আমার পূর্ব পুরুষরা খাঁটি মুসলমান ছিলেন।আমার দাদার বাবা পরদাদা হাজি ছিলেন। উনার নাম ছিল ইসলাম হাজি নামে খ্যাত ছিল । উনার নামানুসারে আমাদের বিশাল বাড়িটা ইসলাম হাজির বাড়ি নামে সুপরিচিতি পেয়েছে ।পরবর্তি বংশের তৃতীয় জেনারেসনের চাচা জেটা বড় ভাই বোন অনেকেই হজ্ব করেছেন।আল্লাহ তৌপিক দান করলে আমারও হজ্ব করার ইচ্ছে আছে ।ইনশআল্লা!
আমরা সবাই সবসময় আল্লাহভীরু মানুষ। এবাদত বন্দেগী আমাদের পারিবারিক জীবনের অনুষাঙ্গিক বিষয় । এতে কোন আলসেমি বা নস্টেমি নাই ।সবাই মহা নবীর আদর্শে বিশ্বসী।সবাই ইসলামে পাঁচ স্তম্ভ ও পাঁচ কালেমা মেনে চলি ।আমার মা তিরিশ পায়রা কোরআন শরিফের বারআনাই মুখাস্ত জানতেন।
আমার মা পাড়ার শত শত ছেলে মেয়েকে বাড়ির উঠানে বসায়ে প্রবিত্র কোরআন শরিফ ও ইসলামের আদর্শে শিক্ষিত করে তুলেছেন।আমি নিজেও শৈশবে পাক কোরআন শিক্ষা শিক্ষা গ্রহন করি আমার মায়ের কাছেই । আমার মা আমাদের নতুন বংশকে আধুনিক ইসলামি আদর্শে শিক্ষিত করে তুলেছেন।তাই তো আমি গর্ববোধ করে বলি, আমরা খাঁটি মুসলমান বংশের লোক।
আর তাই আমার বাবা মায়ের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ি নোয়াখালি নতুন জেল রোডের পাশে আমার প্রয়াত মা বাবার কবরের পাশে ইসলাম হাজি জামে মসজিদ নামে একটা মসজিদ নির্মান করে দিয়েছি।আজ সে মসজিদে প্রতিদিন শতেশতে পরেজগার মুমিন মুসলমানেরা এসে জামায়াতে নামাজ আদায় করেন। প্রতিদিন সকালে শতে শতে ছেলে মেয়েরা এসে আরবি শিক্ষা গ্রহন করে।গত বছর আমি দেশে গিয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে স্বচক্ষে দেখে আনন্দে অভিভূত হয়ে গেছি।আমি সেদিন আমার মা বাবার নামে মিলাদ শরিফ পড়ায়ে ঘোষনা করেছি এই মসজিদটা আমার কাছে মক্কা এবং মদিনার মত পূত প্রবিত্র। কারন এ মসজিদেরই পাশে আমার প্রিয় মা বাবা গুমিয়ে আছেন।
হাফেজ মোল্লা মুন্সি মাওলানা, আলিম আল্লামা গনদের আমি শ্রদ্ধা করি। আমার জীবনে আমি এরকম অনেক বুজর্গ লোকের সানিধ্য পেয়েছি।ওনারা আমাকে খুবি স্নেহ করতেন।আমি ওনাদের কাছ থেকে দীন দুনিয়া সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি এবং বুঝেছি।ওনারা বেশির ভাগই সৎ ও মুমিন লোক হয়ে থাকেন।কচিত হয়তো দু একজন বদচরিত্রের অধিকারি হয়ে থাকেন।আর জগতে সৎ ও মুমিন লোকদেরকেই বিশ্বাস করা যায়।সরকারি প্রশাসনে তথা অফিস আদালতে যদি এমন মুমিন ও সৎ লোকদেরকে বসানো হয়, তবেই প্রশাসন থেকে ঘুষ দুর্নিতি চিরতরে দুর করা সম্ভোব।তবেই উন্নত সমাজ ব্যবস্হা ও গড়া সম্ভবপর হবে আমার বিশ্বাস।
এখানে দু একটি সৃতি কথা আমাকে তুলে ধরতে হচ্ছে, যেমন উন্নিশ চৌরাশির দিকে আমি আজকের ক্ষতিগ্রস্ত সিরিয়ার রাজধানি দামেস্কে থাকা অবস্হায় একদিন সকালে নাইট শিপটে কাজ শেষে ভোর বেলায় বাসে করে এসে সৈয়দা জনাব নেমে নিজের
বাসার দিকে যাচ্ছিলাম।তখন আমার বয়স আঠার কি উন্নিশ ।হঠাৎ আমার পিছন থেকে তিন জন লোক দ্রুত হেঁটে এসে পর পর তিনজনই আমাকে সালাম দিলেন।আমি তাঁদের সালাম এর কোন উত্তর না দিয়েই, হতভম্ব হয়ে তাঁদের দিকে চেয়ে রলাম।
তাঁরা তিনজনই মাওলানা টাইফের মুরুব্বি গোচের মানুষ।মুখভরা শূভ্র দাঁড়ি, সফেত পায়জামা, পাঞ্জাবী গায়ে, মাথায় হাতে বুনা গোল টুপি।কপালে কালো মেজ পড়ে আছে। প্রথ্যহ পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়াকারি লোকের নাকি এরকম মেজ পড়ে ।
তাঁদের মধ্যে একজন লোক বাংলাতে বললো, আপনি কথা বলছেন না কেন ভাই?
আরেকজন বললো, আপনি কি মুসলমান?
আমি অবুঝের মত হ্যাঁ এবং না সুচক ভাবেই মাথা নাড়লাম।
তৃতীয় জন জিজ্ঞেস করলো, তো আপনি আমাদের সালামের উত্তর দিলেন না কেন?
আমি অসহায়ের মত বললাম, দেখুন আপনারা আমার বাবার সমবয়সি হবেন, মুরুব্বি মানুষ,আপনারা আগে এসে পিছন থেকে আমাকে সালাম করলেন।আমি ছোট মানুষ, আপনাদেরকে আগে সালাম করা আমার উচিত ছিল, তাই আগে সালাম করতে পারি নাই বিদায় আমি লজ্জাবোধ করছি।
আমার কথা শুনে লোকগুলি হা হা হো হো করে হাসতে লাগলো, এবার আমি আরো বেশি লজ্জা পেলাম।কিছুক্ষন হেসে প্রথম জন হাসি থামিয়ে আমাকে একটা প্রশ্ন করলেন আচ্ছা বলুন তো আল্লহ বড় না রাসুল বড়?
আমি সাথে সাথে বললাম, আল্লাহ বড়। আল্লহই তো সারা জাহান সৃষ্টি করেছেন ।
উনি বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই সবার বড়, শ্রেষ্ট ও অদ্বিতীয়। যিনী কূল মাকলুকাত সৃস্টি করেছেন।কিন্তু সেই মহান আল্লাহ সয়ং আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ(সঃ) যখন সবেমেরাজ গিয়েছিলেন তখন তাঁকে সালাম করেছেন।সুতরাং,এতে গাবরাবার তো কিছু নেই, বড়রাও ছোটদেরকে সালাম করতে পারে বুঝলেন।
পরে বললেন, দেখুন আমরা পাকিস্তান থেকে এসেছি।আজকে তিন দিন হতে অমুক হোটেলে আছি অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। এখানে কম টাকায় কি কোন থাকার ব্যবস্হা আছে কিনা ?
বললাম হ্যাঁ আছে, এখানে পিলিস্তানী কলোনীতে তারা কামড়া ভাড়া দেয়, জনপ্রতি মাসে সিরিয়ান একশ লিরা, সাথে চুলা হাঁড়ি পাতিল মাট্রাস সবকিছু দিয়ে দেয়।চলুন আমার বাসায়, একটা কামড়া লয়ে দেওয়া যাবে। আমি তিন জন হুজুরকে আমার বাসায় নিয়ে রেঁধে বেড়ে খাওয়ালাম।পরে তাঁদেরকে একটা কামড়া ভাঁড়া করে দিলাম দু সপ্তাহের জন্য।এই দু সপ্তাহ ধরে তাদেরকে নিয়ে গুরে পিরে ঐতিহাসিক এই শহরের বিখ্যাত স্হান গুলি দেখালাম।তাদের সাথে আমার অনেক কথাবার্তা হতো।
তারা তিনজনই ছিলেন করাচিতে তিন মসজিদের প্রেস ঈমান।তিন জনই বেশ কয়বার হজ্ব করেছেন।দেখেছেন সৌদী মুসলমানের হাল অবস্হা, দেখেছেন আরো অনেক দেশের মুসলমানকে, পরিশেষে দেখতে এলেন এজিদের দেশে।প্রচুর অভিজ্ঞতা সম্পর্ন এই লোক গুলি বললেন, এই আরবির জাত মুসলমানরা যদি একজন বেহেশতে যায়, তাহলে বাঙ্গালীরা সবাই বিনা বিচারে বেহেশতে চলে যাবে।ইসলাম ধর্ম থাকলে বাংলাদেশে আছে, আর কোথাও নাই।
সত্যিই আমি সেদিন অবাক বিশ্মৃত হলাম, তাঁদের মুখে এমন কথা শুনে।
আর আজ দেখি বাংলাদেশে কত রকমের আলেম আল্লামা,কতো রকমের হুজুর মাওলানা।কত রকমের ওয়াজ নছিয়ত। কত রকমের ফতুয়া ফজিলত পাজলামি। কত রকমের ইসলামি দল, লীগ।সবাই মিলে ইসলাম ও নবির আদর্শের বারটা বাজিয়ে দিচ্ছে।সবাইকে কড়জোড়ে বলছি, বন্দ করুন আপনাদের ফতুয়া, আপনাদের কাছ থেকে আর কোন ছবক শিখতে চাই না আমরা। দ্বীনে ইসলামকে আমরা বুকে ধারন করেছি হেফাজতে। আমরা আল্লাহর খাঁটি বান্দা নবিজীর খাঁটি ওম্মত,আপনাদের মুখে সোভা পায়না ইসলাম।
-------মোহাম্মেদ ফারুক, জার্মানি।