দ্বান্দ্বিক বস্ত্তুবাদ এমন এক প্রজ্ঞাবান দর্শণ যে এইটা দিয়ে পৃথিবীর সব বিষয়কে ব্যখ্যা বিশ্লেষণ করা সম্ভব।আর তাই তো মহামতি কার্লমাক্স এই বস্ত্তুবাদের মাধ্যমে মানব জাতির ইতিহাস ও সমগ্র বিশ্বকে বড় জোরে একটা নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছেন।তিনি প্রকৃতির লিলাখেলা থেকে দ্বান্দ্বিক বস্ত্তুবাদের সুত্রকে আমাদের সামনে খুব সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছেন।
দার্শণিক হেগেল |
কার্লমাক্স আইন, ইতিহাস, ও দর্শণের উপর বন ওবার্লিনের হমবল্ট ইউনিভারসিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৪১ সালে ইউনিভারসিটি অফ জেনা থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন।তাঁর পি এইচ ডির বিষয় ছিল, প্রকৃতি সম্বন্ধে গ্রিসীয় পিলোসপি দেমোক্রেতোসীয় ও এপিকুরোসীয় দর্শনের মধ্যে পার্থক্য।তাচাড়া তিনি শৈশব থেকেই স্বভাব কবি ছিলেন, আর কবিকে প্রকৃতি থেকেই সঠিক শিক্ষা লাভ করতে হয়। না হয় কবিতার কঠিন ভাষা প্রয়োগ করা অসম্ভব।আবার গুরু মুর্শিদের কাছ থেকেও শিক্ষা গ্রহন করতে হয়। নতুবা তো কোন সাধনাই পরিপূর্ন হয় না।তেমনি মাক্সেরও ভাব গুরু ছিলেন অনেকেই। ফয়ারবাক হেগেল আরো অনেকে।
বিশেষ করে জার্মান দার্শণিক হেগেলের ভাববাদ ও নাস্তিকতাবাদ থেকেই মাক্সবাদ ও নবভাববাদ বা স্বৈরতান্ত্রিক রাজনৈতিক মতবাদের উৎপত্তি হয়েছে।
এখানে সর্ব প্রথম আমাদেরকে বুঝতে হবে দ্বান্দ্বিক বস্ত্তুবাদ আসলে কি?সোজা কথায় বললে,দ্বন্দ্বটা হলো বিরোধ আর বস্ত্তুটা হলো একটা যে কোন জিনিস বা (Meterial বা matter)।মুলত দ্বান্দ্বিকতা আসে আড়াই হাজার বছর পূর্বে মহামতি সক্রেটিসের দর্শণ থেকে।তিনি দ্বন্দ্বের মাধ্যমেই আলোচনা করে মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করতেন।যেমন তাঁর একটা উদ্ধৃতি-তারা জানে যে তারা জানে না, আমি জানি যে আমি জানি না।
দ্বান্দ্বিক বস্ত্তুবাদের মুল উপাদান আসে হেগেলের ভাববাদি দর্শন থেকে। হেগেল পুরো দর্শণ বা জ্ঞানকান্ডকে দুই ভাগে অর্থাৎ ভাববাদ Idealism ও বস্ত্তুবাদ Materialsm বুঝায়েছেন।হেগেলের মতে সভ্যতার বিকাশ হয় দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ায়।হেগেলের দ্বান্দ্বিকতাবাদ হলো তিনটি বিষয়ের উপর তিনটি প্রস্তাবের মধ্যে উত্তম প্রস্তাবটির সমন্বয় বা ফলাফল।যেমন একজনে প্রথমে একটা প্রস্তাব বা থিসিস দিল, অন্যজন প্রতিপ্রস্তাব বা এ্ন্টিথিসিস দিল।আরেকজন এসে কথাটার প্রতিবাদ বা প্রতিপ্রস্তাব দিল।এই প্রস্তাব প্রতিপ্রস্তাব এর মধ্য দিয়ে যে যুক্তিটি অধিকতর গ্রহনযোগ্য তা হলো সিনথিসিস।আবার সিনথিসিসের মাধ্যমে পাওয়া নতুন যুক্তিটি নতুন প্রস্তাব প্রতিপ্রস্তাব হিসেবে আসবে। সেভাবেই নতুন প্রস্তাব তৈরি হতে থাকবে, এবং এই ভাবেই সভ্যতা বিকাশের দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে থাকবে, তাকেই মুলত বলা হয় দ্বান্দ্বিক বস্ত্তুবাদ।
হেগেলের মতে দ্বন্দ্বের মাধ্যমেই মানুষ পুরান সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়বে।সভ্যতার এক স্তর থেকে অন্য স্তরে উন্নীত হবে, এবং সব কিছু সম্ভব হবে নতুন নতুন ভাব বা আইডিয়ার মাধ্যমে।কিন্তু কার্ল মাক্স এর মতে প্রত্যেকটি বিষয়ের পিছনে একটা বস্ত্তু কাজ করে,প্রস্তাব, প্রতি প্রস্তাব আসবে ঠিক আছে, কিন্তু ভাব থেকে নয় বরং বস্ত্তু থেকে আসবে।মাক্স মনে করেন বস্তুবাদের এই দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া সম্পূর্ন ভাবে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চলতে থাকবে, এবং নতুন নতুন সমাজ ও সভ্যতা বিকশিত হবে, এটাই হলো মাক্সিয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ।
হেগেলের দ্বান্দ্বিক বস্ত্তুবাদ আর কার্ল মার্ক্সের দ্বান্দ্বিক বস্ত বাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য।দুই মতবাদের এই পার্থক্য নির্ণয় করতে গিয়ে আমরা অনেকেই হোঁচটা খাই।এখানে কার্ল মার্ক্স নিজেই বলেছেন,হেগেলের দৃস্টিতে চিন্তা বা ধারনাই হলো জগত স্রষ্টা এবং প্রকৃত জগত হচ্ছে মন নির্ভর জগত।পক্ষান্তরে আমার কাছে মনে হয় বস্তু জগতই হচ্ছে একমাত্র জগত বা আদর্শ, এবং মানুষ তার মনের সাহায্যে এই বস্ত্তু জগতকে চিত্বের চিন্তার মাধ্যমে জানতে চেষ্টা করে।মার্ক্স মনে করেন বস্ত্তুই হলো একমাত্র সত্বা, এবং গতি হলো তার স্বাভাবিক ধর্ম।বস্ত্তুর অস্তিত্ব মনের উপর নির্ভরশীল নয় বরং মনের অস্তিত্বই বস্ত্তুর উপর নির্ভরশীল।
---- ফারুক,