Thursday, March 4, 2021

,,নূর গ্রহ”


                                                                                    







                              ,,নূর গ্রহ”
                                     ----বাই নুর হোসেন ফারুক,





আমার কথাঃ--এই গল্পটা বাস্তব ও সত্য ঘটনা অবলম্বনে  লিখা শুরু করছি।মূলত সৃতিচারন মূলক,ঘটনাবলির
আবতারনা করছি,পুরোটাই জীবন থেকে নেওয়া।এই পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের জীবনটাই একটা গল্প, ইংরেজ সাহিত্যিক সেক্সপিয়ার বলেছেন পৃথিবীটা একটা রঙ্গমঞ্চ, আর মানুষের জীবনটা এক একটা নাটক।আসলেও তাই।নাটক সিনেমার প্রতিটি স্ক্রিপ্ট মানুষের জীবন থেকেই নেওয়া। কেউ লিখে দেখে কেউ লিখে শুনে আর কেউ লিখে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেে।আমার শিশু ও শৈশব কালের প্রত্যক্ষ দেখা এবং অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত ঘটনাবলিই লিখলাম।লেখার জন্য ও একটা পাকা হাতের দরকার।সাথে সাথে একটা স্পর্শকাতর মনেরও দরকার। চাইলেই যে কেউ লিখতে পারেনা।কাঁচা হাতে একটা দ্বায়বদ্ধতা থেকে লিখেছি।কেমন হলো তার বিচার পাটকের হাতে।

-----নুর হোসেন ফারুক,

  







                                                         (এক)

ত্রিশ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সে মেয়েটির নাম ছিল নূর গ্রহ। 

আমাদের এই হরিৎ পৃথিবীকে আমরা কেউ আদর করে ডাকি নীল গ্রহ, আবার কেউ ডাকি বিশ্ব, কেউ ডাকি পৃথিবী কেউ ডাকি বসুমতি বসুন্ধরা ইত্যাদি কত কত নামে।

বিগব্যাং থিউরিতে বলে মহা বিস্ফোরনের ফলে প্রথমে হাইড্রোজেন গ্যাস পরে হিলিয়াম গ্যাস থেকে প্রথমে নক্ষত্র তার পরে গ্রহ উপগ্রহ চাঁদ সুরুজ ও সকল জীবের বাসস্হান আমাদের এই পৃথিবীর সৃষ্টি। যাক সেটা অন্য প্রসঙ্গ।আমরা আগে শুধু নূর গ্রহের ব্যপারে কিছু শুনবো।

ঠিক তেমনি মেয়েটির বাবা-মা তার নাম ওরিয়েন্টেরি স্টাইলে রাখলেও আমি তার বাংলা নাম দিয়েছি নূর গ্রহ”বা নুরের দেশ।

 তার ও নাম এখুনি বলছিনা কারণ, না জানি বদনাম হয়ে যায় কিনা।অবশ্যই তার আসল নাম বলবো একটু পরে।এখন থেকে সুবিধার্থে  নূর গ্রহ মেয়েটিকে  আমি সংখেপে ডাকবো নোরা বলে।

মাত্র মাস কয়েক আগে বিবাহিত  নাদুস নুদুস  চেহারার উজ্জল শ্যামলা বর্ণের মেয়েটি প্রথম বারের মত পিত্রালয়ে নায়রি হিসেবে এসে হঠাৎ করে পাগলপনা শুরু করে দিল। এর কারণ কি? কেন মেয়েটি পাগল হয়ে গেল?পুরো বাড়ির মানুষেরা সবাই হতবাক!

 তখন আমি নিতান্তই কোলের ন্যাংটা শিশু।বাড়ির বড়দের কোল বুক পিট ছিল তখন আমার দুদন্ড শান্তির ঠিকানা ।

সৃষ্টির উৎসয়ের নামই হলো সৃষ্টিকর্তা।আমরা যাকে আল্লাহ বা ভগবান বলে থাকি।বহুগুনের অধিকারিকেই ভগবান বলা হয়।আল্লাহ পাক এই পৃথিবীর সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন বড়ই নিখুঁত ভাবে।নবী মোহাম্মদের অনবদ্য সৃষ্টির নামই আল্লাহ।ইলাহ থেকেই নাকি আল্লাহ নামের উৎপত্তি।আর ইলাহ নাকি বাক্কা শরিফের ৩৬০ মুর্তির প্রধান টির নাম।আল্লাহ নামের অর্থও হলো সর্বশক্তিবান, তিনি ইলাহার ও বড় কেউ বা বড় স্বত্বা।সে যাই হউক, আল্লাহ আছেন কিবা নাই মানব কুলে সংশয় বা দ্বিধা থাকতে পারে, কিন্তু মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করি।  আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে বিন্দুমাত্র ভূলভ্রান্তি ধরার ক্ষমতা কোন মানুষের নেই।আল্লাহ মানুষকে সেই ক্ষমতা দেননি।

এই বিশাল কিশ্ব ভ্রম্মান্ডের বিরাট সৃষ্টির মাঝে একজন মানুষ খুদ্র থেকে অতি খুদ্রাকার একটি অনুকণা মাত্র। যা অনুুবিক্ষন যন্ত্র দ্বারা দেখাও কষ্ট সাদ্য।  তবুও মানুষের অহঙ্কার হয় ভয়ঙ্কর।  

ইংরেজিতে একটি কথা প্রচলিত আছে, নো বডি ইজ পারপেক্ট।সেটা বলার প্রয়োজন নেই । জীবন চলার মাঝে শিক্ষিত কিংবা সাধু পন্ডিত প্রতিটি মানুষই ভূলভ্রান্তি করে থাকে।অথবা নিজের অজান্তেই ভূল হয়ে যায়।ভূল থেকেই মানুষ শিখে।

পৃথিবীতে নিখুঁত কোন মানুষ নেই নিখুঁত কোন পরিবার নেই, নিখুঁত কোন প্রেম ভালোবাসা নেই, নিখুঁত কোন সম্পর্ক নেই, নিখুঁত কোন সংসার নেই।স্বচ্ছতাহীন গোলা পানিতে প্রতিনিয়ত আমরা শুধু হাবুডুবু খাচ্ছি।এটাই নিত্য সত্য।সুতরাং এই সব নিয়ে অযথা হা হুতোস দুঃখ ব্যদনা বা কষ্ট পাওয়ার কোন মানে হয় না।এই পৃথিবীতে মানুষ বাঁচে শুধু একবারই।বাঁচতে হলে ওসব মন মস্তিস্কো থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।

মহান আল্লাহ পাক মানুষকে তিনটি অসিম ক্ষমতা বা শক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সেটা হলো, এক, সৃতিশক্তি, দুই, কল্পনা শক্তি, তিন বুদ্ধিমত্বা শক্তি।

এই তিনটি শক্তির উৎসহক্ষেত্র হলো মানুষের মন।ইংরেজিতে যাকে বলে মাইন্ড।মনকে আবার দুভাগে ভাগ করা হয়, যেমন কনসেন্স মাইন্ড, এবং আনকনসেন্স মাইন্ড, যাকে বাংলায় বলে অবচেতন  এবং চেতন মন।এই পৃথিবীতে মানব জাতির নয়নোভিরাম দৃষ্টি নন্দন সকল অনবদ্য সৃষ্টির প্রথম খসড়া স্হল হলো মানুষের মন মস্তিষ্কো।কত শতবার ড্রাপ ড্রয়িং কাটাচেড়ার খসড়া প্রথম হয়েছে মানুষের মন মস্তিষ্কে।মানুষের মস্তিষ্কের আবর্জনা দিয়ে এই পৃথিবীকে দশ লক্ষ কুটিবার ডেকে দেওয়া যাবে।হয়তো বা তারও বেশি।

কি হে বন্ধু  কি ভাবছো? শুধু  কি এক বারেই  এই স্কাই লাইনের উঁচেল দালান গুলো সৃষ্টি হয়েছে? এই টুইন টাওয়ার সিয়ার্স টাওয়ার এই এম্পেয়ার বিল্ডিং, পেট্রোনাস টাওয়ার বুর্জ খালিফা, আইফেল টাওয়ার, এই মক্কা মদিনার প্রথম খসড়া তৈরিও হয়েছে মানুষের মন মস্তিষ্কেই।

কৃষকের মস্তিষ্কের আবর্জনা যদিও গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়, কিন্তু এই যুগের রাজনীতিবিদ শিক্ষাবিদ বুদ্ধিজীবিদের মস্তিষ্কের আবর্জনা কুকুর শুকুরের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যায় না। তবু ওদের দাম্ভিকতার কমতি নেই।

 সে নোরা নামের পাগলি মেয়েটির তান্ডবে যখন বড় বাড়ির বড় রা সবাই আতঙ্কগ্রস্হ। পৌষের জাপরানি সকালটাকে যখন ভয়াবহ ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছিল, তখন এই আমি সেই দানবি মেয়েটির কোলে  বসে দিব্যি দেখছি পরিস্হিতি এবং দুরের দিগন্ত আর পারিপার্শিক পানোরমাকে।

সেদিন মেয়েটির পাগলপনায় আমার শিশুতোস সৃতিশক্তিকে শান দিয়ে আরো তীব্র ধারালো করে তুলেছে।সেই ধারালো সৃতির খঞ্জরে প্রতিনিয়ত আমি কেটেকুটে তছনছ হচ্ছি বিদায় নিঃশেষ হবার পূর্বে এই লেখার প্রয়াস করছি।কোন প্রকার প্রতারণা বা কল্পকাহিনী নয়। বাস্তব একটি সত্যনিষ্ট ঘটনা।

নোরা মেয়েটির কাছে আমি চির ঋনি ও চির কৃতজ্ঞ।এ কথা মু খুলে আমি কোনদিন তাকে বলতে পারিনি। কোথায়? সেই নোরা নামের মেয়েটি আজ কোথায়? ত্রিশ বছর হয়ে গেল সে আজও নিরুদ্দেশে লাফাত্তা ! স্বামি সংসার সন্তান চেড়ে সে আজ কোথায়? আমি হন্যে হয়ে খুজছি তাকে পৃথিবীর পথে পথে, নূর গ্রহে গ্রহে!

তার এতিম সন্তানদের এই বলে এখনো আশ্বস্ত করছি যে তোমাদের মা এখনো বেঁচে আছে।শিঘ্রই তোমাদের মা তোমাদের কাছে পিরে আসবে। তোমরা কেউ কেঁদনা এতিমের মত।যদি না আসে আমি শিগ্রই তোমাদেরকে নিয়ে যাব তোমাদের মায়ের কাছে।ওরা দিশেহারা হতাশ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। দুচোখ তাদের মোটা মোটা জলে চল চল।

রাষ্ট্রহীন দেশের নাগরিকদের মাঝে যেই বেদে বা বানজারান ভাব পরিলক্ষিত হয়।নোরার  সন্তানদের মাঝে সেই বৈদিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট আজ সুস্পষ্ট।নোয়াখাইল্যা ভাষায় একটি প্রবাদ আছে, চেঁইরইয়া গুনের বেঁইরইয়া লাদা, অনেকটা সেই রকম। ধরাকে তারা সরা মনে করে না।অনৈতিক কাজেই তারা সদা লিপ্ত।বিদ্যা বুদ্ধিতে তাদেরকে কিছুতেই বুঝানো যাচ্ছেনা।তারা হলো কেউ আধা পাগল কেউ হলো পুরো পাগল।একজন তো এখন মাইজদীর নামী দামী চৌদ্দ নাম্বার ভূয়া সংবাদিক।আরেকজন প্রতারক কবিরাজ।আরেকজন এখানে ওখানে গুরে বেড়ায়।আরেকজন সন্ত্রাসী বনেছে।নব্য সন্ত্রাসী!

সত্য বলার পক্ষে এই আমাকে তারা কেন সত্রু ভাবছে ভেবেই কুল পাচ্ছি না।আমি তো তাদের হক আদায় করে দেওয়ার জন্য স্বস্ফূর্ত প্রত্যয়ে এক পাঁয়ে খাড়া।তাদের মত এই পৃথিবীতে আমিও তো বড়ই একা অসহায়, এতিম।তারা যে রকম মাকে হারিয়েছে, বাবাকে হারিয়েছে, আমি ও তো ঠিক সে রকম বাবা মাকে হারিয়েছি।সাথে হারিয়েছি একজন বড় বোনকে। তাদের থেকে একজন বেশি।এই নশ্বর পৃথিবীতে তারা যেমনি খালি হাতে এসেছে, আমিও ঠিক তেমনিই এসেছি।আবার সবাই খালি হাতেই চলে যাব।এটাই নিত্য সত্য।


                                                          (দুই)

নোরার তখনও কোন সন্তানাদি হয়নি।

তার  চাচাতো বোন মাতৃ বিয়োগ রাজিয়ার বিয়েতে তাকে বিশেষ ভাবে স্বামীসহ নায়রি আনা হয়েছিল।বিশেষ নায়রি বলছি এই কারণে নোরা মেয়েটি ভালো নাচতে এবং গাইতে পারতো।তাছাড়া নোরা এবং রাজিয়া প্রায় সম বয়সি ছিল।   রাজিয়ার ঘরে তখন সৎ মা।রাজিয়া ও তার এক ভাইকে রেখে তার মা হঠাৎ করে মারা যান।সেটাও ছিল এক রহস্য জনক ঘটনা।

রাজিয়ার আপন মা ছিলেন আবার নোরার মায়ের আপন মামাতো বোন।নোরার মা-ই ওকালতি করে দেবরের কাছে তাঁকে বিযে দিয়েছিলেন।নোরার মায়ের আরেক মামাতো বোন নোরাকে ওকালতি করে তাঁর দেবরের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। নোরার সেই স্বামীর নাম ছিল শাহ আলম।তিনি এন এস আই তে চাকুরি করতেন। পরবর্তিতে প্রমোশন পেয়ে অফিসার ও হয়েছেন।তাদের বাড়িটা ছিল বর্তমান মাইজদী বাজারের ঠিক উত্তর দিকের বাড়িটা। মজিদ হাজির বাড়ি নামে খ্যাত।

মজিদ হাজি ও চৌধুরী মিঞা, তারা ছিলেন দু সহোদর। সহোদর হলেও তাদের দুজনের গায়ের রঙ ছিল আলাদা।মজিদ হাজি ছিলেন সুন্দর ফর্সা,আর চৌধুরী মিঞা ছিলেন কালো বর্ণের দেখতে মাড়য়ারিদের মত। নোরার স্বশুরের নাম ছিল চৌধুরি মিঞা।চৌধুরি মিঞার  ছিল দু সংসার। প্রথম সংসারের একমাত্র সন্তান ছিল নোরার স্বামী শাহ আলাম।শাহ আলমের মা একটু সিদা সাদা  টাইপের ছিল বিদায় চৌধুরি মিঞা অন্য একটি বিয়ে করে আসামে পাড়ি জমান।সিদা সাদা একটু ভোলাবালা হলেও যতদুর জেনেছি তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলা।

প্রচুর ধন সম্পদ জায়গা জমিনের মালিক থাকা সত্বেও চৌধুরি মিঞা সব কিছু ছেড়ে কেন আসাম চলে গেলেন তা আজো আমার বোধগম্য নয়।এই চোধুরী মিঞা দীর্ঘ চব্বিশ বছর পর আসাম থেকে ছয় সাতটা ছেলে মেয়ে নিয়ে একদিন হঠাৎ করে বাড়ি ফিরে এসে কি সুন্দর নোরার দুর্বিণীত জীবনকে দুর্বীসহ করে তুললো। তার সংসারকে ভেঙে তছনছ করে দিল।সে ব্যপারে বলবো ঘটনা প্রসঙ্গে সামনের দিকে।

চৌধুরি মিঞার প্রথম সংসারে একমাত্র ছেলে শাহ আলম পিতার অনুপুস্হিতে এত ধন সম্পদ রেখে কেনই বা পুলিশের চাকুরিতে যোগ দিলেন, সেটাও আমার আজো বোধগম্য হয়নি।কথাই বলে না কারো বুঝ কারো তরমুজ।

নোরার ছিল সুখি সংসার।বাগান ভর্তি ছিল হরেক রকম ফলপ্রুটের গাছ গাছালি, খেত ভরা ছিল সোনার ফসল।জায়গা জমিন বর্গা দিয়ে যে আধা ফসল ঘরে তুলতো, তাও বিক্র করে দিতে হতো, খাবার লোক ছিলনা।ঘরে রাখার জায়গা ছিলনা।  হঠাৎ করে নোরার জীবনে নেমে এল দুর্বীসহ দুঃসময়।

হাসি খুশি সুখ সাচ্ছন্ধ্যে ভরা ছিল নোরার সংসার।লাবণ্য এবং মাধুর্যময়ি নোরার  স্বামীটাও ছিল  মাটির মানুষ।দুজন মানুষের জুড়ি যেন বিধাতা স্বয়ং বেঁধে দিয়েছেন।আজো আমার হৃদয় দর্পনে ভেসে উঠে তাদের যুগোল ছবি।কি অদ্ভুত অসাধারণ মানুষ ছিলেন দুজনই। শৈশবে আমাকে দুজনই কি অসম্ভোব ভালোবাসতেন, আদর স্নেহ করতেন, চকলেট বিস্কুট কিনে দিতেন।তাদের কথা মনে করে এই মূহুর্ত্যে আমার চোখের জলে সমগ্র পৃথিবী কেমন যেন ঝাপসা ঝাপসা হয়ে উঠেছে। দুর দিগন্তে কিছুই ঠাওর করতে পারছিনা।

অতচ আমার সেই ভালোবাসার মানুষ দুজনকেই আমি বড় হয়ে নিজ হাতে মেরেছি।বার বার অপমান করেছি। ভীষনভাবে মেরেছি।সেই কথা মনে করে আমার এই পাপিষ্ট হাত দুটিকে কেটে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কেন মেরেছি সেই প্রশ্নের উত্তর দেব পরে ধর্য্য ধরুন প্রিয় পাটক  অগ্রাহ্য করবেন না প্লিজ। এমন ঘটনা আপনার জীবনেও ঘটতে পারে হয় তো বা ঘটেছেও?

নোরা অত্যান্ত ভালো মেয়ে। সুস্রি ভদ্র নম্র, লাবণ্য বলতে যা বুঝায়, সব গুনাবলিই তার মধ্যে ছিল। সারা রাত রাজিয়াদের ঘরে নাচগান খাওয়া দাওয়া করে হটাৎ করে সকাল বেলায় পুরো বাড়ির উঠোন ঝাড়ু দিতে দিতে সবাইকে গালিগালাজ করতে লাগলো, আবার কাউকে কাউকে লাঠিসোটা হাতে মারতে দৌড়া্চ্ছে।মাঝে মধ্যে নাচছে গাইছেও। বাড়ির বড়রা সবাই আতঙ্কিত এবং হতবাক!

আমার আতঙ্কটা কান্নায় রুপ নিল।আমি কাঁদছি ভয়ে শাহসে, সে কি ভয়ঙ্কর কান্না। সেই শিশু আমাকে পাগলি মেয়ে নোরা কোলে তুলে আদর করতে লাগলো। আমার দুগালে ঠোঁটে কপোলে সে কি আদরের চুম্বন।অতি আদরে আমি বিরক্তি বোধ করছি। কিন্তু কি করার।পাগলি মেয়ে আমাকে গলা টিপে মারতেও পারে, আবার আচারও মারতে পারে।অনেক দিন পরে মায়া নামে আরেকটি কোলের শিশুকে নোরা আছার মেরেছেও।পাগলরা হয়ও ভয়ঙ্কর!

বাড়ির সবাই কিংকর্ত্যব্যবিমূঢ়! কি হলো রাজিয়ার বিয়েতে তো আরো অনেক বেটি বৈতালি নায়রি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিল। কারোরই কিছু হলো না অতচ নোরা কেন এমন করছে?কি হলো নোরার?

 সবার চোখে মুখে একি প্রশ্ন।  সবাই কহাবলা করছে। কেউ বলছে ভূতে পাইছে, কেউ বলছে জ্বীনে, আবার কেউ বলছে পরীতে পাইছে নোরাকে।আবার কেউ বলছে রাজিয়ার সৎ মা হিংসা করে সিলের গোশতো খাওয়ায়ে দিয়েছে। কেউ বলছে ধুতরার ফুল খাওয়ায়ে দিয়েছে কেউ বলছে গোটা। ধুতরার ফুল আর গোটা খেলে নাকি মানুষ পাগল হয়ে যায়।ওসব আমার কিছুই জানা নেই।মানুষ কহাবলা করছে।নোরার কথা কেউ সৃতিচারন করতে গেলে আজো মানুষ বলে রাজিয়ার সৎ মা কিছু খাওয়ায়ে দিয়েছে।আল্লাহ মালুম!

নোরা পাগল প্রলাপ বকছে এই বলে, তোদের এখানে বড় বড় দীঘি হবে, খাল হবে রাস্তা হবে গারদ হবে ইত্যাদি।আবার এই ও বলছে তোদের সবাইকে আমি বাদশা বানিয়ে দেব।ছলি এ আমাকে টাকার পাতিল সোনা গয়নার বড় বড় সাতটা পাতিল সাধছে। আমাকে বলছে বাদশা বলে।বলছে তোকে আমি বাদশা বানিয়ে দেব। তোকে দেব সাত রাজার ধন। তুই হবি বিরাট বড় বাদশা।কান্দিস ক্যারে তুই। তুই হবি সাত মুল্লকের বাদশা, হাঃ! হাঃ ইত্যাদি।

নোরার পরে মা ও আমাকে এক সময় বাদশা বাদশা বলে ডাকতে শুরু করেছিলেন।

 দেখতে দেখতে  পাগলি মেয়ে নোরার প্রতিটি কথাই অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সত্যিও বাস্তবে প্রতিপলিত হলো। 

 উন্নিশ সাতষট্টি কিংবা আটষট্টি সনের দিকের কথা।উত্থাল পাত্তাল তখন অখন্ড পুর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশ।সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালী বাঙ্গালীর পথের দিশারী হয়ে প্রমিউথিউসের মত আবির্ভাব হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান।পাকিস্তানী বর্বরদের দুঃশাসন বাঙ্গালী কোন ভাবে মেনে নিতে পারছেনা।নবজাগরণে নব চেতনায় নব উদ্যোমে বাঙ্গালী এককাট্টা।স্বাধীনতা স্বাধীনতা! হয় জান না হয় মায়ের মান! রাখবো ইনশাল্লাহ।

অখন্ড পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ূব খান ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের উন্নতির লক্ষে নানা প্রকার কর্মযজ্ঞ শুরু করে দিল।সাথে সাথে নানা ফন্দিফিকিরও শুরু করে দিলেন।তিনি বেসিক ডেমোক্রেসি বা মৌলিক গনতন্ত্র নামে গনতন্ত্রের একটি নতুন সংজ্ঞাও উপস্হাপন করলেন।

  সে সময় মাইজদী শহরে একটি জেলখানা পুলিশ লাইন থাকা সত্বেও পশ্চিম মাইজদীর মানুষের চৌদ্দ পুরুষের ভিটে মাটি এবং ফসলি জমিন নামে মাত্রে মূল্যে হুকুম দখল করে নতুন করে জেল খানা পুলিশ লাইন হাসপাতালের নির্মান কাজ শুরু করে দিলেন।অবোধ নির্বোদের মত গ্রাম বাসী চুপ থাকলো।বাপ দাদার ভিটে মাটি চেড়ে গাট্টিগোট্টা বেঁধে উদ্ভাস্তুর মত অন্যত্র চলে গেল।এক বাড়ির মানুষ একশ বাড়িতে ভিবক্ত হলো। অনেকটা পাক ভারতের বিভাজনের মত।যে ভিবাজনে নাকি দশ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল।উদ্ভাস্তু হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ।জাতীয় নেতাদের মাঝে নূন্যতম দুরদর্শিতা ও প্রজ্ঞা বলতে কিছুই ছিলনা। কি নেহুরু, কি জিন্না, কি গান্ধি!  উন্নতি এবং সভ্যতার আড়ালে এটাই বুঝি বর্বরতার বহিপ্রকাশ।

সে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ।ইয়া বড় খাল ইয়া বড় দীঘি, ইয়া বড় রাস্তা ঘাট গারদ বড় বড় ইমারত দালান কোঠা। মাইজদীর মানুষ এই প্রথম বারের মত দেখছে।প্রতিদিন হাজার হাজার মাঠিয়াল পিপড়ারর মত দল বেঁধে এসে মাটি কাটছে। প্রসাড়িত হলো মাইজদী শহর।

তা- হলে নোরা মেয়েটি কি গায়বি কিছু জানতো? তা না হলে কিভাবে নোরার অগ্রিম বলা সব কথা সত্য হলো? হয়তো বা জানে।অনেকে এও নিয়ে কহা বলা করছে।

 প্রায় এক ধরনের  রাতারতি সব কিছু তৈরি হয়ে গেল।অনেকটা উড়ো দীঘির মত। বেগম গঞ্জের বানাবাড়িয়া নামে গ্রামে একটা বিশাল উড়ো দিঘী আছে।ফাঁকা জায়গায় দিনে মানুষ গরু চরায়ে গেল, পরদিন গরু চরাতে এসে দেখে সেখানে বিরাট একটা  দিঘী হয়ে  গেছে।পাহাড়ের মত উঁচু উঁচু দীঘির পাড়।রাতাতি হয়েছে বিদায় সে দীঘির নাম হলো উড়ো দীঘি।কল্প কাহিনীর মত হলেও আমার নানার বাড়ির দক্ষিন পাশে দীঘিটা নিজ চোখে দেখা হলেও  মা এবং মামার মুখে শুনা কথা। 

সে উড়ো দীঘির চারিপাশের পাড় নাকি পাহাড়ের মত উঁচো উঁচো ছিল।জঙ্গলও বড় বড় গাছালিতে ভরা ছিল। সেখানে নাকি বাঘ হরিনও থাকতো। উড়ো  দীঘির পশ্চিম পাশে একটা বাঘবাড়ি আছে। একবার নাকি বিশাল একটা বাঘ এসে ঐ বাড়িতে ডুকে লঙ্কাকান্ড ঘটিয়ে দিয়েছে।বাড়ির পোষা কুকুর বিড়াল মেরে খেয়েছে, পরে হাতি নিয়ে মাউত এসে নাকি বাঘটাকে তাড়িয়েছে। সেই থেকে ঐ বাড়িটার নাম হয়ে গেল বাঘবাড়ি।

নোরার বাবা  নুর ফরিন শীপে চাকুরি করতেন। তিনি বিদেশ থেকে মোটা মোটা জাহাজের নোঙর বাঁধা রশি এনে রেখেছেন ঘরে। সেই রশি দিয়ে প্রতিরাত নোরাকে বেঁধে রাখা হতো নির্জন কক্ষে।কিন্তু নীশি রাতে সেই মোটা রশির বাঁধন খুলে তার বাবার বিদেশ থেকে আনা নাম খচিত কাশের বদনা নিয়ে বাহির হয়ে যেত। সকাল বেলায় দুর দুরান্ত কোন নির্জন বাগান কিংবা কোন এলাকা থেকে নোরাকে খুজে ধরে আনা হতো।দেখা যেত সে মনের আনন্দে গান করছে। আর সবাই কহা বলা করতো, কোন জ্বীন কিংবা পরি এসে তার বাঁধন খুলে তাকে নিয়ে গেছে।এমন মোটা শক্ত রশি কোন ভাবেই নোরার পক্ষে খোলা সম্ভব নয়।কিন্তু খুললো কি ভাবে, সকালে সবাই অবাক হতো! 

ধরে আনার সময়  নিঃষ্পাপ নোরার মুখে তখনো সুরেলা কন্ঠে গান শুনা যেত, নাচের বান করতো।আবল তাবল বকলেও তাতে ছিল বিকশিত দুরদর্শি জ্ঞান প্রজ্ঞা।পাগলের প্রলাপ ছিল না কোন মতে।

নোরাকে নিয়ে নোরার মা বাবা পড়লো ভীষন বিপদে।চাকুরিজীবি স্বামী তো তাকে এমন অবস্হায় বাপের বাড়ি রেখে চলে গেলেন কর্ম ক্ষেত্রে।মেয়েরা অবশ্যই মা-বাবার কাছে ভোজা নয়।বড় ভোজা হলো নোরার পাগলপনা।

এ যুগের মেয়েরা অবশ্যই মা-বাবার উপর ভয়ানক ভোজা হয়ে আবির্ভাব হয়। প্রথমে মা বাবাকে না জানিয়ে টাকা পয়সা গয়না পাতি নিয়ে কোন বখাটের হাত ধরে ভাগে। পরে দু চারটা ইয়াজুজ মিয়াজুজ সাথে নিয়ে কখনও বা বেকার স্বামীকে নিয়ে বিরাট ভোজা হয়ে বাবার কাঁধে চেপে বসে।অনেক মেয়ে আবার বিয়ের আগেই পেট লাগায়ে কুলের মুখে কালি মাখে।তাদেরকে নাকি বলে কুলাঙ্গার।

নোরা মেয়েটির নামে কোন গিবত বা তেমন কোন দুর্নাম শুনা যায়নি, তবে কোন এক মাস্টার নাকি নোরাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল।নোরার বাবা মা রাজি হয়নি ছেলে গরিব বিদায়।হয়তো বা সে মাস্টার তাবিজ তুমার করে নোরার খতি করতে পারে।  নোরার মা ছিলেন মফস্বলের গুনবতি সুশিক্ষিত পর্দানশীল বুজর্গ একজন মহিশী নারী।তিনি বাংলা আরবি লেখাপড়া জানতেন।নোরাকেও তিনি লেখা পড়া শিখিয়েছেন নিজ দায়িত্বে।শুধু প্রচলিত বা প্রথাগত শিক্ষা নয়, তিনি নোরাকে ন্যায় নৈতিকতা শিখিয়েছেন। আজকালকার মেয়েদের কথা আলাদা।

নোরার পাগলপনা জানাজানি হয়ে গেল দুরবর্তি দশ গ্রামে।নোরার বাবার বাড়ির সামনে দিয়ে সরকারি রাস্তা দিয়ে লোকজন শহরের দিকে যায় আসে।সবাই খানিক দাঁড়ায়ে নোরার তামাসা দেখে।কহাবলা করে আয় হায় রে, অমুকের মেয়েটা পাগল হয়ে গেল। অনেকে নোরার বাবাকে ডেকে পরামর্শ দেন অমুক জায়গায় ভালো একটা খোনার আছে, তমুক জায়গায় ভালো একটা কবিরাজ আছে।আপনার মেয়েকে ভালো করে দিবে। ইনশাআল্লাহ ! আপনার মেয়ে ভালো হয়ে যাবে।চিন্তা করেন না, ইত্যাদি।

বিদেশ ফেরত মোটাসোটা সন্মানি ব্যক্তি  নোরার বাবা যে যেমনি বলতো, তেমনি শুনতেন।মেয়ের জন্য  টাকা পয়সা খরচ করতে কার্পন্য করতেন না। হন্যে হয়ে ছুটে যেতেন খোনার খলিফা কবিরাজের কাছে। নিয়ে আসতেন বাড়ি।কেউ বলতো জ্বিনে ধরছে, সুতরাং জ্বীনের হাজিরা মিলাতে হবে।কেউ বলছে পরীতে ধরেছে, পরী তাড়াতে হবে। কেউ বলছে, আপনাদের কেউ ভালো চায় না তাই কেউ দুষমনি করে ভোঁজ পাতায় তাবিজ করেছে, তাবিজ নষ্ট করতে হবে।নোয়াখালির প্রত্যান্ত অঞ্চলে এমন কোন খোনার খলিফা কবিরাজ বাদ ছিলনা, নোরার বাবা যে আনেনি।টিবরা মগা চাকমা এমন কি ভারতের ভেনারসের কবিরাজ ও আনা হয়েছে নোরার জন্যে।কিছুতেই নোরা ভালো হচ্ছে না। 

অসহায় নোরার বাবা যে বাবার ভবতা দিয়ে নোরাকে এত ভালোবাসতেন, তা পৃথিবীর সকল বাবার জন্য অনুকরনিয় ও বাস্তব দৃষ্টান্ত। আজ ভাবছি মেয়েরা  বাবার ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে স্বামীর বাড়িতে যাবার কারণেই বুঝি এত কাঁদে। 

খোনার খলিফা ঝাঁড়ফুক তাবিজ তুমার বানর টিয়া পাখির গননা,হাত দেখা কবিরাজি যে বাংলাদেশে বিরাট এক ভন্ডামি ও প্রতারনা সেটা আমি শিশুকাল থেকেই দেখে এসছি।বড় হয়ে এসব ভন্ড প্রতারককে আমি নিজ হাতে মেরেছি। সেটাও বলবো আগে। শুনে অবশ্যই মজা পাবেন।

প্রায় দুবছর চললো এভাবে নোরার পাগলপনা।কিছুতেই নোরা ভালো হচ্ছেনা।জানাশুনা নোয়াখালির এমন কোন খোনার খলিফা নোরাকে ভালো করতে পারলোনা।নোরার স্বামী শাহ আলম ও এসে আদর যত্ন ভালোবাসা দিয়ে চেষ্টা করেছে কিছুতেই নোরা ভালো হচ্ছে না।  নোরার মা প্রবিত্র কোরআনের আয়াত দিয়ে দোয়া গাঞ্জল আরশ পড়ে ঝাড়ফুক দিয়ে চেষ্টা করেছে কিছুতেই নোরা ভালো হলোনা।

 নোরাও দিন দিন ভীষন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।  একদিন নোরাকে গা গোছল করায়ে তার মা তার লম্বা লম্বা চুলে নাড়িকেল তেল মেকে বেলি কেটে দিচ্ছিল।সে সময় বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে কাপড়ের থলি কাঁধে করে বয়োষ্কো একজন লোক যাচ্ছিলেন। হটাৎ দৃষ্টি গোছর হতেই নোরা দৌড়ে গিয়ে লোকটিকে ঝাঁপটে ধরে বললো, তুমি আমার বাবা। তুমিই আমাকে ভালো করতে পারবে।আমাকে ভালো করে দাও বাবা।আমি আর পারছিনা। সবকিছু অসহ্য লাগছে।

একেবারে লোকটিকে ধরে আমাদের কাছারি ঘরে নিয়ে এলো।অনেক মানুষ জড়ো হয়ে লোকটিকে গিরে ধরে দাঁড়ালো।আগুন্তক লোকটি বুজর্গ লোকের মত কাছারি ঘরে একটা হাতাওলা চ্যায়ারে বসে শান্তশিস্ট ভাবে  মৃদু হেসে বললো, হ হ বেটি আমি তোর বাবা, আমি তোকে ভালো করতে এসেছি। আল্লাহর রহমতে তুই ভালো হয়ে যাবি।ভাবিস না তুই।

লোকটির অবয়ব যে এখনো আমার হৃদয়পটে ভাসছে। বয়স সত্তরের কম হবেনা।চুল দাঁড়ি সব সফেত, গলায় দু রঙের দুটা তসবি ঝুলানো।   অপরিচিত লোকটি তার থলি থেকে কিছু কিছমিস বাহির করে নোরাকে খেতে দিল। নোরা আলাথালু করে খেতে লাগলো।তারপর লোকটি পুনরায় থলি থেকে একটা সরিসার তেলের শিশি বাহির করে মুখে ঠোঁট নাড়িয়ে কি যেন বড় বড় করে পড়ে ফুঁ দিয়ে নোরার মাথায় মেখে আদর করে তার মাথায় হাত বুলায়ে দিল।

বৃদ্ধের এই সব যেন চুম্বকের মত কাজ করলো। সাথে সাথে নোরার বিহেবিতে পরিবর্তন এসে গেল।কথা বার্তায় চেহারায় মাধুর্য ফিরে এল। শুনতে আজগুবি লাগলেও এটাই বাস্তব সত্য। দশ গ্রামের খোনার খলিফা কবিরাজ তাবিজ তুমার দিয়ে যে নোরাকে ভালো করতে পারলো না।সেই নোরাকে আগুন্তক এই বুড়ো কি ভাবে নোরাকে কয়েক মুহুর্ত্যের মধ্যে এ ভাবে ভালো করে দিবে।নোরার মত একটি পাগলি মেয়ে জানলোই বা কি করে। অপরিচিত কোন পথিকের ঝুলিতে কিছমিস থাকবে, সরিসার তৈল থাকবে, তাকে ভালো করে দিতে পারবে, সেটা আজও এক বিশ্ময়!

 বেশ কিছুক্ষন পরে লোকটি যাবার সময় নোরাকে আশ্বস্ত করে বললো,  তোকে দেখতে আমি আবার আসবো।মা তুই ভালো থাকিস।আল্লা হাফেজ বলে চলে গেল।আমরা সবাই  লোকটির চলে যাবার দিকে অপলকে চেয়ে রলাম বেশ কিছুক্ষন।লোকটি কি আল্লাহর প্রেরিত কোন বান্ধা ছিলেন, ভাবছি মনে মনে।


                                                                 ( তিন)

আমি তখন সবে মাত্র স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি।

ইলেস্টিকওলা হাপফেন্ট পরি।ইংলিশ হাপপেন্ট তখনও আসেনি। মাঝেমধ্যে লুঙ্গিও পরি বাড়িতে। দিন দিন দুরন্ত হয়ে উঠছি।বাড়ির আশেপাশের গাছগাছালির ফলমুল পেড়ে খাই।শালিক ঘুঘুর ছানা নিয়ে পুষতে থাকি।ঘাঁস ফরিং এর পোঁধে দাঁড়া ডুকায়ে ছেড়ে দিয়ে আনন্দ করি। সকাল বেলায় কেউটের ভয় উপেক্ষা করে ফুল তুলি।বর্ষার দিনে কদম ফুল পাড়ি গাছে উঠে।একটা শিশুর বেড়ে উঠার প্রথম সাত বৎসর নাকি বিশেষ গুরত্বপুর্ন।যেই ঝক্কি ঝামেলার মধ্যে আমার জীবনের প্রথম সাত বছরকে আমি উপভোগ করেছি মৌমাছির মত।তা আজ এক কথায় অতুলনিয়।

দেশে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলো।শুরু হলো প্রতিরোধের মুক্তি যুদ্ধ।চারিদিকে আগুনের কুন্ডলির ধোঁয়া আর বোমার বিকট শব্দে প্রকম্পিত।সবার চোখে মুখে আতঙ্ক দৃষ্যমান।যে যেদিকে পারছে গাট্টিগোট্টা গুটায়ে বাড়ির দামী জিনিস  আসবাব পত্র  ফেলে পালাচ্ছে শ্যামল বাংলার স্নিগ্ধ বৈচিত্রময় গ্রামের বাগবাগিছা কিংবা খেতের আঁকা বাঁকা শিঁতিকাটা কনিছা সরু পথ ধরে।

আমরাও মা-বাবা ভাইবোন সবার মত গণ্হব্যহীন গ্রামের দিকে ছুটতে লাগলাম।সঙ্গে চিরা মুড়ি চাল ডালের গাট্টি। সাথে তরুনি দুজন বোন শিশু মায়াসহ আমরা ভাইবোন সাত জন, মা বাবা সহ নয়জন। প্রথমে লক্ষ ছিল বানাবাড়িয়া নানার বাড়িতে গিয়ে উঠবো।নানার বাড়ি মাইজদী থেকে ছয়সাত কিলো মিটার দুর হবে, তাই অনিরাপদ ভেবে মা-বাবা দুজনে সিদ্ধান্ত নিলেন, না- নানার বাড়িতে থাকা যাবেনা। সবাইকে নিয়ে যাওয়া হবে আলাদি নগর ্ছোট খালার বাড়িতে।

রাজগঞ্জ বাজারের উত্তরে মাইজদী থেকে প্রায় দশ বার কিঃমিঃ দুর হবে আলাদি নগর।চষা খেতের সুকনো ছাকা ভেঙে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মা-বাবা আমাদেরকে নিয়ে তপুরা খালার বাড়িতে উঠলেন।আসার পথে মা বারবার বলছেন।আমার দেলু নুরির কি হবে।হে আল্লাহ তুমি তাদেরকে হেফাজত করো।

বাবা আশ্বস্ত করে বললেন, অত চিন্তা করোনা। ওদের কিছুই হবেনা, আল্লাহ ভরসা।নোরার বড় বোনের নাম দেলাপরোজ ওরফে দেলু। 

তিন চাল টিনের এক চাল খড়ের তফুরা খালার ঘর।সামানে ছনের একটি পাক ঘর। পাক ঘরের সামনে মাঝারি ধরনের একটা  বড়ই গাছ। বড় ঘরের কোনে একটি খেজুর গাছে মাটির হাঁড়ি ঝুলছে। একটা বুলবুলি ও একটি দোয়েল রস খাবার জন্য ঠেলাঠেলি করছে।পুরো বাড়িটা দেখতে আঁকা কোন ছবির মত সুন্দর।  বড়ই গাছের নীচে খালা একটি শীতল পাটি বিছায়ে আমাদেরকে বসতে দিলেন।আমরা ছোটরা জড়ো হয়ে বসলাম।

বাড়ির ছোট বড় অনেক লোক এসে আমাদেরকে ঘিরে দাঁড়ালো।সবাই শহরের খবর জানতে চায়। মা সবাইকে তীক্ষ মেঝাজে বললো, তোমরা এখন যাওতো।আমার সন্তানরা সারাদিন না খেয়ে আছে, তোমরা কেমন লোক খবর জানতেে এসেছ? আগে এদেরকে খেতে দাও।পরে তফুরা খালাকে বললো,  তফুরা এখানে চিরা মুড়ি গুড় আছে, জলদি এদেরকে পানিকাঞ্জি খেতে দে । এখানে চাউল আছে জলদি ভাত বসায়ে দে।ওরা সারাদিন না খেয়ে আছে।মায়ের মমতার ব্যকুলতা দেখে সেদিন অনূভব করতে না পারলেও আজ আমি অনুভব করছি দুচোখের মোটা মোটা জলে।

আমার মা এমনই ছিলেন সবাইকে শাসন করার এবং মুহুর্ত্যেই আপন করে নেওয়ার মোহময় শক্তি তার মধ্যে ছিল।সে কারণে আত্মীয় স্বজন মাকে ভীষন ভয়ও পেত,আবার সন্মানও করতো।

ঝড় বৃষ্টি কিংবা হিংস্রোদের কবল থেকে মা যেমনি তার সন্তানদেরকে ডানার নীচে লুকায়, আমার মাও সব সময় কাঙ্গারুর বাচ্ছার মত সদা আমাদেরকেও আপদে বিপদে আঁচল তলে লুকাতেন। আমার সেই করুণাময়ি মা ছিলেন ভালোবাসার এক দোওয়ার দরিয়া।

আমরা মা এর ঘা ঘেঁসে বসে  চিড়া মুড়ি খাচ্ছি।ফুটফুটে সুন্দরী খালাতো বোন একটি পাকা নিয়ে আমাদেরকে বাতাস করছে।আমি বার বার সুকনো মুখে তৃষ্ণার্থ চোখে  অপলকে সেই খালাতো বোনটির দিকে চেয়ে রলাম।ইস! এত সুন্দর কি মানুষ হয়। মেয়ে মানুষ!ইস! আমিও যদি তার সমান বড় হতাম! মনে মনে তার সাথে কদ মিলায়ে দেখি। না লম্বা এবং বয়সে আমার অনেক বড় সেই বোনটি। আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র।

তফুরা খালা ছিলেন শ্যামলা ছিপছিপে লম্বা।খালু ছিলেন বেশ সুন্দর খাটো শান্ত স্বভাবের।আর আমাদের  মা ছিলেন ছিপছিপে উজ্জল সন্দুর,  বাবাও স্বাস্হবান বেশ সুন্দর ছিলেন।দেখতে ওরিয়েন্ট এলাকার লোক মনে হতো।

খালা একটা বলে করে চিড়া মুড়ি মিশায়ে ঘুড় দিয়ে এনে দিল। খালু নিজে গাছে উঠে ডাব কেটে বাবাকে খেতে দিল। মাটির কলস ভর্তি পানি দিল।ভাতের পানি বসায়ে দিল মাটির চুলোয়।আমরা সুকনো মুড়ি খাচ্ছি, পর পর কলস থেকে পানি ডেলে খাচ্ছি।

ছোট খালার ঘরের সামনে ছোট জায়গা জুড়ে মাইরা বা ডাঁটা লাগানো হয়েছে। লাল সাদা রঙের মাইরাগুলি সতেজ হয়ে দাঁড়িয়ে পত পত করে দুলছে মৃদু বাতাসে।এখুনি খাবার উপযুক্ত সময়।

মা খালাকে বললো, দেখ তাড়াতাড়ি বাদশাকে ভাত দে।দেখ ওর মুখ কেমন শুকায়ে আসছে।

খালা উঠোনের আঙিনা থেকে মাইরা বেশ কয়টা উঠায়ে, কেটেকুটে সুটকি দিয়ে তরকারি পাকাতে লাগলো।তরকারির গন্ধ্যে মোহময় হয়ে গেল চারিদিক। মুখে টস টস করে পানি এসে গেল।

বাবা আর বড় ভাই উঠোনের অন্য প্রান্তে চ্যায়ারে বসে সবাইকে শহরের খবর জানাচ্ছে।সবার চোখে মুখে আতঙ্কের রেখা ফুটে উঠেছে।শুধু আমার বাবাকে দেখেছি স্বপ্নীল আশাবাদি।

এই দুঃসময়ে নোরা কোথায়, কেউ জানেনা।নোরার বড় বোন দেলু থাকেন দিনাজপুরের পঞ্চগড়ে।দেলুর বর তহশীলদারের নকরি করেন।আর নোরার স্বামী আলম পুলিশে চাকুরি করেন, তাও পোস্টিং ঢাকাতে।পাক হায়েনারা প্রথমে সুপরিকল্পিত গনহত্যা অপারেশন সার্সলাইট প্রথমে নাকি ঢাকা রাজার বাগে পুলিশ ফাঁড়িতেই  শুরু করে।হাজারে হাজারে পুলিশকে নাকি এক রাতেই হত্যা করা হয়েছে। এ সবি রেডিওর খবর।আমরা বাড়িতে থাকতে শফিক চাচার রেডিওতে শুনেছিলাম।না জানি নোরার স্বামি শাহ আলমের কি হলো?

অবশ্য ভরসাস্হল ছিল একটা। নোরার চাচতো দেবর মানিক হাজি ওরফে কবির উল্যা ছিলেন রাজাকারের লিডার। যুদ্ধের সময় বাড়িতে কিংবা আশে পাশে এক দুজন রাজাকারের দরকার ছিল।যেমন আমাদের পড়শি ছিলেন জয়নাল রাজাকার।জয়নাল আমাদের বাড়িতে এসে সবাইকে আশ্বস্হ করলেন এই বলে. যে আমি বেঁচে থাকতে আপনাদের কিছুই হবেনা।সেই উঠতি বয়সি তরুন লিডার মানিক হাজি মজিদ হাজি বাড়ির  সবাইকে যুদ্ধের নয় মাস হেফাজত করেছেন।সে বাড়িতে এমন কোন মৃর্ত্যুর সংবাদ আমরা পাইনি।

মানিক হাজি ছিলেন খুবি সুচতুর লিডার। পরবর্তিতে দেশ স্বাধীন হলে সব রাজাকারকে হত্যা করা হলেও মানিক হাজি সুকৌশলে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সারোয়ার সাহেবের একমাত্র বোনকে বিয়ে করে অলৌকিক ভাবে বেঁচে গেছেন। আজো বেঁচে আছেন। আমি তার লম্বা হায়াত ও সুস্বাস্হ কামনা করি। 

                                                               (চার,)

নোরা ছিল আমার মেঝ বোন।

এই পৃথিবীতে কিছু সম্পর্ক হয় আল্লাহ প্রেরিত, আর কিছু সম্পর্ক মানুষ গড়ে নেয় প্রেম প্রিতী ভালোবাসার মাধ্যমে।এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে দেখা যায় অনেক সময় ঐশ্বরিক রক্তের সম্পর্কের চেয়েও হৃদয়ের সম্পর্ক বড় হয়ে উঠে।ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। ভাই এবং বোন এই দুটি শব্দ আমার কাছে ঘৃনা করার মত দুটি শব্দ।বন্ধু বান্ধব কেউ যদি আমাকে কোন সময় ভাই সন্বোধন করে ডাকতো, সাথে সাথে আমি সুধরায়ে দিয়ে বলতাম প্লিজ তোমরা আর কোন সময় আমাকে ভাই নামে ডেকো না।এই ভাই নামের প্রতি আমার চরম ঘৃনা।শুনে বন্ধুরা অবাক হতো।

এই ঘৃনাবোধ জন্মেছে সেদিন থেকে, যেদিন মন্টু নামে আমার এক কুলাঙ্গার ভাই আমার চৌদ্ধ হাজার ডলার মেরে দিয়েছে।সেটা বিরানব্বই সালের কথা।সেই সময় আমার টাকা দিয়ে সে নিজের নামে মাইজদী টাউনে দোকান কিনেছে। অতচ সে আমার টাকা গুলি সংসারে খরচ করেছে বলে আমাকে বুঝ দেয়। আমি মানতে পারিনি তার এমন বেঈমানি। সে সময় মাইজদীতে দুটা বাড়ি কেনা যেত  চৌদ্দ হাজার ডলার দিয়ে।ঐ টাকা নিয়ে মিন্টুর সাথে আমার চরম বিরোধ হয়। সে দিন থেকে  গত পোঁছিশ বছর ধরে আমি তার সাথে কথা বলি না।

আমার পাওনা টাকা ও সংসারের ব্যপার নিয়ে মিন্টু ও তার জার্মানী স্ত্রী গাব্রিলা মিলে একদিন আমাকে তার ঘরে আটকিয়ে মেরে আমার ডান চোখটা নষ্ট করে দিয়েছে।তার জার্মানী স্ত্রি আমাকে পুলিশের ভয় দেখায় জেলে দিবে বলে।   দেশে নাকি তার স্ত্রিকে সবাই ধর্ষন করে।

এদিকে   যুদ্ধ শেষ হলে আমরা নোরাকে  খুঁজতে একদিন তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম।

 মা এর সাথে আমি দিদার এবং মায়া  ছিল।নোরার বাড়িতে গিয়ে আমরাতো বিশ্মিত, আনন্দে আত্মভোলা।নোরার কোল জুড়ে এলো প্রথম পুত্র সন্তান।কি সুন্দর ফুটফুটে তুলতুলে চেহারা।এ যেন জ্যান্ত পুতুল।আহা! সে জাহাঙ্গির আজ মধ্য বয়সি।কেমন ভোলাভালা মানুষ।কাছ থেকে দেখি তারে দুর থেকে দেখি, মায়া হয়।কত টাকা পয়সা কত জায়গায় খরছ করেছি, কত যাকাত দান খয়রাত দিয়েছি, এতই ছোট মনের মানুষ আমি কোনদিন পারিনি তার হাতে দশটা টাকা দিতে, অথবা একটা লুঙ্গি কিনে দিতে।নিজকে বড়ই অপরাধি মনে হয়।আসলে তারা সবাই ভাই বোন  একটু উচ্চ আকাঙ্খি ও অভিমানি।তারা বড়দের বা মায়মুরুব্বির কথা রাখতে জানেনা।হয়তো বা অনাথ বিদায় শিখেনি।

 সবার চোখে মুখে আনন্দের পোয়ারা।নোরা ও তার বর স্বাশুড়ি সবার চোখে মুখে আনন্দ ঝলঝল করছে।আমাদের কি কম আনন্দ।এই প্রথম কোন ভাগিনাকে দেখছি। আহা কি সুন্দর শিশুটি সদ্য স্বাধীন দেশের নাগরিক হলো। নিশ্চয় বড় হয়ে অনিয়ন্ত্রিত স্বপ্ন দেখবে।ানেক বড় মানুষ হবে।

নুর গ্রহ অর্থ্যাৎ নুরের পৃথিবী।নোরার স্বামীর নাম শাহ আলম, তার অর্থও হলো কবি বা মহৎ ব্যক্তির পৃথিবী।মা বাবার সাথে মিল রেখে নোরারা স্বামি স্ত্রি মিলে প্রথম সন্তানের নাম রাখলো জাহাঙ্গির আলম।তার অর্থও হলো বিজেতার পৃথিবী। পরবর্তিতে নোরার আরো চার ছেলে দুই মেয়ে জন্ম নিল। সবার নামও আমাদের এই সুন্দরতম পৃথিবীর সাথে মিল রেখে রাখা হয়েছে। কি অদ্ভূত মিলন মেলা।কি অসাধরণ দুরদর্শি পরিকল্পনা। 

 যাই হউক আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শোকর। নোরাদের কোন ক্ষয় খতি হয়নি।স্বামি শুদ্ধ নিরাপদে তারা নাকি বাড়িতেই ছিল।জানমাল মান ইজ্জত সবি আল্লাহ হেফাজত করেছেন।পাকিস্তানি বর্বরেরা কত খুন খারাবি ধর্ষন করেছে। মানুষের ধানের গোলায় আগুন দিয়েছে।

নোরার স্বাশুড়ি সারাক্ষন শিশু জাহাঙ্গীরকে পাঁয়ের উপর শোয়ায়ে ডুলাতেন আর গুন গুন করে গান গাইতেন। মায়ের খুবি ইর্ষা হতো।আদরের নাতিকে একবার আদর করতে দিতেছেনা পাগলি বুড়িটা।আমিও ভাগিনাকে একটু আদর করতে পারছিনা।মাও তো রেগে গিয়ে নোরার স্বামিকে বলে দিল। তোমার মা দেখবা এই ছেলেটাকে এভাবে পাগল করে ছাড়বে একদিন। অত কুয়ারা করা ভালোনা। ইত্যাদি।

শিশু জাহাঙ্গির তো শুধু জ্যা জ্যা করে হাসঁছে কেবল।ডোল পড়া মুখ, কপোলের বাম পাশে মোকদোষ না লাগার কালো টিকা।অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে।

নোরার স্বামি শাহ আলম তার মাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন।তার বাবা মাকে ছেড়ে চলে গেলেও সাহআলম মাকে ছেড়ে কোথাও যাননি, দুরেও  ফেলে দেননি।মা ছেলের নাড়ির বন্দনও ভালোবাসার এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।

নোরার বাড়িতে মায়ের সাথে আমি যতবারই গিয়েছি, আমরা বেশির ভাগ সময় কাটাতাম মা এর মামাতো বোন মজিদ হাজির স্ত্রি মানিক হাজি ও হামিদ উল্যা উকিলদের ঘরে। অনেক সময় আমরা খাওয়া দাওয়াও করতাম মানিক হাজিদের ঘরে। মজিদ হাজির পালক পুত্র ওজিউল্যা মাকে কি অসম্ভব সন্মান করতেন।সব সময় খালাম্মা খালাম্মা বলে ডাকতেন।খানাপিনা করছে কিনা মায়ের খোঁজ খবর নিতেন। ‍ওজিউল্যার ছেলে পলাশ ও ঠিক বাবার মত ছিলেন অমায়িক।নোয়াখালি কলেজে ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েও সে ছিল সাধারণ ছাত্রের মত।সদালাপি মৃদু ভাষি ভদ্র নম্র পলাশকে আমি সব সময় মিস করি। মন চায় বসে বসে দীর্ঘক্ষন তার সাথে আলাপ করি।

মায়ের সাথে যতবার আমি গিয়েছি, ততবারই মানিক হাজির ভয়ে তটস্হ থাকতাম। সুটাম দেহের অধিকারি মানিক হাজি প্রতি প্রাতে ঘোড়ার মত কাঁচা বুট খেতেন।ব্যায়াম করে পেশি শক্তি বাড়াতেন। ভাত খেতেন হাতের তালুতে প্লেট রেখে হেঁটে হেঁটে।সে এক স্মার্টনেস স্টাইল। কিন্তু সে আমাকে দেখলেই দৌড়াতেন এই বলে, তোর নুনু কেটে দেব।এই দাঁড়া চুরি কইরে চুরি লও এর নুনু কাটবো। ভয়ে এবং লজ্জায় আমার কলিজা ধুক ধুক করতো।পরে দেখলাম মানিক হাজি আমাকে কোলে তুলে আদর করতো মুখে চুমো দিয়ে আদর করে চেড়ে দিত।নুনু আর কাটতো না।

আমি যখন ভয়ে দৌড়ায়ে মায়ের অথবা বোনের আঁ্রল তলে লুকাতাম। নোরা এবং মা তখন হাঁসতে হাঁসতে বলতেন।আরে আরে তোর ভাইয়া না  কিছুই করবেনা। নোরার স্বামী সাহ আলমও  অনেক সময় আমাকে ভয় দেখাতো এই বলে যে মানিক আসছে মানিক আসছে।আর খিল খিল করে হাঁসতোে আবার সিগারেট টেনে খ্যাঁক খ্যাঁক করে কাশতো।

সোনা সোহাগায় ভরা ছিল নোরার সোনার সংসার।স্বামী সন্তান স্বাশুড়িকে নিয়ে ছিল তার সুখি পরিবার। লাল টালি ইটের চারছালা ছোট একটা ঘর। ভিতরে পার্টিসান।বড় বড় দুটা খাট পাতা।পাকসাক হতো এক চালা এটাস্ট একটা ঘরে।

  ঘরের পিছনে ঢেলার সাথেই ছিল বড় বড় তিনটা কাঁঠাল গাছ। তার পিছনে বিশাল বড় একটা তেতুল গাছ ।তারও পিছনে আড়ায় ্ছিল বিশাল একটা জলপাই গাছ। সারি সারি গুবাক গাব আম গাছে ভরা ছিল তাদের ঘরের পিছনে বিশাল বাগানটা । আবার মানিক হাজিদের ঘরের পিছনের বিশাল বাগানটা ছিল মানিক হাজিদের।গুবাক নারিকেল আমঝাম গাছে ভরা ছিলো পুরোটা বাগান জুড়ে। সে বাগানে দিনে ডুকলেও গা টা হিম শিম হয়ে উঠতো ভয়ে।ধুক ধুক করতো বুকটা।

বাগান ছাড়াও নোরাদের ্র প্রচুর ভিটে জমিন ও ধানি জমিন ছিল।তাদের বাড়ির সামনে বড়ো পুকুরের উত্তর পাড়ে ছিল ভিটে জমিন। সেখানে ফসখেতি হতো।দু পাশে আম ঝাম কাজম এবং কাউ গাছ ছিল। কাউ ফল গোল গোল খেতে তেতুলের মত টকমিস্টি। পেকে হলুদ লালে মিশ্রিত আকার ধারণ করতো।সে বাড়ির  ছিদ্দিক মিঞার দু মেয়ে ছিল আমার সম বয়সি।দুটাই ছটপটে দুরন্ত প্রকৃতির।মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফি মিঞার আপন ভাগনি হলেও মেয়ে দুটির বাবা দিন মুজুরের কাজ করতেন। বাবা দেখতে কুছকুচে কালো হলেও মেয়ে দুটি ছিল অসম্ভব সুন্দরী। মেয়ে দুটি আমার সাথে লক লকিয়ে গাছে উঠে যেত।বানরের মত সরু ঠালেও চটপট করতে পারতো।তাদের নাম এখন আর আমার মনে পড়ছেনা মেনু মনি টাইপের কিছু হবে আর কি।

দেখতে দুজনকেই জমজ বোনের মত মনে হতো। হয়তো গোলাপ নয় শিউলি চ্যামেলির মত সুন্দর।দুজনেই হাফপ্যন্টের সাথে বড় চ্যাকের ফ্রগ পড়তো।আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা কাউ তেতুল কিংবা জলফাই গাছের মগ ডালে বসে কাটিয়ে দিতেম।কখনো  ওরা এক বোন থাকতো কখনো বা দুজনই একসাথে থাকতো।দুজনই আমাকে বেশ পছন্দ করতো। আমরাও ফুরসত পেলেই  গিয়ে গাছের মগ ডালে উঠে বসতাম।ফল খাওয়ার সাথে সাথে আলাপ চলতো অবিরত।সেই ছিল এক অনুপম অভিসার।

আমরা তখন তিন কিশোর কিশোরি আকির্ন করেছিলাম এক নতুন মাধুর্যময় পৃথিবী। কিন্তু ভালোবাসা বা প্রেম ছিলনা হয়তো, আকর্ষন ছিল চুম্বকের। বাধ সাধতো তাদের এক কাকা ছিল সে হটাৎ করে এসে আমাদেরকে ধরে ডাঁটতো বা বকা ছকা করে থাপ্পর চড় বসিয়ে দিত।তাদের বাবা কালো হলেও সেই কাকা ভীষন সুন্দর ছিল।মেয়ে দুটিও ছিল যেন   অবিকল তার পয়দাসে।চেহারাসুরত অবিকল চাচার মত।পরে কানাঘুষা শুনেছি, ভাবির সাথে নাকি তার অনৈতিক সম্পর্ক ছিল।

মেয়ে দুটিকে আমার অসম্ভব ভালো লাগতো।তারাও আমাকে ভীষন পছন্দ করতো নিশ্চয়। তা না হলে একটু ফাঁক পেলেই কেন আমরা ইশারায় আশারায় চোখের ভাষায়  এত কথা বলতাম।কেন লোকরণ্যে গিয়ে অভিসার সাজাতাম?কেন ফলন্ত গাছের মগ ডালে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতাম?কেন ভাগাভাগি করে ফল মুল পেড়ে খেতাম?

একদিন হঠাৎ করে নোরাদের বাড়ি যাওয়া আমার চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।  কেন সে কাহিনীও বলবো আগে। আমার শৈশবের প্রেম,রোমাঞ্চকর পৃথিবী পম্পে নগরির মত নিমীশেই যেন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেল।স্বপ্নাবতি মেয়ে দুটির ছবি আজো ভেসে উঠে হৃদয় পটে।জানিনা আজ তারা কে কোথায় কেমন আছে?

 যাই হউক ভিটে জমিনের পাশেই  পশ্চিম উত্তরে নোরাদের বেশ বড় বড় নাল জমিন ছিল। সেই জমিনে বর্গা চাষীরা চাষ করতো, প্রচুর ধান ফলতো।বাড়ির পশ্চিম দক্ষিন কোনে বিরাট একটা অগভীর দীঘি ছিল।সেখানেও প্রচুর ইরি ধান ফলতো।লোক মুখে শুনতাম এই মাইজদী বাজারের মাছ বাজার আর ফরেস্ট বিভাগ সহ প্রায়  অর্ধ্যেক জায়গা  নাকি তাদের ছিল।

এত ধন সম্পদ জায়গা জমিন থাকতেও নোরার সংসার ভেঙে চুরমার হয়ে গেল কেমন করে।কেন নোরা ত্রিশ বছর ধরে আজো লাফাত্তা নিরুদ্দেশ? কোথায় আজ নোরা? কেন  নোরার সন্তানরা আজো দ্বারে দ্বারে ধিক্ষীত এবং উপেক্ষিত?কোথায় নোরার প্রাণপ্রিয় পতি শাহ্ আলম? সে এক করুন ট্রেজেডি!না শুনলে আমরা জানবো কি করে? 

                                                       (পাঁচ,)
দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু ধ্বংশস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে আছে দেশ ।

চারিদিকে অভাব অনটন দুর্ভীক্ষ।যুদ্ধাগ্রস্হ একটা দেশের যেই দৈন্য দশা ঠিক সেই রকম অবস্হা সদ্য জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও।মুক্তি যোদ্ধারা তখনও অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে গুরে বেড়ায় মোহরা দেয়। মাইজদী বাজারের শফি কমান্ডার সারোয়ার সাহেবরা দলবল নিয়ে কাঁদে ভারি অস্ত্র ঝুলায়ে রাজাকার খুজে খুজে মারে। কাউকে ব্রাস ফায়ার করে জানে মারে কাউকে আবার আধামারা করে চেড়ে দেয়। একলাশ পুরের খালেক তো কালাম কাগুর বন্ধু হিসেবে স্টেন গান নিয়ে প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসতো. রাত ভরা অস্ত্রের মোহরা দিত ,বাড়ির কয়েকজন তরুনকে শিখাতো বন্দুকবাজি।


নোরার বাবা ইতিমধ্যে বেশ কয়বার চিটাগাং যেয়ে এসে বাংলাদেশি  একটা জাহাজের  নলি বানিয়ে জাপানি একটা শীপের সাথে শৈন চুক্তি করে জাহাজের নোঙরও তুললেন।এ নিয়ে তাঁর  ব্রিটিশ পাকিস্তান বাংলাদেশ সহ তিন প্রিরিয়ডের নলি হলো।তার জীবনের নোঙ্গর ফেলেছেন পৃথিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত সব বন্দরে।
 আমি তো মা এর সাথে বেশ কয়বার নোরার বাড়িতে যেয়ে এসে রাস্তাঘাট জেনে নিলাম। মাঝে মধ্যে মা পিঠা চিড়া মুড়ি ভেজে আমাকে বলতো , যা তোর আপাকে দিয়ে আয়।আমি তো যাওয়ার জন্য খুশিতে উচ্ছসিত হতাম।সে বাড়িতে দুটা ফুটফুটে মেয়ের সাথে তো ইতিমধ্যে  আমার সখ্যতা হয়ে গেছে।গেলেই তো আমরা ফলন্ত গাছে চড়ে বাতাসের গায়ে দোল খেতে পারবো।  
নোরাদের বাড়িতে দু তিনদিক দিয়েই যাওয়া যেত।আমি বেশির ভাগ বর্তমান আলআমিন বিস্কুট ফেক্টরির সামনে হয়ে বাড়ির পিছন দিয়ে ডুকতাম। আলআমিন বিস্কুট ফেক্টরির পশ্চিম পাশে একটা হিন্দু বাড়ি ছিল।বোধ হয় মাখন ডাঃদের বাড়ি। মা এর মুখে শুনতাম তারা নাকি প্রেগনেট কোন মহিলা দেখলে ধরে নিয়ে পেট কেটে পরিক্ষা নিরিক্ষা করতো।জঙ্গলে ভরা ছিল সেই এলাকা। যেতে আসতে ভয়ে বুকটা ধুক ধুক করতো।কি করবো  সেখানে গেলে তো নোরা যেমনি আমাকে অফুরন্ত আদর করে,  মেয়ে দুটিও আমকে সে রকম ভালোবাসে।তবে একটু ভয় ছিল মানিক হাজির। প্রায়ই যাই আসি, মাঝে মাঝে বেশ কয়দিন থেকে যেতাম নোরার বাড়িতে।জাহাঙ্গীরের সাথে খেলতাম, দুষ্টোমি করতাম।

জাহাঙ্গীর শব্দের অর্থ বিজেতা, জাহাঙ্গীরকে দেখতেও বিজেতা কোন ফ্রিন্সের মত মনে হতো।তাকে কোলে নিয়ে কাঁধে বসায়ে গুরতে খেলা করতে আমার গর্ববোধ হত আনন্দও পেতাম।

এক নীশি রাতে নোরা হঠাৎ করে আবার শুরু করে দিল পাগলামি।ঘরের পুর্বদিকে পার্টিশানে বড় একটা খাটে আমরা শুয়ে ছিলাম, পশ্চিম দিকের পার্টিশানে শুয়েছিল নোরাও তার স্বাশুড়ি।নোরা সেই আগের মত আবল তাবল বকতে লাগলো।আমাকে সাবধান করে বকছে ভাই তুই নীচে নামিস না তোকে ছলি নিয়ে যাবে।ছলিরা সাতটা সোনার পাতিল আমাকে সাধছে তোর বিনিময়ে।আমি সাতটা  সোনার পাতিল চাই না, আমি চাই আমার ভাইকে।আমার ভাই এর কিছু হতে আমি দিবনা।সাবধান! ভাই তুই নীচে নামিস না তোকে ওরা নিয়ে যাবে,তোকে ওরা মেরে ফেলবে। ভাই তুই আমার সাত মুল্লকের বাদশা। এই দেখ আমার ঘরের ভিতর কত বড় গর্ত হয়ে গেছে।এখান দিয়ে টাকার পাতিলা সোনার পাতিলা এসেছে।ইত্যাদি।

সে রাতে ভয়ে আতঙ্কিত আমার কলিজা হৃৎপিন্ড আর বুকে ্ছিলনা।ভোর হতেই বাড়ির লোকজন সহ মানিক হাজির মা এসে আমাকে উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠায় মাকে নিয়ে আসার জন্য।ভয়ার্ত ভাবে আমি বাড়িতে এসে তটব্যস্ত হয়ে খবরটা মা কে শুনালাম।
 মা তো শুনে হায়! আল্লা! হা! আল্লা! রহমত কর আমার মাইয়াটারে বলে পাগলের মত  বড় ভাই খোকনকে নিয়ে নোরার বাড়িতে চলে আসলো। সাথে আমিও এলাম।নোরার তান্ডবে কান্ড কির্তীতে বাড়ির সবাই হতভম্ভ। 
 
  মা এসে ঘরটা ফরখ করে দেখলো। সত্যিই ঘরের পশ্চিম দিকের মধ্য খানে  বিরাট একটা গর্ত পিছনের দিকে চলে গেছে।আবারো খোনার খলিফাকে ডেকে পাঠালো। নোরার স্বামি শাহ আলম তখন ঢাকাতে, তাকেও খবর দেওয়া হলো। দুপুরের দিকে তিনজন মোল্লা টাইপের খোনার খলিফার এসে বাড়ির লোকজনকে নিয়ে গর্তটা পরিক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে লাগলো।

 কেউ বলছে হ্যাঁ হয়তো পাগলির কথাই সত্যি। এত বড় গর্ত  হবার তো কথা নয়।নিশ্চয় টাকার পাতিল এসছে। আবার কেউ বলছে বাজে কথা কাঁঠাল গাছের মোটা শিকড় ঘরে ডুকছে,সে কারণে গর্ত হয়েছে।আবার কেউ বলছে ভূত পেত্নি বা জ্বীনে ধরেছে। সুতরাং আছর কছর তাড়াতে হবে।কেউ বলছে ঘরের পিছনে এত বড় তেতুল গাছ রাখা ঠিক হয়নি।এই গাছটা কেটে ফেলতে হবে ইত্যাদি।
বাড়ির অন্যান্য লোকেরা নারী পুরুষ দল বেঁধে   কেউ ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে হাঁসছে, আবার কেউ আতঙ্ক গ্রস্হ হয়ে দাঁড়িয়ে তামাসা দেখছে।

নোরার বাড়ি আর আমাদের বাড়ির দুরত্ব ছিল মাত্র দু কিঃ মিঃ।সে সময় আমরা তো চলাফেরা করতাম কুনিছা পথ দিয়ে।যত সর্টাকার্ট যাওয়া যায় আর কি।আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে নোরার বাড়িতে পোঁছে গেলাম।মা তো এসেই কোরআনের আয়াত পড়ে নোরাকে ঝাঁড় ফুক শুরু করে দিল।খোনার রাও তাবিজ তুমার পানি পড়া দিয়ে গেল।

পরদিন সকালে নোরার স্বামি এলো।তখন নোরার বকবকানি প্রথমে একটু বেড়ে গেলেও পরে অবশ্য ধীরে ধীরে একটু কমতে লাগলো।স্বামিই তাকে দেখবালের দায়িত্ব নিলে আমরা বাড়ি ফিরে আসি।ঘরোয়া ভাবে খোনার খলিফা কবিরাজের মাধ্যমে নোরার সিকিৎসা চলতে লাগলো।সবাই আশাবাদি ছিল নোরা জলদি ঠিক হয়ে যাবে।হয়েছিলও তাই।পুরোপুরি সুস্হ না হলেও মোটামুটি মাস ছয়েকের মথ্যেই নোরা সুস্হ ও শান্ত হয়ে উঠলো।সোরগোল বকাচকা কমে গেল।নরমাল সাধারণ মানুষের মত স্বপ্নবতি মানুষ।

যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙ্গালীরা ভারতের উপর দিয়ে বাই রোডে বাংলাদেশে আসতে শুরু করলো। অপরদিকে আসামের উদ্ভাস্তু বাঙ্গালীরাও আসতে লাগলো।

এমনাবস্হায় একদিন নোরার স্বশুর চৌধুরী মিঞা ছয় সাতটা ছেলে মেয়েসহ চব্বিশ বছর পরে আসাম থেকে  বাড়িতে ফিরে এসে হাজির হলো।নোরার স্বামী শাহ আলম প্রথমে দুযুগ পরে পিতার আগমনে ভেজায় খুশি হলেও পরে টের পেল কি হতে যাচ্ছে। সাথে কতোগুলি ভাই বোন।কিন্তু জনাব শাহ আলমের সেই খুশিটা অল্প দিনের মধ্যেই পিকে হয়ে গেল।
আসলে এই লোকটার মধ্যে তেমন কোন হিংসা বিদ্ধেষ লোভ লালসা ছিলনা।হতে পারে তিনি তেমন বিছক্ষন ছিলেন না। নিতান্তই  সাদাসিদে সাদা মনের সাধারণ একজন মানুষ ছিলেন।চব্বিশ বছর ধরে পিতার কোন খবরাখবর ছিলনা। দেশে কত বড় যুদ্ধ গেল, খরা বন্যা দুর্ভিক্ষ গেল বেঁচে ছিল না মরে গেছিল তাও কেউ বলতে পারতো না।সবার ধারণা ছিল চৌধুরি মিঞা হয়তো মারাই গেছেন।

 নোরার বাবা একদিন জামাই শাহ আলমকে ডেকে বলেছিলেন, তোমার বাবা আছে না মরে গেছে কেউ জানেনা। বেঁচে থাকলেও সে আসাম চেড়ে যে  বাংলাদেশে আর আসবে না।এই ফাঁকে ভালো হবে জায়গা জমিন গুলি তোমার নামে করে নাও।আমি তোমাকে সাহয্য করবো।
শাহ আলম বললো, এত জায়গা জমিন দিয়ে আমি কি করবো ।না ওসব দু নাম্বারি কাজ আমি করতে পারবো না।হ্যে হ্যে করে হেসে উড়িয়ে দিলেন পিতা সমান স্বশুরের কথাকে। 
   
  সোনায় সোহাগায় ভরা নোরার সংসারটাও দিন দিন চরম পরিণতির দিকে ধাবিত হতে লাগলো।নোরার স্বামী নিজেদের ঘরটা পিতাকে চেড়ে দিয়ে নিজেরা খড়ের দোছালা ছাল বানিয়ে কেঁছি দিয়ে ঘর বানিয়ে উঠোনে থাকতে শুরু করলো।বেড়াঘোড়া কিছুই নাই।মাটিতে শোয় তারা সবাই। তাতেও তারা ভেজায় খুশি।
মা সহ আমরা একদিন দেখতে গেলাম নোরাকে।নোরা মোটামুটি ভালো, কিন্তু থাকা খাওয়ার ভীষন অশুবিধা হতেছে।মা এই প্রথম দেখলো নতুন বেয়াই বেয়াইনকে।তাদের চালচলন কথাবার্তা মা এর মোটেই পছন্দ হয়নি।তবু সৌজন্য বজায় রাখতে তাদের সবাইকে এক জুম্মায় আমাদের বাড়িতে দাওয়াত করলো।বাবার অবর্তমানে সব গুরু দায়িত্ব এখন মায়ের উপর।মা ই সব কিছু দেকবাল করছে সামলাচ্ছে।

 কথামত জুম্মার দিন বিকেলে নোরার স্বশুর চৌধুরী মিঞা সবাইকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে হাজির হলো।নোরার পাঁচ জন ননদ তার মধ্যে তিনজন তো বিয়ের উপযুক্ত।এক দেবর তারও বেশ বয়স হয়েছে অনেকটা চাঁড়াল টাইপের।মুখে ছোট বড় দুতিনটা কাটার দাগ।মনে হলো কোন অনৈতিক কাজে ধরা পড়ে মার খেয়ে এই হাল হয়েছে।

 নোরার স্বশুর সৎস্বাশুরি স্বামী সন্তান  দু বছরের জাহাঙ্গাীরকে নিয়ে নোরাও আসলো,কিন্তু তার আপন স্বাশুরি আসলেন না। সবাইকে বাড়ির উঠোনে গোল করে চ্যায়ার মোড়া এবং জলচকি পেতে বসতে দেওয়া হলো। পোষাক আশাকে কথা বার্তায় তাদের মধ্যে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।দা বটির ব্যবহার দেখে তারা তো অবাক! তাদের ওখানে গোশত সবজি সব কিছু চুরি দিয়ে নাকি কাটা হয়।আবার সে সময় আমাদের এখানে তো চুরির ব্যবহার তো দুর্লভ ছিল। হারাম হালালের প্রশ্ন এসে যেত। 
মা নানা রকমের খাবারের আয়োজন করলো। সবাইকে উঠানেই পাটি বিছায়ে খেতে দিল। পোলাউ কোরমা পিরনি জর্দা সবকিছু সামনে পরিবেশন করা হলো।তারা হাত দিয়েই আলু থালু করে খেয়ে সন্ধ্যে বেলায়  চলে গেল।মা অবশ্য নোরা ও তার স্বামীকে থেকে যাওয়ার জন্য বললো।কিন্তু নোরার স্বামী কোন একটা ওযুহাত তুলে চলে গেল।

 মেহমানরা যাবার সময় নোরার ছোট ভাই খোকন তাদেরকে জেল খানার মোড় পর্যন্ত  আগিয়ে দিতে গেল। পিছন পিছন বাড়ির উৎসুক আরো কয়জন লোকের  সাথে আমিও গিয়েছিলাম। 

কিছুদুর যেতেই খোকনের এক সহপাটি  কানে কানে ফিস ফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কে রে ওরা? তোর কি লাগে? 
খোকন বললো,আমার তালতো বোন। ওরা  আসাম থেকে এসছে।
সহপাটি বললো, মাল ভালা, তোর লগে বড়টারে ধারুণ মানাবে।বিয়ে করে ফেল।
খোকন লজ্জা রাঙা হয়ে বললো, বাজে কথা বলিস না তো।থাপ্পর মারমু।
পরিশেষে তাদেরকে বিদায় দিয়ে আমরা বাড়িতে ফিরে এলাম।তারাও হেঁটে হেঁটে যেতে লাগলো তাদের বাড়ির দিকে।


                                                                                                                                                                                                                  ( ছয় )
পশ্চিম মাইজদী ১নং পৌর ওয়ার্ডে আমাদের বাড়ি।
সাগর কন্যা  মাইজদী শহরের উপকন্ঠ বা শহরতলী এলাকায় অবস্হিত।প্রকৃত নাম  ইসলাম হাজী বাড়ি  হলেও বর্তমানে সীল বাড়ি হিসেবেই খ্যতি পেয়েছে বাড়িটি।
তারও একটা রহস্যজনক কারণ আছে।জনৈক জমিদার ইসলাম হাজী সাহেব বত্রিশ কানি জমিনের উপর দীগির মত বড় করে বেশ কয়টা বাড়ি নির্মান করে তার পাঁচ বিবিকে নিয়ে বসবাস করতেন।তার পাঁচ বিবির মধ্যে একজনের ঘরে কোন ছেলে সন্তান ছিল না। বাঁকি চার বিবির ঘরেই জন্ম নিয়েছে অসংখ্য সন্তান।তার প্রথম ঘরের সন্তান বড় সন্তান আরিফ নামে একজন বেতন ভূগি একমাসে আসতে দেরী হলে নাপিতকে মেরে তার খুর কেচি পুকুরে পেলে দেয়।সেই নাপিতেই বলতে শুরু করে দেয় যে ওরা আমার খুরকেছি রেখে এখন তারা নিজেরাই নাপিত বা শীলগিরী করে। সে থেকেই বাড়িটি শীল বাড়ি নামে খ্যাতি লাভ করে।
সেই ১৯৬৭ইং সনে অখন্ড পাকিস্তান সরকার একোয়ার বা হুকুম দখল করে  নতুন জেল খানা পুলিশ লাইন আধুনিক সদর  হাসপাতাল নির্মীত হবার পর বেশ আমুল পরিবর্তন হয়ে গেল আমাদের এলাকাটি । সারি সারি পাকা ইমারত রাস্তা ঘাট দেখে মনে হয় বেশ আধুনিকের  ছোঁয়া লেগেছে।অখন্ড পাকিস্তান আমলেই এ গুলির প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছিল।যার কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পরই চালু করতে সম্ভব হয়েছিল। 
সে সময় আমাদের পুরান  বাড়ির প্রায় আংশিক সরকার একোয়ার করে নিয়ে যায়।বাড়ির অনেকের ঘর পড়লেও আমাদের পাক ঘরের ঢেলার পাশ দিয়েই জেল খানার সিমানা পিলার পড়েছে। বিশাল দীঘির মত দুটা পুকুরের প্রায় আংশিক ভরাট হয়ে যায়।
 বাড়ির দক্ষিন দিকে পর্যাপ্ত ছাড়া বাড়ি খাকায় তারা সে দিকে গিয়ে ঘর বেঁধেছে।ভাগ্যিস আমাদের খালি একটা ছাড়া বাড়ি ছিল।যার ধরুন আমাদের বিশাল বংশটা এখনও এক সাথে আছে। নচেত কাইল্লা বাড়ির মানুষ একশ কাইললা বাড়িতে ভিবক্ত হয়ে গিয়েছিল।টাওরান বাড়ি আর দুল্লুফিদের বাড়ির কোন খোঁজ খবর নাই।তাদের বাড়িটা পড়েছিল একেবারে জেল খানার দীঘির মধ্যখানে।
দুল্লুফির বাপের নাম ছিল বেচু।বেচু মিঞা খুবি পরিশ্রমি লোক ছিলেন। বড় গাছের গোড়া উঠাতেন।  কুড়াল দিয়ে লাকড়ি কাটতেন। আমার বাপ চাচাদের নানা ডাকতেন।আমার মাকে নানি ডাকতেন। মাঝে মধ্যে আমাদের কাজ কর্ম  করতো বেচু মিঞা।একসের চাউলের ভাত খাওয়ার জন্য সে বিখ্যাত ছিল।আমরা ছোটরা তাকে দেখলেই দল বেঁধে চেঁতাতাম। বলতাম বেচু কুকু, বেচু পোঁদে লেচা ঘু।বেচু তেমন একটা চেঁততেন না। বড়রা আমাদেরকে ধমক দিয়ে থামতো।মাটির মানুষ ছিল বেচু মিঞা।
বেচু মিঞারা আমাদের বংশের কেউ ছিল না তবে ভালোই সম্পর্ক ছিল সবার সাথে।আমি বেচু মাকেও দেখেছি। সুন্দর সন্মানি মহিলা ছিলেন।বেচু ও সুন্দর ছিলেন। তার বউটা ছিল তেলতেলে কালো করে মোটাসোটা মহিলা।দুল্লুফি ও মায়ের মত ছিল, তার একটি ভাইও ছিল সুন্দর করে।পরে শুনছি তার ভাইটা কি একটা রোগে মারা গেছে, তা মাত্র দশ বার বছর বয়সে।
দুল্লুফিদের পরিবারকে আমার ছোট চাচা তার বাড়িতে জায়গা দিয়ে পরে তার মাকে নিয়ে পাটোয়ারি চাচা যা বিতি কিচ্ছা করলেন তিনটা বউ ঘরে থাকার পরেও, তা ছিল অত্যান্ত অমানবিক।অনেক সময় বেচুকে গাছের সাথে বেঁধে মেরেমুরে তার বউকে নিয়ে রঙলিলা করতো রাতভর।চাচার আরেকটি বউছিল ঝুমা নামে, পেটে লাউট স্পিকারে সাউন্ড দিয়ে ঝুমার পাঁয়ে ঘন্টা বেঁধে সারা রাত নাচাতেন।  পরে বেচুমিঞা বজরার ও দিকে গিয়ে থাকতে শুরু করে।এখন যত সম্ভব আর বেঁচে নেই।আমি বড় হবার পরেও কুড়াল কাঁদে করে কাজের খোঁজে আমাদের বাড়িতে আসতেন।কাজকর্ম না করলেও মা ভাত খাওয়ায়ে এক দু কিলো চাল তার গামছায় বেঁধে দিতেন।  সৃতির দর্পনে আজ অনেক কিছুই ভেসে উঠছে।
ঠাওরান বাড়ির মানুষরা একটু স্বচ্ছল ও শিক্ষিত ছিলেন।একোয়ার হবার আগের বছর ঠাওরান বাড়িতে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল। বাড়ির আড়ার পাশে বড় একটি গাছের সাথে একজন মানুষ ফাঁস দিয়ে আত্ম হত্যা করলো।আমার মা চাচি জেটিরা সবাই দল বেঁধে গেল দেখতে। আমিও মা এর পিছনে পিছনে দৌড়ে গেলাম সে বাড়িতে।গিয়ে দেখি পাক ঘরে ঢেঁকির উপর দাঁড়িয়ে মহিলারা সবাই হুড়াহুড়ি করে দেখছে। হাফ পেন্ট পরা পুলিশ আনচার এসে লোকটাকে ঘিরে রাখছে। আমরা ছোটরা কাছে গিয়ে দেখলাম, মাঝ বয়সি লোকটা বাতাসে মৃদু দুলছে।জিব্বা বাহির হয়ে আছে। নিচে একটি চ্যায়ার ও এক জোড়া সেন্ডেল পড়ে আছে।একটু পর দারোগা আসার পরে রশি কেটে তিনচার জনে মিলে ধরে রশি কেটে লাশটি নামায়ে শহরের দিকে নিয়ে গেল। পরে বড় হয়ে শুনেছি লোকটি নাকি ভাবির সাথে কুকাম করে ধরা পড়ে লজ্জা শরমে আত্মহত্যা করেছে।এখন কি আর মানুষের মধ্যে সে আগের মত লজ্জা শরম হায়া বলতে কিছু আছে?

এদিকে নোরার স্বামীর বাড়ি একোয়ারে খতিগ্রস্হ না হলেও নদী ভাঙা  মানুষের মত হঠাৎ করে উচ্ছেদ হয়ে গেল নোরার পরিবার।নোরার স্বামী নোরাকে নিয়ে ঢাকা চলে গেল। সেখানে কমলাপুর স্টেষনের আসেপাশে কোন জায়গায় নাকি বাসা ভাঁড়া নিয়েছে।সেদিকে নাকি তার স্বামির কর্মক্ষেত্র এনএসআইর অফিস। আমি চিনিনা কোন দিন যাইওনি।
নোরার ভাই খোকন সাহেব ডিগ্রি পাশ করার পরে চাকুরির খোঁজে গিয়ে তাদের বাসায় উঠে।বাড়ি থেকে চাল ডাল বস্তা ভরে নিয়ে যেত।বাবার কাছ থেকে খরছের টাকা ও ঘুষের টাকাও নিত।আমি মাথায় করে নিয়ে রিকসায়া তুলে দিতাম।  এই আজকে ওমুক ব্যাংকের মেনেজারের চাকুরি হতেছে, কাল ক্যশিয়ারের। মাবাবাসহ পরিবারের সবাই আশাবাদি ছিল। তার বড় অফিসারের চাকুরি হলে অবশ্যই পরিবারের অবস্হা আরো ভালো হয়ে যাবে।
কাজের কাজ কিছুই হলো না। তার সাথে ডিগ্রি পাশ করা বাড়ির ইব্রাহিম এরি মধ্যে বাঁদর বনে চাকুরি নিয়ে বিয়ে শাদি করে নতুন ঘরও একটা করে ফেলেছে ।একদিকে চাকুরি হলো না আরেকদিকে তার বিয়ের বয়স যেতেছে। ইতি মধ্যে তার ছোট ভাই মন্টুও বিয়ে করেেএক সন্তানের বাপও হয়েছে।।
প্রায় চার পাঁচ বছর পরে একদিন নোরারা বেড়াতে আসলো আমাদের বাড়িতে।জাহাঙ্গির তখন অনেক বড় হয়ে গেছে।বাসা বাড়ির ছেলেদের মত হাফপেন্ট পড়তো সে।নাদুস নদুস চেহারা হলেও তার সর্দি নামের রোগটা স্হায়ি ভাবে বাসা বেঁধেছে তার শরিরে। সারাক্ষন নাকের হিঙ্গেল ঝরতো। 
নোরার আরেকটি ফুটফুটে ছেলে হয়েছে। নাম রাখা হয়েছে বখতিয়ার। রাজা বাদশার নাম হলেও দেখতে সত্যিই রাজ পুত্রের মত। বখতিয়ার তখন একটু একটু হাঁটতে পারে।কোলে লয়ে তাকেও অনেক আদর করেছিলাম।তখন আমার ভাগিনা বলতে একমাত্র তারাই ছিল। 
  






                                                              (সাত)
                                                              (আট)

                                                                                      (নয়)

 (দশ)

                                                                                                                                                                                                                পড়তে থাকুন আগে....

Sunday, August 9, 2020

বর্বরতার প্রতিক স্বাধীন দেশের পুলিশ!


জ্বলে উঠো বাংলাদেশ! জেগে উঠো বাংলাদেশ! মেজর সিনহার নির্মম হত্যাকান্ডোর বদলা নিতে জেগে উঠো।জ্বলে উঠো মেজর সিনহার এক এক ফোটা রক্তের প্রতিশোধ নিতে।আমরা অনেক সহ্য করেছি র‌্যাব পুলিশের অন্যায় আচরণ।বিনা বিচারে মানুষ হত্যা!পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে আছে?অনেক সহেছি তাদের বরবরোচিত  জুলম নির্যাতন অত্যাচার অবিচার।তারা ক্রস ফায়ারের নামে নিরীহ নিরপরাধি মানুষকে গুলি করে হত্যার আড়ালে চালিয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার নোংড়া বানিজ্য।

মানবধিকার সংঘটনের হিসেব মতে শুধু টেকনাপে র‌্যাব পুলিশ বিজি গত দেড় বছরে গুলি করে হত্যা করেছে ২৮৩ জন মানুষকে।স্বাধীন সার্ভভোম দেশে এটা কিসের আলামত?শুধু প্রদিপ ও লিয়াকত নামে এই  কুখ্যাত দু-খুনি হত্যা করেছে ১৬১জন মানুষকে।আর নয়! এবার চাই দু:শাসনের অবসান।

বাংলার প্রতিটি কোনে কোনে গড়ে তোল দুর্বার গন আন্দোলন।কিসের তদন্ত কমিশন! কিসের মামলা মকদ্দমা, কিসের বিচার? কার কাছে চাইতে যাব বিচার? এইসব অভিযুক্তদের বেলায় প্রযজ্য।খুনিরা নিজেরাই অপরাধ কবুল করেছে। তারা জগন্য অপরাধি।যেভাবে মেজর সিনহাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে, ঠিক সেই ভাবেই কুখ্যাত খুনি এসি ওসি এমন কি ডিএসপিকেও সরাসরি গুলি করে হত্যা করতে হবে।মৃর্ত্যুর পর তাদের লাশের মুখেও থু থু লাতি উষ্টা জুতা পেটা করতে হবে।যেই উকিল খুনিদেরকে সহযোগিতা করতে চাইল তাকেও হত্যা করতে হবে।কেড়ে নেওয়া হউক পুলিশের আধুনিক ইউনিফরম পোষাক পরিচ্ছেদ,আধুণিক হাতিয়ার।সর্ব প্রকার সুজোগ সুবিধা রেশন বনাস। সেই আগের মত হাপপেন্ট ডান্ডাই তাদের মানাবে বেশ।এই সব কিছু তাদের মানায় না।ক্রস ফায়ার কিংবা ফাঁসিটাঁসি বুঝিনা ডাইরেক্ট গুলি।সালারা জানোয়ারের দল।

সাবেক তরুন মেজর সিনহার হত্যার রেস কাটতে না কাটতে আবরা সিলেটে উঠতি বয়সি তরুস রায়হানকে থানাতে নিপিড়ন করে হত্যা করলো আরেক কুখ্রাত এসআই আকবর।আর কত মায়ের বুক খালি হলে আর কত বোন বিধবা হলে থামবে পুলিশের বর্বরতা?


সেনা বাহিনী প্রধান আজিজ আহম্মেদ ও পুলিশ প্রধান বেনজির আহম্মেদ সংবাদিক সন্মেলন করে কাপুরুষের মত সত্যিই বে- নজির সৃষ্টি করেছেন।জো হুকুম জোহুজুর তাদের মানায় না। মেজর সিনহা কোন মামলিক মানুষ ছিলেন না।তিনি ছিলেন সৃজনশীল সৃষ্টিশীল একজন মানুষ!হাজার হাজার পুলিশের মৃর্ত্যুতে জাতির কিছু যায় আসে না। কিন্তু একজন সৃষ্টিশীল মানুষের অকাল মৃত্যুতে জাতির অফুরন্ত ক্ষতি হয়ে গেল। জাতি ও দেশ  হারালো তার একটি সোনার সন্তানকে।আমি ডাইরেক্ট এ্যকশান চাই। সরাসরি গুলি করে হত্যা করতে চাই খুনিদেরকে।


২,মাননীয় স্বরাষ্ট মন্ত্রি আসাদুজ্জামান কামাল সাহেব! এই মুহুর্ত্যে আপনারও পদত্যাগ করা উচিত।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রি পদে আপনাকে আর মানায় না।আপনি বার বার বলছেন সুষ্ট বিচার হবে,সুষ্ট বিচার হবে! কিসের সুষ্ট বিচার?একদিকে পুলিশকে হুকুম দিয়েছেন বিনাবিচারে পাখির মত মানুষকে গুলি করে হত্যা করতে।আরেক দিকে বলছেন সুষ্ট বিচার হবে, কেউ ছাড়া পাবেনা।এই সবি আপনার ভাওতাবাজি ধোকাবাজি প্রতারনার সামিল।স্বসন্মানে আপনি পদত্যাগ করুন, আমি আপনার পদত্যাগ কামনা করছি।




Sunday, May 19, 2019

বাংলাদেশকে নিয়ে কয়জন বিদেশীর মণ্হব্য,




এক,ইটালিয়ান নাগরিক ফ্রাঙ্কো পুছ আমার বেশ কিছুদিনের সুপরিচিত বন্ধু মানুষ।বয়স তার ছিচল্লিশ।ইটালির সারদিনিয়ায় তার পৈত্রিক নিবাস ছিল এক সময়। বর্তমানে তারা জার্মানের অধিবাসি।তার জন্ম কিন্তু জার্মানীতেই।গত দুসপ্তাহ আগে তার সাথে একটি কাজে  আমার অন্য শহরে যাওয়া হয়।সে তার লাল টুকটুকে ফ্রড কম্বি গাঁড়িটা ড্রাইব করছিল তখন। আমি তার পাশের সিটে বসা। মৃদু সুরে গান বাজছে ডেস বোর্ডের অডিওতে।আমি খুবি কম কথা বলা মানুষ।সে শহরে আমরা কাজটা সাকসেছপুলি সেরে ফুরফুরে মেজাজে ফিরছি। আসার পথে হঠাত করে ফাঙ্কোকে জিজ্ঞেস করলাম,তোদের ইটালির অবস্হা এখন কেমন? তু্ই এখানে কেন? আর দেশে ফিরে যাবিনা? বস! আর কি চাই, আমার আর কিছু জিজ্ঞেস করতে হলো না।পুরো আধা ঘন্টা সময় ধরে ফ্রাঙ্কো বলতে লাগলো---

শুনুন ফ্রাঙ্কোর মুখে---ইটালির শারদিনিয়ায় আমার পৈত্রিক নিবাস।সেখানে আমার দাদাদাদির জুটের ফেক্টরি ছিল। অনেক শ্রমিক কাজ করতো সেখানে।আমার বাবাও সে ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল।আমার দাদা পাকিস্তান থেকে জুট ইমপোর্ট করে এনে কারখানায় নানা রকমের ব্যবহারি দ্রব্য সামগ্রি বানিয়ে পুরো ইউরোপে রপ্তানি করতো।প্রচুর টাকা ইনকাম হতো। দাদাদাদির মুখে শুনেছি জুট তখন জুট ছিলনা গোল্ড ছিল গোল্ড।কিন্তু ১৯৭০ সালে হঠাত করে পাকিস্তানে যুদ্ধ শুরু হলে জুট আসা বন্ধ হয়ে যায়।সাথে সাথে দাদার ফেক্টরিও বন্ধ হয়ে যায়।পরে আমাদের দাদাদাদি পুরো পরিবার নিয়ে জার্মানে চলে আসে।এই ফাল্কে ফেক্টেরিতে আমার বাবা চল্লিশ বছর চাকুরি করে ইটালিতে ফিরে গিয়ে গত বছর মাবাবা দুজনই ইন্তেকাল করেছেন।সব শুনে পরিশেষে তাকে বললাম  জুট নামের সেই গোল্ড এর দেশটাই আমার আজকের বাংলাদেশ।জুট-কে আমরা বলতাম সোনালি আঁশ আর তোমরা বলতে গোল্ড।

দুই,তুরকিশ নাগরিক মোস্তফা।বয়স ছাপ্পান্ন।আটত্রিশ বছর ধরে জার্মানে থাকে।আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত প্রতিবেশি ও কলিগ।স্বল্পশিক্ষিত দাঁড়িওলা মৌলবাদী টাইপের মানুষ।তার ছেলে ও সেরকম।তুর্কির গ্রামিন পরিবেশের ডোঙ্গা পায়জামাও ফতুয়া পড়ে মাঝেমধ্যে। সে যাই হউক গত সপ্তাহে কাজের রেস্ট সময়ে কথার ফাঁকে সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো তোরা কেন পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে গেলি?দেখ এখন পাকিস্তান কোথায় আর বাংলাদেশ কোথায়? পাকিস্তান কত ধনি আর তোরা কত গরিব। পাকিস্তানের কাছে এটম আছে ইত্যাদি।

মেজাজটা চড়ে গেল তার কথা শুনে।বললাম তুই কিছুই জানিস না।আজ বাংলাদেশে পাকিস্তান থেকে সব সুচকে এগিয়ে আছে।আলাদা হয়ে বাংলাদেশ উচিত কামটাই করেছে।সে বললো না না মোটেই ভালো হলো না। বাংলাদেশের মানুষ আজ খেতে পায়না। ঝড় বৃষ্টি বন্যা হয় সব সময়।অনেক মানুষ মারা যায়।মসজিদের ঈমাম সাহেব ও তাই বলেছে।তোদের দেশ যদি এতই ভালো তো তুই জার্মানে কেন এলি?আমি তাকে গালি দিয়ে ফিরা প্রশ্ন করলাম তোরা চল্লিশ লাখ তুর্কিরা  কেন আসলি জার্মানীতে?কেন নিজের দেশে ফিরে যেতে চাস না?সে বললো, ইহুদীদের কারণে আমরা এখানে এসেছি সেটা তুই বুঝবিনা। 
আমি অনেকবার শুনেছি এবং পত্র পত্রিকায় পড়েছি। মুসলমান ভাই ভাই একসাথে থাকা ভালো ছিল।দেখ ওসমানি সময়ে কত ভালোভাবে সব মুসলিম দেশ একসাথে ছিল।আমরা চাই আবার ওসমানি সময় ফিরে আসুক।ওসমানি খেলাফত আবার কায়েম হবে ইনশাল্রাহ!

এই মুর্খের সাথে আমি বেশি তর্ক করলাম না। দেখলাম যে আমাদের দেশের ব্যপারে তার কোন অভিজ্ঞতাই নাই। সে রাতে লোকটি গাঁড়ি এক্সিডেন্ট করেছে।ভাগ্য ভালো বেঁচে গেছে।তাও আবার আমার গাড়ির সাথে।বেকুবটা পিছন দিয়ে লাগায়ে দিছে।তেম খয়খতি হয় নাই। তবুও একহাজার ইউরো জরিমানা হয়েছে। গাড়িটা ছিল কম্পানির, আমি চালাতাম।


তিন,থমাস ট্রুডো জার্মান নাগরিক। বয়স ৫৪ বছর।বিয়ে শাদি করে নাই। থাকে মা-বাবার বাড়িতে।আমার কলিগ।সে নিজেই কৌতুহলি হয়ে বলতে থাকে তোদের বাংলাদেশে আগে প্রচুর বন্যা হতো অনেক মানুষ মারা যেত,কিন্তু এখন বোধ হয় একটু কম হয়।বললাম তুই ঠিক ধরেছিস, তুলনা মুলক ভাবে এখন একটু কম হয়।হলেও ক্ষয়ক্ষতি একটু কমই হয়।দেখলাম যে লোকটির মোটামুটি অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশ সম্পর্কে।জার্মানী কিংবা অন্য দেশের লোকেরা বন্যা দুর্গত গরিব দেশ হিসেবেই জানে।আবার অনেক মানুষ আছে বাংলাদেশ পৃথিবীর কোন জায়গায় অবস্হিত তাও তারা জানে না।এখন অবশ্য পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে।বাংলাদেশকেও বিদেশীরা জানতে শুরু করেছে।মেইড ইন বাংলাদেশ লিখা পোষাক এখন ইউরোপের সুপার মার্কেটে সোভা পায়।দেখে গর্ভিত হই।

                                                                                       ----ফারুক,

Monday, April 1, 2019

বরাবরে শিক্ষা মন্ত্রনালয়,






বরাবরে,

বাংলাদেশ সরকারের সন্মানিত মাননীয়া শিক্ষামন্ত্রি ডা: দীপু মনি (এম পি) সমিপে.....
শিক্ষা মন্ত্রনালয় গনপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার, ঢাকা, বাংলাদেশ।

মাননীয়া মন্ত্রি সাহেবা, আমি প্রথমে বলে নিচ্ছি, আমি একজন জার্মান প্রবাসি।আপনি এও জেনে খুশি হবেন যে আমি আপনার ও উপমন্ত্রি জনাব মহিবুল হাসান ভাইয়েরও একজন অনুরক্ত ভক্ত।আপনারা দুজনই ঐতিহ্যবাহি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মি থেকে সফল মন্ত্রি হয়েছেন, তার জন্য আপনাদেরকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন,ও ভক্তিপুর্ন সালাম।

মাননীয়া মন্ত্রি সাহেবা,আমি আজ অত্যান্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে কয়েকটি আরজি নিয়ে আপনার সমিপে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনি সুনেক দৃষ্টিতে দেখবেন।

প্রথমে আমার প্রশ্ন:১, আমাদের শিশু সন্তান যারা আগামী দিনের জাতির ভবিষ্যত,তারা কেন আজ হাঁস মুরগির খোয়ারের মত সিমিত জায়গায় বিকশিত হচ্ছে...?

আমি মাইজদী শহরের সন্তান হিসেবে বলছি, আপনারা কমুনিটি ক্লিনিকের মত যেখানে সেখানে কেন এতগুলি প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্টানের অনুমতি দিচ্ছেন।দিন দিন ভেঙের ছাতার মত ছোট খাটো আবাসিক ভবনে গড়ে উঠেছে কত বাহারি নামের শিক্ষা প্রতিষ্টান।নাই কোন খেলার মাঠ নাই ল্যাব কিংবা ব্যায়ামাগার, নাই কোন আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্হা। অতচ তারা ক্লাশ সিক্সে ভর্তির জন্য একটা ছাত্রের কাছ থেকে নিচ্ছে ১২-১৫ হাজার টাকা, বেবি ক্লাশের একটা শিশুর জন্য নিতেছে ৫-৬ হাজার টাকা। আবার মাসিক বেতন নিচ্ছে ২-৩ হাজার টাকা। এটা কেমন জুলম।হাঁস মুরগি কিংবা গরুর বাচ্ছাকেও বিকশিত হতে একটা নির্দিষ্ট চরাচরের প্রয়োজন হয়।অতচ স্বাধীন দেশের মানব শিশুর জন্য সেই ব্যবস্হা নাই। এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক নয় কি...?

২, আমাদের শিশু সন্তানকে বিশ্ব মানের মানব সম্পদে গড়ে তুলতে না পারলে এই শিক্ষা ব্যবস্হার প্রয়োজন কি...?

মাননীয়া মন্ত্রি সাহেবা,বর্তমান বিশ্বটাকে বলা হয় গ্লোবাল ভিলেজ।তাই প্রতিটি শিক্ষা ব্যবস্হাকেও (কারিগরি বলেন মাদরাসা বলেন,) বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে না পারলে, আমাদের সন্তানরা  বর্তমান বিশ্বে প্রতিযোগিতায় কোন ভাবেই টিকতে পারবেনা।

৩,মাদরাসা বোর্ডে এ কেমন শিক্ষা ব্যবস্হা...?
 
মাননীয়া মন্ত্রি ডা: দীপু মনি,প্রতিবছর মাদরাসা বোর্ডের আন্ডারে প্রায় ১৪--১৫ লাখ আলিম ও দাখিল শিক্ষার্থি পাশ করে বাহির হচ্ছে।বেশির ভাগই জেনারেল গ্রুপের ছাত্র।মাদরাসা গুলোতে নাই কোন বি এড ডিগ্রিধারি কিংবা উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষক। নাই কোন সাইন্স কমার্স বা অন্য কোন সাবজেক্ট।মাত্র তের বছর বয়সে একটা ছাত্র আলিম দাখিল পাশ করছে, ষোল বছর বয়সে মাস্টার্সসম সার্টিপিকেট দিতেছে।অতচ দেখা যায় বেশির ভাগ সার্টিফিকেটে একটা ছাত্রের জন্ম তারিখ লেখা হয়না।সে দিকে দয়া করে একটু মনোযোগ দিবেন।

মাননীয়া মন্ত্রি আপনার অবগতির জন্য বলছি:-জার্মানে গ্রাউন্ড স্কুলেই অর্থ্যাত প্রাইমারিতেই শিক্ষকরা সিলেক্ট করে দেয় শিশুরা কোন ধরনের স্কুলে  কোন বিষয়ে পড়ালেখা করবে।সেই মোতাবেক অভিভাবকরা সন্তানদেরকে স্কুলে ভর্তি করায়।এখানে ভালো স্কুলে ভালো শিক্ষার্থিকে রাখা হয়, সে যদি ভাল করে তো তর তর করে উপরের দিকে উঠে আবার খারাপ করলে ২য় শ্রেণীর স্কুলে পাঠানো হয়।সেখানে ভালো করলে আবার প্রথম শ্রেণীর স্কুলে পড়ার সুজোগ পায়।উন্নত বিশ্বের দেশের মত আমাদের শিক্ষা ব্যস্হাকেও বিশ্বমানের করার জন্য বিনীত আবেদন করছি।                                 

                                                     ইতি...জার্মান প্রবাসি, মোহাম্মেদ ফারুক,





 

Monday, October 1, 2018

চরিত্র নিয়ে কথা--



 

 
চরিত্র নিয়ে কথা----
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে,

Money is lost nathing is lost.Helth is lost something is lost.But,Character is lost evrything is lost.

এখানে মূল কথা হলো মানুষ চরিত্র হারালে সবকিছুই হারায়।চরিত্র মানব জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান এক সম্পদ।প্রকারাভেদে চরিত্রের অনেক রকম বৈশিষ্ট হতে পারে।আমার দৃষ্টে মিথ্যা কথা বলা সুদ ঘুষ খাওয়া  দুর্নীতি কালো বাজারি চুরি ডাকাতি বেশ্যাবৃত্তি থেকে উপরের লেভেলের সকল অনৈতিক ও নিয়মবহির্ভূত কাজই চরিত্রহীনের লক্ষন।এদের মধ্যে শ্রেণী বিভাগ আছে যেমন উত্তম মধ্যম, এবং অধম প্রকৃতির লোক।
 
দোষে গুনে মানুষ এ কথা চিরন্তন সত্য।এই পৃথিবীতে সাধারণত দুপ্রকারের ব্যক্তিত্বশিল মানুষের উপস্হিতি আমরা দেখতে পাই।একটা হলো অ্যাভারেজড বা গড়পড়তা, আর অন্যটা হলো রিজার্ভড লোক।রিজার্ভ লোকের সংখ্যা খুবি নগন্য, এরা সেকেলে টাইপের হয়ে থাকে।মাথা ভিজা বা মোটা মাথার মানুষ যারা।তারা।

আর অ্যাভারেজড বা গড়পড়তা লোক হলাম আমরা সাধারণ মানুষেরা।পৃথিবীতে সাধারণ মানুষের সংখ্যাই হলো বেশি।সমাজে কিংবা রাষ্টের সকল বিষয়ে আমরা মাথা ঘামাই বেশি। পক্ষে বিপক্ষে আন্দোলন সংগ্রাম করে নিজেরাই হতাহত হই।আর রিজার্ভ লোকেরা মরুভূমির উটের মত মাথা গুঁজে পড়ে থাকে।সামজে কি হলো না হলো তাদের কিছু যায় আসেনা।আবার সুজোগে সদব্যবহার করতেও ভূলে না।সুজোগ পেলেই তারা সবাই সমাজে রোল মডেল হতে চায় বেশিরভাগ।
 ইসলাম ধর্মে উত্তম চরিত্রের মানুষকে মুমিন বলা হয়।মুমিন  হতে হলে মুসলমানকে অনেক গুলো আনুসাঙ্গিক বিষয় অতিক্রম করে আসতে হয়।যেমন-ইসলামের সকল আকিদা ও ঈমানকে মনে প্রাণে কায়মনে বিশ্বাস করে বা পালন করে কেবল একজন সাচ্চা মুসলমানই হতে পারে মুমিন।মুমিন লোক একজন পারপেক্ট মানুষও বটে।

মুমিন হওয়ার পরেও আবার বুঝর্গ মুমিন হওয়ার রাস্তা আছে।যাদেরকে আমরা আলেম ওলেমা আল্লামা হিসেবে জেনে থাকি।মুমিন মুসলমানরা হলেন সমাজের বাতি ঘর।তারা সমাজের অবাঞ্চিত অসহায় এবং পথভ্রষ্ট মানুষকে আলোর পথ দেখায়।মানুষের সুখ দু:খের সাথি হয়।



                                              ------  চলবে
 
 
 
 



 

Friday, September 28, 2018

ঝামেলাবাজদের ঝামেলা

 

আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বানকে কেন্দ্র করে আজকাল ঝামেলাবাজদের ঝামেলার গতি তীব্রভাবে বেড়ে গেছে।বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিত্যক্ত মাথামোটা হেভিওয়েট রাজনীতিবিদ ডঃ কামাল হোসেন, ডাঃ বি চৌধুরী, ডাঃ জাফর উল্যা, বারিষ্টার মইনুল হেসেন আ,সম,রব মান্না মনসুর সবাই আজ উন্মাদ প্রায়।সারা জীবন নির্বাচনে বার বার দাঁড়িয়ে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া বা হারানো এই বিজ্ঞ রাজনীতিবিদরা আজ যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়া নামে সংযুক্ত হয়ে ঝামেলা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।

জনগনের সামনে তাদের কোন ভবিষ্যত পরিকল্পনা কিংবা সুস্পষ্ট কনসেপ্ট নাই।তারা শুধু চাচ্ছে ঝামেলা সৃষ্টি করে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করে  আবার সেই জামাত বিএনপি সরকারকে ক্ষমতায় অধিষ্টিত করতে।তারা চায় দেশটা আবার দীর্ঘস্হায়ি দানব জঙ্গিবাজ মৌলবাদের কবলে পড়ে পিছনের দিকে দাবিত হউক।তারা দখলদার দল বিএনপি জামাতের  সাথে মিলে গনতন্ত্রের কথা বলে জনগনকে বিভ্রান্ত করছে অগনতান্ত্রিক পণ্হায়ে।গনতন্ত্র সম্পর্কে তাদের কোন সুস্পস্ট  ব্যখ্যা বিশ্লেষণ বা বক্তব্য নাই।রাজনীতির নামে তারা রাজনীতিকে কুলুষিত করে জনজীবনকে এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়ে অতিষ্ট করে তুলেছে।
 
একদিকে এইসব বুদ্ধিবাজ জ্ঞানপাপিরা ঝামেলা সৃষ্টি করিতেছে, আরেক দিকে ধর্মব্যবসায়ী মৌলবাদ চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে।তারা আজ যেমনি ধর্মকে  রাজনীতির সাথে মিলায়ে মিশায়ে একাকার করে ফেলেছে, ঠিক তেমনি রাজনীতিকে ধর্মের সাথে মিশায়ে ভন্ডামি করিতেছে।জগতে এদের চেয়ে বড় মোনাফেক সয়তান আর কে হতে পারে?
 
রাজনীতি করতে হলে  মিথ্যাচার করতে হয়, মিথ্যা না বললেও সত্যকে এড়িয়ে যেতে হয়।আবার সভা সমিতিতে মিটিং সেমিনারে সস্হা জনপ্রিয়তার জন্য আবোল তাবোল বলতে হয়।তখন কি কোন মুমিন বা ঈমানদার মুসলমানের আর ঈমান থাকে?ধার্মিক ব্যক্তিদের কাজ হলো ধর্ম প্রচার করা।মানুষকে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া।ইসলামের স্বর্নযুগে মসজিদকে বলা হতো বিশ্ববিদ্যালয়।সেই সময় মসজিদে ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়াও পদার্থ রসায়ন বায়োলজি এমনকি সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হতো।
আজ বাংলাদেশের কথিপয় ধর্ম ব্যবসায়িরা মিথ্যা গনতন্ত্রের লেভাস ধারি ঘুষখোর হারামখোর দুর্নীতিবাজদের সাথে মিলে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট খাবার জন্য ব্যকুল হয়ে পড়েছে।তারা মহানবীর আদর্শ ইসলামের আদর্শকে ভুলুন্টিত করে মুখে মুখে বলছে ইসলামি শাসনতন্ত্র কায়েম করার কথা।আরে ভাই কিভাবে? তোমরা যেসব বেজন্মা মুসলমানদের সাথে রাজনীতি করে ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম করতে চাচ্ছ।সেই বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির বেশিরভাগ লোকই হলো নাস্তিক।তারা অনেকেই লোক দেখানো ওমরা বা আকবরি হজ্ব করেছে ঠিকই, ঘরে এক ওয়াক্ত নামাজও পড়ে না ঠিক মত।
এই সব ধর্মব্যবসায়ি ও ধর্মের লেভাস পড়া লোকরা সবসময় ধর্মান্ধ একগুঁয়েমী পরধর্মবিদ্ধেশী এবং সম্প্রদায়িক অ-অনুদার অসহিষ্ণু ও সঙ্কীর্ন মনের অধিকারি হয়ে থাকে।রাজনীতির নামে এরা সমাজে ঝামেলা সৃষ্টি করে অনাচার অরাজকতা ডেকে আনে।কারণ এদের জ্ঞানবুদ্ধি অত্যান্ত সীমাবদ্ধও সংকির্ন।
 
বাংলাদেশের মানুষ আজ  জ্ঞানবুদ্ধিতে  সবাই পরিণত।সবাই আজ সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে বসে অনিয়ন্ত্রিত স্বপ্ন দেখে, সবাই সবার ভালো মন্দ কমবেশি বুঝে।তবু এই সব ঝামেলবাজদের ঝামেলা থেকে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে।ময়লা কাদামাটি ধুয়ে যেমনি সোনা বাহির করা হয়,ঠিক তেমনি খাঁটি সোনা হিসেবে আমাদের আগামী দিনের নেতা নির্বাচন করতে হবে।
 
আমাদের নিত্যসত্য অতিতের ইতিহাস এখন আর কারো অজানা নয়।আমরা জানি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন সামরাজ্যে এসে মিথ্যের অজুহাত তুলে গাদ্দারির করে ভাগ বসিয়েছে স্বৈরচার জিয়া।সত্যকে ঢেকে জিয়া প্রতিষ্টা করতে চেয়েছিল মিথ্যের বিকৃত ইতিহাস।কিছুটা সফল হলেও তার মসনদে আবার হানা দিয়ে ভাগ বসায়েছে আরেক স্বৈরচার এরশাদ।আজ সকল স্বৈরচারের সাঙ্গপাঙ্গরা আর যুদ্ধাপরাধি দুষ্টচক্র মিলে দেশে ঝামেলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করতেছে।প্রগতিবাদী সাবইকে একহয়ে প্রতিহত করতে হবে এসব ঝামেলাবাজদের।

বাংলাদেশের মানুষকে আজ জানতে হবে পৃথিবীর যে দেশেই স্বৈরচাররা জবরদস্তি ক্ষমতা গ্রহন করেছে, সেই দেশ ও জাতি রাষ্ট্রগুলি আজ এক একটি গরিব রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সামরিক স্বৈরচাররা পৃথিবীর সকল দেশেই ক্ষমতায় বসে প্রথমে নেসানাল পার্টি গঠন করেছে।বাংরাদেশের দু স্বৈরচাররাও তাই করেছে।কিন্তু পরিশেষে সব স্বৈরচারের নির্মম পতন হয়েছে। সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়েছে তাদের হাতে গড়া দলগুলিও।ইতিহাস তার সাক্ষি।


-----চলবে
 

Sunday, April 22, 2018

বাদাম্মার রাজনীতি এবং প্লেটোর দ্যা রিপাব্লিক--

 

            বাংলাদেশে বাদাম্মার রাজনীতি এবং প্লেটোর দ্যা রিপাব্লিক।




মহামতি সক্রেটিস


১, আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে দার্শণিক মহামতি সক্রেটিসের প্রধান শিষ্য প্লেটো দ্যা রিপাব্লিক বা গনরাজ্য নামে একটি বই লিখেছেন।বলা বাহুল্য প্লেটো অনেক গুলি বই রচনা করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো দুটি বই। একটি হলো দ্যা রিপাব্লিক, অন্যটি হলো ল,স, ইংরেজিতে যাকে বলে Low,s. ল,স বইটিই তার শেষ লেখা।এই বই দুটির ব্যপারে প্লেটোর একটা কনপিডেন্স ছিল।তিনি বলেছিলেন আমার বই দুটি সর্বকালের জন্য  প্রযোজ্য বা সর্বাধুণিক হবে।যার নতুনত্ব কখনো পুরিয়ে যাবেনা।আসলে হয়েছেও তাই। আড়াই হাজার বছর আগের লেখা বই, এই যেন কালকের লেখা।

বাংলাদেশের বাদাইম্মা রাজনীতিবীদদের বইটা পড়ে দেখা উচিত।বাদাইম্মা রজনীতিবীদ আমি বলছি তাদেরকে,যাদের রাজনীতি সম্পর্কে বিন্দুমাত্র কোন অভিজ্ঞতা নাই।খামাকা রাজনীতি নিয়ে হাম্বিতুম্বি বা বকোয়াজ করিতেছে।

বকোয়াজের কোন শেষ নাই।সামনে আসছে জাতীয় নির্বাচন।নির্বাচনকে গিরেই বকোয়াজ চলছে।জোট মহাজোট গড়ে ক্ষমতায় যেতে সবাই ব্যতিব্যস্ত।কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে এইসব বাদাইম্মা ভাঁড়রা আসলে করবে টা কি? তার কোন কনসেপ্ট নেই প্রতিশ্রুতি নেই।
জোট বাঁধার মহা ধুম---

মহামতি প্লাটো
রুলার পার্টির তো ১৪-১৫ দল নিয়ে একটা মহাজোট আছেই।তার পর বিএনপি ওয়ান ম্যান টুম্যান বিশিষ্ট দল নিয়ে গঠন করলো বিশ দলীয় জোট।জাতীয় পার্টির চ্যায়ারম্যান এরশাদ সাহেব ৫৪টি ইসলামী দল নিয়ে গঠন করলেন আরেকটি বিশাল জোট। তারপরে বিএনপির সাবেক নেতা বারিষ্টার নাজমুল হুদা একত্রিশটি দল নিয়ে গঠন করলেন আরেকটি মহাজোট।দলগুলির কোন নাম গন্ধ আছে কিনা আমার জানা নেই।তারপরে সাবেক জাসদের প্রভাব শালি নেতা রব মান্না,কাদের ছিদ্দিকী, ডাঃ কামাল,ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরোজ্জা সাহেবেরা সমমনা আটদল নিয়ে গঠন করলেন যুক্তফ্রন্ট।আবার প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক আট দল মিলে গঠন করলেন বাম গনতান্ত্রিক জোট।তাদের পিছে আবার জড়ো হয় গাদ্দার মাক্কার সহ কথিত শুশিল সমাজের কিছু বুড়ো ছাগলের দল।
খেলাটা জমে উঠেছে দেখার বিষয়।আমার বিশ্বাস যদি দৈবক্রমে শুধু আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি মিলে একটি জোট গঠন করে।তাহলে বাঁকি দলগুলিকে দুর্বীন দিয়েও আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বিএনপি এখনো একটি সঠিক রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি।বিএনপি এখনো একটি রাজনৈতিক প্লাটফরমই রয়ে গেল।সুতরাং আওয়ামী লীগের সাথে সংলাম এবং সমযোতা কোনদিনই সম্ভোব নয়।
বাদাইম্মাদের কমেডি আপাতত চলছে চলুক,ভালো লাগার মানুষ গুলির কাছে তো ভালোই লাগছে, আমার কি যায় আসে। পরলে তো বলতাম হেই চুদির পুতেরা দেশ ছাড়।

দ্যা রিপাব্লিক বইটিতে গুরু সক্রেটিসের কথোপকথন বা তার বক্তৃতা বিবৃতি গুলিই শিষ্য প্লাটো তুলে ধরেছেন।সক্রেটিস ছিলেন স্বল্প শিক্ষিত অসাধরণ একজন মানুষ।কিন্তু তিনি ছিলেন প্রখর প্রজ্ঞাবান জ্ঞানি মানুষ।প্রাচীন গ্রীসে অসংখ্য দার্শণিকের জন্ম হয়েছে বটে, তবে দার্শণিকের  শিরমণি বলা হয় একমাত্র সক্রেটিসকে।অবাক করার মত ব্যপার হলো যে সক্রেটিস নিজে তার কোন কথা বা মতবাদ লিখে প্রকাশই করে গেলেন না।তবু দু-আড়াই বছর ধরে সে সক্রেটিসের এত প্রভাব কেন গোটা বিশ্বে?আজো দর্শণ স্বাস্ত্রে তাকে কেন পড়ানো হয়। সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটো এবং প্লেটোর শিষ্য এরিস্টটল,এই তিনজনই দর্শণের তিন মহারতি।গুরু থেকে শিষ্যের প্রভাব বেশি হলেও কেহই গুরু কে অতিক্রম করে যেতে পারেনি।অন্তত খ্যাতির ব্যপারে।


সক্রেটিস নিজে লেখাপড়া জানতেন কম, কিন্তু তিনি জিবীকা নির্বাহ করতেন জ্ঞান দান বা শিক্ষা দান করেই। তার মুখের কথা শুনার জন্য বড় বড় শিক্ষিত লোকেরা লাইন ধরে বসে থাকতো।এমনকি শিক্ষিত ধনি লোকেরা তাকে দাওয়াত করে নিয়ে যেত নিজ নিজ প্রসাদে।প্রশ্নবানে তাকে জর্জরিত করতো এবং সমাধান চাইত।সক্রেটিস যুক্তি সহকারে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর এবং যুতসই সমাধান  দিতেন।এতে কেউ সন্তুষ্ট হলেও কেই আবার সন্তুষ্ট হতে পারতেন না।দ্বন্ধে জড়িয়ে যেতেন।মুলতঃ সক্রেটিস ছিলেন দ্বান্দিক মতবাদে বিশ্বসি।


মহামতি এরিস্টেটল
সক্রেটিস এবং প্লেটোর মধ্যে বয়সের ব্যবধান ছিল কমপক্ষে বিশ বছরের। প্লেটো ছিলেন শিক্ষিত রক্ষনশীল পরিবারের সন্তান।মা-বাবা শিক্ষিত নিজেও শিক্ষিত।ঠিক যেমনি ভারতের রামকৃষ্ণ পরমহংশ ছিলেন কমশিক্ষিত,কিন্তু তার শিষ্যরা বেশির ভাগিই ছিল স্বামী বিবেনানন্দের মত পিএসডি ধারি।এথেন্সে প্লেটোর একাডেমিকে বলা হয় মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে পুরানো বিদ্যাপীট।
দ্যা রিপাব্লিক বইটিতে গুরু সক্রেটিসের বক্তৃতা বিবৃতি ও ডাইলগ গুলিকেই তুলে ধরেছেন।তারা একটি কল্পিত রাজ্য বা রাষ্টের রুপ রেখা নিপুনভাবে অঙ্কিত করেছেন।যা হবে একটি সর্বাধুণিক ন্যায় রাষ্ট্র বা ন্যায় রাজ্য।একটা ন্যায় রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট কি হবে।রাষ্ট্র প্রধান মন্ত্রিবর্গ কেমন হবে।বিদেশনীতি ব্যবসা বানিজ্য থেকে ধর্মনীতি কেমন হবে সবকিছুরই বিষদ বর্ণনা আছে।ন্যায় ও অন্যায়  এর ব্যাখ্যা নিয়েই বইটি সামনের দিকে এগুতে থাকে।
বইটির বিষদ বর্ণনার দিকে না যেয়ে আমি শুধু মুল কথাটিই বলছি।কল্পনার ন্যায় রাষ্ট্রের ব্যাপারে তারা বলেছেন, একটি আধুনিক ন্যায় রাষ্ট্রে জনগনের প্রতিটি মৌলিক চাহিদা পুরন করতে সরকার বাদ্য থাকিবে।রাষ্ট্র প্রধান এবং তার মন্ত্রিবর্গেরা হতে হবে দার্শণিকের মত জ্ঞানি।তাদেরকে থাকতে হবে দিগম্বর।তাদের মধ্যে আমার তোমার বলে কোন কিছু থাকবেনা।তারা জনগকে পরিচালনা করবে, আর জানগন তাদের ভরন পোষন সব কিছু বহন করবে।ইত্যাদি--

আমি আগেই বলেছি সক্রেটিস ছিলেন দ্বন্ধবাদী মানুষ। এই দ্বন্ধবাদের কারণে তার বিচার হয়েছিল।৫০০শত বিচারপতি তার বিচার করে সর্বোচ্চ রায় প্রধান করলেন ৩০০ বনাম ২০০ বিচারপতি তাকে দিলেন মৃর্ত্যুদন্ড।মানব জাতির ইতিহাসে এত বেশি বিচারপতি আর কোন বিচার কার্য নিয়োগ করা হয়নি।অবশ্য বিজ্ঞ বিচারপতিরা দুটা অফসন রেখেছিল তার সামনে। হয় দেশ ছাড়. নতুবা বিষপান করে আত্ম হত্যা করো। সক্রেটিস আত্মহত্যাকেই শ্রেয় মনে করে হেমলক গাছের বিষাক্ত রস পান করে প্রকাশ্যে হাসতে হাসতে আত্মহত্যা করলেন।অবাক বিশ্ময়ে চেয়ে রইলো তৎকালীন সরকার ও সভ্যসমাজ।তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে সে নাকি গ্রীসের দেব দেবিকে অবজ্ঞা এবং যুবসমাজকে বিগড়ানোর।



২,মহানবী হযরম মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওফাত বা ইন্তেকালের অল্প কয় বছরের মাথায় খালিাফা ওসমান গনির হত্যার মধ্যদিয়েই সুচনা হয় উমাইয়া খালিফাত্বের।যদিও এরিমধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য আলী রাঃ ও তার জৈষ্ট সন্তান ঈমাম হাসান রাঃ খালিফার দায়িত্ব পান।মুআবিয়ার খালিফাত্ব কালে ইসলাম অনেকটা সুসংগঠিত  শক্তিশালি ও প্রসারিত হলেও ভোগবাদিত্বের দিকে দাবিত হতে থাকে।উমইয়ারা নব্য মুসলিমদেরকে ভাবত মাওয়ালী তথা দ্বিতীয় শ্রেণীর মুসলমান।দাসরা হলো তৃতীয় শ্রেণীর।এইভাবে তারা এক মুসলমানকে বারটি জাতে ভিবক্ত করেন। এই  বর্ণবৈশম্যের কারণে উমাইয়ারা খালিফাত্ব হারান এবং এক ক্রান্তিকালে পড়ে যায় ইসলাম ধর্মটাও। তারপরও উমাইয়াদের যুগকে বলা হয় আরব যুগ।

ইসলামি ইতিহাস পর্যলোচনা করলে দেখা যায় হানবী হযরত মুহাম্ম (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর থেকে আজ পর্যন্ত গোটা আরব মুল্লুকে আর কোন বুজর্গ কিংবা দার্শণিকের জন্ম হয়নি।তবে হ্যাঁ অসংখ্য সাহাবীর জন্ম হয়েছে।যারা বেশির ভাগই ধর্মান্তরিত সাহাবি।আরব জাতি যে মূর্খ বেদুইন বর্বর জালিম জাতি ছিল, ঠিক আজো তাই রয়ে গেছে।ভোগ বিলাশ আর প্রভূত্বগিরিতে তারা আজো উন্মাদ এবং মসগুল।   প্রাচীন গ্রীক দার্শণিকদের যুগের শত শত বছর পর ফার্সি ভাষাবাসি ইরানে জন্ম নিলেন অসংখ্য কবি সাহিত্যিক এবং দার্শণিক। হাফিজ সাদি ফেরদুসি ঈমাম আবু হানিফা,রুমি বায়েজিদ বোস্তামী, ওমর খৈয়াম,ইবনে সিনহা মোল্লা নাসির উদ্দিন হোজ্জা সামস তিবরিজ, আল ফারাবি, ফরিদ উদ্দিন আত্তার, নিজামী, আল গাজ্জালি আল মনসুর সহ অগনিত দার্শণিক।এমন কি ঈমাম বোকারি সাহেব বোকারাতে জন্ম হলেও তিনি ছিলেন পারসিক ভাষি।এই সব পারসিক মহরতিরা আব্বাসিয় খালিফাত্ব কায়েম করতে সর্বাত্বক সহযোগিতা করে।এমনকি প্রায় সাড়ে সাতশত বছর এই পারসিক পন্ডিতরাই ছিল আব্বাসিয় খালিফাদের ন্যায়পাল দিকপাল উপদেষ্টা সেক্রেটারি এমন কি মন্ত্রিবর্গও।পারসিক পন্ডিতের যুগকে বলে ইসলামের সোনালী যুগ, আর আব্বাসিয় খালিফাদের যুগকে বলা হয় ইসলামি যুগ।
আব্বাসিয় খালিফাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যিনি ইসলামি শিক্ষা সংস্কৃতির প্রসার ঘটান তার নাম হলো খালিফা আল মামুন।তার মা এবং স্ত্রি ছিলেন ফার্সি ভাষি।তৎকালিন ফার্সি এই সব রতি মহারতিরা রিতিমতগ্রিীক দার্শণিকদের মতাদর্শকে খন্ডন করে ইসলামি মতাদর্শের প্রতি সমগ্র মানবজাতিকে অনুপ্রানিত করে।ইরানের কবি হাফিজের যেমনি কনফিডেন্স ছিল তার কবিতা বা সৃষ্টি কর্মের প্রতি, তেমনি আবুল কাশেম ফেরদুসিরও শাহানামার প্রতি।শেখ শাদির ও আত্মবিশ্বাস ছিল তার রচনাবলির প্রতি।দুরুদ সরিফ এয়া হাবে সালামালইকা, ইয়ানাবি সালামালাইকা তো শাদিরই রচনা।এক একটি যেন হীরের টুকরা।এরা সবাই নিজ ক্ষেত্র থেকে যেমন ইসলামকে সম্বৃদ্ধ করেছিল, তেমনি জ্ঞান বিজ্ঞানকও সাহিত্যকেও সমান ভাবে সম্বৃদ্ধ করেছিল।এদের এক একজন আজকের দিনের নোবেল লরিয়েটদের চেয়েও অধিক জ্ঞানি ছিলেন।তারা প্রত্যেকে আজকের দিনে হলে নোবেল পাওয়ার যোগ্য ছিল।
এদের মধ্যে ইবনে সিনা মেডেসিনে অগ্রনি ভূমিকা রাখলেও তিনিও দেড়শটির মত পুস্তোক রচনা করেছিলেন।আর আল মনসুর, আমরা যাকে মনসুর হাল্লাজি বলে চিনি।তিনিও ছিলেন সক্রেটিসের মত মহা দার্শণিক ও কবি।সক্রেটিসের চেয়েও জগন্য এবং করুন ভিবৎস মৃর্ত্যু আল মনসুরকে বরন করতে হয়েছিল।ফরেজগার বার বার হজ্ব করা আল্লাহর প্রেমে দিওয়ানা এই কবি কবিতায় উচ্চারন করেছিলেন আইনাল হাক্ক।আইনাল হাক্ক আল্লাহর নিরানব্বই নামের একটি।  সিদা কথাকে উল্টো করে বলাই কবিদের স্বভাব।যারা বুঝে তারা হয় খুশি আর যারা বুঝেনা তারা হয় বেজার।আল মনসুরের বেরায়ও হয়েছে তাই তাকে আব্বাসিয় খলিফা মুকতাদির নির্দেশে প্রকাশ্যে হত্যা করেছিল বাগদাদের ময়দানে।সূফি মতাদর্শের প্রবক্তা আল মনুসুরকে টুকরো টুকরো করে উল্রাস করে হত্যা করেছিল তৎকালিন মুমিন মুসলমানেরা।প্রথমে তার দুপাঁ কেটেছিল, তখনও তিনি বলেছিনে আমিই পরম স্বত্বা, যখন হাত কেটেছিলেন তখনও তিনি বলেছিনে আমিই পরম সত্য।রক্তদিয়ে তিনি ওজু করে বলেছিলেন আমিই প্রেম।জনৈক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করেছিল প্রেম কি? তিনি বলেছিলেন আমার মৃর্ত্যুর পরে দেখতে পাবে প্রেম জিনিসটা কি।মুসলমানরা তার দাঁত গুলি একটি একটি করে ভাঙলো। তারপর জিব্বা টেনে কাটলো, তারপর মাথা কেটে টুকরো গুলি জড়ো করে আগুন দিয়ে পুড়ে ফেললো।তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হলো সে খ্রিষ্টানদের অনুচর।সে নিজকে খোদার সাথে তুলনা করেছিল।
আমাদের দেশের মাওলানা মৌলুবিরা আবু হানিফাকে নির্যাতন করে জেলখানায় হত্যা করেছে বলে কান্নাকাটি করে।আমাদের দেশের পন্ডিতরা সক্রেটিসের কথা বলে অশ্রুশিক্ত করে। কিন্তু মনসুর হাল্লাজির কথা কেউ মুখে উচ্চারন করতে ভয় পায়, রহস্য জনক ভাবে সবাই এড়িয়ে যায়।

৩, দার্শণিক এরিস্টেটল বলেছিলেন----
                                                  যাদের অসংখ্য বন্ধু আছে, আসলে তাদের কোন প্রকৃত বন্ধু নাই।

মহামতি এরিস্টেটলের এই দৈব বাণীটি ধ্রুব সত্য হিসেবে প্রমানিত হলো জাতরি জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের বেলায়।বাঙ্গালী জাতি গর্ব



করে তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিল।জাতির জনক আবেগে আফ্লুত হয়ে একধাপ বাড়িয়ে বলেছিল তোমরা আমার ভাই।বন্ধুর চেয়ে অবশ্যই  অনেক উপরে স্হান হলো ভাইয়ের।সেই বর্ণচোরা বাঙ্গালী ভাই বন্ধুরাই নিশংসভাবে স্বপরিবারে হত্যা করলো সর্বকালের সর্বসেরা বাঙ্গালী জাতির জনককে।বাঙ্গালীর নিজেই নেজেকে প্রমান করলো তারা যে মির জাফরের বংশধর, তারা যে গাদ্দার মাক্কার কলঙ্কিত জাতি।বিজয় হলো বঙ্গবন্ধুরই।তিনি হলেন মহত ও মহান। মহামানবরা কখনও হত্যা হন না। একতা কুখ্যাত খুনিরা জানতো না।মহামানবরা বেঁচে থাকেন তাদের সৃজন শীলতায়,দিকদর্শণে লাখো কুঠি ভক্ত অনুরাগির আত্মায় প্রেম ভালোবাসায়।বঙ্গবন্ধু আজো আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন এবং অনন্ত কাল ধরে বেঁচে থাকবেন।


বাদাইম্মা রাজনীতির উত্থান পর্ব---
স্বঘোষিত স্বৈরচার আইয়ূব খানের বেসিক ডেমোক্রেসি বা মৌলিক গনতন্ত্র,স্বৈরচার জিয়ার বহুদলীয় গনতন্ত্র বনাম পতিত স্বৈরচার এরশাদের অদ্ভূদ গনতন্ত্র।
যুক্তফ্রন্টের পার্লামেন্টের ভিতরে একটি মারামারিকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলার অজুহাত তুলে জেনারেল আইয়ূব খান রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে মার্শাল,ল জারি করে তিনি সর্বেসর্বা হয়ে বসলেন।ক্ষমতায় বসে তিনি নানা চলচাতুরির আশ্রয় নিলেন।প্রথমে তিনি একটি বই লিখলেন, প্রভূ নয় বন্ধু, নামে।তারপর তিনি বেসিক গনতন্ত্র জারি করে সারা বিশ্বে হাস্যের পাত্র হলেন।বিশ্ববাসি জানতে চাইল বেসিক গনতন্ত্র আবার কোন ধরনের গনতন্ত্র?তিনি ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে,গনতান্ত্রিক নিয়মে ভোটাভুটি সবকিছুই ঠিকঠাকমত  হবে, কিন্তু ক্ষমতায় থাকবো আমরাই।তিনি একদিকে উন্নতির নামে পুঁষে উঠা বাঙ্গালীকে সান্তনা দিতে লাগলেন, আরেকদিকে তার বইতে বাঙ্গালীকে লেঙ্গুয়েজ ওয়েফনের হুমকি দিলেন। তিনি তার বইতে প্রকাশ করলেন বাঙ্গালীরা হিন্দু কতৃক প্রবাবিত পিছিয়ে পড় অনগ্রসর একটি জাতি।এই জাতিকে ইসলামি আদর্শের মাধ্যমেই পাকিস্তানিদের সমপর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভোব।তিনি বাংলা উর্দু ভাষাকে মিলিয়ে চায়না ভাষার মত একটি অদ্ভূদ ভাষা সৃষ্টিরও উদ্দেগ নিলেন।যার নাম হবে সম্ভোবত বাংউর্দু। বাংউর্দু এই ভাষাটির লেখা শুরু হবে চিনা ভাষার মত উপর থেকে নীচের দিকে। বাম দিক থেকেও লেখা যাবেনা  ডান দিক থেকেও ন।অবাক করার বিষয় হলো যে আইয়ূব খানকে এ ব্যপারে সহযোগিতা করেছিল  কবি ফররুখ আহম্মেদ কবি গোলাম মোস্তফা ও সাহিত্যিক সৈয়দ আহসান হাবিবের মত বর্ণচোরা কিছু বাঙ্গালীরা। এই স্বৈরচারই প্রথম অখন্ড পাকিস্তানের রাজনীতিতে বাদাইম্মাদের উত্থান ঘটান। এই স্বৈরচার পরে প্রচুর গনচাপের মুখেই ক্ষমতা চাড়তে বাদ্য হলেন।

স্বৈরচার জিয়ার উত্থান ও বহুদলীয় গনতন্ত্রের নামে অগনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্হা---
স্বৈরচার আইয়ূব খানের ভাবশিষ্য ও অনুসারি  স্বাধীন বাংলাদেশের সেনা বাহিনীতে ঘাপটি মেরে থাকা খর্বাকার জিয়া একাত্তরের গাদ্দার আর মাক্কারদের সহযোগিতায় পঁচাত্তরের ১৫ই আগষ্ট জাতির জনককে নিশংসভাবে হত্যা করার পর ৭ই নভেম্বরে এসে নিজস্ব মুখোশ উন্মেষ করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে সর্বেসর্বা হয়ে বসলেন।তিনি শধু গনেশ নয়,তিনি বাংলার আকাশে সদ্য উদিত সূর্যকেও ডুবিয়ে দিতে উদ্যত হলেন।তিনি বাংলার ইতিহাস লেখাতে শুরু করলেন উল্টোভাবে।স্বাধীনতার ইতিহাসের পাতা থেকে বাংলার ইতিহাসের মহানায়কের নাম নিসানা মুছে দিলেন।উনডেমনিটি নামে কালো আইন জারি করে খুনিদের বিচার পক্রিয়াকে বন্ধ করে দিলেন।রাজাকার আলবদরকে পুর্নবাতি করে চীপ রাজাকার সাহইজজকে প্রধান মন্ত্রি বানিয়ে প্রধান রাজাকার নেতা গোলাম আজমকে নাগরিক্ত ফিরিয়ে দিলেন। তিনি সংবিধানের চার মুলনীতিকে গুরিয়ে দিয়ে জুড়ে দিলেন বিছমিল্লাহ। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে বসে বাঙ্গালীর বাঙ্গালীত্বকে অর্থ্যাৎ বাঙ্গালী জাতীয়বাদকে বানিয়ে দিলেন বাংলাদেশি জাতীয়বাদ।জাতীয় সংগীত আমার সোনার বাংলাকে পাল্টিয়ে প্রথম বাংলাদেশ শেষ বাংলাদেশ করার উদ্যেগ নিলেন।একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে রাজনীতিতে শুধু পুর্নবাসন করেননি, রিতিমত মন্ত্রিমিনিষ্টার বানিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের আদলে বাংলাস্তান বানাবার প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখলেন।এই স্বৈরচার  শুধু পঙ্গু মুক্তি যোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরকে হত্যা করে খ্যান্ত হননি, জেলখানার অন্ধ প্রকোষ্টে নির্বিচারে হত্যা করেছেন হাজার হাজার সেনা বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে।তার পরে নিজ ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য বাদাইম্মা আর আঁধুনিবাঁধুনির পোলাপাইনকে নিয়ে গঠন করলেন একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম।আখের শেষ রক্ষা হলো না শ্বশানের মাটি দিয়ে গড়া এই স্বৈরচারের। নিজ কার্যকলাপের কারণে নিঃশংস ভাবে খুন হলো এই স্বৈরচার। শুনেছি তার লাশও খুঁজে পায়নি। ব্রাসফায়ারে চিড়েবিড়ে গেছে এই স্বৈরচারের দেহের মাংশ।


পতিত স্বৈরচার এরশাদের অদ্ভূত গনতন্ত্র---
ভারতে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশে অভিবাসিত এই স্বৈরচার বন্দুকের নল ঠেকিয়ে নির্বাচিত সরকারকে হঠিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে আইয়ূব জিয়ার মতই মার্শাল,ল জারি করে নিজেই সর্বেসর্বা হয়ে বসলেন। ক্ষমতায় বসে এই স্বৈরচার জিয়ার অসামাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করার উদ্যেগ নিলেন।তিনি পাকিস্তানের আদলে বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবেও ঘোষনা দিলেন।এবার তিনি শুধু রাজাকরকে নয় বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিদেরকেও পার্লামেন্টে নিয়ে আসলেন।রাজনৈতিক দল গঠন করার সুজোগ করে দিলেন।বিদেশে বাংলাদেশ দুতাবাসে চাকুরি দিলেন। ব্যবসা বানিজ্য করার সুজোগ করে দিলেন।১৯৮২ সালে এরশাদ ক্ষমতা দখল করে তিনি বাংলাদেশে প্রতিষ্টিত কয়জন কবির সহযোগিতায় ১৯৮৩ সালে -কনক প্রদীপ জ্বালো, নামে স্ত্রি রৌশনকে দিয়ে একটি কাব্যগ্রন্হও প্রকাশ করে পেলেনে।এই স্বৈরচার কুটকৌশল করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জিয়ার মতই পতিত বাদাইম্মা ও আঁধুনি বাঁধুনির পোলাপাইনকে নিয়ে একটি প্লাটফরম তৈরি করলেন।এই স্বৈরচার পাকিস্তানি স্বৈরচার জিয়াউল হকের কাছ থেকে খোদ পাকিস্তানি নিসানে খেতাবে ভূসিত হলেন।আর বাঙ্গালীদের কাছ থেকে বিশ্ব বেহায়া, বিশ্ব বেয়াদপ, বিশ্ব লম্পট, পতিত স্বৈরচার,সহ অসংখ্য উপাধি।নব্বইয়ের গনচাপে এই স্বৈরচার শুধু উৎখাত নয় জেলখানায় থাকতে হয়েছে ৬টি বছর।পৃথিবীর সমস্ত স্বৈরচারের নির্মম মৃর্ত্যু হলেও এই কুখ্যাত স্বৈরচার সুকৌশলে এখনও বেঁচে আছেন।

চলবে---


 




Wednesday, April 11, 2018

দেশে দেশে গনতন্ত্রের মাতা---?

 
 









আরে ভাই! কেন এত হৈ হাল্লা ?
মানির মানতো রাখেন আল্লা !
ছিলেন তিনি রুপসি, ছিলেন অতি ভালা,
মিলিটারিকে বিয়ে করে অল্প বয়সে হলেন বিধবা।
দুঃখ ছিল কষ্ট ছিল,ছিল তার বুক ভরা জ্বালা,
তার পরেও ছিল তা মন্দের চেয়ে ভালা,
রাজনীতি করতে এসে আজ তিনি কারাবন্দি অবলা।
পাশে নাই নেতানেত্রি,নাই আদরের পোলা,
একেলা রে ভাই তিনি আজ বড় একেলা।

১,দুর্নীতির দায়ে পাঁচ বছরের সাজা প্রাপ্ত বিএনপির নেত্রি এবং বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরচার জেনারেল জিয়ার সহধর্মীনী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনপির নেতা নেত্রিরা বলে বেড়ান, খালেদা নাকি গনতন্ত্রের মাতা।আবার দেশ মাতাও বলে থাকেন।বোধ বিলুপ্ত মানুষ আবেগ এবং কৌতুহলের বসে পাগলের প্রলাপ বকে বেশি এটাই সাভাবিক।

আমার বোধগম্য হয়না পৃথিবীর ইতিহাসে একজন নিকৃষ্ট ও জগন্য স্বৈরচারের বৈধব্য স্ত্রি কি করে গনতন্ত্রের মাতা হতে পারেন।যিনি নাকি যুবতি বয়সে বিধবা হয়ে নানা কুকর্মের জন্ম দিয়েছেন, সেই তিনি কি করে গনতন্ত্রের মাতা আর দেশ মাতা হন? আমি বুঝতে পারছিনা।মাতা শব্দটি আমার কাছে অতি মানবি, শ্রদ্ধাভাজন এবং স্পর্শকাতর বস্তু।কোন নিকৃষ্ট খুনি চরিত্রহীন স্বৈরচারের দুঃচরিত্রা স্ত্রিকে গনতন্ত্র তো দুরের কথা মা ডাকাও মানব জাতির জন্য লজ্জাজনক ব্যপার।

২,নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে আমেরিকার পপ সংগিত শিল্পি মেডোনার কন্ঠে একটি গান আমি খুব বেশি বেশি শুনতাম।গানটি হলো এরকম--ডন্ট ক্রাই ফর মি আর্জেন্টিনা, দি ট্রুথ ইজ লাই নেভার লেপ্ট ইউ, অল দিস মাই ওয়াইল্ড ডেজ, মাই ম্যাড এক্সিসটেন্স,আই কেপ্ট মাই প্রমিজ ডন্ট কিপ ইউর ডিসটেন্স।
উল্লেখ্য এই বিখ্যাত গানটি রচিত হয়েছে আর্জেন্টিনার স্বৈরশাসক জোহান পেরনের স্ত্রি ইভাপেরনকে উদ্দেশ্য করে।যে ইভাপেরন নাকি ছিলেন একজন বেশ্যা।অবশ্য এই ইভাপেরন বেশ্যা হলেও তিনি ফাস্ট লেডি হয়ে জনকল্যানমুলক কাজ করার কারণে এবং অল্প বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মরার কারণে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।মৃর্ত্যুর পরেও তার লাশ নিয়ে পরবর্তি স্বৈরচাররা অনেক টানাহিচরা করেছেন।তার লাশ ইটালী স্পেনসহ বেশ কয়বার দাপন করা হয়। অবশেষে প্রচুর গনচাপে আর্জেন্টিনাতেই তাকে দাপন করা হয়।এই ইভা পেরনকেও তার অনুসারিরা গনতন্ত্রের মাতা বলে সন্বোধন করতেন।
৩, ইন্দোনেশিয়ার কুখ্যাত স্বৈরচার সুহার্তো।তার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ব্যাংকের চাকুরি দিয়ে।সাইকেল চুরির অপরাধে চাকুরিচ্যুত হয়ে আর্মিতে ভর্তি হত।যোগ্যবলে এবং ইন্দোনেশিয়ার জাতির পিতা সুকোর্নের সোহানুভূতিতে তিনি মেজর পদে উন্নতি লাভ করেন।পরে বৃদ্ধ জাতির পিতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেই সর্বেসর্বা হয়ে দীর্ঘ ৩১ বছর জেঁকে বসেন রাষ্ট্রক্ষমতায়।পরে জাপানী বংশদ্ভূত হোটেল কন্যা সিতিকে দেখে নাকি উন্মাদ হয়ে পড়েন।পরে বিয়ে করে দীর্গদিন ঘর সংসার করেন।এই স্বৈরচার হাজার হাজার কুঠি টাকা আত্মসাত করে দেশটার অবকাঠামো প্রায় ধংশ করে দেন।অবশেষে গনঅর্ভ্যুত্থানে তার পতন ঘটে। তার হোটেল গার্ল স্ত্রি সিতিকেও গানতন্ত্রের মাতা বলা হতো।
এরকম অসংখ্য স্বৈরচাররা যুগের পর যুগ জবরদস্তি রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে একটা জাতি ও রাষ্ট্রকে আজ পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশে পরিণত করেছে। এদরে মধ্যে অনেক স্বৈরচার আছে যাদের কোন বংশ পরিচয় নাই যারা নাকি জারত সন্তানও ছিলেন।এদের মধ্যে অনেকর ঘরে স্ত্রি থাকলেও এরা বেশ্যার সাথে আয়েশি করতেন অবাধে। 









 
বর্তমানে সমগ্র বিশ্বের রাজনীতির ধারা পাল্টিয়ে গেছে।এখন বিশ্বের বেশির ভাগ জাতি গোষ্টি আর পরাধিন নয়।গনতন্ত্র সমাজতন্ত্র কিংবা কোন ধর্মতন্ত্র প্রতিষ্টা করা রাজনীতিবীদদের কোন নৈতিক আদর্শ নয়। গনতন্ত্র ও ধর্মতন্ত্র জিবিত থাকলেও সমাজতন্ত্র এখন মৃত একটি শব্দ।কোমায় থাকা রুগি মৃতের মতই।কমিনিউষ্টরা এখন অনেকটা কোমার  রুগির মত।
এখন দেশে দেশে চলছে খটাস রাজনীতি।প্রতিপক্ষকে হাতে মারা ভাতে মারা রক্তাক্ত রাজনীতি।হিংসা প্রতিহিংসার রাজনীতি।কে কাকে মেরে নিজে খাবে,কে কাকে ছোট করে নিজে বড় হবে সেই প্রতিযোগিতা চলছে নেতানেত্রিদের মধ্যে।নেতা হওয়ার নুন্যতম যোগ্যতা নেই যে খটাসের, সেই আজ বড় রাজনীতিবীদ বনে গেছে।অর্থ বলে পেশি বলে কেডার বলে সে যোগ্যতা হাচিঁল করে নেয়। নিজের আখের গোচায়, বিত্ত ভৈববে আঙুল পুলে কলা গাছ নয় রিতিমত তালগাছ হয়ে যায়।
এই সব কথিত রাজনীতিবীদরা যদি সত্যিকার অর্থে নিজের দেশকে ভালোবাসতো, যদি সত্যিকার অর্থে নিজ দেশের জনগনকে ভালবাসতো, কিংবা যদি সত্যিকার অর্থে নিজ নিজ দলের আদর্শ বা মুলনীতি মেনে চলতো, তাহলে অন্তত একটি স্বাধীন দেশে এত অশান্তি হতো না।এত মারামারি কাটাকাটি হতো না।জঙ্গিবাজের উত্থান হতো না।
আজ বাংলাদেশে অনেক গুলি রাজনৈতিক দল আছে।কার কোথায় কিভাবে জন্ম হয়েছে সবারই জানা।কার কি আদর্শ বা মূলনীতি তা আমাদের কাছে সুস্পষ্ট নয়।কে দেশের জন্য কি করেছে বিবেক বোধ বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে গেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অবস্হা সবার উপরে।

বাঙ্গালী জাতির জন্য আল্লাহর রহমত হয়ে আওয়ামী লীগের আবির্ভাব হয়েছে।এটা কারো কারো কাছে অপ্রিয় হলেও ধ্রুব সত্য।
বিনএনপি নামে এবং জাতীয় পার্টি নামে কেন্টের্মেন্টে জন্ম নেওয়া দল দুটি হলো বাঙ্গালী জাতির জন্য একটি অভিশপ্ত বিষবৃক্ষ ও কলঙ্ক। কারো কারো কাছে এটা অপ্রিয় হলেও এটাই বাস্তব সত্য।
জাতিয় পার্টি নামে কেন্টের্মেন্টে জন্ম নেওয়া এই দলটি শুধু বিষবৃক্ষ নয় জাতির বিষ ফোঁড়া সরুপ দেখা দিয়েছে আজ।পৃথিবীর সকল স্বৈরচারের মত তিন মাসের জন্য অজুহাত তুলে মার্শাল্ ল জারি করে পরে পুরো রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নেসানাল পার্টি ঘটন করা হয়েছে।আদর্শ উদ্দেশ্য বলতে কিছু নেই, শুধু নিজে আরাম আয়েশ করে একটা জাতিকে ভিখারির জাতিতে পরিণত করাই মুল লক্ষ।
জাসদ নামে একটি বিতর্কিত দল সদ্য স্বাধীন যুদ্ধাগ্রস্হ দেশের উপর গঠিত হলেও ১৯৮৮ সালে এসে দলটি গুটি বসন্ত আকারে দেখা দিয়েছে বাঙ্গালী জাতির ভিতরে। এই দলটি আজ ক্লেদ ক্লেদাক্ত আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধি জামায়াত ইসলামী দলটি ১৫ই আগষ্টের পরে বোলবাল রংঢং পাল্টিয়ে পুর্নজনম নিয়ে কেন্সারের মত আবির্ভাব হয়েছে বাঙ্গালী জাতির জন্য।ইসলামের নাম ভাঙিয়ে দলটি কুপুরি বিদআতের রাজনীতি শুরু করেছে।একাত্তরে যেমনি হত্যা ধর্ষন লুটপাট অগ্নি সংযোগ করেছে। ঠিক একি কায়দায় স্বাধীনতার পরেও স্বাধীন দেশে অরাজকতা চালিয়ে যাচ্ছে।রগকাটা মানুষ পুড়িয়ে মারা,সংখালগুদের উপর জুলুম নিপিড়ন হত্যা ধর্ষন আজো তাদের অব্যাহত আছে।
  বাম ঘরানার সোসালিষ্ট দল গুলি ঘোড়া মাছের মত।এটা এখন দেখার বিষয়। ঘোড়া মাছ পুরুষরা গর্ভবতি হয়,কিন্তু লেঁজটা কুকুরের মত বাঁকা করে রাখে।কেন গবেষনা করছি। বিস্তারিত বলবো পরে। 

এখন সবাই বলে শিক্ষার্থি--


প্লেটো



এখন সবাই ছাত্র ছাত্রীকে বলে শিক্ষার্থী। মেধাবী শিক্ষার্থীও বলে কেউ কেউ।বিদ্যার্থী কিংবা বিদ্যান বলেনা কেউ।অতচ এক সময় শিক্ষার্থীকে বিদ্যান বলা হতো। সে সময়ে সমাজে বিদ্যান ব্যক্তির সন্মানই ছিল আলাদা। মুরুব্বিরা বলে থাকেন আগের জমানার ক্লাশ ফাইভ পাস আর এখনকার এম এ পাশ সমান।কথাটা একেবারে উড়িয়ে ফেলে দেওয়া যায়না।
এখন বিদ্যালয়ে শুধু শিক্ষা দেওয়া হয়, দীক্ষা দেওয়া হয় না।এক সময় শিক্ষার সাথে সাথে দীক্ষাও দেওয়া হতো।বহুমুখি দীক্ষা।
বি সি পুর্বে প্রাচীন গ্রীসে জন্ম নিয়েছিলেন অসংখ্য দার্শণিক।তাদের মধ্যে তিন জনের নাম সবার আগে। সেই তিন মহারথি হলেন সক্রেটিস,তার শিষ্য প্লেটো,এবং প্লেটোর শিষ্য এরিস্টেটল।এই তিন দার্শনিকের দর্শণ স্বাস্ত্র আজো সমগ্র পৃথিবীতে প্রভাব বিস্তার করে আছে । এদের মধ্যে সক্রেটিস কোন বই পুস্তোক না লিখলেও তার শিষ্য প্লেটো অনেক বই পুস্তোক লিখে গেছেন। তিনি গ্রীসে একাদেমি নামে একটি বিদ্যালয়ও প্রতিষ্টা করেছিলেন।তার লেখা বগিুলির মধ্যে অন্যতম হলো the Republic এবং  Laws পুস্তোকটি।এই বই দুটি বাংলা অনুবাদ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শণ স্বাস্ত্রের অধ্যাপক প্রয়াত সরদার ফজলুল করিম।  



এরিস্টেটল
প্লেটো তার রিপাব্লিক গ্রন্থে লিখেছেন একটা দেশে কোন শিক্ষা ব্যবস্হাই রাখা উচিত নয়। সাধারণ পাব্লিকের লেখা পড়া বা শিক্ষার কোন প্রয়োজন নেই।স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে শুধু ফাল্টু খরছ করা হয়।জন সাধারণের দরকার শুধু কাজ করা।তারা কাজ করে সুখে স্বাচ্ছন্ধে বসবাস করবে।
 লেখা পড়া শিক্ষাদীক্ষা করা প্রয়োজন আছে শুধু সরকার প্রধান আর মন্ত্রি বর্গের।তাদেরকে ও গৃহে বসে শিক্ষা দীক্ষা গ্রহন করতে হবে। পাঠশালার কোন প্রয়োজন নেই।তাদের নির্দেশেই রাষ্ট্র এবং জনগন চলবে।
গুরুর এই বাণীকে সমর্থন করেছেন শিষ্য এরিস্টেটল।আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যেমন তেমন শিষ্য নয়, এই শিষ্য মহাবীর আলেকজান্ডারকে শিক্ষা ও দীক্ষা দিয়েছেন।







রুসো
তারপর রেনেসাঁর যুগের রুসোও প্লেটোর এই বাণীকে সমর্থন করলেন।ফ্রান্স বিপ্লবের জনক এবং সমাজ বিজ্ঞানের প্রবক্তা ভাবা হয় এই জা জাঁক রুসোকে।তিনিও অনেক বই পুস্তোক লিখে গেছেন।তার মধ্যে সমাজিক চুক্তি বইটি অন্যতম। এই বইটিও অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম বাংলায় অনুবাদ করেছেন। রুসো বললেন লেখাপড়া করার উদ্দেশ্য হলো একটু নিষ্টাবান হওয়া আর কিছু নয়।নিষ্ঠাবান হতে না পারলে  লেখা পড়ার তেমন একটা প্রয়োজন নেই।
দার্শণিকদের দন্ধের কথাবার্তা বুঝা মুশকিল।এই রকম কথাবার্তার জন্য অনেক দার্শণিককে মৃর্ত্যুর মুখোমুখিও হতে হয়েছে।আমি নিজেও অনেক দার্শণিকের সাথে অনেক সময় একমত হতে পারি না।তবে এটাও সত্য যে বিসি ৪-৫শত শতাব্দির কিংবা তারও আগের অনেক দার্শণিকের মতবাদ আজো রুঢ় সত্য এবং আধুণিক সমাজে প্রযোজ্য।
দার্শণিকের কাজ মানুষকে দিক নির্দেশনা দেওয়া।পৃথিবীর অনেক দেশে অনেক জাতির মধ্যেই বিখ্যাত বিখ্যাত দার্শণিকের জন্ম হয়েছে,কিন্তু একমাত্র বাংলাদেশে কিংবা বৃহত বাঙ্গালী জাতির মধ্যে তেমন কোন বিখ্যাত দার্শণিকের জন্ম হলো না।নোবেল পেয়ে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব বিখ্যাত হলেও তাকে দার্শণিক বলা যায় না।তিনি আপাদ মস্তক অস্তিত্ববাদী সারা জীবন নিজে নিজেরই গুনগান করেছেন।সেই গুনগানেই আমরা মুগ্ধ ও ধন্য,এবং সে কারণেই আমরা তাকে ভালবাসি।
স্বাধীনতার পর গত সাতচল্লিশ বছরে বাংলাদেশে অনেক স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হয়েছে।সমগ্র বাংলাদেশে যেখানে মাত্র ছয়টা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, আজ সেখানে প্রায় ছিয়াশিটা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার হার বেড়েছে শিক্ষর্থীর হার বেড়েছে কিন্তু শিক্ষার মান বাড়েনি মোটেও, বরঞ্চ কমেছে।আজ সবাই ভার্সিটির সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেয় শুধু একটা ভালো চাকুরি নেওয়ার জন্য। সরকারি আমলা সচিব হওয়ার জন্য।ডাক্তার ডাক্তারি পাশ করে শুধুই চাকুরি করার জন্য।ইঞ্জিনিয়ার ইঞ্জিনিয়ারি পাশ করে শুধুই চাকুরি করে কাড়ি কাড়ি পয়সা কামানোর জন্য।তারা নিয়ম নীতি ন্যয় সৎ সততার তোয়াক্কা মোটেই করেনা।লেখা পড়া করে মানুষ যে নিষ্টাবান হয়,নিষ্টাবান কি জিনিস তা তারা মোটেই যেন জানেনা।
শিক্ষিত মানুষরা সব সময় অনগ্রসর কিংবা নিরক্ষর মানুষকে জ্ঞানের আলো বিদ্যার বাণী দেখায়।সমাজকে জাতিকে দিক নির্দেশনা দেয়।কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো স্বাধীনতার এত বছরেও আমাদের দেশে তেমন শিক্ষীত সমাজ গড়ে উঠেনি।এখানেই আমাদের দুঃখ।
যে সব বৈশম্য ও দুর্নীতির কারণে আমরা পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছি।সে সব বৈশম্য ও দুর্নীতি আজ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুটি দেশেই বিদ্যমান। বরং প্রচন্ড আকারে বিদ্যমান।দুটি দেশেই গনতন্ত্র নাই এ কথা মিথ্য হলেও দুটা দেশই যে দুর্নীতিগ্রস্ত তা শত ভাগ সত্য।দুই দেশকেই সমান ভাবেই লজ্জা করা উচিত।






















Sunday, February 18, 2018

আজ ২১শে ফেব্রুয়ারী---



২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তঃজাতিক মাতৃভাষা দিবস।বাঙ্গালী জাতির গর্বের একটি দিন।প্রথমে বাংলা ভাষার উপর রচিত একটি সংগীত শুনুন।তারপর আলোচনায়--






লাল সবুজের ঝলোমলো মেলায়,হরিৎ মহুয়ায়,সবুজ ঘাঁসের ডোগায়,নদীর বুকে বুকে, শিশুর মুখে মুখে, পাখির সুরের মুর্চনায়,ফুলের অধর কোনায়,আকাশের সন্ধ্যা তারায়,রাতের জোসনায়,বাংলা বাঁচবে বাংলায়,আমাদের বাংলা ভাষা বাঁচবে বাংলায়//


করেছি কতো সংগ্রাম,করেছি কতো যুদ্ধ,এ বাংলার জন্য /দিয়েছি কতো রক্ত,মৃর্ত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি শক্ত,আমরা অনিক অনন্য/বাংলা মোদের মায়ের ভাষা,বাংলা মোদের বাঁচার আশা,পলকে পলকে বাংলা মোদের দুর্বিনীত স্বপ্ন দেখায়//

বাংলা মোদের অমর ইতিহাস, বাংলা মোদের স্বপ্ন বিলাশ /বাংলায় মোরা লিখিপড়ি,বাংলায় করি হৈচৈ আনন্দ উল্যাস /কেঊ কভূ কেড়ে নিতে পারবেনা,কাউকে কেড়ে নিতে দিবনা, না-না-না দিবনা,বাংলাকে মোরা যতনে রাখবো মনের মনিকোঠায়//



অ       আ        ক     খ     গ   ঘ--আ-মরি বাংলা ভাষা,


১,বর্তমান পৃথিবীতে জাতিসংগের সদশ্যভূক্ত ১৯৫টি দেশের মধ্যে একমাত্র ভাষার উপর ভিত্তি করে জন্ম নেওয়া   স্বাধীন রাষ্ট্রের মধ্যে অন্যতম প্রধান রাষ্ট্র হলো আমাদের সবার প্রিয় এই বাংলাদেশ।আমাদের অফুরন্ত গর্বের কোন অন্তঃ নেই এই দেশকে নিয়ে।আমরা সবাই কি এবার সমশ্বরে বলতে পারি না- জয় বাংলা-!জয় হউক অমর ২১-!

জাতিগোষ্টির নামে, রাজা বাদশার নামে কিংবা দেবদেবির নামে কল্পনা প্রসুত অনেক দেশের নাম করন করা হয়েছে, কিন্তু আমাদের দেশটাই একমাত্র ব্যতিক্রম।ভাষার ভিত্তিতে,ভাষার নামে, ভাষার দেশ, মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ।বলা যায় ভাষা রাষ্ট্র।

 আমাদের এই ভাষা আজ আন্তর্জাতিক ভাবে সিকৃত। আমরা কেউ সঠিক ভাবে জানিনা, কবে কিভাবে আমাদের এই বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছিল।তবে নেপালের রাজ দরবারে আবিষ্কৃত বাংলা ভাষায় রচিত চর্চাপদ থেকে অনুপ্রানিত হয়ে ধারণা করতে পারি যে আমাদের বাংলা ভাষা অনেক অনেক পুরানো।ধারণা করা হয় আদি ব্রম্মালিপি থেকেই বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে।

সেই যাই হউক,বর্তমান বিশ্বে আধুনিক সভ্য দেশ এবং পূর্ন গনতান্ত্রিক দেশ গুলির অবস্হান হলো ইউরোপ মহাদেশে।প্রচীন গ্রীক হলো দার্শণিকদের চারণ ভূমি।গ্রীকের মত এত দার্শণিক পৃথিবীর আর কোন দেশে জন্ম গ্রহন করেননি।বর্তমান পৃথিবী আজো গ্রীক দার্শণিক মতবাদ ধারা প্রভাবিত।কিন্তু আশ্চার্যের ব্যপার হলো এই দার্শণিকরা বেশির ভাগই ছিল অশিক্ষিত, কিন্তু অসাধরণ জ্ঞানের অধিকারি।তার চেয়েও আশ্চার্যের ব্যপার হলো  প্রাচীন এবং বর্তমান সভ্যতা এবং দার্শণিকের তীর্থক্ষেত্র এই ইউরোপের তথা গ্রীক জাতি গোষ্টিকে ভাষা এবং কলম কালি কাগজের ব্যবহার শিখিয়েছিল ফিনিশীয় জাতি গোষ্টি।ফিনিশীয়রা ২২টা বর্ণ নিয়ে ব্যঞ্জনবর্ণ আবিষ্কার করলে গ্রীক দার্শণিকরা শ্বরবর্ণ জুড়ে দিয়েই আধুণিক ভাষালিপি পদ্ধতি শুরু করে।

এই গ্রীকদের কাছ থেকে বর্ণমালা  দ্বার করে আবার  ইতালীয়রা রোমান সভ্যতার বিস্তার ঘটায়।সভ্যতা বলি আর অসভ্যতা বলি একসময় ইতালী ছিল বিশ্বে প্রথম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র।শুনতে অবাক বিশ্ময় লাগলেও ইতালী নামটাও গ্রীকদের দেওয়া।ইতালী শব্দের অর্থ চর্মাসার গরুর চারণভূমি।আবার গ্রীক নামটাও ইতালীয়দের দেওয়া।ইতালীয়ান শব্দ গ্রাসিয়া অর্থ ধন্যবাদ থেকে গ্রীক নামকরন হয়েছে।এটা নিয়ে অনেকেই কনফিউস বা দ্বিধাধন্ধে ভোগেন যে এই দুজাতির মধ্যে কোন সভ্যতা আগে বিকশিত হয়েছিল। রোমান সভ্যতা না গ্রীক সভ্যতা?এর যতাযত উত্তর হলো গ্রীক সভ্যতা।গ্রীক সভ্যতা আগে বিকশিত হলেও এই রোমানরা আবার দীর্ঘদিন গ্রীকদেরকে শাসন করেছে।এই সেদিন গ্রীকরা রোমানদের কাছ থেকে পুর্নস্বাধিনতা লাভ করেছে।আরো বিশ্ময়ের ব্যপার হলো প্রায় সারা দুনিয়া শাসন করা ব্রিটিশরাও রোমানদের কাছে একসময় পরাধিন ছিল। রোমানদের গড়া বস্তি লন্ডনিয়ম থেকেই আধুনিক লন্ডনের নাম করন হয়।

আমরা জানি যে প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মিশরীয় সভ্যতা। অর্থ্যাৎ ফ্যারাউনদের সভ্যতা।তারা ভাষা ব্যবহার করতো চিত্রলিপি ধারা।তারপর আসে সুমেরু সভ্যতাগুলোর নাম।এই অঞ্চলের ব্যবিলীয়রা ব্যবহার করতো কোণিকলিপি।ব্যবিলিয়ন রাজা হাম্মুরাবি সে যুগে কৌণিক শিলালিপিতে লিখা আবিষ্কিৃত ১৮০টি আইনের ধারা আধুনিক আইনেও তা প্রজয্য।

ক্যালডীয় সভ্যতার কর্নধার নেবুচাদ নেজার শূন্য আবিষ্কার করে আধুনিক ভাষা সাহিত্য ও বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে তরান্মিত করে বিশ্ময় সৃষ্টি করে দিয়েছেন।ঘন্টা দিন সপ্তাহ পক্ষ মাস বৎসর সৌরজগতের মৌলিক ধারণা ও গ্রহ গুলি ক্যালডীয় সভ্যতারই আবিষ্কিৃত।তবে প্রচলিত বার মাসের ইংরেজি নামকরন করেন রোমানরা।

আমার কাছে সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় হলো যে ইউরোপিয়ানরা কাগজ কলম কালির ব্যবহারই জানতো না, সে ইউরোপিয়রা কেমন করে আজ এত সভ্য হলো-? আমরা আরো দেখতে পাই যে রেনেসাঁর যুগে এসে আধুনিক সকল দার্শণিকের জন্ম হলো শুধু এই ইউরোপেই। বিশেষ করে ফ্রান্স, ইতালী এবং জার্মানীতেই।

আর আমরা বাঙ্গালী জাতি,আমাদের কৃষ্টি কালচার এত উন্যত থাকার পরেও আমরা পড়ে রলাম কোথায়-?আজ সমগ্র বিশ্বে আমরা অষ্টম বৃহত রাষ্ট্র হিসেবে সুপরিচিত।সারা বিশ্বে চড়িয়েচিটিয়ে আছে প্রায় ৩৫ কোটি বাঙ্গালী, কিংবা বাংলা ভাষাবাসি। আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্রের অনেক ভাষার মধ্যে ব্যবহৃত হয় শুদ্ধ বাংলা শব্দ। আন্দামান নিকোভার লোকেরা বাংলা ভাষাবাসি।সমগ্র বিশ্বের বাংলা ভাষাবাসির মধ্যে অভিন্ন সোহর্দপুর্ন সম্প্রীতি অতি প্রয়োজন।এই বাংলা ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি যুদ্ধ করেছি এই ভাষার নামেই বাংলাদেশ নামকরণ করেছি। আসুন আমরা আমাদের প্রাণের প্রিয় এই বাংলা ভাষার প্রতি যতাযত সন্মানবোধ প্রদর্শন করি।সবাই সর্বক্ষেত্রে বাংলায় লিখিপড়ি কথা বলি।অমর হউক একুশ,অমর হউক আটই ফাল্গুন।জয় বাংলা।

                                                                                    ------ ফারুক

















Tuesday, February 13, 2018

রুপা ছিল আমাদেরই মেয়ে--!


সম্পর্ক-টা এল কিভাবে-?

আমি সব সময় নিজেকে প্রশ্ন করি, মানব সমাজের মাঝে এই যে পারিবারিক বন্দন বন্ধু বান্ধব রিস্তা কিংবা সম্পর্ক,এই সম্পর্কটা এল কি ভাবে? কেন বা এল? আসলেই কি দরকার ছিল সম্পর্কের?এই যে মা-বাবা, ভাই-বোন সন্তান সন্ততি, বিংবা স্বামী-স্ত্রির মত নৈসর্ঘিক একটা সুন্দর সম্পর্ক।
আমরা দেখতে পাই মানব সমাজে সম্পর্ক বা রিস্তা দু-রকমের হয়ে থাকে। একটা হলো রক্তের সম্পর্ক, আর অন্যটা হলো সম্প্রিতির মাধ্যমে। একে অপরকে দেখে শুনে ভালো লাগা থেকে ভালবাসা কিংবা প্রেম প্রিতীর মাধ্যমে সম্পর্ক হয়ে থাকে।মাঝে মধ্যে দেখা যায় রক্তের সম্পের্কের চেয়েও সম্প্রিতির সম্পর্কটা মহৎ হয়ে দাঁড়ায়।এমন কি সম্প্রিতির সম্পর্কের কাছে রক্তের সম্পর্ক তুচ্ছ প্রমাণিত হয়।অনেক সময় প্রচলিত আইনের উর্ধে উঠে আসে মানবিক সম্পর্ক।ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এমন একটি বিশ্মকর ঘঠনার রায় দিয়েছে।

যে ভাবেই হউক সম্পর্কটা এসেছে মানব সমাজের মঙ্গলের জন্যই এসেছে।প্রেমপ্রিতী ভালবাসা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সন্মান করার এক অনন্য বহিপ্রকাশ হলো এই সম্পর্কটা।কিন্তু দুঃখের কথা হলো মানুষের এই সুন্দর সম্পর্কটা আজ আর অটুট নেই।এই সম্পর্কের সন্মান ধরে রাখতে মানুষ আজ চরম ভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মানুষের মাঝে আজ পরস্পরের প্রতি বিন্দু মাত্র সন্মান বোধ নেই।

যদি থাকতো আমাদের এই সমাজ ব্যবস্হাটা অন্যরকম হতো। প্রয়োজন হতো না গনতন্ত্রের সমাজ তন্ত্রের। প্রয়োজন হতো না আইন কানুন কোর্ট কাছারি পুলিশ থানা পাঁড়ির।মানব সমাজের মাঝে এই সম্পর্কের বৈশিষ্ট ভেঙে পড়ার কারণেই আজ সমাজের এই অবক্ষয়।এত খুন খারাবি ধর্ষন লুটের মত লোমহর্ষক ঘটনাবলি।
আজ টাঙ্গাইলের কালিহাতির মেয়ে রুপা হত্যার রায়ে চারজন ধর্ষককে আদালত সর্বচ্চ সাস্হি ফাঁসির  দিয়েছে। ফাঁসি কার্যকর অবশ্যই হবে।একটা জগন্য অপরাধের জন্য এই সাজাই তাদের প্রাপ্য।কিন্তু একটা সভ্য সমাজের জন্য এটা মোটেই কাম্য নয়।একটা প্রাণের জন্য চারজনের প্রাণ আজ চলে যাবে।এই পৃথিবীতে মানুষ আসেই বা কয়জনের জন্য।কেন মানুষ এমন কুৎসিত জগন্য ঘটনা গুলি ঘটায়?
সেদিন কি ঘটেছিল--?
ল-কলেজে পড়ুয়া মেয়েটি ঢাকা থেকে ছোঁয়া নামক পরিবহনের একটি বাসে করে বাড়ি ফিরছিল।পরিবারের অসচ্ছলাতার কারণে মেয়েটি একটি বিপনি বিতানে চাকুরি করে নিজের পড়ার খরচ চালাচ্ছিল,পাশাপাশি নিজের পরিবারকেও সহযোগতিা করে আসছিল।এমন সাহসি মেয়ে অবশ্যই প্রসংসার যোগ্য।পিতৃহার মেয়েটি বাসবর্তি বাসে করেই নির্ভয়ে যাচ্ছিল।কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস কালিহাতি পোঁছানোর আগ পর্যন্ত একে একে সব যাত্রি নেমে গেল মেয়েটি একা বসে আছে পিছনের সিটে।মেয়েটিকে একা পেয়ে বাসের ড্রাইবার হেলফার কন্ট্রাকটর পাঁচজন পুরুষ মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে হত্যা করে জঙ্গলে লাশটি ফেলে চলে গেল। কি ভিবৎস একটি ঘটনা। পরদিন পুলিশ খবর পেয়ে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাপন করে ফেলল।পত্রিকায় ছাবি দেখে রুপা নামের মেয়েটির ভাই তার বোন বলে সনাক্ত করে থানায় মামলা করলো।তারপর গন দাবিতে আদালত এই রায় দিল।
ধর্ষণের আগে মেয়েটি লম্পটদেরকে নিজের কাছেছ থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও মোবাইল সেটটা দিয়ে বললো ভাই তোমরা এগুলি নিয়ে যাও, তবু তোমরা আমাকে অত্যাচার করোনা ভাই প্লিজ আমি খারাপ মেয়ে না। এই কুৎসিত লম্পটগুলি ভাই নামের রিস্তার দোহাইটার  একটুও মর্যাদা  রাখল না। ধিক্কার জানাই এই সব জানোয়ারদেরকে।
রুপা আমার আপনার মেয়ে, রুপা এই সমাজের এই রাষ্ট্রের মেয়ে। রুপাদের ইজ্জত  এই সমাজ রাষ্ট্রর ইজ্জত।রুপার ইজ্জত আমার আপনার সকলের ইজ্জত। সবার কর্তব্য রুপাদের ইজ্জত ও জীবন রক্ষা করার।এই সমাজ থেকে দুর করতে হবে।

 

অজ্ঞসব জনপ্রতিনীধি,

সত্যই শক্তি, সত্যই সুন্দর,