Friday, October 22, 2021
কুখ্যাত খুনি জিয়ার দল মানেই হুজোগ গুজোব আর মিথ্যাচারঃঃ!
Saturday, July 24, 2021
প্রবাসীর জীবন কথা...
Wednesday, July 14, 2021
জানোয়ার জেনারেলরা,
জগদিস চন্দ্র বসু
|
১,--একমাত্র বাঙ্গালী বিজ্ঞানী স্যার জগদিস চন্দ্র বসু। তিনি একসময় প্রথিবী বিখ্যাত বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি একাধারে পদার্থবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, এবং কল্পোবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ছিলেন।তাকে বলা হয় রেডিও বিজ্ঞানের জনক।কারণ তিনিই প্রথম বিদ্যুতের মাধ্যমে তরঙ্গ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বাংলাদেশের ময়মনসিং জেলায় তার জন্ম হলেও পিতৃনিবাস ছিল ঢাকার বিক্রমপুরে।তিনি বহুবিদ প্রতিভার অধিকারি ছিলেন।বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষনা ধর্মি অসংখ্য প্রবন্ধ লিখে এবং বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাসন বিবৃতি দিয়ে তিনি খ্যাতি কুড়ায়েছেন।সে যাই হঊক আমি তার ব্যাপারে বিস্তারিত না লিখে ছোট একটি গল্পের কথা শেয়ার করছি।
আমরা সবাই কম বেশি জানি স্যার জগদিস চন্দ্র বসু একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী হিসেবে।বৃক্ষ ব্রততী কিংবা গাছপালার ও যে প্রাণ আছে, তা তিনিই প্রথম প্রমান করেন।গাছপালাকে তিনি নিজের সন্তানের মত ভালোবাসতেন।
গাছপালার উপর গবেষনা করতে গিয়ে তিনি তার ঘরের দু দিকের দুবারান্দায় কিছু গাছপালাকে দুভাগে ভাগ করে লালন পালন করতে লাগলেন। সার পানি যা যা দরকার উভয় দিকের গাছগুলিকে সমান ভাবে দিয়ে যাচ্ছিলেন ।কিন্তু সেবা যত্ন কিংবা ভালোবাসা দেননি সমানভাবে।
তিনি রোজ খাবার(পানি) দিতে গিয়ে এক বারান্দার গাছগুলিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন।যেমনঃ-তোরা বেয়াদপ বদমাস,ছোট লোক,কুৎসিত কদাকার, কমবকত শরম হায়া নাই। খামাখা তোদের জন্য এত কষ্ট করতেছি,তোদের দিয়ে কিচ্ছু হবেনা, ইত্যাদি।
আর অন্যদিকের গাছপালা গুলিকে পানি দিয়ে আদর যত্ন করে রোজ বলতেন,তোদের মত এত সুন্দর সতেজ এত ভালো গাছ কি পৃথিবীতে আর আছে?তোদের দিয়েই সৃষ্টি হবে সুন্দর পরিবেশ, আমি তোদেরকে অনেক অনেক ভালোবাসি ইত্যাদি।
বেশ কিছুদিন পরে বিজ্ঞানী বসু দেখতে পেলেন গালিগালাজ খাওয়া গাছগুলি মরে শুকায়ে কাঠ হয়ে গেল।আর আদরযত্ন এবং ভালোবাসা পাওয়া গাছগুলি আরো বড় সতেজ ও সুন্দর হয়ে উঠেছে।
তিনি অবাক বিশ্মিয়ে দেখলেন যে খোবে দুঃখে অভিমানে শরমে ভরমে গালি খাওয়া এক বারান্দার গাছগুলি মারা গেল। বলা যায় আত্মহত্যা করলো। আর অন্য বারন্দার গাছগুলি আদর যত্ন স্নেহ ভালবাসা পেয়ে মোটা তাজা ও সতেজ সুন্দর হয়ে উঠলো।
কি বিশ্ময় ঘটনা--!গাছপালার মধ্যেও প্রাণ আছে, লজ্জা শরম হায়া কিংবা খোব অভিমান দুঃখবোধ মান অভিমান আছে।বনের জংলী জানোয়ারের মধ্যে ও আছে। কিন্তু অকল্পনিয় হলেও সত্য,এই পৃথিবীতে কিছু মানুষের মধ্যে তা নাই। বিশেষ করে এই বাংলা দেশের কিছু বাঙ্গালীর মধ্যে নাই। মোটেই নাই।
মহাভারতে দেখতে পাই আজ থেকে আড়াই হাজার বছর পূর্বে দ্বিতীয় পান্ডব ভীম মঘধ রাজাকে বধ করে এই জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। পান্ডব ভীম তখন এই বঙ্গভূমির নাম রেখেছিল অঙ্গভূমি।
কিন্তু চাটুকার পরের তোষাম্মদি পাঁ লেহনকারির নিমক হারামীতে এই জাতি ধরে রাখতে পারেনি তাদের গর্বের স্বাধীনতা।বার বার এই জাতিকে পরতে হয়েছে পরাধিনের জোয়াল।বার বার এই নিমক হারাম নিকর্মা জাতি হারিয়েছিল তাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা।
হাজার হাজার বছর ধরে এই বাঙ্গালী জাতি মঘ হার্মাদ ওলন্দাজদের হাতে নেড়ি কুত্তার মত লাথি উষ্টা অবহেলা অপমান চড় থাপ্পর মার খেয়েছে।লর্ড ক্লাইবের জীবনী থেকে জানতে পাই সুজলা সুফলা সুখি সমৃদ্ধ স্বাবলম্ভি বাঙ্গালীরা ভীনদেশি জলদস্যুদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে নিজের সঞ্চিত সম্পদের কিঞ্চিত পরিমান সঙ্গে নিয়ে গাট্টিগোট্টা গুটায়ে বনের হিংস্র জানোয়ারের ভয় ডর উপেক্ষা করে জঙ্গলে লুকায়ে প্রাণ বাঁচাতো। প্রতিরোধ প্রতিবাদ করার মত কোন ক্ষমতা সামর্থ কিংবা শাহস ছিলনা এই জাতির।
দুশত বছর ইংরেজরা এই বাঙ্গালী জাতির উপর চালিয়েছে জুলুম অত্যাচার নিপিড়ন।জবরদস্তি করে দিনের পর দিন ঘানি টানিয়েছে, নীল চাষ করিয়েছে।কত ত্যাগ তিতীক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে ইংরেজরা বিতারিত হলেও,দুর্ভাগা এই জাতির উপর জগদ্দল পাথরের মত চাপিয়ে বসলো পাক হায়েনা নামক পাকিস্তানীরা।ছলে বলে কৌশলে প্রায় চব্বিশ বছর তারা শুধু জুলম অত্যাচার নিপিড়ন চালিয়েছিল এই নিরিহ বাঙ্গালীর উপর।তারা সুজলা সুফলা বাংলার ধন সম্পদ লুন্ঠুন করে ঐ মরু পাকিস্তানের বেআবাদি জমিকে আবাদ করেছে। গড়ে তুলেছে উঁচু উঁচু দালান কোঠা। পরিত্যক্ত জায়গায় সুপরিকল্পিত ভাবে গড়ে তুলেছে বিশ্বমানের ইসলামা বাদের মত রাজধানী শহর।অতচ এই বাংলায় তারা একটা আলফিনের ফেক্টরি পর্যন্ত গড়ে তুলেনি। খাঁটি সোনার চেয়েও খাঁটি বাংলার মাটি, যে মাটিতে বছরে চার বার সোনালি ফসল ফলে, সে বাংলার মানুষ মরে ক্ষিদায় রোগে শোকে খরায় বন্যায় প্রাকৃতিক দুর্য্যগে। অতচ আবাল পাকিরা দেখেও দেখেনা।বরঞ্চ তারা কাজে কর্মে আচার আচরণে ঘৃণা প্রকাশ করতো এই বাঙ্গালী জাতিকে। উপহাস তাচ্ছিল্য করে বলতো বাঙ্গালী চুতিয়াকা জাত হ্যায়। চাউল মাছলি খানেওলা জাত।
অবশেষে শত চেষ্টায় শত সহস্র বছরের অবিরাম যুদ্ধও ত্যাগের বিনিময়ে তিরিশ লাখ শহীদের তাজা প্রাণ আর দুলক্ষাধিক মাবোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙ্গালী জাতি পেল স্বাধিনতা।হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী জাতির জনকের একক নেতৃত্বে বাঙ্গালী পেল মহান স্বাধিনতা।
মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই এই বাঙ্গালী জাতি তার জনককে নির্মম ভাবে স্বপরিবারে হত্যা করে প্রমান করলো, তারা যে কত বড় জগন্য ও বেঈমান। খোবে দুঃখে অভিমানে মরে যাওয়া ঔ গাছপালা লতাপাতার চেয়েও নিঃকৃষ্ট এই বাঙ্গালী জাতির কিছু কুলাঙ্গার। গাছপালার লজ্জা শরম হায়া আছে, কিন্তু এই কুলাঙ্গার বাঙ্গালী জাতির লজ্জা শরম হায়া বলতে কিছু নেই। কিছু বাঙ্গালী আজো রাজাকারই রয়ে গেল, তারা ইংরেজ আর পাকিদের গুনগান করে প্রমাণ করে তারা যে আসলেই গোলামের জাত গোলাম।পাছায় লাথি মারলেও তারা পেয়ারে পাকিস্তান বলে নেঁজ নাড়ে নেড়ি কুত্তার মত।
শিয়ালের ঘরে ১০০% শিয়ালের বাচ্ছাই জন্ম নেয়।কুত্তার ফয়দাসে ১০০% কুত্তার বাচ্চাই জন্ম নেয়। কিন্তু এই বাঙ্গালী জাতির ঘরে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য জানোয়ারের বাচ্ছা। অসংখ্য শিয়াল কুকুরের বাচ্চা।তারা আজো পাকিদের পাঁ চাটে। তারা আজো তিরিশ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, সন্ধেহ করে। আর যাই হউক,এরা কোনদিন মানুষ হতে পারেনা, এরাই জানোয়ারের বাচ্চা,এটাই প্রমাণিত সত্য।
২,-- জানোয়ার জেনারেল,রা ঁঁঁঁঁঁ
মিশরের কর্নেল জামাল আব্দেল নাসের থেকে পাকিস্তানের জেনারেল আয়ূব খান,
জেনারেল জিয়াউল হক থেকে বাংলাদেশের জিয়া এরশাদ।
সর্বকালের শ্রেষ্ট বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তার এক প্রবন্ধে বলেছেন,উর্দি পরা জেনারেলরা মস্তক বিহীন জানোয়ারের মত এক আজব প্রাণী।
কর্নেল জামাল আব্দেল নাসের |
মিশরের কর্নেল জামাল আব্দেল নাসেরকে কেউ বলে বিপ্লবি নেতা আবার কেউ বলে জগন্য স্বৈরচার।যে যাই বলুক নাসের ছিলেন মিশরের প্রভাবশালী একজন সামরিক নেতা।পঞ্চাশ ষাট দশকে পুরো আরব এবং আফ্রিকায় এই নেতা অত্যান্ত প্রভাব বিস্তার করেন। তার শাসনামলে আরব জাতীয়তাবাদ ও প্যান আরাবিজম এবং প্যান আফ্রিকাজম এর সুচনা ঘটে। ১৯৬৪ সালে পিলিস্তিনিদের সংঘটন পিলও ঘটনে এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দলনে তার গুরত্বপুর্ন ভূমিকা ছিল।
স্বৈরশাসক কর্নেল গাদ্দাফি হাফিজুল আসাদ সাদ্দাম হোসেন উগান্ডার ইদি আমিন কঙ্গোর মুবাট্টো থেকে পাকিস্তানের আয়ূব খান এরা সবাই নাসেরের অনুসারি কিংবা অনুরক্ত ভক্ত ছিলেন।আবার নাসের ছিলেন ইসলামি ব্রাদার হুডের অনুসারি।
তরুন বয়সে সব কাজে অযগ্য হয়ে এই নাসের এক মন্ত্রির সহযোগিতায় মিলিটারিতে ভর্তি হওয়ার চান্স পান। বস তারপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। মিলিটারি এবং পুলিশ এমন কি ল কলেজেও ভর্তি হতে গিয়ে বাদ পড়ে যান নাসের। মিলিটারিতে ভর্তি হওয়ার অল্প কয় বছরের মাথায় তার সিনিয়র আরেক জেনারেল মোহম্মদ নাজিবকে নিয়ে প্রথমে ১৯৫২ সালের শুরুর দিকে রাজা প্রথম ফারুককে গদিচ্যুত করে দেশ ত্যাগ করতে বাদ্য করেন। দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহি রাজতন্ত্রকে বিলুপ্ত করে জেনারেল নাজিব নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষনা করেন।অবশ্য রাজা ফারুকের শিশু পুত্র ফুয়াদকে নামকাওয়াস্তে রাজা ঘোষনা করলেও ১৯৫৩ সালে এসে রাজতন্ত্র সম্পুর্ন বিলুপ্ত করে রাজা ফারুকের ধন সম্পদ নিলাম করে দেন।
জেনারেল জিয়াউল হক |
রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে তারা ঐতিহাসিক বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করেন।তাদেরকে এই বিপ্লবেসহযোগিতা করে ১৯২৮ সালে হাসান আল বান্নার গঠিত ইসলামি ব্রাদারহুড সংঘটন।পরে এই ব্রাদারহুডকে নিয়েই জেনারেল নাজিব ও কর্নেল নাসেরের মধ্যে সংঘাত বাধে।এবং এক পর্যায়ে নাসের জেনারেল নাজিবকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি হয়ে যান।আর অপরদিকে ঐ ব্রাদারহুডের শত শত সদস্যকে ফাঁসিতে ঝুলায়ে হত্যা করেন।হত্যা করেন জেনারেল নাজিবের শত শত অনুসারিকে এবং অসংখ্য শ্রমজীবি মানুষকে।
জেনারেল নাজিব এবং নাসের গং রাজা ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, ফারুক বিলাস বহুল জীবন যাপন করেন এবং সে একজন নারী লোভি। সে যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্য সপ্তাহে ৬০০টি কাঁছা ঝিনুক খান। বেন্টলি গাড়ি চালান। নাশপাতির মত হিরা ব্যবহার করেন ইত্যাদি।
১৯৬৪ সালের ১৮ই মার্চ রাজা ফারুক রোমে মারা যান।অভিযোগ উঠে নাসেরের গোয়েন্ধা বাহিনী বিষ প্রয়োগে রাজাকে হত্যা করে।মির্ত্যু পথযাত্রি রাজার অন্তিম ইচ্ছা ছিল কায়রোর আল্ রিফা মসজিদে অন্তিম শয়নের। কিন্তু নাসের রাজার লাশ মিশরে নিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ঔ সময় সৌদি বাদশা ফয়সল সৌদি আরবে রাজা ফারুকের লাশ দাপন করার জন্য বলে।পরে অবশ্য নাসের রাজি হয় এই সর্তে যে লাশ মিশর নেওয়া যাবে তবে আল রিফা মসজিদে দাপন করা যাবেনা।ইতিমধ্যে স্বজনরা রাজার লাশ রোমেই দাপন করে ফেলে।কিছুদিন পর গোপনে রোম থেকে রাজার লাশ মিশরে নিয়ে ইবরাহিম পাশা নামে গোরস্হানে দাপন করা হয়।নাসেরের মিত্যুর পর আনোয়ার সাদাত রাজা ফারুকের দেহাবশেষ তুলে নিয়ে সেই রিফা মসজিদেই দাপন করেন।
আমরা যদি ৫০-৬০ কিংবা ৭০-৮০ দশকের দিকে তাকাই। দেখতে পাই এই তিন চারটা দশক ছিল দেশে দেশে স্বৈরচার কিংবা জানোয়ার জেনারেলদের উত্থানের দশক। মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র ও ইউরোপের সামরাজ্যবাদী দুষ্ট চক্রের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদে এই সব ডিক্টেটররা নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে কিংবা দেশের স্বনামধন্য রাজা বাদশাকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে।
১৯৫৮ইং সালে স্বৈরশাসক জেনারেল আয়ূব খান যে ভাবে অখন্ড পাকিস্তানে মার্শাল ল জারি করে ক্ষমতা দখল করেন,--
তখনকার সংসদের স্পিকার জনাব আব্দুল হামিদ সরকারি চাকুরি করার অভিযোগে সরকারি দলের ছয় সদস্যকে বহিষ্কার করেন।যার কারণে সংখ্যাগরিষ্ট হারায় সরকারি দল।তখন সরকারি দলের সাংসদরা স্পিকারকে মারার জন্য ধাওয়া করেন।পরে অধিবেশন বসলে ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী স্পিকারের দায়িত্ব নেন।দায়িত্ব নিয়েই তিনি বহিস্কৃত ৬জনের সদস্যপদ পুনরায় বহাল করেন।এই কারণে বিরোধি দলের আবুল হাসান সরকার মাইকের স্টান্ডদিয়ে শাহেদ আলীর মাথায় বাড়ি দিলে তিনি আহত হয়ে কোমায় চলে যান, এবং কিছুদিন পরে মারাও যান।এই অজুহাতেই আয়ূব খান মার্শাল ল জাড়ি করে ক্ষমতা দখল করেন।প্রায় দশ ব্ছর তিনি এই ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখেন।বিরোধি দল মতের উপর চালান স্টিমরোলার।আট বছর পরে বাংলার অভিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে আগড় তলা ষড়যন্ত্র মামলায় জড়ানো হয়।যার কারণে প্রচুর গন আন্দলনের চাপে আয়ূব খান আরেক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা চেড়ে পালাতে বাদ্য হন।
মিশরের কর্নেল নাসের যে ভাবে ইসলামি ব্রাদার হুডের আদলে আরব জাতীয়তাবাদের সুচনা করেন।ঠিক তেমনি পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়াউল হক আফগানিস্তানের জঙ্গি নেতাদের প্ররোচনায় ইসলামি ব্রাদারহুডের মত হারকাত আল জিয়াদ আল ইসলাম নামে দক্ষিন এশিয়ায় জুড়ে আন্তঃর্জাতিক ইসলামি একটি ভয়ঙ্কর সংঘটন গড়ে তোলেন।। ১৯৮৪ সালে জেনারেল জিয়াউল হক ইসলামি এটম বোম টেষ্ট করে সমগ্র বিশ্বকে চমকে দিয়ে শক্তি প্রদর্শন করেন।যার ধরুন ভারত এবং আমেরিকা জিয়াউল হকের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন।
১৯৮৮ সালের ১৭ই আগষ্ট এক মর্মান্তিক বিমান ক্রাসে প্রাণ হারান পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক। তার সাথে আরো ছয়চল্লিশ জন লোক জলন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল সামরিক বাহিনীর বড় র্যাংকের অফিসার গন। বিমানটি পাকিস্তানের ভাওয়াল নগর থেকে ইসলামা বাদের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল।হঠাৎ করে মাঝ আকাশে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে দাউ দাউ করে জলে খন্ডবিখন্ড হয়ে জমিনে আছরায়ে পড়লো।একটি যাত্রিও বাঁচল না।বাঁচার কথাও নয়।
আমি তখন পাকিস্তানের করাচি শহরে অবস্হান করছি।কি ভাবে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ল,এবং কিভাবে জেনারেল জিয়া উল হকের দাপণ কাজ সম্পর্ন হলো টেলিভিশনে তা বিস্তারিত লাইপ কাস্টে দেখানো হয়েছিল সেদিন।আমি বসে বসে টিভির স্ক্রিনে দেখেছিলাম। সত্যিই ভয়াবহ একটি দুর্ঘটনা।
কে এই জেনারেল জিয়াউল হক?অখন্ড ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে জন্ম গ্রহন কারি জিয়াউল হক দিল্লী ভার্সিটি থেকে গেজুয়েসান করেই বৃটিশ সেনা বাহিনীতে ভর্তি হন।সাতচল্লিশের ভারত পাকিস্তান ভিবক্ত হলে জেনারেল জিয়াউল হক পাস্তিান সেনা বাহিনীতে যোগ দেন।মৃদু ভাষি জিয়াউল হক অত্যান্ত পরেজগার ছিলেন।পাকিস্তানে থাকা কালে লোক মুখে শুনেছি এই জেনারেল নাকি ফকির সন্যাসীর মত সব সময় সাথে একটা পানি ভর্তি লোটা রাখতেন।মসজিদে আযান হলেই নাকি তিনি অজু সেরে যে কোন জায়গায় নামাজে বসে পড়তেন। সে কারণে সেনা ছাউনীতে লোটা মেজর হিসেবেও নাকি তার বেশ পরিচিত ছিল।সে জন্যে তিনি সবার কাছে বিশ্বস্তও হয়ে উঠেন।
১৯৭৬ সালে পাক সরকার প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্ট্র জেনারেল জিয়াউল হক,কে জর্ডার্ন সেনা বাহিনীকে প্রশিক্ষন কাজে সহযোগিতা করার জন্য জর্ডানে পাঠান।জর্ডানের বাদশা ছিলেন তখন বাদশা হোসেন। জর্ডার্ন সেনা বাহিনী তখন একটা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে বাদশা হোসেনকে গদিচ্যুত করার চেষ্টা করলে জিয়াউল হক সে অভ্যুত্থান রুখে দেন।জুলফিকার আলী ভূট্ট্র এই খবর শুনে খুশি হয়ে সেনা বাহিনীর পাঁচ জন জেনারেলকে ডিঙিয়ে এই জিয়াউল হককে সেনা বাহিনীর প্রধান করেন।কিন্তু এই লোটা মেজর তার প্রতিদান দিলেন মাত্র এক বছরের মাথায় নির্বাচিত রাষ্ট্র প্রধান জুলফিকার আলী ভূট্ট্রকে গদিচ্যুত করে ,এবং মার্শাল ল জারি করে দুবছরের মাথায় ভূট্ট্রকে ফাঁসির মাধ্যমে।
জেনারেল জিয়াউল হক সেদিন টেলিভিসনে এক দীর্ঘ বক্তিতায় বার বার সফত করে বলেছিলেন,মাত্র তিন মাসের জন্য জারি করা হলো এই সামরিক আইন। তিন মাস পরে তিনি একটি সুষ্ট নির্বাচন অনুস্টান করে নির্বাচিত ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে মার্শাল ল উড্র করে আবার বেরাকে ফিরে যাবেন।কিন্তু দুঃখের বিষয় বাস্তবে করলেন তার উল্টোটা।যে ভূট্ট্র তাকে সেনা প্রধান করলেন সে ভূট্ট্রকে ১৯৭৭ সালে রাজা কাসুরি নামে বিরোধি একজন রাজনীতিবীদকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করেন। এমন কি মাত্র দু বছরের মাথায় এক প্রহশনের বিচারের মাধ্যমে ভূট্টকে ফাঁসি কাস্টে ঝুলিয়ে হত্যা করেন। সে সময় একমাত্র আমেরিকা ব্যতীত সমগ্র বিশ্বের রাজা বাদশা এবং রাষ্ট্র প্রধানরা জেনারেল জিয়াউল হকের কাছে অনুরোধ করেন,অনুরোধ করেন বিশ্বের মানবধিকার সংঘটন গুলো, ভূট্ট্রকে যেন ফাঁসি না দেওয়া হয়। ভূট্ট্রর দ্বিতীয় স্ত্রি নুসরাত ভুট্টু প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে বলেছেন ভুট্টু আর কোনদিন রাজনীতি করবেন না, এমন কি তারা পাকিস্তান ছেড়ে চিরতরে চলে যাবেন। কিন্তু জেনারেল জিয়াউল হক কারো কথাই শুনেন নাই। লিবিয়ার স্বৈরচার কর্নেল গাদ্দাফি কমান্ড স্টাইলে ভুট্টকে বাঁচানোর প্রস্তাব করেন।ভুট্টু তা প্রত্যাখ্যান করে দেন।
এই স্বৈরচার জেনারেল মিশরের ইসলামি ব্রাদার হুডের আদলে আফগানি জঙ্গিদের সব কয়টা দল নিয়ে গঠন করলেন হারকাত আল জিয়াদ আল ইসলাম নামে একটি আন্তঃর্জাতিক ইসলামি জিয়াদী দল।এই জিয়াদী দলটি পুরো দক্ষিন এশিয়াকে অস্হির করে তোলে।বিশেষ করে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশে ১৫ই আগষ্টের পর স্বৈরচার জিয়া ক্ষমতা দখল করে।এই জিয়ার হাত ধরেই আফগানিস্তানের তালেবানের ন্যয় বাংলাদেশেও নতুন করে জন্ম নেয় ইসলামি ছাত্র শিবির।জন্ম নেয় একের পর এক জঙ্গী সংগঠন।জিয়ার মৃর্ত্যুর পর এই দায়িত্ব নেয় আরেক স্বৈরচার এরশাদ। এরশাদের পর দায়িত্ব নেয় জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রি খালেদা জিয়া।খালেদার আমলে স্বাধীন বাংলাদেশ জঙ্গিদের সর্ঘ রাজ্যে পরিণত হয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে।সৃষ্টি হয় বাংলা ভাইয়ের মত কুখ্যাত জঙ্গিদের।অস্হির হয়ে উঠে জন জীবন।
স্বৈরচার এরশাদ স্বৈরচার জিয়াউল হকের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে পাকিস্তানের মত বাংলাদেশকেও ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষনা করে।জিয়াউল হককে এরশাদ বড় ভাই হিসেবে সন্মোধন করতো।জিয়াউল হক এরশাদকে খোদ পাকিস্তানি নিসান উপাধিতে ভূসিত করে।এরশাদের হাত ধরে আফগানি জঙ্গি নেতারা বাংলাদেশে এসে জেহাদের জন্য সদস্য সংগ্রহ করতে থাকে।প্রায় পাঁচ হাজার বাঙ্গালী আফগানি মুজাহিদে নাম লেখায়ে আফগানিস্তানে যায়।প্রকৃত অর্থে কেউই ইসলামের জন্য যায়নি।এদেরকে লোভ দেখানো হতো আফগানিস্তানের পাহাড়ে নাকি প্রচুর ডায়মন্ডে আছ।একবার যেতে পারলেই হয় লাইপ বনে যায়গা।
--------চলবে---
লম্পট স্বৈরচার এরশাদ |
হামজা বিগ্রেড ও বিএনপির তিন বিষ কন্যার মিশন----
বারিষ্টার রুমিন ফারহানা ।বারিষ্টার শাকিলা ফারজানা।আর স্যামা ওবায়েদ।
টকশোতে ঝড় তোলা এই তিন কন্যা রাজনীতির নামে বিএনপির ব্যানারে পাকিস্তানি গোয়েন্ধা সংস্হা আইএসআই এর প্রতিনিধী হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের মিশনে সামিল হলো।
আসুন জেনে নেই এই তিন বিষ কন্যাকে।
বাঃ শাকিলা গ্রেপ্তার |
১,বারিষ্টার শাকিলা ফারজানা---!কে এই শাকিলা ফারজানা--?
তিনি হলেন বিশিষ্ট ও বিতর্কিত চিটাগাং এর রাজনীতিবীদ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের কন্যা। সৈয়দ ওয়াহিদ আলম ছিলেন ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত সালউদ্দিনের পিতা ফকা চৌধুরির সহচর।বাংলাদেশের স্বাধিনতা যুদ্ধের সময় বিতর্কিত ভূমিকার জন্য যুদ্ধাপরাধি ট্রাইবুনালে তিনি একজন অভিযুক্ত আসামি।
সে বিতর্কিত বাপের কন্যা বারিষ্টার শাকিলা ফারজানা উচ্চতর পড়াশুনা করেও তিনি আজ র্যাবের হাতে বন্দি।শুধু বন্দি নয় তিনি আজ কারা অন্তরিন।তার বিচার চলছে।তিনি আইন কানুন ও আদালতের আড়ালে ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংঘটন শহীদ আল হামজা বিগ্রেডের সাথে জড়িত।।তিনি দুই কিস্তিতে ৫২ লাখ টাকা এই হামজা বিগ্রেডকে দিয়েয়েছেন।তাতেই র্যাবের তদন্তে প্রমাণিত হলো যে তিনি জঙ্গি সংঘটন হামজা বিগ্রেডের সাথে জড়িত।সে কারণেই তিনি এরেষ্ট হয়েছেন।বাঃ শাকিলা চিটাগাং বেএনপির জেলা আহব্বায়িক কমিটির সদস্য,এবং আইনজীবি ফোরামের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক।
কে এই হামজা বিগ্রেড?জামায়াত, হেফাজত, আনসার আল ইসলাম জেএমবিসহ সব জঙ্গি সংঘটন মিলে শহীদ আল হামজা বিগ্রেড নামে একটি ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংঘটন গঠন করেছে।আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত ও বাংলাদেশকে ধংশ করে বাংলাস্হান বানানোই তাদের মুল উদ্দেশ্য।
পাকিস্তানি বয়প্রেন্ডের সাথে রুমিন ফারহানা |
২,- বারিষ্টার রুমিন ফারহানা-।সেদিন একটা টকশোতে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় সম্পাদিকা অধ্যাপিকাঅপু উকিল বারিষ্টার রুমিন ফারহানাকে বেয়াদপ বলল। লা-জবাব অপু উকিল। জাতীয় একটা টেলিভিনে বারিষ্টার রুমিন ফারহানার এই বেয়াদপ গালিটা কি রুমিনের প্রাপ্য ছিল?কে এই রুমিন ফারহানা--?টকশোতে বাগ-যুদ্ধের নামে এসে তার বাঘ যুদ্ধে মেতে উঠার কারণ কি--?
রুমিন ফারহানা আরেক বিশিষ্ট ও বিতর্কিত রাজনীতিতিবীদ জনাব মরহুম অলি আহাদের একমাত্র কন্যা।ভাষা আন্দলনের সময় অলি আহাদের কিছুটা ভূমিকা থাকলেও তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি মোস্তাক ও গোলাম আযম ও নুরুল আমিনের সহচর।জিন্নার সহচর নুরুল আমিন মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন। জিন্নার মৃর্ত্যুর পর পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রি হয়েছিলেন।এই রাজাকারের কবরও হয়েছে পাকিস্তানের করাচি সদর এলাকাতে।
স্বাধিনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্হান কারি এই অলি আহাদ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সাথেও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।যদিও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৭৪ সালে তিনি জেলখানায় বন্দি ছিলেন।জেলখানায় বসেই তিনি মোস্তাকের সাথে যোগাযোগ রাখতেন।১৫ই আগষ্টের পরেই তিনি মুক্ত হয়ে খুনি মোস্তাকের দলে যোগ দেন।মোস্তাকের গড়া রাজনৈতিক দল ডেমক্রেটিক লীগের আমরন চ্যায়ারম্যান ছিলেন এই অলি আহাদ।শিক্ষায় দীক্ষায় সর্বচ্চ ডিগ্রি নিয়েও ভূল ও হঠকারি সিদ্ধান্তের কারণে তিনি ইউনিয়ন কাউঞ্চিলের মেম্বারও হতে পারেন নাই। ২০০৪ সালে খালেদা জিয়া তাকে স্বাধিনতা পুরষ্কার প্রদান করেন।সারা জীবনে এটাই তার প্রাপ্য।
অলি আহাদের মেয়ে বারিষ্টার রুমিন ফারহানার হঠাৎ করেই উত্থান হয় বিএনপির রাজনীতিতে। আসার সাথে সাথে তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদকের পদ পেয়ে যান।এক গোপন সুত্রমতে জানা যায় পাকিস্তানের গোয়েন্ধা সংস্হা আইএস আই নাকি টকশো কতৃপক্ষকে বড় অঙ্কের বিনিময়ে এই তিন কন্যাকে সুজোগ করে দিয়েছে।আইএসআই এর গুরুত্বপুর্ন ব্যক্তি বিগ্রেডিয়ার শেহজাদ নাকি এই মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছে।এই বিগ্রেডিয়ার শেহজাদের ছেলে হলো আবার রুমিন ফারহানার বয়ফ্রেন্ড সাইফ খান।
ডান থেকে শাকিলা,রুমিন ফাঃ ওস্যামা ওবায়েদ |
স্যামা ওবায়েদের মা শাহেদা ওবায়েদ সুপরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা ।তিনি মাঝেমধ্যে পত্রিকায় গুরুত্বপুর্ন কলামও লেখেন।রাজনৈতিক ভাবে তিনি আওয়ামী লীগকেই পছন্দ করেন বলে ধারনা করা হয়। একমাত্র মেয়ে স্যামার সাথে মোটেই তার বনিবনা নেই।মেয়েটা নিজের মাকে মা বলে শিকারও করেনা। সে ব্যপারে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে পত্রিকায় বিস্তারিত লিখেছেন।
স্যামা ওবায়েদ টকশোতে বলে বেড়ান তিনি নাকি কম্পিউটার বিজ্ঞানী। শুনা যায় তিনিও নাকি এক কুটনীতিকের সাথে দীর্ঘদিন লীভটোগেদার করার পর আওয়ামীলীগের এক নেতার ছেলেকে বিয়ে করে সংসারি হয়েছেন।তার স্বশুর পরিবারের সবাই আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত হলেও তিনি নাটকিয় ভাবে হঠাৎ বিএনপিতে যোগ দিয়ে গুরুত্বপুর্ন পদ পেয়ে যান।আইএসআই নাকি তাকে এই পদ লয়ে দেন একটা মিশন বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে।আর সেইটা হলো আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করে বাংলাকে বাংলাস্হান বানানো।
Saturday, May 29, 2021
রাজধানীর আকাশ আজ মেঘমুক্ত,
Sunday, April 18, 2021
এ ভাবে হাঁটতে হাঁটতে একদিন...
কুলাঙ্গারদেরকে বলছি...
সব কিছু লিখে রাখছি ...
Friday, April 16, 2021
১০ই মে বাবার বিদায় বেলার দিনঃঃ---
এই মসজিদের পাশেই আমার বাবা-মা দুজনই চির নিদ্রায় শায়িত, এই মসজিদের জায়গাও আমার বাবা দান করে গেছেন, আপনারা আমার বাবা মায়ের জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাদেরকে জান্নাত দান করেন, আমিন, |
Friday, March 12, 2021
একটি গাধার সন্ধানে আমি---
Tuesday, March 9, 2021
রাজনৈতিক দুনিয়ায় হত দরিদ্র কয়জন ভিখারী,
Thursday, March 4, 2021
,,নূর গ্রহ”
আবতারনা করছি,পুরোটাই জীবন থেকে নেওয়া।এই পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের জীবনটাই একটা গল্প, ইংরেজ সাহিত্যিক সেক্সপিয়ার বলেছেন পৃথিবীটা একটা রঙ্গমঞ্চ, আর মানুষের জীবনটা এক একটা নাটক।আসলেও তাই।নাটক সিনেমার প্রতিটি স্ক্রিপ্ট মানুষের জীবন থেকেই নেওয়া। কেউ লিখে দেখে কেউ লিখে শুনে আর কেউ লিখে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেে।আমার শিশু ও শৈশব কালের প্রত্যক্ষ দেখা এবং অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত ঘটনাবলিই লিখলাম।লেখার জন্য ও একটা পাকা হাতের দরকার।সাথে সাথে একটা স্পর্শকাতর মনেরও দরকার। চাইলেই যে কেউ লিখতে পারেনা।কাঁচা হাতে একটা দ্বায়বদ্ধতা থেকে লিখেছি।কেমন হলো তার বিচার পাটকের হাতে।
(এক)
ত্রিশ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সে মেয়েটির নাম ছিল নূর গ্রহ।
আমাদের এই হরিৎ পৃথিবীকে আমরা কেউ আদর করে ডাকি নীল গ্রহ, আবার কেউ ডাকি বিশ্ব, কেউ ডাকি পৃথিবী কেউ ডাকি বসুমতি বসুন্ধরা ইত্যাদি কত কত নামে।
বিগব্যাং থিউরিতে বলে মহা বিস্ফোরনের ফলে প্রথমে হাইড্রোজেন গ্যাস পরে হিলিয়াম গ্যাস থেকে প্রথমে নক্ষত্র তার পরে গ্রহ উপগ্রহ চাঁদ সুরুজ ও সকল জীবের বাসস্হান আমাদের এই পৃথিবীর সৃষ্টি। যাক সেটা অন্য প্রসঙ্গ।আমরা আগে শুধু নূর গ্রহের ব্যপারে কিছু শুনবো।
ঠিক তেমনি মেয়েটির বাবা-মা তার নাম ওরিয়েন্টেরি স্টাইলে রাখলেও আমি তার বাংলা নাম দিয়েছি নূর গ্রহ”বা নুরের দেশ।
তার ও নাম এখুনি বলছিনা কারণ, না জানি বদনাম হয়ে যায় কিনা।অবশ্যই তার আসল নাম বলবো একটু পরে।এখন থেকে সুবিধার্থে নূর গ্রহ মেয়েটিকে আমি সংখেপে ডাকবো নোরা বলে।
মাত্র মাস কয়েক আগে বিবাহিত নাদুস নুদুস চেহারার উজ্জল শ্যামলা বর্ণের মেয়েটি প্রথম বারের মত পিত্রালয়ে নায়রি হিসেবে এসে হঠাৎ করে পাগলপনা শুরু করে দিল। এর কারণ কি? কেন মেয়েটি পাগল হয়ে গেল?পুরো বাড়ির মানুষেরা সবাই হতবাক!
তখন আমি নিতান্তই কোলের ন্যাংটা শিশু।বাড়ির বড়দের কোল বুক পিট ছিল তখন আমার দুদন্ড শান্তির ঠিকানা ।
সৃষ্টির উৎসয়ের নামই হলো সৃষ্টিকর্তা।আমরা যাকে আল্লাহ বা ভগবান বলে থাকি।বহুগুনের অধিকারিকেই ভগবান বলা হয়।আল্লাহ পাক এই পৃথিবীর সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন বড়ই নিখুঁত ভাবে।নবী মোহাম্মদের অনবদ্য সৃষ্টির নামই আল্লাহ।ইলাহ থেকেই নাকি আল্লাহ নামের উৎপত্তি।আর ইলাহ নাকি বাক্কা শরিফের ৩৬০ মুর্তির প্রধান টির নাম।আল্লাহ নামের অর্থও হলো সর্বশক্তিবান, তিনি ইলাহার ও বড় কেউ বা বড় স্বত্বা।সে যাই হউক, আল্লাহ আছেন কিবা নাই মানব কুলে সংশয় বা দ্বিধা থাকতে পারে, কিন্তু মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করি। আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে বিন্দুমাত্র ভূলভ্রান্তি ধরার ক্ষমতা কোন মানুষের নেই।আল্লাহ মানুষকে সেই ক্ষমতা দেননি।
এই বিশাল কিশ্ব ভ্রম্মান্ডের বিরাট সৃষ্টির মাঝে একজন মানুষ খুদ্র থেকে অতি খুদ্রাকার একটি অনুকণা মাত্র। যা অনুুবিক্ষন যন্ত্র দ্বারা দেখাও কষ্ট সাদ্য। তবুও মানুষের অহঙ্কার হয় ভয়ঙ্কর।
ইংরেজিতে একটি কথা প্রচলিত আছে, নো বডি ইজ পারপেক্ট।সেটা বলার প্রয়োজন নেই । জীবন চলার মাঝে শিক্ষিত কিংবা সাধু পন্ডিত প্রতিটি মানুষই ভূলভ্রান্তি করে থাকে।অথবা নিজের অজান্তেই ভূল হয়ে যায়।ভূল থেকেই মানুষ শিখে।
পৃথিবীতে নিখুঁত কোন মানুষ নেই নিখুঁত কোন পরিবার নেই, নিখুঁত কোন প্রেম ভালোবাসা নেই, নিখুঁত কোন সম্পর্ক নেই, নিখুঁত কোন সংসার নেই।স্বচ্ছতাহীন গোলা পানিতে প্রতিনিয়ত আমরা শুধু হাবুডুবু খাচ্ছি।এটাই নিত্য সত্য।সুতরাং এই সব নিয়ে অযথা হা হুতোস দুঃখ ব্যদনা বা কষ্ট পাওয়ার কোন মানে হয় না।এই পৃথিবীতে মানুষ বাঁচে শুধু একবারই।বাঁচতে হলে ওসব মন মস্তিস্কো থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।
মহান আল্লাহ পাক মানুষকে তিনটি অসিম ক্ষমতা বা শক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সেটা হলো, এক, সৃতিশক্তি, দুই, কল্পনা শক্তি, তিন বুদ্ধিমত্বা শক্তি।
এই তিনটি শক্তির উৎসহক্ষেত্র হলো মানুষের মন।ইংরেজিতে যাকে বলে মাইন্ড।মনকে আবার দুভাগে ভাগ করা হয়, যেমন কনসেন্স মাইন্ড, এবং আনকনসেন্স মাইন্ড, যাকে বাংলায় বলে অবচেতন এবং চেতন মন।এই পৃথিবীতে মানব জাতির নয়নোভিরাম দৃষ্টি নন্দন সকল অনবদ্য সৃষ্টির প্রথম খসড়া স্হল হলো মানুষের মন মস্তিষ্কো।কত শতবার ড্রাপ ড্রয়িং কাটাচেড়ার খসড়া প্রথম হয়েছে মানুষের মন মস্তিষ্কে।মানুষের মস্তিষ্কের আবর্জনা দিয়ে এই পৃথিবীকে দশ লক্ষ কুটিবার ডেকে দেওয়া যাবে।হয়তো বা তারও বেশি।
কি হে বন্ধু কি ভাবছো? শুধু কি এক বারেই এই স্কাই লাইনের উঁচেল দালান গুলো সৃষ্টি হয়েছে? এই টুইন টাওয়ার সিয়ার্স টাওয়ার এই এম্পেয়ার বিল্ডিং, পেট্রোনাস টাওয়ার বুর্জ খালিফা, আইফেল টাওয়ার, এই মক্কা মদিনার প্রথম খসড়া তৈরিও হয়েছে মানুষের মন মস্তিষ্কেই।
কৃষকের মস্তিষ্কের আবর্জনা যদিও গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়, কিন্তু এই যুগের রাজনীতিবিদ শিক্ষাবিদ বুদ্ধিজীবিদের মস্তিষ্কের আবর্জনা কুকুর শুকুরের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যায় না। তবু ওদের দাম্ভিকতার কমতি নেই।
সে নোরা নামের পাগলি মেয়েটির তান্ডবে যখন বড় বাড়ির বড় রা সবাই আতঙ্কগ্রস্হ। পৌষের জাপরানি সকালটাকে যখন ভয়াবহ ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছিল, তখন এই আমি সেই দানবি মেয়েটির কোলে বসে দিব্যি দেখছি পরিস্হিতি এবং দুরের দিগন্ত আর পারিপার্শিক পানোরমাকে।
সেদিন মেয়েটির পাগলপনায় আমার শিশুতোস সৃতিশক্তিকে শান দিয়ে আরো তীব্র ধারালো করে তুলেছে।সেই ধারালো সৃতির খঞ্জরে প্রতিনিয়ত আমি কেটেকুটে তছনছ হচ্ছি বিদায় নিঃশেষ হবার পূর্বে এই লেখার প্রয়াস করছি।কোন প্রকার প্রতারণা বা কল্পকাহিনী নয়। বাস্তব একটি সত্যনিষ্ট ঘটনা।
নোরা মেয়েটির কাছে আমি চির ঋনি ও চির কৃতজ্ঞ।এ কথা মু খুলে আমি কোনদিন তাকে বলতে পারিনি। কোথায়? সেই নোরা নামের মেয়েটি আজ কোথায়? ত্রিশ বছর হয়ে গেল সে আজও নিরুদ্দেশে লাফাত্তা ! স্বামি সংসার সন্তান চেড়ে সে আজ কোথায়? আমি হন্যে হয়ে খুজছি তাকে পৃথিবীর পথে পথে, নূর গ্রহে গ্রহে!
তার এতিম সন্তানদের এই বলে এখনো আশ্বস্ত করছি যে তোমাদের মা এখনো বেঁচে আছে।শিঘ্রই তোমাদের মা তোমাদের কাছে পিরে আসবে। তোমরা কেউ কেঁদনা এতিমের মত।যদি না আসে আমি শিগ্রই তোমাদেরকে নিয়ে যাব তোমাদের মায়ের কাছে।ওরা দিশেহারা হতাশ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। দুচোখ তাদের মোটা মোটা জলে চল চল।
রাষ্ট্রহীন দেশের নাগরিকদের মাঝে যেই বেদে বা বানজারান ভাব পরিলক্ষিত হয়।নোরার সন্তানদের মাঝে সেই বৈদিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট আজ সুস্পষ্ট।নোয়াখাইল্যা ভাষায় একটি প্রবাদ আছে, চেঁইরইয়া গুনের বেঁইরইয়া লাদা, অনেকটা সেই রকম। ধরাকে তারা সরা মনে করে না।অনৈতিক কাজেই তারা সদা লিপ্ত।বিদ্যা বুদ্ধিতে তাদেরকে কিছুতেই বুঝানো যাচ্ছেনা।তারা হলো কেউ আধা পাগল কেউ হলো পুরো পাগল।একজন তো এখন মাইজদীর নামী দামী চৌদ্দ নাম্বার ভূয়া সংবাদিক।আরেকজন প্রতারক কবিরাজ।আরেকজন এখানে ওখানে গুরে বেড়ায়।আরেকজন সন্ত্রাসী বনেছে।নব্য সন্ত্রাসী!
সত্য বলার পক্ষে এই আমাকে তারা কেন সত্রু ভাবছে ভেবেই কুল পাচ্ছি না।আমি তো তাদের হক আদায় করে দেওয়ার জন্য স্বস্ফূর্ত প্রত্যয়ে এক পাঁয়ে খাড়া।তাদের মত এই পৃথিবীতে আমিও তো বড়ই একা অসহায়, এতিম।তারা যে রকম মাকে হারিয়েছে, বাবাকে হারিয়েছে, আমি ও তো ঠিক সে রকম বাবা মাকে হারিয়েছি।সাথে হারিয়েছি একজন বড় বোনকে। তাদের থেকে একজন বেশি।এই নশ্বর পৃথিবীতে তারা যেমনি খালি হাতে এসেছে, আমিও ঠিক তেমনিই এসেছি।আবার সবাই খালি হাতেই চলে যাব।এটাই নিত্য সত্য।
(দুই)
নোরার তখনও কোন সন্তানাদি হয়নি।
তার চাচাতো বোন মাতৃ বিয়োগ রাজিয়ার বিয়েতে তাকে বিশেষ ভাবে স্বামীসহ নায়রি আনা হয়েছিল।বিশেষ নায়রি বলছি এই কারণে নোরা মেয়েটি ভালো নাচতে এবং গাইতে পারতো।তাছাড়া নোরা এবং রাজিয়া প্রায় সম বয়সি ছিল। রাজিয়ার ঘরে তখন সৎ মা।রাজিয়া ও তার এক ভাইকে রেখে তার মা হঠাৎ করে মারা যান।সেটাও ছিল এক রহস্য জনক ঘটনা।
রাজিয়ার আপন মা ছিলেন আবার নোরার মায়ের আপন মামাতো বোন।নোরার মা-ই ওকালতি করে দেবরের কাছে তাঁকে বিযে দিয়েছিলেন।নোরার মায়ের আরেক মামাতো বোন নোরাকে ওকালতি করে তাঁর দেবরের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। নোরার সেই স্বামীর নাম ছিল শাহ আলম।তিনি এন এস আই তে চাকুরি করতেন। পরবর্তিতে প্রমোশন পেয়ে অফিসার ও হয়েছেন।তাদের বাড়িটা ছিল বর্তমান মাইজদী বাজারের ঠিক উত্তর দিকের বাড়িটা। মজিদ হাজির বাড়ি নামে খ্যাত।
মজিদ হাজি ও চৌধুরী মিঞা, তারা ছিলেন দু সহোদর। সহোদর হলেও তাদের দুজনের গায়ের রঙ ছিল আলাদা।মজিদ হাজি ছিলেন সুন্দর ফর্সা,আর চৌধুরী মিঞা ছিলেন কালো বর্ণের দেখতে মাড়য়ারিদের মত। নোরার স্বশুরের নাম ছিল চৌধুরি মিঞা।চৌধুরি মিঞার ছিল দু সংসার। প্রথম সংসারের একমাত্র সন্তান ছিল নোরার স্বামী শাহ আলাম।শাহ আলমের মা একটু সিদা সাদা টাইপের ছিল বিদায় চৌধুরি মিঞা অন্য একটি বিয়ে করে আসামে পাড়ি জমান।সিদা সাদা একটু ভোলাবালা হলেও যতদুর জেনেছি তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলা।
প্রচুর ধন সম্পদ জায়গা জমিনের মালিক থাকা সত্বেও চৌধুরি মিঞা সব কিছু ছেড়ে কেন আসাম চলে গেলেন তা আজো আমার বোধগম্য নয়।এই চোধুরী মিঞা দীর্ঘ চব্বিশ বছর পর আসাম থেকে ছয় সাতটা ছেলে মেয়ে নিয়ে একদিন হঠাৎ করে বাড়ি ফিরে এসে কি সুন্দর নোরার দুর্বিণীত জীবনকে দুর্বীসহ করে তুললো। তার সংসারকে ভেঙে তছনছ করে দিল।সে ব্যপারে বলবো ঘটনা প্রসঙ্গে সামনের দিকে।
চৌধুরি মিঞার প্রথম সংসারে একমাত্র ছেলে শাহ আলম পিতার অনুপুস্হিতে এত ধন সম্পদ রেখে কেনই বা পুলিশের চাকুরিতে যোগ দিলেন, সেটাও আমার আজো বোধগম্য হয়নি।কথাই বলে না কারো বুঝ কারো তরমুজ।
নোরার ছিল সুখি সংসার।বাগান ভর্তি ছিল হরেক রকম ফলপ্রুটের গাছ গাছালি, খেত ভরা ছিল সোনার ফসল।জায়গা জমিন বর্গা দিয়ে যে আধা ফসল ঘরে তুলতো, তাও বিক্র করে দিতে হতো, খাবার লোক ছিলনা।ঘরে রাখার জায়গা ছিলনা। হঠাৎ করে নোরার জীবনে নেমে এল দুর্বীসহ দুঃসময়।
হাসি খুশি সুখ সাচ্ছন্ধ্যে ভরা ছিল নোরার সংসার।লাবণ্য এবং মাধুর্যময়ি নোরার স্বামীটাও ছিল মাটির মানুষ।দুজন মানুষের জুড়ি যেন বিধাতা স্বয়ং বেঁধে দিয়েছেন।আজো আমার হৃদয় দর্পনে ভেসে উঠে তাদের যুগোল ছবি।কি অদ্ভুত অসাধারণ মানুষ ছিলেন দুজনই। শৈশবে আমাকে দুজনই কি অসম্ভোব ভালোবাসতেন, আদর স্নেহ করতেন, চকলেট বিস্কুট কিনে দিতেন।তাদের কথা মনে করে এই মূহুর্ত্যে আমার চোখের জলে সমগ্র পৃথিবী কেমন যেন ঝাপসা ঝাপসা হয়ে উঠেছে। দুর দিগন্তে কিছুই ঠাওর করতে পারছিনা।
অতচ আমার সেই ভালোবাসার মানুষ দুজনকেই আমি বড় হয়ে নিজ হাতে মেরেছি।বার বার অপমান করেছি। ভীষনভাবে মেরেছি।সেই কথা মনে করে আমার এই পাপিষ্ট হাত দুটিকে কেটে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কেন মেরেছি সেই প্রশ্নের উত্তর দেব পরে ধর্য্য ধরুন প্রিয় পাটক অগ্রাহ্য করবেন না প্লিজ। এমন ঘটনা আপনার জীবনেও ঘটতে পারে হয় তো বা ঘটেছেও?
নোরা অত্যান্ত ভালো মেয়ে। সুস্রি ভদ্র নম্র, লাবণ্য বলতে যা বুঝায়, সব গুনাবলিই তার মধ্যে ছিল। সারা রাত রাজিয়াদের ঘরে নাচগান খাওয়া দাওয়া করে হটাৎ করে সকাল বেলায় পুরো বাড়ির উঠোন ঝাড়ু দিতে দিতে সবাইকে গালিগালাজ করতে লাগলো, আবার কাউকে কাউকে লাঠিসোটা হাতে মারতে দৌড়া্চ্ছে।মাঝে মধ্যে নাচছে গাইছেও। বাড়ির বড়রা সবাই আতঙ্কিত এবং হতবাক!
আমার আতঙ্কটা কান্নায় রুপ নিল।আমি কাঁদছি ভয়ে শাহসে, সে কি ভয়ঙ্কর কান্না। সেই শিশু আমাকে পাগলি মেয়ে নোরা কোলে তুলে আদর করতে লাগলো। আমার দুগালে ঠোঁটে কপোলে সে কি আদরের চুম্বন।অতি আদরে আমি বিরক্তি বোধ করছি। কিন্তু কি করার।পাগলি মেয়ে আমাকে গলা টিপে মারতেও পারে, আবার আচারও মারতে পারে।অনেক দিন পরে মায়া নামে আরেকটি কোলের শিশুকে নোরা আছার মেরেছেও।পাগলরা হয়ও ভয়ঙ্কর!
বাড়ির সবাই কিংকর্ত্যব্যবিমূঢ়! কি হলো রাজিয়ার বিয়েতে তো আরো অনেক বেটি বৈতালি নায়রি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিল। কারোরই কিছু হলো না অতচ নোরা কেন এমন করছে?কি হলো নোরার?
সবার চোখে মুখে একি প্রশ্ন। সবাই কহাবলা করছে। কেউ বলছে ভূতে পাইছে, কেউ বলছে জ্বীনে, আবার কেউ বলছে পরীতে পাইছে নোরাকে।আবার কেউ বলছে রাজিয়ার সৎ মা হিংসা করে সিলের গোশতো খাওয়ায়ে দিয়েছে। কেউ বলছে ধুতরার ফুল খাওয়ায়ে দিয়েছে কেউ বলছে গোটা। ধুতরার ফুল আর গোটা খেলে নাকি মানুষ পাগল হয়ে যায়।ওসব আমার কিছুই জানা নেই।মানুষ কহাবলা করছে।নোরার কথা কেউ সৃতিচারন করতে গেলে আজো মানুষ বলে রাজিয়ার সৎ মা কিছু খাওয়ায়ে দিয়েছে।আল্লাহ মালুম!
নোরা পাগল প্রলাপ বকছে এই বলে, তোদের এখানে বড় বড় দীঘি হবে, খাল হবে রাস্তা হবে গারদ হবে ইত্যাদি।আবার এই ও বলছে তোদের সবাইকে আমি বাদশা বানিয়ে দেব।ছলি এ আমাকে টাকার পাতিল সোনা গয়নার বড় বড় সাতটা পাতিল সাধছে। আমাকে বলছে বাদশা বলে।বলছে তোকে আমি বাদশা বানিয়ে দেব। তোকে দেব সাত রাজার ধন। তুই হবি বিরাট বড় বাদশা।কান্দিস ক্যারে তুই। তুই হবি সাত মুল্লকের বাদশা, হাঃ! হাঃ ইত্যাদি।
নোরার পরে মা ও আমাকে এক সময় বাদশা বাদশা বলে ডাকতে শুরু করেছিলেন।
দেখতে দেখতে পাগলি মেয়ে নোরার প্রতিটি কথাই অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সত্যিও বাস্তবে প্রতিপলিত হলো।
উন্নিশ সাতষট্টি কিংবা আটষট্টি সনের দিকের কথা।উত্থাল পাত্তাল তখন অখন্ড পুর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশ।সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালী বাঙ্গালীর পথের দিশারী হয়ে প্রমিউথিউসের মত আবির্ভাব হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান।পাকিস্তানী বর্বরদের দুঃশাসন বাঙ্গালী কোন ভাবে মেনে নিতে পারছেনা।নবজাগরণে নব চেতনায় নব উদ্যোমে বাঙ্গালী এককাট্টা।স্বাধীনতা স্বাধীনতা! হয় জান না হয় মায়ের মান! রাখবো ইনশাল্লাহ।
অখন্ড পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ূব খান ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের উন্নতির লক্ষে নানা প্রকার কর্মযজ্ঞ শুরু করে দিল।সাথে সাথে নানা ফন্দিফিকিরও শুরু করে দিলেন।তিনি বেসিক ডেমোক্রেসি বা মৌলিক গনতন্ত্র নামে গনতন্ত্রের একটি নতুন সংজ্ঞাও উপস্হাপন করলেন।
সে সময় মাইজদী শহরে একটি জেলখানা পুলিশ লাইন থাকা সত্বেও পশ্চিম মাইজদীর মানুষের চৌদ্দ পুরুষের ভিটে মাটি এবং ফসলি জমিন নামে মাত্রে মূল্যে হুকুম দখল করে নতুন করে জেল খানা পুলিশ লাইন হাসপাতালের নির্মান কাজ শুরু করে দিলেন।অবোধ নির্বোদের মত গ্রাম বাসী চুপ থাকলো।বাপ দাদার ভিটে মাটি চেড়ে গাট্টিগোট্টা বেঁধে উদ্ভাস্তুর মত অন্যত্র চলে গেল।এক বাড়ির মানুষ একশ বাড়িতে ভিবক্ত হলো। অনেকটা পাক ভারতের বিভাজনের মত।যে ভিবাজনে নাকি দশ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল।উদ্ভাস্তু হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ।জাতীয় নেতাদের মাঝে নূন্যতম দুরদর্শিতা ও প্রজ্ঞা বলতে কিছুই ছিলনা। কি নেহুরু, কি জিন্না, কি গান্ধি! উন্নতি এবং সভ্যতার আড়ালে এটাই বুঝি বর্বরতার বহিপ্রকাশ।
সে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ।ইয়া বড় খাল ইয়া বড় দীঘি, ইয়া বড় রাস্তা ঘাট গারদ বড় বড় ইমারত দালান কোঠা। মাইজদীর মানুষ এই প্রথম বারের মত দেখছে।প্রতিদিন হাজার হাজার মাঠিয়াল পিপড়ারর মত দল বেঁধে এসে মাটি কাটছে। প্রসাড়িত হলো মাইজদী শহর।
তা- হলে নোরা মেয়েটি কি গায়বি কিছু জানতো? তা না হলে কিভাবে নোরার অগ্রিম বলা সব কথা সত্য হলো? হয়তো বা জানে।অনেকে এও নিয়ে কহা বলা করছে।
প্রায় এক ধরনের রাতারতি সব কিছু তৈরি হয়ে গেল।অনেকটা উড়ো দীঘির মত। বেগম গঞ্জের বানাবাড়িয়া নামে গ্রামে একটা বিশাল উড়ো দিঘী আছে।ফাঁকা জায়গায় দিনে মানুষ গরু চরায়ে গেল, পরদিন গরু চরাতে এসে দেখে সেখানে বিরাট একটা দিঘী হয়ে গেছে।পাহাড়ের মত উঁচু উঁচু দীঘির পাড়।রাতাতি হয়েছে বিদায় সে দীঘির নাম হলো উড়ো দীঘি।কল্প কাহিনীর মত হলেও আমার নানার বাড়ির দক্ষিন পাশে দীঘিটা নিজ চোখে দেখা হলেও মা এবং মামার মুখে শুনা কথা।
সে উড়ো দীঘির চারিপাশের পাড় নাকি পাহাড়ের মত উঁচো উঁচো ছিল।জঙ্গলও বড় বড় গাছালিতে ভরা ছিল। সেখানে নাকি বাঘ হরিনও থাকতো। উড়ো দীঘির পশ্চিম পাশে একটা বাঘবাড়ি আছে। একবার নাকি বিশাল একটা বাঘ এসে ঐ বাড়িতে ডুকে লঙ্কাকান্ড ঘটিয়ে দিয়েছে।বাড়ির পোষা কুকুর বিড়াল মেরে খেয়েছে, পরে হাতি নিয়ে মাউত এসে নাকি বাঘটাকে তাড়িয়েছে। সেই থেকে ঐ বাড়িটার নাম হয়ে গেল বাঘবাড়ি।
নোরার বাবা নুর ফরিন শীপে চাকুরি করতেন। তিনি বিদেশ থেকে মোটা মোটা জাহাজের নোঙর বাঁধা রশি এনে রেখেছেন ঘরে। সেই রশি দিয়ে প্রতিরাত নোরাকে বেঁধে রাখা হতো নির্জন কক্ষে।কিন্তু নীশি রাতে সেই মোটা রশির বাঁধন খুলে তার বাবার বিদেশ থেকে আনা নাম খচিত কাশের বদনা নিয়ে বাহির হয়ে যেত। সকাল বেলায় দুর দুরান্ত কোন নির্জন বাগান কিংবা কোন এলাকা থেকে নোরাকে খুজে ধরে আনা হতো।দেখা যেত সে মনের আনন্দে গান করছে। আর সবাই কহা বলা করতো, কোন জ্বীন কিংবা পরি এসে তার বাঁধন খুলে তাকে নিয়ে গেছে।এমন মোটা শক্ত রশি কোন ভাবেই নোরার পক্ষে খোলা সম্ভব নয়।কিন্তু খুললো কি ভাবে, সকালে সবাই অবাক হতো!
ধরে আনার সময় নিঃষ্পাপ নোরার মুখে তখনো সুরেলা কন্ঠে গান শুনা যেত, নাচের বান করতো।আবল তাবল বকলেও তাতে ছিল বিকশিত দুরদর্শি জ্ঞান প্রজ্ঞা।পাগলের প্রলাপ ছিল না কোন মতে।
নোরাকে নিয়ে নোরার মা বাবা পড়লো ভীষন বিপদে।চাকুরিজীবি স্বামী তো তাকে এমন অবস্হায় বাপের বাড়ি রেখে চলে গেলেন কর্ম ক্ষেত্রে।মেয়েরা অবশ্যই মা-বাবার কাছে ভোজা নয়।বড় ভোজা হলো নোরার পাগলপনা।
এ যুগের মেয়েরা অবশ্যই মা-বাবার উপর ভয়ানক ভোজা হয়ে আবির্ভাব হয়। প্রথমে মা বাবাকে না জানিয়ে টাকা পয়সা গয়না পাতি নিয়ে কোন বখাটের হাত ধরে ভাগে। পরে দু চারটা ইয়াজুজ মিয়াজুজ সাথে নিয়ে কখনও বা বেকার স্বামীকে নিয়ে বিরাট ভোজা হয়ে বাবার কাঁধে চেপে বসে।অনেক মেয়ে আবার বিয়ের আগেই পেট লাগায়ে কুলের মুখে কালি মাখে।তাদেরকে নাকি বলে কুলাঙ্গার।
নোরা মেয়েটির নামে কোন গিবত বা তেমন কোন দুর্নাম শুনা যায়নি, তবে কোন এক মাস্টার নাকি নোরাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল।নোরার বাবা মা রাজি হয়নি ছেলে গরিব বিদায়।হয়তো বা সে মাস্টার তাবিজ তুমার করে নোরার খতি করতে পারে। নোরার মা ছিলেন মফস্বলের গুনবতি সুশিক্ষিত পর্দানশীল বুজর্গ একজন মহিশী নারী।তিনি বাংলা আরবি লেখাপড়া জানতেন।নোরাকেও তিনি লেখা পড়া শিখিয়েছেন নিজ দায়িত্বে।শুধু প্রচলিত বা প্রথাগত শিক্ষা নয়, তিনি নোরাকে ন্যায় নৈতিকতা শিখিয়েছেন। আজকালকার মেয়েদের কথা আলাদা।
নোরার পাগলপনা জানাজানি হয়ে গেল দুরবর্তি দশ গ্রামে।নোরার বাবার বাড়ির সামনে দিয়ে সরকারি রাস্তা দিয়ে লোকজন শহরের দিকে যায় আসে।সবাই খানিক দাঁড়ায়ে নোরার তামাসা দেখে।কহাবলা করে আয় হায় রে, অমুকের মেয়েটা পাগল হয়ে গেল। অনেকে নোরার বাবাকে ডেকে পরামর্শ দেন অমুক জায়গায় ভালো একটা খোনার আছে, তমুক জায়গায় ভালো একটা কবিরাজ আছে।আপনার মেয়েকে ভালো করে দিবে। ইনশাআল্লাহ ! আপনার মেয়ে ভালো হয়ে যাবে।চিন্তা করেন না, ইত্যাদি।
বিদেশ ফেরত মোটাসোটা সন্মানি ব্যক্তি নোরার বাবা যে যেমনি বলতো, তেমনি শুনতেন।মেয়ের জন্য টাকা পয়সা খরচ করতে কার্পন্য করতেন না। হন্যে হয়ে ছুটে যেতেন খোনার খলিফা কবিরাজের কাছে। নিয়ে আসতেন বাড়ি।কেউ বলতো জ্বিনে ধরছে, সুতরাং জ্বীনের হাজিরা মিলাতে হবে।কেউ বলছে পরীতে ধরেছে, পরী তাড়াতে হবে। কেউ বলছে, আপনাদের কেউ ভালো চায় না তাই কেউ দুষমনি করে ভোঁজ পাতায় তাবিজ করেছে, তাবিজ নষ্ট করতে হবে।নোয়াখালির প্রত্যান্ত অঞ্চলে এমন কোন খোনার খলিফা কবিরাজ বাদ ছিলনা, নোরার বাবা যে আনেনি।টিবরা মগা চাকমা এমন কি ভারতের ভেনারসের কবিরাজ ও আনা হয়েছে নোরার জন্যে।কিছুতেই নোরা ভালো হচ্ছে না।
অসহায় নোরার বাবা যে বাবার ভবতা দিয়ে নোরাকে এত ভালোবাসতেন, তা পৃথিবীর সকল বাবার জন্য অনুকরনিয় ও বাস্তব দৃষ্টান্ত। আজ ভাবছি মেয়েরা বাবার ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে স্বামীর বাড়িতে যাবার কারণেই বুঝি এত কাঁদে।
খোনার খলিফা ঝাঁড়ফুক তাবিজ তুমার বানর টিয়া পাখির গননা,হাত দেখা কবিরাজি যে বাংলাদেশে বিরাট এক ভন্ডামি ও প্রতারনা সেটা আমি শিশুকাল থেকেই দেখে এসছি।বড় হয়ে এসব ভন্ড প্রতারককে আমি নিজ হাতে মেরেছি। সেটাও বলবো আগে। শুনে অবশ্যই মজা পাবেন।
প্রায় দুবছর চললো এভাবে নোরার পাগলপনা।কিছুতেই নোরা ভালো হচ্ছেনা।জানাশুনা নোয়াখালির এমন কোন খোনার খলিফা নোরাকে ভালো করতে পারলোনা।নোরার স্বামী শাহ আলম ও এসে আদর যত্ন ভালোবাসা দিয়ে চেষ্টা করেছে কিছুতেই নোরা ভালো হচ্ছে না। নোরার মা প্রবিত্র কোরআনের আয়াত দিয়ে দোয়া গাঞ্জল আরশ পড়ে ঝাড়ফুক দিয়ে চেষ্টা করেছে কিছুতেই নোরা ভালো হলোনা।
নোরাও দিন দিন ভীষন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। একদিন নোরাকে গা গোছল করায়ে তার মা তার লম্বা লম্বা চুলে নাড়িকেল তেল মেকে বেলি কেটে দিচ্ছিল।সে সময় বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে কাপড়ের থলি কাঁধে করে বয়োষ্কো একজন লোক যাচ্ছিলেন। হটাৎ দৃষ্টি গোছর হতেই নোরা দৌড়ে গিয়ে লোকটিকে ঝাঁপটে ধরে বললো, তুমি আমার বাবা। তুমিই আমাকে ভালো করতে পারবে।আমাকে ভালো করে দাও বাবা।আমি আর পারছিনা। সবকিছু অসহ্য লাগছে।
একেবারে লোকটিকে ধরে আমাদের কাছারি ঘরে নিয়ে এলো।অনেক মানুষ জড়ো হয়ে লোকটিকে গিরে ধরে দাঁড়ালো।আগুন্তক লোকটি বুজর্গ লোকের মত কাছারি ঘরে একটা হাতাওলা চ্যায়ারে বসে শান্তশিস্ট ভাবে মৃদু হেসে বললো, হ হ বেটি আমি তোর বাবা, আমি তোকে ভালো করতে এসেছি। আল্লাহর রহমতে তুই ভালো হয়ে যাবি।ভাবিস না তুই।
লোকটির অবয়ব যে এখনো আমার হৃদয়পটে ভাসছে। বয়স সত্তরের কম হবেনা।চুল দাঁড়ি সব সফেত, গলায় দু রঙের দুটা তসবি ঝুলানো। অপরিচিত লোকটি তার থলি থেকে কিছু কিছমিস বাহির করে নোরাকে খেতে দিল। নোরা আলাথালু করে খেতে লাগলো।তারপর লোকটি পুনরায় থলি থেকে একটা সরিসার তেলের শিশি বাহির করে মুখে ঠোঁট নাড়িয়ে কি যেন বড় বড় করে পড়ে ফুঁ দিয়ে নোরার মাথায় মেখে আদর করে তার মাথায় হাত বুলায়ে দিল।
বৃদ্ধের এই সব যেন চুম্বকের মত কাজ করলো। সাথে সাথে নোরার বিহেবিতে পরিবর্তন এসে গেল।কথা বার্তায় চেহারায় মাধুর্য ফিরে এল। শুনতে আজগুবি লাগলেও এটাই বাস্তব সত্য। দশ গ্রামের খোনার খলিফা কবিরাজ তাবিজ তুমার দিয়ে যে নোরাকে ভালো করতে পারলো না।সেই নোরাকে আগুন্তক এই বুড়ো কি ভাবে নোরাকে কয়েক মুহুর্ত্যের মধ্যে এ ভাবে ভালো করে দিবে।নোরার মত একটি পাগলি মেয়ে জানলোই বা কি করে। অপরিচিত কোন পথিকের ঝুলিতে কিছমিস থাকবে, সরিসার তৈল থাকবে, তাকে ভালো করে দিতে পারবে, সেটা আজও এক বিশ্ময়!
বেশ কিছুক্ষন পরে লোকটি যাবার সময় নোরাকে আশ্বস্ত করে বললো, তোকে দেখতে আমি আবার আসবো।মা তুই ভালো থাকিস।আল্লা হাফেজ বলে চলে গেল।আমরা সবাই লোকটির চলে যাবার দিকে অপলকে চেয়ে রলাম বেশ কিছুক্ষন।লোকটি কি আল্লাহর প্রেরিত কোন বান্ধা ছিলেন, ভাবছি মনে মনে।
( তিন)
আমি তখন সবে মাত্র স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি।
ইলেস্টিকওলা হাপফেন্ট পরি।ইংলিশ হাপপেন্ট তখনও আসেনি। মাঝেমধ্যে লুঙ্গিও পরি বাড়িতে। দিন দিন দুরন্ত হয়ে উঠছি।বাড়ির আশেপাশের গাছগাছালির ফলমুল পেড়ে খাই।শালিক ঘুঘুর ছানা নিয়ে পুষতে থাকি।ঘাঁস ফরিং এর পোঁধে দাঁড়া ডুকায়ে ছেড়ে দিয়ে আনন্দ করি। সকাল বেলায় কেউটের ভয় উপেক্ষা করে ফুল তুলি।বর্ষার দিনে কদম ফুল পাড়ি গাছে উঠে।একটা শিশুর বেড়ে উঠার প্রথম সাত বৎসর নাকি বিশেষ গুরত্বপুর্ন।যেই ঝক্কি ঝামেলার মধ্যে আমার জীবনের প্রথম সাত বছরকে আমি উপভোগ করেছি মৌমাছির মত।তা আজ এক কথায় অতুলনিয়।
দেশে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলো।শুরু হলো প্রতিরোধের মুক্তি যুদ্ধ।চারিদিকে আগুনের কুন্ডলির ধোঁয়া আর বোমার বিকট শব্দে প্রকম্পিত।সবার চোখে মুখে আতঙ্ক দৃষ্যমান।যে যেদিকে পারছে গাট্টিগোট্টা গুটায়ে বাড়ির দামী জিনিস আসবাব পত্র ফেলে পালাচ্ছে শ্যামল বাংলার স্নিগ্ধ বৈচিত্রময় গ্রামের বাগবাগিছা কিংবা খেতের আঁকা বাঁকা শিঁতিকাটা কনিছা সরু পথ ধরে।
আমরাও মা-বাবা ভাইবোন সবার মত গণ্হব্যহীন গ্রামের দিকে ছুটতে লাগলাম।সঙ্গে চিরা মুড়ি চাল ডালের গাট্টি। সাথে তরুনি দুজন বোন শিশু মায়াসহ আমরা ভাইবোন সাত জন, মা বাবা সহ নয়জন। প্রথমে লক্ষ ছিল বানাবাড়িয়া নানার বাড়িতে গিয়ে উঠবো।নানার বাড়ি মাইজদী থেকে ছয়সাত কিলো মিটার দুর হবে, তাই অনিরাপদ ভেবে মা-বাবা দুজনে সিদ্ধান্ত নিলেন, না- নানার বাড়িতে থাকা যাবেনা। সবাইকে নিয়ে যাওয়া হবে আলাদি নগর ্ছোট খালার বাড়িতে।
রাজগঞ্জ বাজারের উত্তরে মাইজদী থেকে প্রায় দশ বার কিঃমিঃ দুর হবে আলাদি নগর।চষা খেতের সুকনো ছাকা ভেঙে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মা-বাবা আমাদেরকে নিয়ে তপুরা খালার বাড়িতে উঠলেন।আসার পথে মা বারবার বলছেন।আমার দেলু নুরির কি হবে।হে আল্লাহ তুমি তাদেরকে হেফাজত করো।
বাবা আশ্বস্ত করে বললেন, অত চিন্তা করোনা। ওদের কিছুই হবেনা, আল্লাহ ভরসা।নোরার বড় বোনের নাম দেলাপরোজ ওরফে দেলু।
তিন চাল টিনের এক চাল খড়ের তফুরা খালার ঘর।সামানে ছনের একটি পাক ঘর। পাক ঘরের সামনে মাঝারি ধরনের একটা বড়ই গাছ। বড় ঘরের কোনে একটি খেজুর গাছে মাটির হাঁড়ি ঝুলছে। একটা বুলবুলি ও একটি দোয়েল রস খাবার জন্য ঠেলাঠেলি করছে।পুরো বাড়িটা দেখতে আঁকা কোন ছবির মত সুন্দর। বড়ই গাছের নীচে খালা একটি শীতল পাটি বিছায়ে আমাদেরকে বসতে দিলেন।আমরা ছোটরা জড়ো হয়ে বসলাম।
বাড়ির ছোট বড় অনেক লোক এসে আমাদেরকে ঘিরে দাঁড়ালো।সবাই শহরের খবর জানতে চায়। মা সবাইকে তীক্ষ মেঝাজে বললো, তোমরা এখন যাওতো।আমার সন্তানরা সারাদিন না খেয়ে আছে, তোমরা কেমন লোক খবর জানতেে এসেছ? আগে এদেরকে খেতে দাও।পরে তফুরা খালাকে বললো, তফুরা এখানে চিরা মুড়ি গুড় আছে, জলদি এদেরকে পানিকাঞ্জি খেতে দে । এখানে চাউল আছে জলদি ভাত বসায়ে দে।ওরা সারাদিন না খেয়ে আছে।মায়ের মমতার ব্যকুলতা দেখে সেদিন অনূভব করতে না পারলেও আজ আমি অনুভব করছি দুচোখের মোটা মোটা জলে।
আমার মা এমনই ছিলেন সবাইকে শাসন করার এবং মুহুর্ত্যেই আপন করে নেওয়ার মোহময় শক্তি তার মধ্যে ছিল।সে কারণে আত্মীয় স্বজন মাকে ভীষন ভয়ও পেত,আবার সন্মানও করতো।
ঝড় বৃষ্টি কিংবা হিংস্রোদের কবল থেকে মা যেমনি তার সন্তানদেরকে ডানার নীচে লুকায়, আমার মাও সব সময় কাঙ্গারুর বাচ্ছার মত সদা আমাদেরকেও আপদে বিপদে আঁচল তলে লুকাতেন। আমার সেই করুণাময়ি মা ছিলেন ভালোবাসার এক দোওয়ার দরিয়া।
আমরা মা এর ঘা ঘেঁসে বসে চিড়া মুড়ি খাচ্ছি।ফুটফুটে সুন্দরী খালাতো বোন একটি পাকা নিয়ে আমাদেরকে বাতাস করছে।আমি বার বার সুকনো মুখে তৃষ্ণার্থ চোখে অপলকে সেই খালাতো বোনটির দিকে চেয়ে রলাম।ইস! এত সুন্দর কি মানুষ হয়। মেয়ে মানুষ!ইস! আমিও যদি তার সমান বড় হতাম! মনে মনে তার সাথে কদ মিলায়ে দেখি। না লম্বা এবং বয়সে আমার অনেক বড় সেই বোনটি। আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র।
তফুরা খালা ছিলেন শ্যামলা ছিপছিপে লম্বা।খালু ছিলেন বেশ সুন্দর খাটো শান্ত স্বভাবের।আর আমাদের মা ছিলেন ছিপছিপে উজ্জল সন্দুর, বাবাও স্বাস্হবান বেশ সুন্দর ছিলেন।দেখতে ওরিয়েন্ট এলাকার লোক মনে হতো।
খালা একটা বলে করে চিড়া মুড়ি মিশায়ে ঘুড় দিয়ে এনে দিল। খালু নিজে গাছে উঠে ডাব কেটে বাবাকে খেতে দিল। মাটির কলস ভর্তি পানি দিল।ভাতের পানি বসায়ে দিল মাটির চুলোয়।আমরা সুকনো মুড়ি খাচ্ছি, পর পর কলস থেকে পানি ডেলে খাচ্ছি।
ছোট খালার ঘরের সামনে ছোট জায়গা জুড়ে মাইরা বা ডাঁটা লাগানো হয়েছে। লাল সাদা রঙের মাইরাগুলি সতেজ হয়ে দাঁড়িয়ে পত পত করে দুলছে মৃদু বাতাসে।এখুনি খাবার উপযুক্ত সময়।
মা খালাকে বললো, দেখ তাড়াতাড়ি বাদশাকে ভাত দে।দেখ ওর মুখ কেমন শুকায়ে আসছে।
খালা উঠোনের আঙিনা থেকে মাইরা বেশ কয়টা উঠায়ে, কেটেকুটে সুটকি দিয়ে তরকারি পাকাতে লাগলো।তরকারির গন্ধ্যে মোহময় হয়ে গেল চারিদিক। মুখে টস টস করে পানি এসে গেল।
বাবা আর বড় ভাই উঠোনের অন্য প্রান্তে চ্যায়ারে বসে সবাইকে শহরের খবর জানাচ্ছে।সবার চোখে মুখে আতঙ্কের রেখা ফুটে উঠেছে।শুধু আমার বাবাকে দেখেছি স্বপ্নীল আশাবাদি।
এই দুঃসময়ে নোরা কোথায়, কেউ জানেনা।নোরার বড় বোন দেলু থাকেন দিনাজপুরের পঞ্চগড়ে।দেলুর বর তহশীলদারের নকরি করেন।আর নোরার স্বামী আলম পুলিশে চাকুরি করেন, তাও পোস্টিং ঢাকাতে।পাক হায়েনারা প্রথমে সুপরিকল্পিত গনহত্যা অপারেশন সার্সলাইট প্রথমে নাকি ঢাকা রাজার বাগে পুলিশ ফাঁড়িতেই শুরু করে।হাজারে হাজারে পুলিশকে নাকি এক রাতেই হত্যা করা হয়েছে। এ সবি রেডিওর খবর।আমরা বাড়িতে থাকতে শফিক চাচার রেডিওতে শুনেছিলাম।না জানি নোরার স্বামি শাহ আলমের কি হলো?
অবশ্য ভরসাস্হল ছিল একটা। নোরার চাচতো দেবর মানিক হাজি ওরফে কবির উল্যা ছিলেন রাজাকারের লিডার। যুদ্ধের সময় বাড়িতে কিংবা আশে পাশে এক দুজন রাজাকারের দরকার ছিল।যেমন আমাদের পড়শি ছিলেন জয়নাল রাজাকার।জয়নাল আমাদের বাড়িতে এসে সবাইকে আশ্বস্হ করলেন এই বলে. যে আমি বেঁচে থাকতে আপনাদের কিছুই হবেনা।সেই উঠতি বয়সি তরুন লিডার মানিক হাজি মজিদ হাজি বাড়ির সবাইকে যুদ্ধের নয় মাস হেফাজত করেছেন।সে বাড়িতে এমন কোন মৃর্ত্যুর সংবাদ আমরা পাইনি।
মানিক হাজি ছিলেন খুবি সুচতুর লিডার। পরবর্তিতে দেশ স্বাধীন হলে সব রাজাকারকে হত্যা করা হলেও মানিক হাজি সুকৌশলে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সারোয়ার সাহেবের একমাত্র বোনকে বিয়ে করে অলৌকিক ভাবে বেঁচে গেছেন। আজো বেঁচে আছেন। আমি তার লম্বা হায়াত ও সুস্বাস্হ কামনা করি।
(চার,)
নোরা ছিল আমার মেঝ বোন।
এই পৃথিবীতে কিছু সম্পর্ক হয় আল্লাহ প্রেরিত, আর কিছু সম্পর্ক মানুষ গড়ে নেয় প্রেম প্রিতী ভালোবাসার মাধ্যমে।এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে দেখা যায় অনেক সময় ঐশ্বরিক রক্তের সম্পর্কের চেয়েও হৃদয়ের সম্পর্ক বড় হয়ে উঠে।ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। ভাই এবং বোন এই দুটি শব্দ আমার কাছে ঘৃনা করার মত দুটি শব্দ।বন্ধু বান্ধব কেউ যদি আমাকে কোন সময় ভাই সন্বোধন করে ডাকতো, সাথে সাথে আমি সুধরায়ে দিয়ে বলতাম প্লিজ তোমরা আর কোন সময় আমাকে ভাই নামে ডেকো না।এই ভাই নামের প্রতি আমার চরম ঘৃনা।শুনে বন্ধুরা অবাক হতো।
এই ঘৃনাবোধ জন্মেছে সেদিন থেকে, যেদিন মন্টু নামে আমার এক কুলাঙ্গার ভাই আমার চৌদ্ধ হাজার ডলার মেরে দিয়েছে।সেটা বিরানব্বই সালের কথা।সেই সময় আমার টাকা দিয়ে সে নিজের নামে মাইজদী টাউনে দোকান কিনেছে। অতচ সে আমার টাকা গুলি সংসারে খরচ করেছে বলে আমাকে বুঝ দেয়। আমি মানতে পারিনি তার এমন বেঈমানি। সে সময় মাইজদীতে দুটা বাড়ি কেনা যেত চৌদ্দ হাজার ডলার দিয়ে।ঐ টাকা নিয়ে মিন্টুর সাথে আমার চরম বিরোধ হয়। সে দিন থেকে গত পোঁছিশ বছর ধরে আমি তার সাথে কথা বলি না।
আমার পাওনা টাকা ও সংসারের ব্যপার নিয়ে মিন্টু ও তার জার্মানী স্ত্রী গাব্রিলা মিলে একদিন আমাকে তার ঘরে আটকিয়ে মেরে আমার ডান চোখটা নষ্ট করে দিয়েছে।তার জার্মানী স্ত্রি আমাকে পুলিশের ভয় দেখায় জেলে দিবে বলে। দেশে নাকি তার স্ত্রিকে সবাই ধর্ষন করে।
এদিকে যুদ্ধ শেষ হলে আমরা নোরাকে খুঁজতে একদিন তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম।
মা এর সাথে আমি দিদার এবং মায়া ছিল।নোরার বাড়িতে গিয়ে আমরাতো বিশ্মিত, আনন্দে আত্মভোলা।নোরার কোল জুড়ে এলো প্রথম পুত্র সন্তান।কি সুন্দর ফুটফুটে তুলতুলে চেহারা।এ যেন জ্যান্ত পুতুল।আহা! সে জাহাঙ্গির আজ মধ্য বয়সি।কেমন ভোলাভালা মানুষ।কাছ থেকে দেখি তারে দুর থেকে দেখি, মায়া হয়।কত টাকা পয়সা কত জায়গায় খরছ করেছি, কত যাকাত দান খয়রাত দিয়েছি, এতই ছোট মনের মানুষ আমি কোনদিন পারিনি তার হাতে দশটা টাকা দিতে, অথবা একটা লুঙ্গি কিনে দিতে।নিজকে বড়ই অপরাধি মনে হয়।আসলে তারা সবাই ভাই বোন একটু উচ্চ আকাঙ্খি ও অভিমানি।তারা বড়দের বা মায়মুরুব্বির কথা রাখতে জানেনা।হয়তো বা অনাথ বিদায় শিখেনি।
সবার চোখে মুখে আনন্দের পোয়ারা।নোরা ও তার বর স্বাশুড়ি সবার চোখে মুখে আনন্দ ঝলঝল করছে।আমাদের কি কম আনন্দ।এই প্রথম কোন ভাগিনাকে দেখছি। আহা কি সুন্দর শিশুটি সদ্য স্বাধীন দেশের নাগরিক হলো। নিশ্চয় বড় হয়ে অনিয়ন্ত্রিত স্বপ্ন দেখবে।ানেক বড় মানুষ হবে।
নুর গ্রহ অর্থ্যাৎ নুরের পৃথিবী।নোরার স্বামীর নাম শাহ আলম, তার অর্থও হলো কবি বা মহৎ ব্যক্তির পৃথিবী।মা বাবার সাথে মিল রেখে নোরারা স্বামি স্ত্রি মিলে প্রথম সন্তানের নাম রাখলো জাহাঙ্গির আলম।তার অর্থও হলো বিজেতার পৃথিবী। পরবর্তিতে নোরার আরো চার ছেলে দুই মেয়ে জন্ম নিল। সবার নামও আমাদের এই সুন্দরতম পৃথিবীর সাথে মিল রেখে রাখা হয়েছে। কি অদ্ভূত মিলন মেলা।কি অসাধরণ দুরদর্শি পরিকল্পনা।
যাই হউক আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শোকর। নোরাদের কোন ক্ষয় খতি হয়নি।স্বামি শুদ্ধ নিরাপদে তারা নাকি বাড়িতেই ছিল।জানমাল মান ইজ্জত সবি আল্লাহ হেফাজত করেছেন।পাকিস্তানি বর্বরেরা কত খুন খারাবি ধর্ষন করেছে। মানুষের ধানের গোলায় আগুন দিয়েছে।
নোরার স্বাশুড়ি সারাক্ষন শিশু জাহাঙ্গীরকে পাঁয়ের উপর শোয়ায়ে ডুলাতেন আর গুন গুন করে গান গাইতেন। মায়ের খুবি ইর্ষা হতো।আদরের নাতিকে একবার আদর করতে দিতেছেনা পাগলি বুড়িটা।আমিও ভাগিনাকে একটু আদর করতে পারছিনা।মাও তো রেগে গিয়ে নোরার স্বামিকে বলে দিল। তোমার মা দেখবা এই ছেলেটাকে এভাবে পাগল করে ছাড়বে একদিন। অত কুয়ারা করা ভালোনা। ইত্যাদি।
শিশু জাহাঙ্গির তো শুধু জ্যা জ্যা করে হাসঁছে কেবল।ডোল পড়া মুখ, কপোলের বাম পাশে মোকদোষ না লাগার কালো টিকা।অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে।
নোরার স্বামি শাহ আলম তার মাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন।তার বাবা মাকে ছেড়ে চলে গেলেও সাহআলম মাকে ছেড়ে কোথাও যাননি, দুরেও ফেলে দেননি।মা ছেলের নাড়ির বন্দনও ভালোবাসার এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।
নোরার বাড়িতে মায়ের সাথে আমি যতবারই গিয়েছি, আমরা বেশির ভাগ সময় কাটাতাম মা এর মামাতো বোন মজিদ হাজির স্ত্রি মানিক হাজি ও হামিদ উল্যা উকিলদের ঘরে। অনেক সময় আমরা খাওয়া দাওয়াও করতাম মানিক হাজিদের ঘরে। মজিদ হাজির পালক পুত্র ওজিউল্যা মাকে কি অসম্ভব সন্মান করতেন।সব সময় খালাম্মা খালাম্মা বলে ডাকতেন।খানাপিনা করছে কিনা মায়ের খোঁজ খবর নিতেন। ওজিউল্যার ছেলে পলাশ ও ঠিক বাবার মত ছিলেন অমায়িক।নোয়াখালি কলেজে ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েও সে ছিল সাধারণ ছাত্রের মত।সদালাপি মৃদু ভাষি ভদ্র নম্র পলাশকে আমি সব সময় মিস করি। মন চায় বসে বসে দীর্ঘক্ষন তার সাথে আলাপ করি।
মায়ের সাথে যতবার আমি গিয়েছি, ততবারই মানিক হাজির ভয়ে তটস্হ থাকতাম। সুটাম দেহের অধিকারি মানিক হাজি প্রতি প্রাতে ঘোড়ার মত কাঁচা বুট খেতেন।ব্যায়াম করে পেশি শক্তি বাড়াতেন। ভাত খেতেন হাতের তালুতে প্লেট রেখে হেঁটে হেঁটে।সে এক স্মার্টনেস স্টাইল। কিন্তু সে আমাকে দেখলেই দৌড়াতেন এই বলে, তোর নুনু কেটে দেব।এই দাঁড়া চুরি কইরে চুরি লও এর নুনু কাটবো। ভয়ে এবং লজ্জায় আমার কলিজা ধুক ধুক করতো।পরে দেখলাম মানিক হাজি আমাকে কোলে তুলে আদর করতো মুখে চুমো দিয়ে আদর করে চেড়ে দিত।নুনু আর কাটতো না।
আমি যখন ভয়ে দৌড়ায়ে মায়ের অথবা বোনের আঁ্রল তলে লুকাতাম। নোরা এবং মা তখন হাঁসতে হাঁসতে বলতেন।আরে আরে তোর ভাইয়া না কিছুই করবেনা। নোরার স্বামী সাহ আলমও অনেক সময় আমাকে ভয় দেখাতো এই বলে যে মানিক আসছে মানিক আসছে।আর খিল খিল করে হাঁসতোে আবার সিগারেট টেনে খ্যাঁক খ্যাঁক করে কাশতো।
সোনা সোহাগায় ভরা ছিল নোরার সোনার সংসার।স্বামী সন্তান স্বাশুড়িকে নিয়ে ছিল তার সুখি পরিবার। লাল টালি ইটের চারছালা ছোট একটা ঘর। ভিতরে পার্টিসান।বড় বড় দুটা খাট পাতা।পাকসাক হতো এক চালা এটাস্ট একটা ঘরে।
ঘরের পিছনে ঢেলার সাথেই ছিল বড় বড় তিনটা কাঁঠাল গাছ। তার পিছনে বিশাল বড় একটা তেতুল গাছ ।তারও পিছনে আড়ায় ্ছিল বিশাল একটা জলপাই গাছ। সারি সারি গুবাক গাব আম গাছে ভরা ছিল তাদের ঘরের পিছনে বিশাল বাগানটা । আবার মানিক হাজিদের ঘরের পিছনের বিশাল বাগানটা ছিল মানিক হাজিদের।গুবাক নারিকেল আমঝাম গাছে ভরা ছিলো পুরোটা বাগান জুড়ে। সে বাগানে দিনে ডুকলেও গা টা হিম শিম হয়ে উঠতো ভয়ে।ধুক ধুক করতো বুকটা।
বাগান ছাড়াও নোরাদের ্র প্রচুর ভিটে জমিন ও ধানি জমিন ছিল।তাদের বাড়ির সামনে বড়ো পুকুরের উত্তর পাড়ে ছিল ভিটে জমিন। সেখানে ফসখেতি হতো।দু পাশে আম ঝাম কাজম এবং কাউ গাছ ছিল। কাউ ফল গোল গোল খেতে তেতুলের মত টকমিস্টি। পেকে হলুদ লালে মিশ্রিত আকার ধারণ করতো।সে বাড়ির ছিদ্দিক মিঞার দু মেয়ে ছিল আমার সম বয়সি।দুটাই ছটপটে দুরন্ত প্রকৃতির।মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফি মিঞার আপন ভাগনি হলেও মেয়ে দুটির বাবা দিন মুজুরের কাজ করতেন। বাবা দেখতে কুছকুচে কালো হলেও মেয়ে দুটি ছিল অসম্ভব সুন্দরী। মেয়ে দুটি আমার সাথে লক লকিয়ে গাছে উঠে যেত।বানরের মত সরু ঠালেও চটপট করতে পারতো।তাদের নাম এখন আর আমার মনে পড়ছেনা মেনু মনি টাইপের কিছু হবে আর কি।
দেখতে দুজনকেই জমজ বোনের মত মনে হতো। হয়তো গোলাপ নয় শিউলি চ্যামেলির মত সুন্দর।দুজনেই হাফপ্যন্টের সাথে বড় চ্যাকের ফ্রগ পড়তো।আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা কাউ তেতুল কিংবা জলফাই গাছের মগ ডালে বসে কাটিয়ে দিতেম।কখনো ওরা এক বোন থাকতো কখনো বা দুজনই একসাথে থাকতো।দুজনই আমাকে বেশ পছন্দ করতো। আমরাও ফুরসত পেলেই গিয়ে গাছের মগ ডালে উঠে বসতাম।ফল খাওয়ার সাথে সাথে আলাপ চলতো অবিরত।সেই ছিল এক অনুপম অভিসার।
আমরা তখন তিন কিশোর কিশোরি আকির্ন করেছিলাম এক নতুন মাধুর্যময় পৃথিবী। কিন্তু ভালোবাসা বা প্রেম ছিলনা হয়তো, আকর্ষন ছিল চুম্বকের। বাধ সাধতো তাদের এক কাকা ছিল সে হটাৎ করে এসে আমাদেরকে ধরে ডাঁটতো বা বকা ছকা করে থাপ্পর চড় বসিয়ে দিত।তাদের বাবা কালো হলেও সেই কাকা ভীষন সুন্দর ছিল।মেয়ে দুটিও ছিল যেন অবিকল তার পয়দাসে।চেহারাসুরত অবিকল চাচার মত।পরে কানাঘুষা শুনেছি, ভাবির সাথে নাকি তার অনৈতিক সম্পর্ক ছিল।
মেয়ে দুটিকে আমার অসম্ভব ভালো লাগতো।তারাও আমাকে ভীষন পছন্দ করতো নিশ্চয়। তা না হলে একটু ফাঁক পেলেই কেন আমরা ইশারায় আশারায় চোখের ভাষায় এত কথা বলতাম।কেন লোকরণ্যে গিয়ে অভিসার সাজাতাম?কেন ফলন্ত গাছের মগ ডালে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতাম?কেন ভাগাভাগি করে ফল মুল পেড়ে খেতাম?
একদিন হঠাৎ করে নোরাদের বাড়ি যাওয়া আমার চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। কেন সে কাহিনীও বলবো আগে। আমার শৈশবের প্রেম,রোমাঞ্চকর পৃথিবী পম্পে নগরির মত নিমীশেই যেন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেল।স্বপ্নাবতি মেয়ে দুটির ছবি আজো ভেসে উঠে হৃদয় পটে।জানিনা আজ তারা কে কোথায় কেমন আছে?
যাই হউক ভিটে জমিনের পাশেই পশ্চিম উত্তরে নোরাদের বেশ বড় বড় নাল জমিন ছিল। সেই জমিনে বর্গা চাষীরা চাষ করতো, প্রচুর ধান ফলতো।বাড়ির পশ্চিম দক্ষিন কোনে বিরাট একটা অগভীর দীঘি ছিল।সেখানেও প্রচুর ইরি ধান ফলতো।লোক মুখে শুনতাম এই মাইজদী বাজারের মাছ বাজার আর ফরেস্ট বিভাগ সহ প্রায় অর্ধ্যেক জায়গা নাকি তাদের ছিল।
এত ধন সম্পদ জায়গা জমিন থাকতেও নোরার সংসার ভেঙে চুরমার হয়ে গেল কেমন করে।কেন নোরা ত্রিশ বছর ধরে আজো লাফাত্তা নিরুদ্দেশ? কোথায় আজ নোরা? কেন নোরার সন্তানরা আজো দ্বারে দ্বারে ধিক্ষীত এবং উপেক্ষিত?কোথায় নোরার প্রাণপ্রিয় পতি শাহ্ আলম? সে এক করুন ট্রেজেডি!না শুনলে আমরা জানবো কি করে?
(পাঁচ,)
দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু ধ্বংশস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে আছে দেশ ।
চারিদিকে অভাব অনটন দুর্ভীক্ষ।যুদ্ধাগ্রস্হ একটা দেশের যেই দৈন্য দশা ঠিক সেই রকম অবস্হা সদ্য জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও।মুক্তি যোদ্ধারা তখনও অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে গুরে বেড়ায় মোহরা দেয়। মাইজদী বাজারের শফি কমান্ডার সারোয়ার সাহেবরা দলবল নিয়ে কাঁদে ভারি অস্ত্র ঝুলায়ে রাজাকার খুজে খুজে মারে। কাউকে ব্রাস ফায়ার করে জানে মারে কাউকে আবার আধামারা করে চেড়ে দেয়। একলাশ পুরের খালেক তো কালাম কাগুর বন্ধু হিসেবে স্টেন গান নিয়ে প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসতো. রাত ভরা অস্ত্রের মোহরা দিত ,বাড়ির কয়েকজন তরুনকে শিখাতো বন্দুকবাজি।
নোরার বাবা ইতিমধ্যে বেশ কয়বার চিটাগাং যেয়ে এসে বাংলাদেশি একটা জাহাজের নলি বানিয়ে জাপানি একটা শীপের সাথে শৈন চুক্তি করে জাহাজের নোঙরও তুললেন।এ নিয়ে তাঁর ব্রিটিশ পাকিস্তান বাংলাদেশ সহ তিন প্রিরিয়ডের নলি হলো।তার জীবনের নোঙ্গর ফেলেছেন পৃথিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত সব বন্দরে।
আমি তো মা এর সাথে বেশ কয়বার নোরার বাড়িতে যেয়ে এসে রাস্তাঘাট জেনে নিলাম। মাঝে মধ্যে মা পিঠা চিড়া মুড়ি ভেজে আমাকে বলতো , যা তোর আপাকে দিয়ে আয়।আমি তো যাওয়ার জন্য খুশিতে উচ্ছসিত হতাম।সে বাড়িতে দুটা ফুটফুটে মেয়ের সাথে তো ইতিমধ্যে আমার সখ্যতা হয়ে গেছে।গেলেই তো আমরা ফলন্ত গাছে চড়ে বাতাসের গায়ে দোল খেতে পারবো।
নোরাদের বাড়িতে দু তিনদিক দিয়েই যাওয়া যেত।আমি বেশির ভাগ বর্তমান আলআমিন বিস্কুট ফেক্টরির সামনে হয়ে বাড়ির পিছন দিয়ে ডুকতাম। আলআমিন বিস্কুট ফেক্টরির পশ্চিম পাশে একটা হিন্দু বাড়ি ছিল।বোধ হয় মাখন ডাঃদের বাড়ি। মা এর মুখে শুনতাম তারা নাকি প্রেগনেট কোন মহিলা দেখলে ধরে নিয়ে পেট কেটে পরিক্ষা নিরিক্ষা করতো।জঙ্গলে ভরা ছিল সেই এলাকা। যেতে আসতে ভয়ে বুকটা ধুক ধুক করতো।কি করবো সেখানে গেলে তো নোরা যেমনি আমাকে অফুরন্ত আদর করে, মেয়ে দুটিও আমকে সে রকম ভালোবাসে।তবে একটু ভয় ছিল মানিক হাজির। প্রায়ই যাই আসি, মাঝে মাঝে বেশ কয়দিন থেকে যেতাম নোরার বাড়িতে।জাহাঙ্গীরের সাথে খেলতাম, দুষ্টোমি করতাম।
জাহাঙ্গীর শব্দের অর্থ বিজেতা, জাহাঙ্গীরকে দেখতেও বিজেতা কোন ফ্রিন্সের মত মনে হতো।তাকে কোলে নিয়ে কাঁধে বসায়ে গুরতে খেলা করতে আমার গর্ববোধ হত আনন্দও পেতাম।
এক নীশি রাতে নোরা হঠাৎ করে আবার শুরু করে দিল পাগলামি।ঘরের পুর্বদিকে পার্টিশানে বড় একটা খাটে আমরা শুয়ে ছিলাম, পশ্চিম দিকের পার্টিশানে শুয়েছিল নোরাও তার স্বাশুড়ি।নোরা সেই আগের মত আবল তাবল বকতে লাগলো।আমাকে সাবধান করে বকছে ভাই তুই নীচে নামিস না তোকে ছলি নিয়ে যাবে।ছলিরা সাতটা সোনার পাতিল আমাকে সাধছে তোর বিনিময়ে।আমি সাতটা সোনার পাতিল চাই না, আমি চাই আমার ভাইকে।আমার ভাই এর কিছু হতে আমি দিবনা।সাবধান! ভাই তুই নীচে নামিস না তোকে ওরা নিয়ে যাবে,তোকে ওরা মেরে ফেলবে। ভাই তুই আমার সাত মুল্লকের বাদশা। এই দেখ আমার ঘরের ভিতর কত বড় গর্ত হয়ে গেছে।এখান দিয়ে টাকার পাতিলা সোনার পাতিলা এসেছে।ইত্যাদি।
(নয়)
(দশ)
পড়তে থাকুন আগে....
অজ্ঞসব জনপ্রতিনীধি,
সত্যই শক্তি, সত্যই সুন্দর,
-
সমাজ তন্ত্রের প্রবক্তা কে ....? *সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা কে? * সমাজতন্ত্র Sicialism কি? * মাক্সব...
-
ছবিটা মোমের, ম্যাডাম তুঁসো যাদু ঘরের । হিটলারের নাম শুনেনি এমন লোকের সংখ্যা পৃথিবীতে খুব কমই আছে।বিংশ শতাব্দির তিরিশের দশকের দিকে সা...
-
যত মত তত পথ, এই উধিৃটি সনাতান ধর্মের গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসের।শ্রী রামকুষ্ণ বাংলায় লেখা পড়া জানতেন অতি সামান্য। কোন রকমে ধর্মিয় বই পুস্তক পড়...