Showing posts with label মা বাবাকে খুব মনে পড়ে. Show all posts
Showing posts with label মা বাবাকে খুব মনে পড়ে. Show all posts

Thursday, May 14, 2015

ঐতিহাসিক দ্বান্দ্বিক বস্ত্তুবাদ,





জার্মানী দার্শনিক মহামতি কার্ল মাক্স ঐতিহাসিক দ্বান্দ্বিক বস্ত্তুবাদের প্রবক্তা।বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রেরও প্রবক্তা তিনি।দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ শুধু কল্পনাপ্রসূত  দুরদর্শিতা কোন দর্শণ নয়, এটার একটা বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা বা বিশ্লেষণও আছে। তাই এইটাকে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদও বলা হয়।মাক্স এর মতে মানব ইতিহাসের বিকাশ দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ পক্রিয়ায় ঘটে থাকে। কোন কারণ ব্যতীত আপনা আপনি দৈব বলে সংঘঠিত হয় না।বস্ত্তুর  আভ্যন্তরেই  দ্বন্দ্ব বা বিরোধ তীব্র আকার ধারন করার পরে যে পরিস্হিতির সঙ্গে যে দ্বন্দ্ব তাহাই তার পরিণতি।

দ্বান্দ্বিক বস্ত্তুবাদ এমন এক প্রজ্ঞাবান দর্শণ যে এইটা দিয়ে পৃথিবীর সব বিষয়কে ব্যখ্যা বিশ্লেষণ করা সম্ভব।আর তাই তো মহামতি কার্লমাক্স এই বস্ত্তুবাদের মাধ্যমে  মানব জাতির ইতিহাস ও সমগ্র বিশ্বকে বড় জোরে একটা নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছেন।তিনি প্রকৃতির লিলাখেলা থেকে দ্বান্দ্বিক বস্ত্তুবাদের সুত্রকে আমাদের সামনে খুব সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছেন।
দার্শণিক হেগেল

কার্লমাক্স আইন, ইতিহাস, ও দর্শণের উপর বন ওবার্লিনের হমবল্ট ইউনিভারসিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৪১ সালে ইউনিভারসিটি অফ জেনা থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন।তাঁর পি এইচ ডির বিষয় ছিল, প্রকৃতি সম্বন্ধে গ্রিসীয় পিলোসপি দেমোক্রেতোসীয় ও এপিকুরোসীয়  দর্শনের মধ্যে পার্থক্য।তাচাড়া তিনি শৈশব থেকেই স্বভাব কবি ছিলেন, আর কবিকে প্রকৃতি থেকেই সঠিক শিক্ষা লাভ করতে হয়। না হয় কবিতার কঠিন ভাষা প্রয়োগ করা অসম্ভব।আবার গুরু মুর্শিদের কাছ থেকেও শিক্ষা গ্রহন করতে হয়। নতুবা তো কোন সাধনাই পরিপূর্ন হয় না।তেমনি মাক্সেরও ভাব গুরু ছিলেন অনেকেই। ফয়ারবাক হেগেল আরো অনেকে।

বিশেষ করে জার্মান দার্শণিক হেগেলের ভাববাদ ও নাস্তিকতাবাদ  থেকেই মাক্সবাদ ও নবভাববাদ বা স্বৈরতান্ত্রিক রাজনৈতিক মতবাদের উৎপত্তি হয়েছে।

এখানে সর্ব প্রথম আমাদেরকে বুঝতে হবে দ্বান্দ্বিক বস্ত্তুবাদ আসলে কি?সোজা কথায় বললে,দ্বন্দ্বটা হলো বিরোধ আর বস্ত্তুটা হলো একটা যে কোন জিনিস বা (Meterial বা  matter)।মুলত দ্বান্দ্বিকতা আসে আড়াই হাজার বছর পূর্বে মহামতি সক্রেটিসের দর্শণ থেকে।তিনি দ্বন্দ্বের মাধ্যমেই আলোচনা করে মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করতেন।যেমন তাঁর একটা উদ্ধৃতি-তারা জানে যে তারা জানে না, আমি জানি যে আমি জানি না।

দ্বান্দ্বিক বস্ত্তুবাদের  মুল উপাদান আসে হেগেলের ভাববাদি দর্শন থেকে। হেগেল পুরো দর্শণ বা জ্ঞানকান্ডকে দুই ভাগে     অর্থাৎ ভাববাদ  Idealism ও বস্ত্তুবাদ     Materialsm   বুঝায়েছেন।হেগেলের মতে সভ্যতার বিকাশ হয় দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ায়।হেগেলের দ্বান্দ্বিকতাবাদ হলো তিনটি বিষয়ের উপর তিনটি প্রস্তাবের মধ্যে উত্তম প্রস্তাবটির সমন্বয় বা ফলাফল।যেমন একজনে প্রথমে একটা প্রস্তাব বা  থিসিস দিল, অন্যজন প্রতিপ্রস্তাব বা এ্ন্টিথিসিস দিল।আরেকজন এসে কথাটার প্রতিবাদ বা প্রতিপ্রস্তাব দিল।এই প্রস্তাব প্রতিপ্রস্তাব এর মধ্য দিয়ে যে যুক্তিটি অধিকতর গ্রহনযোগ্য তা হলো সিনথিসিস।আবার সিনথিসিসের মাধ্যমে পাওয়া নতুন যুক্তিটি নতুন প্রস্তাব প্রতিপ্রস্তাব হিসেবে আসবে। সেভাবেই নতুন প্রস্তাব তৈরি হতে থাকবে, এবং এই ভাবেই সভ্যতা বিকাশের দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে থাকবে, তাকেই মুলত বলা হয় দ্বান্দ্বিক বস্ত্তুবাদ।

হেগেলের মতে দ্বন্দ্বের মাধ্যমেই মানুষ পুরান সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়বে।সভ্যতার এক স্তর থেকে অন্য স্তরে উন্নীত হবে, এবং সব কিছু সম্ভব হবে নতুন নতুন ভাব বা আইডিয়ার মাধ্যমে।কিন্তু কার্ল মাক্স এর মতে প্রত্যেকটি বিষয়ের পিছনে একটা বস্ত্তু কাজ করে,প্রস্তাব, প্রতি প্রস্তাব আসবে ঠিক আছে, কিন্তু ভাব থেকে নয় বরং বস্ত্তু থেকে আসবে।মাক্স মনে করেন বস্তুবাদের এই দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া  সম্পূর্ন ভাবে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চলতে থাকবে, এবং নতুন নতুন সমাজ ও সভ্যতা বিকশিত হবে, এটাই হলো মাক্সিয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ।

হেগেলের দ্বান্দ্বিক বস্ত্তুবাদ আর কার্ল মার্ক্সের দ্বান্দ্বিক বস্ত বাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য।দুই মতবাদের এই পার্থক্য নির্ণয় করতে গিয়ে আমরা অনেকেই হোঁচটা খাই।এখানে কার্ল মার্ক্স নিজেই বলেছেন,হেগেলের দৃস্টিতে চিন্তা বা ধারনাই হলো জগত স্রষ্টা এবং প্রকৃত জগত হচ্ছে মন নির্ভর জগত।পক্ষান্তরে আমার কাছে মনে হয় বস্তু জগতই হচ্ছে একমাত্র জগত বা আদর্শ, এবং মানুষ তার মনের সাহায্যে এই বস্ত্তু জগতকে চিত্বের চিন্তার মাধ্যমে জানতে চেষ্টা করে।মার্ক্স মনে করেন বস্ত্তুই হলো একমাত্র সত্বা, এবং গতি হলো তার স্বাভাবিক ধর্ম।বস্ত্তুর অস্তিত্ব মনের উপর নির্ভরশীল নয় বরং মনের অস্তিত্বই বস্ত্তুর উপর নির্ভরশীল।



---- ফারুক,

x

Monday, March 2, 2015

আমার পরম শ্রদ্ধেয় মা- বাবা



“আমার মা-বাবা,, 





 
আমার বাবা 













(এক) 
মারহাবা মা মারহাবা, মারাহাবা মা মারহাবা/
তুমি  আমার গঙ্গা যমুনা,তুমি
আমার মক্কা মদিনা,
তুমি আমার কৈলাশ কাবা//
আমি ঘরে বসে হজ্ব করি মা তোমার চরন ধরি/
আমার বুকের ঘরে বসত তোমার কে বলেগো গেছ মরি/



আমার প্রিয় জান্নাত বাসি মা-বাবা
দেখগো মা আজ কত গন্ধ বিলায় তোমার রক্তজবা//
মা হয়েই এলে তুমি আরশেরই পরশ মণি/
যার জীবনে এলে তুমি তারেই করেছ ধনি/
নিজে না দেখা দিয়া তোমাকে দেখালেন দয়াল রাব্বা//



  ১০ই মে খ্রিষ্টান বিশ্ব পালন করছে  Father Day আর ১৩ই মে পালন হলো Mother Day.
খ্রিষ্টানরা পালন করে এই কারণে যে ঈশ্বর পুত্র  যিষুখ্রিষ্ট নাকি এই দিনে তার পিতা মহান ঈশ্বরের সাথে দেখা করতে আকাশে পাড়ি জমান।আর মাদার ডে একেক দেশে একেক দিন পালন করে থাকে।কেন করে থাকে তার বর্ণনাও আছে নানা রকমের।আসলে সত্য ঘটনা হলোগ্রীক পৌরানে পাওয়া যায় প্রাচীন গ্রিসীয়রা তাদের দেবী মায়ের নামে মাদার ডে পালন করতো।
সে যাই হউক ফাদার মানে পিতা,আর পিতা মানে বুঝায় প্রতিপালক।অনুরুপ জনক শব্দের অর্থ বুঝায় জন্মদাতা। এই জগত সংসারে রক্তমাংসের পিতাই আমাদের প্রতিপালক এবং জন্মদাতা।এই পিতাকে আমরা আদর করে আব্বা বা আব্বু বলে থাকি।মর্ডার্ন ছেলেমেয়েরা অবশ্য পাপা পাপি কিম্বা ড্যাড ও বলে থাকে।আমরা ভাই বোনেরা সবাই আমাদের পিতাকে বাবা বলেই ডাকতাম।
 আবার ইংরেজি মাদার মানে মাতা হলেও মাতাকে আমরা বাঙ্গালীরা বেশির ভাগ মা,বা আম্মু বলেই বেশি ডেকে থাকি।এখনকার ছেলেমেয়েরা মামা মামি বলেও ডেকে  থাকে।আসলে এই মামা বা মামি পশ্চিমা বিশ্বে মৃত মমিকেই বলা হয়।            

১০ই মে আন্তঃর্জাতিক ফাদার ডে হলেও ১০ই মে ২০০৫ সালে আমার বাবা এই পৃথিবীর মায়া মমতা ছেড়ে আকাশের পথে পাড়ি দিয়েছেন। সেই থেকে আমরা সকল  ভাই বোন চিরদিনের মত এতিম হয়ে যাই।
আজ বাবার ১৯তম প্রয়ান দিবস। আমি মহান আল্লাহর দরবারে  দুহাত তুলে আমার বাবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি,হে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার বাবার সকল গুনা মাপ করে তাঁকে জান্নাত বাসি করুন আমিন!


আজ আমাকে নষ্টাল জিয়ায় পেয়ে বসেছে। মা-বাবার কথা মনে করে পলাতক সৃতিগুলি বারবার উথলি উঠছে হৃদয় মোক্তবে।মোটা মোটা জলে চোখ দুটি ঝাপসা ঝাপসা হয়ে গেছে নিজের অজান্তেই।এই মুহুর্তে আমি কাঁদছি বোবা কান্না, এই অজানা অচেনা  পাষান প্রবাসে বসে। এখানে নেই  কোন মাতা পিতা স্বজন পরিজনের আদর মমতা স্নেহ প্রেম ভালবাসা।আগুন্তক সৃতিগুলিই তো শুধু বেঁচে থাকার একমাত্র প্রেরণা ও শান্তনা।
 


পৃথিবীর সব সন্তানের মতই আমার মা-বাবা ও আমার কাছে সবার চেয়ে বেশি প্রিয়।শুধু প্রিয় বললে কম বলা হয়। আমার মা-বাবা আমার আদর্শ ও চিত্ব শক্তির প্রধান উৎস। তাঁরা আমার জীবনের অন্ধগলির ঝলমল আলোক রশ্মি।

সত্যিই আমার মা-বাবা দুজনই ছিলেন আদর্শ পিতা-মাতা।আমাকে চিরতরে এতিম করে অনেক আগেই তাঁরা দুজনই  এই  পৃথিবী চেড়ে চলে গেছেন কোন এক পৃথক  পৃথিবীতে। এই নিদারুন প্রবাসে অবস্হানের কারনে তাঁদেরকে শেষ বারের মত দেখার  সুজোগ হয়নি আমার। একমুটো শুকনো মাটি তাঁদের কবরে দেওয়ার সৌভাগ্য বা তৌফিক  হয়নি আমার।সে কথা মনে পড়লে শোকে দুঃখে কষ্টে কলিজাটা পেটে যেতে চায়।  আমার প্রিয় মা.বাবাকে মনে করে আমি প্রায়ই ঠুকরে ঠুকরে কাঁদি অবুঝ শিশুটির মত।
 



 
আমার বাবা কোন রাজনীতিবীদ কিংবা তেমন কোন বিদ্যানী ব্যক্তি ছিলেন না। কিন্তু তিনি স্বশিক্ষিত সহজ সরল প্রজ্ঞাবান  জ্ঞানি একজন অসাধারণ মানুষ  ছিলেন।আমি তাঁকে বলি এ যুগের সক্রেটিস কিংবা কনফুসিয়াস।মায়ের কাছ থেকেই তাঁর অক্ষরজ্ঞান দস্তখত ও সুরা কেরাত নামাজ শিক্ষা।কারণ আমার প্রিয় মা মনি বাংলা আরবি ভালো লেকাপড়া জানতেন।বাবা দেশ বিদেশের জটিলতা ও জায়গা জমিনের হিসেবের ব্যপারে ছিল তাঁর প্রচুর অভিজ্ঞতা।ফরিন শিপে চাকুরি করার সুবাধে তিনি অনেক দেশে ভ্রমন করার সুজোগ পেয়েছেন।অনেক জাতি অনেক ভাষা বাসির মানুষের সাথে মিশেছেন,হয়তো সেই কারণেই এত অভিজ্ঞ হতে পেরেছিলেন।

 
আমার জীবনে যত টুকু শিক্ষাদীক্ষা, বা যত টুকু নিজেকে  পৃথিবীকে  প্রকৃতিকেও নিজের পারিপার্শিকতাকে চিনেছি সব টুকুই মা-বাবার কাছেই শিখেছি।আমার লেখাপড়ার হাতে খড়িও মা এর কাছে হয়েছে।গৃহ শিক্ষক স্কুল শিক্ষক কিংবা বড় ভাই বোনেরা কেউ আমাকে অক্ষরজ্ঞান শিক্ষা দিতে পারেনি।মা এর কোলে বসে বসে আমি শিখেছি।মা আমাকে একবার যে টা পড়াতেন সেটা আমার সাথে সাথে মুখাস্ত হয়ে যেত।মা-বাবাই আমার প্রকৃত শিক্ষাগুরু।মা-বাবাই আমার পীর-মোরশেদ।শুধু আমার কাছে নয় অনেকের কাছেই আমার মা ছিলেন দৃস্টান্ত সরুপ তেমনই একজন।

 
আমার মা মপস্বলে জন্ম গ্রহন করলেও তিনি আরবি এবং বাংলাতে ভালো লেখা পড়া জানতেন। নগরের এক ব্যস্ততম সংসারে এসেও তিনি আজীবন জ্ঞ্যন চর্চা করে গেছেন, এবং তার নাড়ি চেঁড়া সন্তানদেরকে নিয়মিত জ্ঞ্যান দান করে গেছেন।শুধু সন্তানদেরকে নয়, আমাদের পুড়ো বংশের এবং প্রতিবেশি ছেলে মেয়েদেরকে  সুশিক্ষা দিয়ে গেছেন।প্রতিদিন আমাদের উঠোনে বাড়ির এবং প্রতিবেশির প্রায় পন্সাশ ষাটটি ছেলে মেয়ে এসে আমার মা এর কাছে আরবি শিক্ষা গ্রহন করতো। আমি নিজেও খুব অল্প বয়সে আমার মায়ের কাছেই  প্রবিত্র কোরআন সরিফ শিক্ষা গ্রহন করেছি।
 
অনেক মুরুব্বির মুখে অনেকবার শুনেছি সংসারে একজন পুরুষ শিক্ষিত হলে নাকি কিছু যায় আসেনা, কিন্তু একজন নারি শিক্ষীত হলে নাকি পুরো সমাজই শিক্ষিত হয়ে উঠে। আমার মা ছিলেন সেই রকমই এক দৃষ্টান্ত কারি মহিষী।

 
আমার মা এর সংগ্রহে ছিল বাংলা আরবি মিলায়ে অনেক গুলি বই পুস্তোক,তন্মধ্যে কয়টা গল্পের বই এবং পুঁথিরও ছিল।এই বই গুলিকে আমার মা বিশেষ সম্পদ হিসেবে যত্ন করে রাখতেন।কোন ভাবে কারো অবহেলা করা দেখলে বা অযতনে পড়ে থাকা দেখলে বকেচকে উঠায়ে সালাম করে ‍চুমো খেয়ে যত্ন করে রেখে দিতেন।সেই সমস্ত বই পুস্তক সেই সময় বাংলাদেশে পাওয়া যেতনা।বেশির ভাগ বই আমার নিরক্ষর বাবা কলিকাতা থেকে কিনে এনে মাকে উপহার দিয়েছিলন।মা অবসরে মনের আনন্দে পড়তেন, অনেক সময় রাত জেগে জেগে পড়ে বাবাকে শুনাতেন এবং বুঝাতেন।মাঝে মধ্যে বাড়ির অনেক লোক এসে মাকে গিরে ধরতেন, গল্প কবিতা, আর পুঁথি শুনতেন।আর আমি যখন পড়তে শিখেছি, তখন আমাকেও পড়তে  দিতেন। আমাকে দিয়ে পড়াতেন।আমি মা এর অনুকরনে শব্দ করে সুর ধরে পড়তাম। অনেক সময় বড়দের সামনে পড়তে  লজ্জাবোধ করতাম,কারন পুঁথি বা কবিতায় মানব জন্মের পুরো বর্ননা তুলে ধরা হতো, যেটা আমারা বড় হয়ে বাইয়োলজিতে প্রজনন তন্ত্রে পড়েছি একেবারেই সে রকম।
(এখানে কবিতা বলতে সেই সময় দ্রৌপদি ত্রেপদি বা চৌপদি সুরে আট বা ষোল পৃষ্টার কবিতা পাওয়া যেত, তাকেই সবাই কবিতা বলতো)

 
ঠাকুরমার ঝুলির গল্পগুলি তো মা এর কোলে থেকে শিশু বেলা থেকে শুনছিলাম। মা ওরকম গল্পগুলি শুনায়ে শুনায়ে আমাকে গুম পাড়াতেন।একটু বড় হবার পরে  একদিন তাকের মধ্যে মলাট বিহিন ঠাকুর মার ঝুলি বইটা আমি আবিষ্কার করি।তখন বুঝতে পারি মা এর ছালাকি। মা এই সব গল্প কত্থেকে শিখেছেন। আরেক দিন সিলিং এর উপর পুরানো টিনের সুটকেসের ভিতর আবিষ্কার করি গুনে ধরা বিষাধ সিন্ধু এবং নকসি কাঁথার মাঠ সহ আরো বেশ কয়টা টা বই।আগের দিনের গল্পের বা উপন্যাস গুলির কি ধারুন কাব্যিক ভাষায় লিখা হতো।ঠিক গদ্যকেই মনে হত পদ্য। পয়ার দোপদি তৃপদি চৌতুসপদি মিলে কি সুন্দর চন্দের ঝংকার।নকসী কাঁথার মাঠ মা তো পড়তেন একেবারে পুঁতির সুরে।  মা এর কাছ থেকে সর্বশেষ আমার বই পড়া হয়েছে সম্ভবত মনোয়ারা উপনাসটি। আর বইটি লিখেছেন বোধ হয় ফরিদুর রেজা সাগরের মা সুলেখিকা রাবেয়া খাতুন।
 

আমার বাবা ছিলেন নিরক্ষর, কিন্তু তিনি ছিলেন অসাধরন জ্ঞ্যানের অধিকারি এক জন মানুষ। আমি বাবাকে যতটুকু কাছ থেকে জেনেছি, তার চেয়ে বেশি শুনেছি অন্যের কাছ থেকে।আটানব্বেই সালে আমি দেশে যাবার পর জমিন সংক্রান্ত ব্যপারে মাইজদীতে একজন  বিজ্ঞ উকিলের  সাথে আলাপ করতে যাই।তাঁর নাম ছিল সম্ভোবত সামছুল হক উকিল, ঠিক নামটা মনে নেই। তখন বাবাও জিবীত ছিলেন।অবশ্য  আমার বড় ভগ্নিপতি সাজাহান তহশিলদারই আমাকে নিয়ে যান তাঁর কাছে।উকিল সাহেব আমার বাবাকে খুব কাছ থেকে জানতেন।তিনি বললেন, আপনার বাবার মত এমন এক জন জ্ঞ্যানী লোক আমি আর দেখি নাই। উনি অসাধরন জ্ঞানী।বেশ কিছু দিন ধরে উনাকে দেখিনা, উনি কি এখনো বেঁচে আছেন?

সামছুল হক উকিলের বিশ্ময়কর প্রশ্নের জবাবে বললাম, হ্যাঁ বাবা এখনো বেঁচে আছেন।বেশ সুস্হও আছেন।
তিনি বললেন, আপনার বাবার বয়স শত বছরের উপরে হবে।
হ্যাঁ সত্যিই এই রকম বয়সেই আমার বাবা এ পৃথিবী চেড়ে চলে গেছেন।কিন্তু শেষ দিন পর্যন্ত উনার স্মরন শক্তি ছিল তরুন বয়সের মত।

এরকম অনেক দৃষ্টান্ত আমার বাবাকে নিয়ে দেওয়া যায়, যা মানুষের মুখে শুনেছি।এক কথায় বলতে গেলে পৃথিবীর সব মানুষের মতই তিনি ছিলেন দোষগুনে মিলে একজন মানুষ,আমার আদর্শ পিতা।

আমার বাবা ধন সম্পদের দিক দিয়েও সফল মানুষ ছিলেন।তিনি সারা জীবন ফরিন সিপে চাকুরি করেছিলেন।তিনি যত সম্পদ রেখে গেছেন তার সন্তানদের জন্য, আমরা চার ভাই আজ ইউরোপ আমেরিকা আফ্রিকাতে যুগের পর যুগ কাটিয়েও তার সমপরিমান  জোড়াতে পারছিনা। তার কেনা জমিনেই আমরা চার ভাইকে পাকা বাড়ি বানাতে হয়েছে।আমি শুনে বিশ্মিত হয়েছি,আমার জন্মেরও পুর্বে আমার বাবা নাকি একবার এরেষ্ট হন।তাঁকে অভিযুক্ত করা হয় তাঁর কাছে নাকি টাকা বানানোর মেশিন আছে এই বলে।

আমার মা-বাবাকে নিয়ে লিখলে বিশাল একটা বই হয়ে যাবে,কোন দিন সুযোগ হলে পারিবারিক সংগ্রহের জন্য হলেও লিখার আশা রাখি। আমার মা-বাবার কাছে যা কিছু শিখেছি  আজ পরিপুর্ণ বয়সে এসে সে সব কথা মহামানব বা দার্শণিকের জীবনীতে খুঁঝে পাই।মা তো সব সময় ছড়া ক্ষনার বচন,এবং সোল্লক দিয়ে আমাদেরকে শাসন করতেন।

আমার মা-বাবার দুজনেরই মন ছিল স্নেহ মমতায় পরিপুর্ন।বলা যায় দুজনই ছিলেন ভালবাসার কারখানা।  আমরা ছোট তিন ভাই বোনকে চাড়া বাবাতো খেতেই বসতেন না, বা খেতেই পারতেন না।দিদার আর মায়া ছিল আমার ছোট, তাদের নাক দিয়ে পানি পড়ছে, মাঝে মধ্যে মা চাপ করে দিচ্ছে, বাবা ভাতের লোকমা ছোট করে করে তাদের  মুখে তুলে দিচ্ছে আর নিজেও খাচ্ছে।আমার অবশ্য বসা কমই হতো। মা অনেক সময় বলতো,অত কুয়ারা করার দরকার নাই তুমি খাও, তবুও বাবা বসাতেন খাওয়াতেন।আবার সাথে নিয়ে গোসল করাতেন।

একবার তো বাবা গোসল করাতে নিয়ে গিয়ে ডুবেই মরতে বসেছিলেন। আমার খুব মনে পড়ছে। আমি দিদার তখন খুব ছোট।তখনও নেংটা বাঁদর। আমাদের বাড়ির সামনে এবং পিছনে দিগীর মত বড় দুটা পুকুর ছিল।বর্তমানে জেলখানার সিমানায় পড়ায় বেশি অংশ ভরাট হয়ে গেছে।বাবা আমাকে এবং দিদারকে দু পাঁজরের কোলে  বসায়ে  সে পুকুরে  গোসল করাতে নিয়ে গেলেন।বাবা আমাকে আর দিদারকে গোসল করায়ে উপরে রেখে তিনি নিজে গোসল করতে ছিলেন।এমন সময় আমার চোখ পড়ল পুকুরের স্বচ্ছ জলের উপর একটা লাল পদ্ম ফুটে আছে।শুধু একটাই ফুল।
আমি ঠ্যাং নাচিয়ে নাচিয়ে বায়না ধরলাম বাবা ফুলটা  আমাকে লয়ে  দাও।বাবা ছিলেন মোটা মানুষ, সাঁতার জানতেন না, তাই  ফুলটা তুলতে গিয়েই ডুবে যাচ্ছেলেন।তবু ফুলটি চাড়েননী কয়ডোক পানি খেয়ে ফুলটা লয়ে ঠিকই উপরে এসে আমার হাতে দিলেন।আমার চোখে মুখে সেকি আনন্দ। পরে বাড়িতে   এসে মাকে বললেন যে তিনি ফুল উঠাতে গিযে পানি খেয়ে মরেতে যাচ্ছিলেন।মা তো শুনে অবাক হলেন।

আমার মা- বাবা সব সময় সৎ পথে চলার জন্য প্রেরনা দিতেন।হারামে কোন দিন আরাম নাই, পরের সম্পদ কোন দিন লুটে পুটে খেয়না।,বিদ্যাবুদ্ধির কোন দিন ভাগ বাটোয়ারা  হয়না, ইত্যাদি।তরুন বয়সে একবার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে  গিয়ে নিশী রাতে চোরের উপর বাটপারি করে কিছু চুরি বা ডাকাতির মাল  ঘরে নিয়ে আসি।আমার মা-বাবা এবং বড় ভাই তিন জনই আমাকে মারতে আসলেন, এই বলে যে, আমি নাকি চুরি করে নিয়ে এসেছি।আমার কথা কিছুতেই তারা বিশ্বাস করতে চাননি। বিস্তারিত বলার পর  তারা বললেন, জিনিস গুলি যেখানে পেয়েছ,ঠিক সেখানে গিয়ে পেলে আস।আমি তাই করলাম।পরে শুনলাম পুলিশ লাইনের আরাই সাহেবের বাসা নাকি চুরি হয়েছিল।হয়তো ওগুলো আরাই সাহেবের মালামাল ছিল।

আজ সংসারে, সমাজে,রাষ্টে এমন কি পৃথিবীতে আদর্শবান মা-বাবার সংখ্যা অতি নগন্য।আর সে কারনেই সমাজে হচ্ছে এমন অন্যায় অনিয়ম অশৃঙ্খল। সে কারনেই  নিত্য নতুন হচ্ছে ভয়াবহ খুন খারাবি ধর্ষন লুটপাট।সে কারনেই সমাজের এত অবক্ষয়।

আজ সারা বাংলাদেশে যে ভাবে সন্ত্রাসিরা রাজনিতীর নামে সাধারন নিরীহ মানুষকে পেট্রল বোমা মেরে জালিয়ে পুড়িয়ে মারছে, সন্ত্রাসির বাবা মা ভাই বোনরা কি কিছুই জানেনা ?তার সন্তানের চরিত্র কেমন,? জানে সবাই জানে অল্প বিস্তর।কিন্ত তারা সন্তানদের সেরকম শিক্ষা দেননা বোধ হয়।
আসলে মা-বাবা কোথাও চলে যান না,কিম্বা মারা যান না। মা-বাবা চিরদিনই বেঁচে থাকেন তাঁদের সন্তানের
মাঝে।
 
আজ মা দিবসে মাকে নিয়ে গান---
১,আমার বেঁচে থাকার কোন মানে নেই,
আমার বেঁচে থাকার অনেক মানে আছে।
আমার জীবনে কত স্নেহমায়া মমতা
দিয়ে আমার মা চলে গেছে//
এ জীবন তো তারি দেওয়া, এ দুটি চোখে চাওয়া/
এ সুন্দর পৃথিবীতে এখনো তো বহে সুনিল হাওয়া/
আমার শ্বাসেপ্রশ্বাসে শরিরে শিরায় মাতৃগন্ধ মিশে আছে//
স্বশরিরে মা নেই অশিরিরে তিনি আছেন আমার মাঝে/
চিত্বের চেতনায়, বিপুল ভাবনায় ছুটে যাই সদা তাঁর কাছে/
আমার বুকের বিবরে আমার মা বেঁচে আছে//
২, মা তোমার বিরহ ব্যদনা আমাকে করেছে উদাসী ফকির/
একবার আওয়াজ তুলি ডুগডুগির, আবার করি জিগির//
মা-গো তুমি রুদ্র তুমি সমূদ্র তুমি আমার বিশ্ব ভ্রম্মান্ড/
তুমি আমার সুখ দুঃখ ব্যদনা,তুমি হাসি কান্না আনন্দ/
তোমার সাধনায় আমি স্বাধ পাই গো মা অমর জিন্দিগীর//
মা-গো তুমি অসিম তুমি সশীম তুমি চাঁদ সুরুজ তুমি রাতদিন/
বুকের ভিতরে তুমি বসত কর বলেই মনে হয়না দিনহীন/
অভাগাকে করেছ তুমি লাকির কি ফকির//


মানুষ হত্যা করে যদি রাজনিতী করতে হয় তবে সে রাজনিতীর নেতাকে আমি ঘৃনা করি।
মানুষ হত্যা করে যদি পুলছেরাত পার হয়ে জান্নাত যেতে হয়, তবে সে জান্নাত এর চেয়ে 
নড়কই আমার কাছে উত্তম,যেখানে যেতে কোন পুলছেরাত  পড়ে না।
 
--------ফারুক,
 



অজ্ঞসব জনপ্রতিনীধি,

সত্যই শক্তি, সত্যই সুন্দর,