যৌতভাবে তাদের উপর বর্বরোচিত আক্রমন চালায়।সেখানেও অনেক শ্রমিক হতাহত হয়।
১৮৮০ সালের দিকে এসে শ্রমিকরা কোদ উত্তর আমেরিকাতে সর্ব প্রথম প্রতিষ্টা করে Federation of Orgenized, TRDADES and Labor union of the united states and Canada.
আবার ১৮৮৬ সালে এসে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, American Federation of Labor.
এই সংঘঠনের মাধ্যমেই সেদিন শুধু শিকাগো শহরেই ৪০ হাজার শ্রমিক কাজ পেলে রাস্তায় নেমে এসে তারা জড়ো হয়েছিল।
কার্ল মাক্সের বিশিষ্ট বন্ধু, ফ্রেডরিক এঙ্গেলস দিনটি স্মরনীয় করার জন্য বিশ্বব্যপি আওয়াজ তুলেন, এবং তিনিই সর্ব প্রথম মে দিবসকে আন্তর্জাতিক ভাবে পালনের প্রস্তাব দেন। তারি নেতৃত্বে সারা বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে উঠে।অবশেষে ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপনের সময় প্যারিসে ২য় আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে সর্বসন্মতিক্রমে রেমন্ড লাভিনে দিনটিকে মে দিবস হিসেবে বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করার জন্য ঘোষনা করেন।
আজ সমগ্র বিশ্বে জাতি ধর্ম বর্ণ দল মত নির্বিশেষে মে দিবস উদযাপিত হয়।শতাধিক দেশে রাষ্টিয়ভাবেও মে দিবস পালিত হয়।কিন্তূ একটি প্রশ্ন থেকে যায়, বিশ্ব ভিবেকের কাছেে আজো কি সর্বস্তরে ৮ ঘন্টা শ্রম বাদ্যতামুলক করা হয়েছে?
আজো দেখি শ্রমিক ১০, ১২ ঘন্টা কলে কারখানায় কাজ করে।আমার সহকর্মিরা প্রতিদিন গড়ে ১০ ঘন্টা কাজ করে।
আসুন এবারের মে দিবসে আমরা পহেলা মে-তে আত্মাহুতি দেওয়া শ্রকিদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধায় মাথ নত করে একটি একটি করে লাল গোলাপ রেখে সপত করে বলি জয় হউক মেহনতি মানুষের , জয় হউক আমাদের,অমর হউক মহান মে দিবস।
অমর হউক মে দিবস |
--------- মোহাম্মেদ ফারুক, জার্মানি,