দর্শণ

                        আমি শৈশবে দীক্ষা নিয়েছিলাম দর্শনের,




শিক্ষা নাই তবু আমি শৈশবে দীক্ষা নিতে গিয়েছিলাম দর্শনের। সে কথা মনে করে আজ আমার শুধু হাসি পায় । কত বড় মুর্খ ছিলাম আমি ভাবতে অবাক্ লাগে। বয়স তখন আর কত হবে, চৌদ্দ কিংবা পনর, সবে মাত্র অষ্টম শ্রেনিতে পড়ি । হরি নারায়নপুর হাই স্কুল।  আমি  ছিলাম অরুন চন্দ্র প্রাই এবং হাই স্কুলের ছাত্র ।ক্লাশ সেভেনে  পাইনালে নকলে ধরা পড়লে প্রধান শিক্ষক বেলায়েত স্যার আমাকে এক্সপেল্ট করে হল থেকে বাহির করে দিয়ে আমার  লেখা পড়া এবং সুন্দর ভবিষ্যতের মাথায় ছোট করে একটা বাড়ি বসিয়ে দেয় ।সে বাড়ির ঘা  আজো আমার বুকে আর মাথায় বিঁধে আছে ।সে কথা ভাবলে আজো আমি খুব কষ্ট পাই। 

বলা বাহুল্য নকলটা ছিল আমার জীবনের প্রথম নকল, যদিও নকলটা  আমি করি নাই এবং নকলটা নিয়ে এসেছিল আমার ক্লাসমিট এবং কাজিন মানিক। তার পুরো নাম আবদুল কাইয়ূম মানিক, সে সুন্দর করে বাড়ি থেকে লিখে এনে  আমাকে দিয়ে বলল, আমার ভয় লাগে তুই কর, বললাম ভয় কিসের প্রতিদিন সাথের বড় ভাইয়েরা গোটা বই দেখে দেখে লেখে আর আমাদের তো  ছোট একটা কাগজ। আমি সাহস করে তার কাছ থেকে নিবার পরে সন্ধেহ বসত হোসেন স্যারের কাছে ধরা পড়ে যাই।অবশ্য ধরা পরতাম না, সাহসে হাঁটু কাঁপছিল বোধ হয় তাই। যদিও হোসেন স্যার প্রথমে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিছুই করবেনা, অতচ কুচকুচে কালো এই হোসেন স্যার পরে  আমার খাতাটা নিয়ে  প্রধান শিক্ষকের কাছে দিয়ে দিল।  বদজাত ঐ শিক্ষক আমার ভবিষ্যতের কথা একটু চিন্তা না করে ভালমন্দ বিচার বিশ্লেসন না করে বড় নিদারুন ভাবে আমাকে মেরে হল থেকে বাহির করে দেয়।

আমি শ্মশান ফেরা বালকের মত কালো পেন্টের পকেটের ভিতরে হাত ডুকায়ে  হন হন করে হেঁটে সিদা বাড়ি চলে আসলাম ।মা দেখে জিজ্ঞেস করলো পরিক্ষা কেমন হয়েছেরে বাবা?  আমি মিথ্যেকে সত্যের মত করে বললাম ভালো, মা খুব ভাল হয়েছে। মা জানতেন আমি অত খারাপ ছাত্র ছিলাম না, তার আদরের খোকা পাশ তো করবেই ।তাই আমার কথা বিশ্বাস করে নিলেন অনায়াসে। আমি সেদিন নতুন বাড়ির আম গাছের ডালে একা বসে বসে অনেক কেঁদেছি আমার অনাগত  ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভেবে । তার পর?

তারপরে তো আমাকে পেয়ে বসে নস্টালজিয়ায়। পরিক্ষার হলে বা স্কুলে যাবার তো প্রশ্নই উঠেনা ।প্রতিদিন খেয়ে দেয়ে টাউনে গিয়ে গুরে পিরি সিনেমা দেখি । আড্ডাবাজি করি, লেখাপড়া তো গেছে গোল্লায়, হয়ে গেছি  প্রায় বখাটে। বাবার পকেট কেটে মা এর ঝোলা কেটে যাত্রা হাউজি  সারকেস দেখা  হয়ে গেল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যপার । একদিন এল সে অনাকাঙ্কিত  খবর । পরিক্ষার রেজাউল্ট বাহির হলো, সবাই পাশ করেছে শুধু আমি ফেল্ । আর মিথ্যে বলার প্রয়োজন নেই নিমিশেই সবাই জেনে গেছে আমি ফেল । 

আমাকে নিয়ে তখন আমার গার্জিয়ানদের মধ্যে শুরু হলো নতুন করে চিন্তা ভাবনা । কি করা যায় আমাকে নিয়ে ।আমার বড় দুভাই যাদের সাথে আমার বয়সের অনেক তপাত ছিল, তারা চেয়েছিল, আমি লেখা পড়া না করে গরুর ঘাস কাটি, জায়গা জমিন খেত খামার দেখি, হাল চাষ করি, এমন আর কি পৃথবীর সব বড় ভাইয়েরা যা যা করেন, তারাও তেমন চেয়েছিলেন।

কিন্তু আমার পরম বাবা মা বিশেষ করে মা কখনো  চাননি, তার আদরের খোকাটা লেখাপড়া না করে চাষা ভূষা বা ক্ষেত মুজুর হউক। মা এর পরামর্শে একদিন বাবা তার  এক বেহাইকে নিয়ে  আমাকে  হরিনারায়ন পুর হাই স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিদ্দিকুর রহমান স্যার সহ সিনিয়র স্যার গন বাবার সাথে বেশ পরিচিত ছিলেন । কারন  এই স্কুলে আমার বড় ভাই এবং আমার ছোট চাচা ও লেখা পড়া করেছিলেন বিধায় বাবার আসা যাওয়া ছিল সবসময় ।

যাহউক আমি  উন্নিশ্শ আটাত্তর সালের কথা বলছি। আমি তখন হরিনারায়ন পুর  হাই স্কুলে পড়ি । পড়া লেখায় মন দিয়ে শুরু করলাম নতুন জীবন । এই স্কুলে প্রতিটা শিক্ষক ছিলেন দয়ালু এবং বিজ্ঞ ।চোখে মুখে অনেক স্বপ্ন ।অরুন চন্দ্র হাই স্কুলের কোন শিক্ষককে এই স্কুলের  কোন শিক্ষকের সাথে আমি তুলনা করতে পারি না। হেড স্যার জনাব ছিদ্দিকুর রহমানের তথ্যাবধানে এই স্কুলে লেখাপড়া ও সব স্কুলের চাইতে ভাল হতো । ।তাঁর বড় ভাই আতাউর রহমান স্যার ছিলেন নোয়াখালি সরকারি কলেজের স্বনাম ধন্য অধ্যাপক। এক নামে সবাই চিনতেন তাঁকে ।

সে বছর জেনারেল জিয়াউর  রহমান তার কঠিন সামরিক আইন উড্র করে অবাধে রাজনিতী করার অনুমতি দিলেন ।সে সুযোগে নিসিদ্ধ বা ভেঙে যাওয়া  এবং নতুন রাজনৈতিক  দল গুলি উঠে পড়ে লেগেছে দলকে গোঁছাবার বা নতুন করে গঠনের জন্য । কয় দিন  পর পর আমাদের স্কুলে  ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা  আসতে লাগলেন । হেড স্যারের অনুমতি লয়ে  সবাই   লেইজার পিরিয়ডে সবাইকে এক কামড়ায় নিয়ে জালাময়ি বক্তিতা শুনায়ে একটা কমিটি গঠন করে চলে যেতেন। কিন্তু ব্যতিক্রম হিসেবে  আসলেন দুটা দলের প্রতিনিধিরা। প্রথমটার নাম শুনে আমি তো রিতিমত বিশ্মিত হলাম । ইসলামী ছাত্র শিবির। ইসলামী শিবিরের সাথে খায়রুল হাসর পুঁতি পড়েে আর মায়ের কাছে অনেক শুনেছি। মুসলমানরা কারবালার মাঠে তাঁবু দিয়ে শিবির গড়ে কাপেরদের সাথে জীবন বাজি রেখে লড়েছে, অনেকে সহীদ হয়েছে, কিন্থু ছাত্র শিবির, এটা আবার কি রকমের।

পরে এসে জানতে পারলাম উনারা যে রগ কাটা শিবির । শিবিরের নেতারা এসে আমাদেরকে দাওয়াত দিলেন  স্হানিয় মিউনিসিপাল্টি মসজিদে এক সাথে জোহরের  নামাজ পড়ার জন্য। আমরা কয়জন খাঁটি মুসলমান  কোন আপত্তি না করে লেইজার পিরিয়ডে গেলাম মসজিদে ।এক সাথে নামাজ পড়ার পরে উনারা  আমাদেরকে এক কোনে বসায়ে ওয়াজের মত প্রকাশ করলেন তাদের নতুন ইশতেহার । উনাদের  ইশতেহার শুনার পরে বুঝতে দেরি হলো না উনারা যে রাজাকারের বংশধর, উনারা যে মাত্র কয় বছর আগে আমাদের মাবোনের ইজ্জতটা পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছে। আমাদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে হত্যা  ধর্ষন লুন্ঠন চালিয়েয়েছে। উনারা যে পাক হায়েনাদেরকে গ্রাম বাংলার পথ দেখায়ে দিয়েছে।বেশরমের মত উনারা আবার হাজির হয়েছে নতুন খোলস পড়ে। আমি সেদিন মন থেকে ঘৃনাবোধে এই শিবিরকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম।

আর দ্বিতীয় দলটি হলো বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সংক্ষেপে বাছাই । বাছাই এর কয়জন প্রতিনিধি  আমাদের স্কুলে এসে আমাদের সাথে  তাদের আদর্শ উদ্দেশ্যের কিছু কথা বলে  বিকেল বেলায় টাউন হলে মৈত্রি পাঠগারে যাবার জন্য অনুরোধ করলেন । সেদিন শান্তসিষ্ট বাছাইয়ের কয়জন নেতার কথা বার্তা শুনে মুগ্ধু হয়ে আমাদের ক্লাশের পাস্ট ভয়  জাহের সহ আমরা  কয়জন গেলাম মৈত্রি পাঠাগারে । গিয়ে দেখি পাঠাগারে বুক সেল্পে লাল মলাটের উন্নত মানের  অনেক বই সোভা পাচ্ছে। তার মধ্যে মার্ক্স, এঙ্গল্স, মাও চে  ও লেলিনের ছবি ।এক কোনায় একটা হারমেনিয়াম । পরিবেশটা দেখে আমার পছন্দ হলো । আর বাছাই নেতাদের মধ্যে সেদিন সম্ভোবত মামুন ভাই, বাহার ভাই, খসরু ভাই আকবর আলঙ্গির ভাই সহ আরো দুতিন জন ছিলেন, তনমধ্যে মামুন ভাই আর খসরু ভাইকে  আমি আগে থেকেই চিনতাম। উনারা আমার সিনিয়র হলেও অরুন চন্দ্র হাই স্কুলে পড়তেন । তাছাড়া খসরু ভাইয়ের ছোট ভাই জগলু ছিল আমার ক্লাশমিট । পরে আমরা একসাথে নোয়াখলি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করি ।স্কুলের যে কোন পাংসানে উনারাই নেতৃত্ব দিতেন । মামুন ভাই  আকবর ভাই আজকে নোয়াখালি জজকোর্টে নাম করা  উকিল।

সেদিন বিকেলে বাছাই নেতাদের কথাবার্তা শুনে আর লাল মলাটের বই গুলি দেখে আমার পছন্দ হয় পরিবেশটা । মনে মনে স্হির করি যেমন করে হউক আমি লাল মলাটের  বই গুলি পড়বো, এবং রাজনিতি করলে একমাত্র ছাত্র ইউনিয়নই করবো ।কার্লমাক্স, এঙ্গেল্স  লেলিনের কথা আমি অনেক শুনেছি, কিন্থু এবার পড়ে দেখবো শিখবো জানবো তাদের দর্শন ।আকবর ভাইয়ের কাছে থাকতো  পাঠাগারের চাবি । উনার বাসাও ছিল টাউন হলের পাশে সি এন্ডবির ভিতরে । উনার বাবা সি এন্ডবিতে বড় চাকরি করতেন উনার বড় ভাই ও ছাত্র ইউনিয়ন করতেন ।তিনি ঢাকা ভার্সিতে পড়তেন । আকবর ভাইয়ের সাথে অনেক বার গিয়েছি তাদের বাসায়, চা পানি খেয়েছি ।আমি রোজ বিকেলে গিয়ে সেখানে বসে অথবা  বাড়ি নিয়ে এসে লাল বই গুলি পড়তে লাগলাম। কিন্থু সে লাল বইয়ের কঠিন  কঠিন  শব্দগুলি মোটেই আমার মাথায় ডুকতো চাইতো না। বিপ্লব, প্রলোতারিয়েত, কমরেড, সামরাজ্যবাদ সামন্তবাদ, পুঁজিবাদ বস্তুবাদ, বুর্জূয়া পেটিবুর্জূয়া  গনতন্ত্র ,  মাক্সবাদ লেনিন বাদ, সাম্যবাদ, কমিনিস্ট কমিনিউজম শ্রেনি বৈষম্য, শ্রেণী সংগ্রাম আরো কতো কি । কিছু কচু না বুঝে সেদিন  আমি নিজেকে মার্ক্স প্রেমি  ভাবতে শুরু করলাম।

তারপর থেকে নিয়মিত যাওয়া আসা করতাম বাছাই এর  মিছিল মিটিং  এ ।একুশে ফেব্রুয়ারি আসলে তো উদিচীর শিল্পিদের সাথে গানের রিহার্সেল দিয়ে রাত বারটা এক মিনিটে সহীদ মিনারে ফুল  দিয়ে পরে শীতের সকালে  খালি পাঁয়ে কনকনে শীতের ভিতর প্রভাত প্রিতে বাহির হতাম ।আবার মাঝে মধ্যে আমরা দল বেঁধে অকলেজ ছাত্ররা  চৌমুহনি কলেজে গিয়ে কলেজের  সংসদ নির্বাচনে  মিছিল মিটিং করে সহযোগিতা করতাম ।আমাদের মাঝে আকবর ভাই মিছিল মিটিং বা সমাবেশ মন্মেলনে শ্লোগান দিয়ে পুরো  সভাকে মুখোরিত করে তুলতেন ।

 

সভা সমাবেশ বা সন্মেলন ঘনিয়ে আসলে অথবা কেন্দ্রিয় নেতারা আসার পোগ্রাম হলে আমার তিন চার জন মিলে রিসিট বুক লয়ে চাঁদা তুলতে বাহির হতাম ।মাইজদী থেকে সোনাপুর পর্যন্ত চষে বেড়াতাম । অনেক সময় র্হাঁটতে হাঁটতে  পাঁয়ে ব্যথা হয়ে যেত । পুরাদিন চাঁদা তুলে পন্সাশ টাকা হত না । সে সময় মানুষ বড় অভাবি ছিল । এক দুটাকার বেশি চাঁদা দিত না । ক্ষিদায় পেটে আগুন জ্বলতো । তা চাড়া কমিনিস্ট পণ্হিদেরকে অনেক দোকানি  ভয় অথবা পছন্দও করতো না ।একদিন সোনাপুরে চাউল ধানের আওড়তে গেলাম বেশি চাঁদা পাওয়ার আশায় ।কিন্তু সবাই বড় নির্মম ভাবে আমাদেরকে পিরায়ে দিয়েছে । এক ব্যবসায়ি  আমাদের করুন মুখ দেখে বসায়ে অনেক লিকছার দিয়ে চা বিস্কুট খাওয়ায়ে বলল, কমিনিস্টরা নাস্তিক তোমরা এই দল করো না, ইত্যাদী ।

সে বার  কমরেড মনি সিং, শ্রমিক নেতা সাইফুদ্দিন মানিক, আর কমরেড ফরহাদ এসেছিলেন । চৌমুহানি রেলওয়ে ময়দানে বিরাট জনসভা ছিল । একদিন আগে কমরেড মনি সিং আর শ্রমিক নেতা   সাইফুদ্দিন মানিক মাইজদীতে এসে রাতে এক কমিনিস্ট উকিলের বাসায় থেকে  সকালে  বার লাইব্রেরিতে এসে সেলিব্রেটি হলেন ।সেখানে একজন মোল্লা টাইফের বয়স্ক উকিল উত্তেজিত হয়ে  প্রশ্ন করতে লাগলেন, আফগানিস্তানে রাশিয়া আর্মি কেন অবস্হান করছে?ইত্রাদী। তার আচরনে আমরা ভিতরে যে কয়জন ছাত্র ছিলাম, সবাই শ্লোগান ধরে তাকে ধমিয়ে দিলাম । বাহিরেও আমাদের হাজার হাজার সহকর্মি শ্লোগান দিচ্ছে । সে দিন কমরেড মনি সিং আমাদেরকে থামিয়ে দিয়ে ঐ লোকটার এবং অন্য সবাইর প্রশ্নের উত্তর দিলেন সান্তশিস্ট ভাবে । পরে আমারা সবাই চৌমুহানি রেলওয়ে ময়দানে গিয়ে জনসভায় যোগ দেই ।সেদিন জনসভায় হাজার হাজার লোকের সমাগম হয়েছিল । আমারা কয়জন  সর্বক্ষন নেতাদের পাশে ছায়ার মত ছিলাম ।কমরেড ফরহাদ কমরেড মনি সিং এবং শ্রমিক নেতা সাইফুদ্দিন মানিক ভাইয়ের  ছবি আজো আমার মন মন্দিরে প্রজ্জলিত । 

কমরেড ফরহাদ ভাই  আরেক বার  চৌমুহানি পৌরহলে একটা মিটিংএ আসার পরে আমরা কয়জন চারিদিক থেকে  তাঁকে ঘিরে রেখেছিলাম । মিঠিং শেষে তিনি বাহিরে ঠান্ডায় এসে বসেছিলেন কিছুক্ষনের জন্য ।তিনি আমাদের সাথে খোলামেলা কথা বলেছেন, আমাদের প্রশ্নের  উত্তর দিয়েছেন ।আজ উনারা কেহই বেঁচে নেই । সবাই পার্টিকে অভিভাবকহীন করে চলে গেছেন না ফেরার দেশে । আজ সত্যিই  পার্টিটা বড় অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে ।মুজায়েদুল ইসলাম সেলিম ভাইয়ের উপর অনেক আশা করেছিলাম, তিনি পার্টিকে সঠিক নেতৃত্ত দিবেন ।সে আশায়ও গুড়ে বালি ।

আমি সে সময়  নোয়াখালিতে যতদিন ছিলাম ছাত্র ইউনিয়নের সাথে  জড়িত ছিলাম । নোয়াখালি কলেজে পড়া অবস্হায় হঠাৎ করে মাথায় পোঁক ডুকেছে বিদেশের । আমি বিদেশ যাব, সোনার হরিন ধরবো, বড়লোক হবো, সে কারনে ঢাকাতে চলে আসি ।পরে ঢাকা থেকে ঘোড়াশাল পার্টিলাইজার কলোনিতে প্রায় তিন বছর থাকি । সে সময় শ্রমিক নেতা জাকির হোসেনের সাথে আমার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে । তিনি বাম রাজনিতির সাথে জড়িত থাকলেও বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন ।আমিও তার পরামর্শে বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সাথে যুক্ত হয়ে পুরো নরসিংদী জেলায় নাট্য আন্দলন গড়ে তুলি । মনোহরদী,কাপাস্সা, জামালপুর কলেজ, পলাশ খানেপুর হাইস্কুলে বাস্তব ঘঠনা নিয়ে লেখা ক্ষুদিরামের দেশে, নাটকটি মঞ্চস্ত করি । এই নাটকটিতে ভার্সিটির ছাত্র নেতা ভি পির চরিত্রে অভিনয় করে আমি খুব প্রশংসিত হই । একবার কথা সাহিত্যিক আহম্মেদ ছপা আমার অভিনয় দেখে খুব প্রশংসা করেছিলেন ।তারপর তো সত্যিই একদিন বিদেশে চলে আসা হলো, অনেক দেশ গুরেপিরে অবশেষে এই জার্মানেই স্হায়ি আবাস হলো আমার ।যেখানে দর্শনের শেষ সম্ভার । যেখানে কার্ল মার্ক্সের জন্ম, যেখানে এঙ্গেল্সের জন্ম সেখানে ।

 

গতবার আমি দেশে যাবার পর  আমার শৈশবের সেই সোনা মুখ গুলির সাথে বিশেষ করে তিন জনের সাথে দেখা হয়েছে ।সবাই এখনো কমিনিস্ট করেন । আকবর ভাইয়ের সাথে মাস্টার পাড়ায় বসে চা খেয়েছি, তিনি সেদিন সহকর্মি কোন উকিল কন্যার বউ ভাত খেয়ে এসে ঢেঁকুর তুলছেন । মামুন ভাই তো জজকোর্টে অনেক লোকের ভিড়ে ও আমাকে চিনতে পেরে ধরে নিয়ে লাল চা খাওয়ালেন । পরে অবশ্য তাঁর বাসায় গিয়ে ও চা পানি খেয়েছি ।

আমি উনাদেরকে দেখে রিতিমত অবাক বিশ্মিত । মামুন ভাইয়ের বাসার সামনে  মজিব ভাইকে দেখেছি মাথায় মাপলার বাঁধা ।মামুন ভাই আমার সাথে পরিচয় করে দিলেন, কিন্তু আমার চিনতে কোন অশুবিধা হয়নি, আগুন্তককে।   তিনি চৌমুহানি  কলেজে ছায়েদমজিব প্যানেল গঠন করে নির্বাচন করেছেন । কলেজ রোডে তিনি দীর্ঘক্ষন ইংরেজিতে বক্তিতা দিয়ে সবাইকে মুক্ধ করে রাখতেন। এখন ও সবাই কমিনিস্ট পার্টি করেন । দেশে কত স্বৈরচারি সরকার এল গেল, এখনো কত রাজনৈতিক ধান্দা চলছে দেশে, কত মিথ্যবাদ কত অপবাদ আদর্শের নেতার জন্ম হলো, অতচ উনারা নিজ আদর্শ থেকে এক চুলও নড়েননি । ইচ্ছে করলে মন্ত্রি মিনিস্টারের পদও ভাগায়ে নিতে পারতেন ।আকবর ভাই বেশ গর্ববোধ করে বললো, পার্টি থেকে নমিনেসান নিয়ে এমপি ইলেকসান করেছি, বেশ ভালো ভোটও  পেয়েছি ।সেলুট সবাইকে সেলুট ।

আজ বুঝলাম সত্যিই অবুঝেরা  নিজেকে সব সময় জ্ঞানি ভাবে, আর বুঝেরা  সব সময় নিজেকে  ‍মূর্খ মনে করে । সত্যি কথা  আমি  নিঃসঙ্কোচে বলছি, আজ আমার কাছে অর্থ  বিত্ত সবি আছে, কিন্তু জ্ঞ্যান বিদ্যা বলতে কিছুই নেই।  .

                                                                                                              
.....মোহাম্মেদ ফারুক, জার্মানী।

                   বিশ্বকে বদলে দেওয়ার সপত নিয়েছিলেন তিন বন্ধু ।

উনবিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি এসে তিন বন্ধু  বিশ্বকে বদলে দেওয়ার সপত নিয়েছিলেন ।তিন জনেরই জন্ম তৎকালিন প্রশিয়া সামরাজ্য বর্তমান জার্মানীতে ।তিন জনের বয়স ও সমসাময়িক দুএক বছর এদিক সেদিক ।তাদের তিন জনের মধ্যে
প্রথম জন হলেন কার্ল হাইনরিস মার্ক্স, সংখেপে কার্ল মার্ক্স ।যিনি মার্ক্স মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ।
 আর দ্বিতীয় জন হলেন ফ্রেড্রিক এঙ্গেল্স ।যিনি কার্ল মার্ক্সের অন্যতম বন্ধু ও কমিনিস্ট মেনোপেস্টের সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং অর্থ যোগান কারি।
আর তৃতীয় জন হলেন  এর্নস্ট ভেরনার ফন সিমেন্স । যিনি  সম্রাট  ভিলহেলম এর সৈনিক হিসাবে আর্টিলারি বিভাগের একজন দক্ষ প্রকৌশলি ছিলেন ।পরে সিমেন্স ইলেক্ট্রনিক কম্পেনি প্রতিস্ঠা করেন ।
এবার সবার মনে প্রশ্ন জাগা সাভাবিক, কিভাবে `? হ্যাঁ তার উত্তর দিচ্ছি ধারাবাহিক ভাবে, তার আগে আমার দুএকটা কথা  বা একটু মতামত দিয়ে নেই ।প্রিয় পাঠক সত্যি কথা আমি অতি মূর্খ, আমি দর্শন,সমাজ বিজ্ঞান, কিংবা রাষ্ট বিজ্ঞানের কোন ছাত্র নই, এমনকি তার উপর বিশেষ কোন বই পুস্তক বা ইতিহাসও আমার তেমন একটা পড়া শুনা নেই ।পৃথিবীর জটিলতাও তেমন একটা বুঝিনা ।তবে আজকের গ্লোবারাইজ ডিজিটেল বিশ্বে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এবং দুচোখ মেলে যাকিছু দেখি   যাকিছু অনুভব উপলদ্ধি করি যাকিছু দেশে দেশে মানুষে মানুষে প্রকৃতিতে ঘটছে, তার একটা  ক্ষুদ্র বিবারন দেওয়ার তাগিদ বা দায়িত্ব বোধ মনে করছি, তাই লেখার চেষ্টা করছি মাত্র ।সমালোচনা করার জন্য স্বাগতম ।


আমার মতে মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই যুগে যুগে  শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে  মানব কল্যানের জন্য  অসংখ  কালজয়ি মহামানবের আগমন ঘঠেছে আমাদের এই ধরায় । কেউ এসেছেন ধার্মিক রুপে আর কেউ এসেছেন দার্সনিক রুপে ।ধার্মিক ভাবে মহামানব যারা এসেছেন তাদেরকে আমরা নবী পয়গাম্বর শায়ক আল্লামা অলি আল্লা পুরোহীত প্রপিট বা নবী বলে থাকি, আর যারা কালজয়ি দার্সনিক রুপে এলেন  তাদেরকে আমরা একজন দার্শণিক বা পিলোসপি হিসেবেই জানি ।

মানব ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে যিষু খ্রিষ্টের জন্মের পূর্বে গ্রিস সভ্যতার সোনালি যুগে  পার্শ্চাত্যে যে কয়জন দার্সনিক জন্ম নিয়েছিলেন তন্মধ্যে সক্রেটিস প্লেটো, এবং এরিস্টেটল অন্যতম । আর প্রাচ্যে  জন্ম নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ভারতের চানক্য, ভাল্মিকি, এবং চিনের কনফুসিয়াস ।পর্শ্চিমা দর্শনে সক্রেটিসের ধারনা বা মতবাদ  আজ পর্যন্ত দর্শনের মুল ভিত্তি হিসেবে ধরা হয় ।আর সমগ্র এশিয়া জুড়ে কনফুসিয়াসের মতবাদ এর  প্রভাব পড়ে, যদিও আধুনিক চিনে এখনও কনফুসিয়াস এর আদর্শে একটা কনফুসিয়াস ধর্মও দেখা যায় ।

আবার রেনেশাঁর যুগে এসে অর্থাৎ পনর সতাব্দির পরে এসে আবির্ভাব হতে লাগলেন  আরেক ধরনের একের পর এক একজন মহামানব, যাদেরকে আমরা বিজ্ঞানী হিসেবে জানতে শুরু করে দেই । যাদের  অক্লান্ত চিন্তার ফসল আমাদের এই আজকের বিচিত্র ডিজিটেল ওয়ার্ল্ড ।যা আমরা কোনদিন ও অশ্বিকার বা অবিশ্বাস করতে পারিনা, কোন দিনও না । হ্যাঁ তবে আমরা বিজ্ঞানের কোন আবিষ্কারকে পরিত্যাগ করতে পারি  যখন কোন বিকল্প কিছু আবিষ্কার হয় এবং কম খরচে ব্যবহার করা যায় । যেমন  এনালগ এর পরিবর্তে ডিজিটেল ।



ধর্মের ধার্মিকরা বা দার্সনিকরা  এসে আমাদের রোগ শোক আপদ বিপদ আর জগতের সব অন্যায় অনিয়ম এমন কি শ্রেণী বৈষম্য গুলিও  স্রস্টার উপর ন্যস্ত করে আখেরি মুনাজাত ধরে  তাঁদের চিন্তা শক্তির পরিসমাপ্তি ঘঠিয়েছেন । এবার  ঠাডা পড়লেও স্রস্টার গজব, ভাল হলেও স্রস্টা মন্দ হলেও স্রস্টার নাম স্রস্টাই সব ঘঠিয়েছেন। সেই শক্তিমান মহান স্রস্টাকে আমরা সাধারন মানুষেরা  কোনদিন দুচোখে দেখেনি । ধার্মিকরা যারা দুএকজন গোপনে দেখেছেন তারা একেক জন একেক রকম বর্ণনা করে  নিজেকে প্রপিট হিসাবে জা্হের করে গেছেন ।


আর দর্শনের  কালজয়ি দার্সনিক  পর্যায়ক্রমে  যাঁদের আগমন গঠেছে আমাদের এই পাপের পৃথিবীতে, তাঁরা সবাই তাঁদের  পূর্ববর্তি সকল দার্সনিকদের চিন্তা চেতনা তত্ব উপাত্ব সংগ্রহ করে নিজের জ্ঞান বুদ্ধি বিবেগ বিবেচনা দিয়ে  মানব কল্যানের জন্য দর্শন বা আদর্শ নিতী মতবাদ প্রনয়ন বা প্রকাশ করে গেছেন ।সকল দার্সনিকের দর্শন নিতী তাঁদের সময়কালের  জন্য এবং তাঁদের পরবর্তি নতুন কোন দার্সনিকের আগমন বা দর্শন নিতী  প্রনয়ন  না হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে ধরে নিতে হবে, শেষ দার্সনিকের  দর্শনই সর্বউত্তম,  সেরা  ও  সমপযোগি ।



যেমনি আমরা মুসলমানেরা  সত্যের ধর্মের দিক থেকে মহা নবী হযরত মুহাম্মদ  (সঃ) কে শেষ ও সর্ব শ্রেষ্ট নবী হিসেবে মনে প্রানে বিশ্বাস করি, ঠিক তেমনি দর্শনের ও তাত্বিক দিক থেকে কালজয়ি  দার্সনিক কার্ল মার্ক্সকে শেষ না হয় সর্বউত্তম ও সর্বশ্রেষ্ট বলে ধরে নিতে পারি, যতদিন পর্যন্ত নতুন কোন থিউরি নিয়ে নতুন কোন দার্সনিকের আগমন না ঘটে  ঠিক ততোদিন পর্যন্ত ।কার্ল মার্কস এবং ফ্রেডরিক এঙ্গেলস দৃঢ় মনোবলে সপত নিয়েছিলেন দর্শনের মাধ্যমে বিশ্বকে বদলে দিবেন ।চেস্টারও কোন কমতি ছিল না ।

কার্ল মার্কস ছিলেন এমনই একজন দার্সনিক যাঁর সৃষ্টিকরা  বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, এবং সাম্যবাদ উনবিংশ শতাব্দিতে সমগ্র পৃথিবীর কোনায় কোনায় তার প্রভাব প্রতিপলিত  হতে শুরু করে ।তিনি ১৮৪২ সালে পি এইচডি করেন প্রকৃতির বিষয়ে গ্রিসীয় দার্সনিক দেমোক্রিতোসীয় ও এপিকুরোসীয়  দর্শনের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে ।তার পর তিনি আলোচিত হয়ে উঠেন । তিনি এঙ্গেলস এর সাথে যৌত ভাবে  মার্কস বাদের প্রবক্তা এবং রচনা করে ক্যাপিটাল, সাম্যবাদের ইশতেহার, ঐতিহাসিক বস্তুবাদ গ্রন্হ সমূহ ।যদিও দুজনই জিবিত অবস্হায় দেখে যেতে পারেন নেই সমাজতন্ত্রের কোন বাস্তবতা, তবুও মার্কস আশাবাদি ছিলেন, এবং প্রত্যাশাও করেছিলেন যে অচিরেই রাশিয়ায় বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র বাস্তবায়ন হবেই । হয়েছেও তাই ।শুধু রাশিয়া নয় বিংশ সতাব্দিতে এসে  গন চিন কিউবা এবং পূর্ব ইউরোপ সহ পৃথিবীর অনেক দেশেই সমাজতন্ত্র কায়েম হয়েছে ।যদিও কার্ল মার্কস এঙ্গেলস যেমনি ভাবে চেয়েছেন, ঠিক তেমনি ভাবে হয়নি ।

মার্কস এঙ্গেলস চেয়েছিলেন এমন এক ধরনের সমাজতন্ত্র, যার মূল লক্ষ ছিল শ্রেণিহীন সমাজ ব্যবস্হা প্রতিষ্ঠা করে পুঁজপতি আর প্রলেতারিয়েট এর মধ্যে বৈষম্য দুর করে শোষনহীন রাস্ট কায়েম করা ।সেখানে যোগ্যতা অনুসারে ব্যক্তি  রাস্টকে দিবে এবং নিবে ।



দ্বিতীয় জন হলেন ফ্রিডরিক এঙ্গেলসঃ-
ফ্রিডরিক এঙ্গেলস ও ছিলেন তৎকালিন জার্মানের একজন বিশিস্ট সমাজ বিজ্ঞানী, লেখক, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, এবং মার্ক্সের  সাথে  যৌতভাবে মার্ক্স বাদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা । তিনি ১৮৪৫ সালে নিজের প্রত্যক্ষন এবং গবেষনার মাধ্যমে ইংল্যান্ডে শ্রমিক শ্রেণির অবস্হা প্রকাশ করেন ।তিনি ১৯৪৮ সালে কার্ল মার্ক্সের সাথে যৌতভাবে কমিনিস্ট পার্টির ইশতেহার রচনা করেন । তিনি মার্ক্সের ক্যাপিটেল গ্রন্হটি গবেষনা ও রচনার জন্য অর্থনিতক সহায়তা করেন এবং কার্ল মার্ক্সের মির্ত্যুর পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় খন্ড দুটি সম্পাদনা করেন । তিনি আরো মার্ক্সের উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ব, বিষয়ের নোটগুলি  এক সাথে করে পুজি,র চতুর্থ খন্ড প্রকাশ করেন ।
ফ্রিডরিক এঙ্গেলস ছিলেন এক জন শিল্পপতির সন্তান ।তাদের পরিবার  রক্ষণশীল এবং গোঁড়া ধর্মীয় মনোভাবের, ছিল বিধায় অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রনের কারনে তার মনে  শৈশবেই ধর্মের প্রতি বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় ।প্রতিস্টানিক লেখাপড়া না করলেও তিনি হেগেলীয় দর্শন পড়ে কিছু ক্রুটি লক্ষ করতে লাগলেন । তার পর তিনি বিভিন্ন বস্তুবাদী দর্শন এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সাম্যবাদী চিন্তার সাথে পরিচিত হতে থাকেন, কিন্তু  তাতেও তার মনে সংসয় দেখা দেয় ।১৮৪২ সালে তিনি সেনা বাহিনীতে যোগ দেন এবং এক বছর চাকরি করেন ।তার পর পিতার নির্দেশে তিনি ইংল্যান্ডে গমন করেন ।সেখানে তিনি শ্রমিকদের দুর্দশা দেখে  গবেষনা করে  শ্রমিক শ্রেণির অবস্হা নামে একটি গ্রন্হ রচনা করেন । এছাড়াও তিনি আরো অনেক গ্রন্হ রচনা করেন ।তিনি শৈশব থেকেই কবিতা লিখতেন । তাঁর সবচেয়ে বড় সাপল্য তিনি মার্কস বাদের যৌত প্রবক্তা । 


 



 
 আর তৃতীয় জন হলেন এর্নস্ট ভেরনার ফন সিমেনস ।তিনি একজন প্রখ্যাত দার্সনিক না হলেও  তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত শিল্প উদ্যক্তা, ও বিশিষ্ট শিল্প পতি ।কার্ল মার্কস এবং এঙ্গেলস যখন নতুন দর্শন দিয়ে বিশ্বকে বদলে দেওয়ার সপত নিলেন, তিনি তখন তাঁদের প্রতি একপ্রকার চেলেঞ্জ চুঁড়ে দিয়ে বললেন, আমি শিল্প দিয়েই  বিশ্বকে বদলে দেব ।তোমাদের দর্শন মর্শন দিয়ে কিচ্ছুই হবে না ।
সিমেনসের প্রথম লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয় নানা নানির কাছেই । পরে গৃহ শিক্ষকের কাছে । গৃহ শিক্ষক তাকে নিয়ে জিমোনাজিয়ামে ভর্তি করিয়ে দেন ।তিনি সেখানে লেখাপড়া করতে থাকেন । ১৯৩৯ সালে এসে তার মাতা মারা যান, এক বছরের মাথায় পিতাও । এসময় তার ছোট ভাই বোনের দায়িত্ব বার ও তার উপর পড়ে । তিনি হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন একটা চাকুরি । তখন গৃহ শিক্ষকের নির্দেশে তিনি  প্রেয়েচ সম্রাটের আর্মিতে ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে একটা দরখাস্ত পাঠান ।চারজনের মধ্যে একমাত্র তিনিই এলাউ হয়ে যান ।পরে তিনি নিজের যৌগ্যতা বলে আর্টিলারি বিভাগে কমান্ডার নিযুক্ত হন ।তখনই তার মনে আসে শিল্প বিপ্লব ঘঠাবার । ইস্টিম ইঞ্জিনের বদলে ইলেট্রিক ইঞ্জিন ।
১৮৪৭ সালে এসে তিনি সিমেনস কম্পেনি প্রতিষ্ঠা করেন, বর্তমানে সিমেন্স  আ  গি, বা Semens A G  আজ সারা বিশ্বে  ১৯০ টা দেশে প্রায় চল্লিশ লক্ষাধিক লোক এই কম্পেনিতে চাকুরি করেন ।

মুলকথা,তাঁরা তিনজন পৃথিবীকে পুরো পুরি বদলে  দিতে না পারলেও আজকের এই ডিজিটেল বিশ্ব বদলানোর পিছে তাদেরই বেশি অবদান ।মার্কস এঙ্গেলস এর জন্ম না হলে যেমনি গনতন্ত্র এমন শিতিল হতো না ।সোসাল ডেমোক্রেটিকের মত রাজনৈতিক মঞ্চ তৈয়ার হতো না ।ঠিক তেমনি সিমেনস এর জন্ম না হলে নামি দামি এত সব ডিজিটেল ইলেট্রিক কম্পেনি সৃষ্টি হতো না । 
             -----ফারুক জার্মনী।






















                      দার্শণিকের দার্শনিক।

               
আমাদের দেশে দুচার জন শিক্ষিত লোক এক সাথে বসলে কথায় কথায় সেক্সপিয়ার কিংবা গোথের  কথাই টেনে আনতেন ।যেন সেক্সপিয়ার গোথে 
চাড়া পৃথিবীতে  আর অন্য কোন মহা মানুষের জন্মই হয়নি ।

হয়েছে, আমাদের  এই অখন্ড পৃথিবীতে যুগে যুগে অনেক কাল জয়ি মহাপুরুষের আগমন ঘঠেছে।যারা ক্ষনাজন্মা হয়ে জন্ম নিয়ে অনেক ত্যগ তিতিক্ষা ও অত্যাচারি শাসকের জুলম অত্যাচার সহ্য করেও ধ্যন ধ্যয়ানে  সাধনায় জ্ঞান গুনে প্রজ্ঞায় জ্ঞ্যয় অজ্ঞ্যয় ভাবে আমাদের এই পৃথিবীকে সমৃদ্ধ ও আলোকিত করে গেছেন, এবং যারা নিজের কালকে অতিক্রম করে সর্বকালের জন্য অম্লান হয়ে রয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম এবং সবার উপরে যার নাম আসে, তার নাম হলো মহামতি সক্রেটিস।তিনিই দার্শণিকের প্রকৃত দার্শনিক।তাঁর পরেও আরো অসংখ্য দার্শণিকের আগমন ঘঠেছে আমাদের এই ধরায়।এই ব্লগে আমি দার্শণিকের দার্শণিক যারা তাদের একটি নামের তালিকা  প্রকাশ করার চেষ্টা করিতেছি মাত্র।
 (১) সক্রেটিসঃ ধারনা করা হয় প্রাচিন এই গ্রিক দার্শণিক খ্রিস্টপূর্ব ৪৭০ এর দিকে তার জন্ম হয়ে।এই মহান দার্শণিক নিজে তার জীবন বৃত্তান্ত এবং তার দর্শণ সম্পর্কে কোন কিছুই লিখে যাননি।অনেকে তার সম্পর্কে অনেক আজেবাজে তাজা কথা লিখলেও তার একনিষ্ঠ ছাত্র প্লেটোর লেখা বিবরনিতে আমরা  তার ব্যপারে অনেক কিছু জানতে পারি।প্লেটো শৈশবেই সক্রেটিসের ছাত্রত্ব গ্রহন করে, দীর্ঘ সময় তার পাশে ছিলেন ছায়ার মত।বর্তমানে এখন আবার অনেকে এই বলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে যে, সক্রেটিস নামটাই প্লেটোরই সৃষ্টি।সক্রেটিস নামে কেহই ছিল না।এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা।আড়াই হাজার বছর পরে তাকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা একদিকে অবান্তর আরেক দিকে মনে হয়  তার প্রভাব এখনও মডার্ন বিশ্বে বিদ্যমান।

.----অসমাপ্ত।




No comments:

Post a Comment

অজ্ঞসব জনপ্রতিনীধি,

সত্যই শক্তি, সত্যই সুন্দর,