এক,ইটালিয়ান নাগরিক ফ্রাঙ্কো পুছ আমার বেশ কিছুদিনের সুপরিচিত বন্ধু মানুষ।বয়স তার ছিচল্লিশ।ইটালির সারদিনিয়ায় তার পৈত্রিক নিবাস ছিল এক সময়। বর্তমানে তারা জার্মানের অধিবাসি।তার জন্ম কিন্তু জার্মানীতেই।গত দুসপ্তাহ আগে তার সাথে একটি কাজে আমার অন্য শহরে যাওয়া হয়।সে তার লাল টুকটুকে ফ্রড কম্বি গাঁড়িটা ড্রাইব করছিল তখন। আমি তার পাশের সিটে বসা। মৃদু সুরে গান বাজছে ডেস বোর্ডের অডিওতে।আমি খুবি কম কথা বলা মানুষ।সে শহরে আমরা কাজটা সাকসেছপুলি সেরে ফুরফুরে মেজাজে ফিরছি। আসার পথে হঠাত করে ফাঙ্কোকে জিজ্ঞেস করলাম,তোদের ইটালির অবস্হা এখন কেমন? তু্ই এখানে কেন? আর দেশে ফিরে যাবিনা? বস! আর কি চাই, আমার আর কিছু জিজ্ঞেস করতে হলো না।পুরো আধা ঘন্টা সময় ধরে ফ্রাঙ্কো বলতে লাগলো---
শুনুন ফ্রাঙ্কোর মুখে---ইটালির শারদিনিয়ায় আমার পৈত্রিক নিবাস।সেখানে আমার দাদাদাদির জুটের ফেক্টরি ছিল। অনেক শ্রমিক কাজ করতো সেখানে।আমার বাবাও সে ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল।আমার দাদা পাকিস্তান থেকে জুট ইমপোর্ট করে এনে কারখানায় নানা রকমের ব্যবহারি দ্রব্য সামগ্রি বানিয়ে পুরো ইউরোপে রপ্তানি করতো।প্রচুর টাকা ইনকাম হতো। দাদাদাদির মুখে শুনেছি জুট তখন জুট ছিলনা গোল্ড ছিল গোল্ড।কিন্তু ১৯৭০ সালে হঠাত করে পাকিস্তানে যুদ্ধ শুরু হলে জুট আসা বন্ধ হয়ে যায়।সাথে সাথে দাদার ফেক্টরিও বন্ধ হয়ে যায়।পরে আমাদের দাদাদাদি পুরো পরিবার নিয়ে জার্মানে চলে আসে।এই ফাল্কে ফেক্টেরিতে আমার বাবা চল্লিশ বছর চাকুরি করে ইটালিতে ফিরে গিয়ে গত বছর মাবাবা দুজনই ইন্তেকাল করেছেন।সব শুনে পরিশেষে তাকে বললাম জুট নামের সেই গোল্ড এর দেশটাই আমার আজকের বাংলাদেশ।জুট-কে আমরা বলতাম সোনালি আঁশ আর তোমরা বলতে গোল্ড।
দুই,তুরকিশ নাগরিক মোস্তফা।বয়স ছাপ্পান্ন।আটত্রিশ বছর ধরে জার্মানে থাকে।আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত প্রতিবেশি ও কলিগ।স্বল্পশিক্ষিত দাঁড়িওলা মৌলবাদী টাইপের মানুষ।তার ছেলে ও সেরকম।তুর্কির গ্রামিন পরিবেশের ডোঙ্গা পায়জামাও ফতুয়া পড়ে মাঝেমধ্যে। সে যাই হউক গত সপ্তাহে কাজের রেস্ট সময়ে কথার ফাঁকে সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো তোরা কেন পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে গেলি?দেখ এখন পাকিস্তান কোথায় আর বাংলাদেশ কোথায়? পাকিস্তান কত ধনি আর তোরা কত গরিব। পাকিস্তানের কাছে এটম আছে ইত্যাদি।
মেজাজটা চড়ে গেল তার কথা শুনে।বললাম তুই কিছুই জানিস না।আজ বাংলাদেশে পাকিস্তান থেকে সব সুচকে এগিয়ে আছে।আলাদা হয়ে বাংলাদেশ উচিত কামটাই করেছে।সে বললো না না মোটেই ভালো হলো না। বাংলাদেশের মানুষ আজ খেতে পায়না। ঝড় বৃষ্টি বন্যা হয় সব সময়।অনেক মানুষ মারা যায়।মসজিদের ঈমাম সাহেব ও তাই বলেছে।তোদের দেশ যদি এতই ভালো তো তুই জার্মানে কেন এলি?আমি তাকে গালি দিয়ে ফিরা প্রশ্ন করলাম তোরা চল্লিশ লাখ তুর্কিরা কেন আসলি জার্মানীতে?কেন নিজের দেশে ফিরে যেতে চাস না?সে বললো, ইহুদীদের কারণে আমরা এখানে এসেছি সেটা তুই বুঝবিনা।
আমি অনেকবার শুনেছি এবং পত্র পত্রিকায় পড়েছি। মুসলমান ভাই ভাই একসাথে থাকা ভালো ছিল।দেখ ওসমানি সময়ে কত ভালোভাবে সব মুসলিম দেশ একসাথে ছিল।আমরা চাই আবার ওসমানি সময় ফিরে আসুক।ওসমানি খেলাফত আবার কায়েম হবে ইনশাল্রাহ!
এই মুর্খের সাথে আমি বেশি তর্ক করলাম না। দেখলাম যে আমাদের দেশের ব্যপারে তার কোন অভিজ্ঞতাই নাই। সে রাতে লোকটি গাঁড়ি এক্সিডেন্ট করেছে।ভাগ্য ভালো বেঁচে গেছে।তাও আবার আমার গাড়ির সাথে।বেকুবটা পিছন দিয়ে লাগায়ে দিছে।তেম খয়খতি হয় নাই। তবুও একহাজার ইউরো জরিমানা হয়েছে। গাড়িটা ছিল কম্পানির, আমি চালাতাম।
তিন,থমাস ট্রুডো জার্মান নাগরিক। বয়স ৫৪ বছর।বিয়ে শাদি করে নাই। থাকে মা-বাবার বাড়িতে।আমার কলিগ।সে নিজেই কৌতুহলি হয়ে বলতে থাকে তোদের বাংলাদেশে আগে প্রচুর বন্যা হতো অনেক মানুষ মারা যেত,কিন্তু এখন বোধ হয় একটু কম হয়।বললাম তুই ঠিক ধরেছিস, তুলনা মুলক ভাবে এখন একটু কম হয়।হলেও ক্ষয়ক্ষতি একটু কমই হয়।দেখলাম যে লোকটির মোটামুটি অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশ সম্পর্কে।জার্মানী কিংবা অন্য দেশের লোকেরা বন্যা দুর্গত গরিব দেশ হিসেবেই জানে।আবার অনেক মানুষ আছে বাংলাদেশ পৃথিবীর কোন জায়গায় অবস্হিত তাও তারা জানে না।এখন অবশ্য পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে।বাংলাদেশকেও বিদেশীরা জানতে শুরু করেছে।মেইড ইন বাংলাদেশ লিখা পোষাক এখন ইউরোপের সুপার মার্কেটে সোভা পায়।দেখে গর্ভিত হই।
----ফারুক,