কৌতুক

                                           কিছু কমেডি কিছু ট্রেজেডি,


 
শৈশবে আমাদের বিনোদন বলতে ছিল একমাত্র  খেলাধুলা। যাকে বলে ইকিড়ি মিকিড়ি খেলা ।সে-যে কত রকমের খেলাধুলা করতাম আমরা তার কোন অন্ত নাই।বলে কয়ে শেষ করতে পারব না।অনেক গুলির নাম ও এখন  আর মনে করতেপারছি না।গাছে গাছে বাঘ ছাগল, পানিতে কাউ কাউ দপাদপি ডুবাডুবি,গোল্লাছুট, জৃতার পঞ্জ কেটে বেটমিন্টেন,কাপড় পেঁছায়ে বল বানিয়ে বল খেলা,কাঁচা জাম্বুরা দিয়ে বল খেলা চোর ডান্ডা, লুকোচুরি,খাদ্দায়্যাঁচি, ছয়গুটি ষোলগুটি কেঁচিবোম সহ আরো কতো রকমের  খেলা খেলে আমরা মঝা পেতাম, আনন্দ লুটতাম? সেই ছিল এক অন্য রকম জীবন।
 
 
খেলাধুলার সাথে সাথে সবচেয়ে বেশি আনন্দ বা হাসির খোরাক জোগাতাম তামসা করে। কারুর নাম বিগড়ায়ে বোলায়ে তাকে ছেঁতায়ে  দারুন আনন্দ পেতাম। আর এই রকম নাম বিগড়ানোর মধ্যে  এক নাম্বারে ছিল সাইজ্যা মিয়া।মুলতো সাইজ্যা মিয়া ছিল এসবের মাষ্টার মাইন্ড। আর  অভিনয় করে তামসা করে সবাইকে হাঁসাতো গুইলগুইল্লা ওরফে গোল্লা।এই গোল্লা নামটাও  সাইজ্যা মিয়ার দেওয়া একটা বিগড়ানো নাম।গোল্লার আসল নাম আবদুর সালাম ওরফে মোল্লা।মোল্লা থেকে গুইলগুইল্লা তারপর গুইলগুইল্লা থেকে গোল্লা নামে উন্নতি হবারও একটা সুন্দর গল্প আছে।সে গল্পের কথা পরে বলবো।
 
গোল্লা ছিল সাইজ্যা মিয়াগো কামের পোলা।চর সুল্লিক্কায় তাদের বাড়ি।চর থেকে এসে সাইজ্যা মিয়াগো এখানে মাসকাবারি খাটে। প্রতি মাসের বেতন পায় পঞ্চাশ টাকা।গোল্লার বয়স তখন বার তের কিংবা চৌদ্দ হবে।সেসময় এই বয়সের ছেলেরা সাধারনত পেটেভাতে খাটে। কোন বেতন পায়না। আমি স্বাধীনতার পরের কথা বলছি।গোল্লার বেতন পাওয়ার একমাত্র কারণ গোল্লা হলো চরুয়া পোলা।এককথায় সব কাজে সে পারদর্শি।হাল চালানো থেকে ধান লাগানো, খেত নিড়ানো থেকে কাপড় কাছানো এমন কোন কাজ বাঁকি নাই যে গোল্লা পারেনা।গোল্লা সবকিছু শুধু করতে পারে তা নয়,সুপার ভাবে অর্থ্যাৎ ধ্রুতভাবে করতে পারে।সত্যিই সে একটা সুপার বয়।দু-তিনজন বড় কামলার কাজ সেই একাই করতে পারে। ধান রোপনের সময় তার হাত দেখা যায়না,খেতে খামারে হালচাষ কিংবা মই দেয়ার সময় গরু দৌড়তো উল্কার মত। তার মুখে হাইট হাইট শব্দ ভেছকি মারা জারিসারি গান গেয়ে উঠা ,সবি ছিল এক বিশ্ময়ের ব্যপার!
 
তাছাড়াও গোল্লার আরেকটি প্রতিভা ছিল।আর তা হলো সে অসাধরণ মিমিক্রি করতে পারতো। সে যে কারো আওয়াজ নকল করতে পারতো।নানা রকম অঙ্গভঙ্গি করে লাপালাপি করে সবাইকে হাসাতে আর আনন্দ দিতে পারতো।মানুষকে হাঁসানো খুবি কঠিন একটি কাজ।কাঁদাতে সবাই পারে, কিন্তু হাঁসাতে সবাই পারে না। কেউ কেউ পারে।গোল্লা সে কাজটি নিপুন ভাবে করতে পারতো।গোল্লার জন্ম হয়েছে যেন শুধুই মানুষকে হাঁসানোর জন্য। 
 
সাইজ্যা মিয়াগো বাড়ির নাম ইসলাম হাজির বাড়ি।এটা পশ্চিম মাইজদীর পৌরসভার এক নাম্বার ওয়ার্ডের অন্তর্গত। মাইজদী নতুন জেলখানার দীঘির ঠিক দক্ষিন দিকে এবং জেল রোডের পশ্চিম দিকের বড় বাড়িটাই হলো সাইজ্যা মিয়াদের বাড়ি।ইসলাম হাজি বাড়ি নামেই  বাড়িটি বেশ প্রসিদ্ধ।এই বাড়িতে বেশ কয়টি পরিবার রক্ষনশিল হলেও বাদবাঁকি পরিবারগুলি ছিল ব্যতিক্রম ধরণের।সরকারি একোয়ারের ফলে অনেক পরিবার রিক্ত নিঃশ্ব হয়ে গেল অল্প কয়দিনের মধ্যে।তাই এ বাড়ির লোকগুলি হয়ে উঠলো নাডা এবং দুষ্ট প্রকৃতির।পোলাপাইন গুলো তো জন্ম নিতই সয়তানের বাপ হয়ে।মারামারি বকাবকি, খুনখারাবিতে হয়ে উঠলো পারদর্শি।আশেপাশের মানুষরা সমীহ করে চলতো এ বাড়ির পোলাপাইনকে।পুলিশ লাইনের এক পুলিশকে একদিন বলতে শুনেছি,সে বললো, বাংলাদেশের অনেক জেলায় গিয়েছি, অনেক রকমের মানুষ দেখেছি, কিন্তু আপনাদের এখানের পোলাপাইনের মত এত দুষ্ট আর কোথাও দেখি নাই।একেবারে সয়তানের বাবা।
 
সাইজ্যা মিয়ার এক কাজিন ব্রাদার গরুর ব্যবসা করতেন।বাচ্চু ব্যপারি নামে তিনি অত্যান্ত পরিচিত মানুষ।বয়স তিরিশ পঁয়ত্রিশের কোঠায়।চিকচাক্য স্যামবর্ণের লম্বা আকৃতির শরির।দুরদুরান্তের বাজারে গিয়েও তিনি গরুর ব্যবসা বা দালালি করেন।বাচ্চু ব্যপারি সব সময় মরাধরা ম্যারাইট্টা ধরনের গরু কমদামে কিনে এনে কয়দিন পালেপুষে একটু মোটাতাজা করে বেশি দামে বিক্রি করতেন।চরাঞ্চলে ধান লাগানো শেষ হলে এই সব চর্মসার গরুগুলো চাষিরা বাজারে  এনে কমদামে বিক্রি করে দিতেন।এই সমস্ত গরু বেশির ভাগই কষাইরা কিনে নিতো।কোন কোন গরুর তো ঠিকমত হাঁটাচলারও শক্তি থাকতো না।দিনের পর দিন হাল চাষ করে কৃষকরা গরুগুলির এমন কাহিল অবস্হা করতো।দেখলে মায়া লেগে যেত।
 
একদিন দুপুর বেলায় বাচ্চু ব্যপারি তার এক কলিগকে নিয়ে ম্যারাইট্যা একটা  গরুকে বতল ভরে পানি খাওয়াচ্ছিল।বাচ্চু ব্যপারি চর্মসার গরুটির জিব্বা টেনে ধরছে, আর তার কলিগ বতল ভরে ভরে রুগ্ন গরুর মুখে পানি ঢালছে। গরুটির গায়ে তেমন কোন শক্তি না থাকলেও গোঁত গাঁত শব্দ করছে।গোল্লা ছেলেটা গরুর পোঁদে  পাপিয়ার ডোগা ঢুকিয়ে দিয়ে ফুঁ দিচ্ছিল। সাইজ্যা মিয়া সেই সময় জেলখানার দীঘিতে গেল গোসল করতে।গরমের দিন ছিল। সেদিন ছিল দত্তের হাঁট বসার দিন।দত্তের হাঁটে সপ্তাহে দুদিন গরু বাজার মিলে।বাচ্চু ব্যপারির কান্ড দেখে সাইজ্যা মিয়া হা হা করে হাঁসছে। বাচ্চু ব্যপারি  গোল্লাকে ধমক দিয়ে বলছে গোল্লা মার জোরে ফুঁ মার। ফুঁ মারার উদ্দেশ্য বাচ্চু ব্যপারি সামনে দিয়ে পানি খাওয়া চর্মসার গরুটির পেট ভরে একটু মোটাতাজা দেখানোর জন্য। কিন্তু গরুটির পেটে পানি থাকেনা পাতলা পায়খানা হয়ে সব পিছন দিয়ে বাহির হয়ে যায়। তাই গোল্লাকে দিয়ে পিছন দিয়ে ফুঁ দিয়ে আঁটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।হঠাৎ করে গরুটি এমন জোরে ছেড় মারলো,গরুর পাতলা গোবর সব গোল্লার মাথায়।সবাই হাঁসতে হাঁসতে কুটাকাটা।গোল্লা ঝাঁপ দিয়ে দীঘিতে পড়লো।
বাচ্চুরা ছিল নয় ভাই। সবাই ছিল গন্ডমূর্খ।সবাই কামকাজ করার উপযুক্ত ছিল কিন্তু সবাই  তেমন কর্মট ছিল না।বাচ্চু ছিল একটু ব্যতিক্রম খুবি কর্মট মানুষ।বাচ্চু ছোট কাল থেকেই তার বাবার সাথে গরুর গাঁড়ি চালাতো।চৌমুহানি থেকে মাইজদী বাজারের দোকানিদের মালচামানা এনে দিত।আবার ধানের সিজনে চর থেকে মানুষের ধান এনে দিত। খুব সুন্দরই চলছিল তাদের সংযুক্ত সংসার। এই সময় বাচ্চুকে তার মা-বাবা দেখে শুনে বিয়ে করিয়ে দিল। তাও তার আপন মামাতো বোন। বিয়ের পর বাচ্চু সিদ্ধান্ত নিল, সে মা-বাবা থেকে জুদা হয়ে আলাদা সংসার করবে।আলাদা একটা গরুর গাঁড়ি করে নিজের ভবিষ্যত নিজেই গড়বে।
 
ইতিমধ্যে বাচ্চু আলাদা একটা ছনের ঘরও করে ফেললো। এবং দুটা বড় বড় বলদ কিনে একটা গরুর গাঁড়িও বানিয়ে ফেললো।বাচ্চুর মা-বাবা এমনকি ভাইরাও এটা মেনে নিতে পারল না। এমনকি হঠাৎ করে একদিন বাচ্চুর মায়ের স্বর্নের দানাতাবিজ চড়াটা হারিয়ে গেল। বাচ্চুর মা টাকা পয়সা এবং স্বর্নের জিনিসপত্র সব সময় কমরে একটা পুটলিতে বেঁধে রাখতো।বাচ্চুর মা-বাবার সন্দেহের তীর  এখন বাচ্চুর দিকে।বাচ্চু এবং বাচ্চুর বউ ছাড়া এটা আর কেউই চুরি করতে পারেনা।আরো সন্দেহ বাচ্চু উপার্জনের অনেক পয়সা মেরে দিয়ে এই সব করেছে। একদিন দুপুর বেলায় এই নিয়ে তাদের ঘরে বাপেপুতে তুমুল ঝগড়া লাগলো। একপর্যায়ে বাচ্চুর বাপ মোটা একটা  বাঁশ দিয়ে বাচ্চুর মাথায় সজোরে বাড়ি বসিয়ে দিল।বাচ্চু তখন ছিল বসা অবস্হায়। সাথে সাথে বাচ্চু একদিকে ডলে পড়ে গেল।বাড়ির অসংখ নারিপুরুষের উপস্হিতে এই কান্ডটি ঘটলো।দু-বল তাজা রক্ত বাচ্চুর মাথা থেকে ঝরলো।পরে কয়েকজন লোক বাচ্চুকে ধরাধরি করে লাশের মত  ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল।বেন্ডিজ ও ঔষুধ দাওয়াই করার কিছুদিন পর বাচ্চু সুস্হ হয়ে উঠলো। বাচ্চুর বউ ছিল বাড়ির সব ছেলেমেয়েদের আদরের ভাবি। তিনি অত্যান্তু সুন্দর মনের মানুষ ছিল।দেখতেও সুন্দরি।
 
সুস্হ হয়ে বাচ্চু গরুর গাঁড়ি চালানো শুরু করলো।গরুগুলি ছিল খুবি সুন্দর মোটাতাজা।বাচ্চু সব সময় গরুদুটিকে গাগোসল করায়ে গায়ে সরিসার তেল মালিস করে দিত।অল্প কিছুদিন পরেই হঠাৎ করে বাচ্চুর বলদ দুটি ঐ দীঘির পাড়েই পেট পুলে মরে পড়ে রইলো।বাচ্চু সেদিন মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে কেঁদেছে গরু দুটির জন্য।সবাই সন্দেহবসত বলাবলি করছে যে বাচ্চুর মা-বাবাই বিষ খাইয়ে গরু দুটিকে মেরেছে।কিন্তু বাচ্চু তার মাবাবাকে কোন দিন সন্দেহ করেনি।এবং এত কিছুর পরেও বাচ্চু দমে যায়নি।সে শুরু করে দিল গরুর দালালি।এবং তাও খালি হাতে।বলা বাহুল্য পরবর্তিতে বাচ্চু নিজে তো মোটামুটি স্বচ্ছল হলো, এবং তার মা-বাবারও খেয়াল রাখতো সব সময়। 
উল্লেখ্য বাচ্চুর মায়ের যে দানাতাবিজ ছড়াটি হারানো গিয়েছিল, তা দুবছর পর একদিন সকালে বাচ্চুর ছোট ভাই ইছমাইল জেলখানার দীঘিতে মুখধুতে গেলে পানির কিনারে প্রথমে দুটা তাবিজ দেখতে পায়। সে তাবিজ দুটি বাড়িতে নিয়ে আসলে পরে সবাই গিয়ে বাঁকি তিনটি তাবিজও খুঁজে পেল।অতচ এই দানাতাবিজের জন্য কত বাটি চালান, আয়না পড়া বাঁশ চালান দেওয়া হয়েছে।সন্দেহভাজন কত ঝগড়া প্যাসাদ কত কান্ডই না ঘটে গেছে ।অবশেষে সবকিছুই মিথ্যা প্রমানিত হলো।সত্য হলো বাচ্চুর মা দীঘিতে গোসল করতে গিয়ে ভূলে দানাতাবিজ ছড়াটি ফেলে এসেছিল। 
(সাইজ্যা মিয়ার মা সব সময় বলতেন, জিনিস হারায় যার ঈমান ও যায় তার, ঘটনাটি সত্য)
 
সাইজ্যা মিয়া আর গোল্লা দুজনই ছিল সমবয়সি।সাইজ্যা মিয়াকে সাইজ্যা মিয়া নামটি দিয়েছিল রেজিয়ার বাপে।রেজিয়ার বাপও গোল্লার মত সাইজ্যা মিয়াদের এখানে মাসকাবারি কাম করতো। তার বাড়ি শালুপুর গ্রামে।মাইজদী থেকে পাঁচ-সাত মাইল দুরে।পেট কাটা মোটাসোটা মধ্য বয়সি মানুষ।কুচকুচে কালো দেখতে ডাকাতের মত মনে হলেও রেজিয়ার বাপ ছিল সাদাসিদে সুন্দর মনের হাসিখুশি এবং বুদ্ধিমান একজন মানুষ।কিন্তু কাজেকর্মে তেমন চালু ছিলনা।রেজিয়ার বাপ প্রতিদিন দুবেলা এখানে খাওয়াদাওয়া করতো, সন্ধ্যে বেলায় চলে যেত আবার সকালে চলে আসতো ভালো মানুষ বলেই রেজিয়ার বাপ সাইজ্যা মিয়াদের পরিবারের একজন হয়ে উঠলো।সাইজ্যা মিয়া আর গোল্লা রেজিয়ার বাপকে আদর করে ডাকতো রেজির বাপ বলে।মাঝেমধ্যে চেঁতাবার জন্য দুজনে তাকে ডাকতো ও রেজির বাপ কুকু।রেজির শুধু বলতেন সাইজ্যা মিয়া বাইচালি করেন বুঝি।
 
রেজিয়ার বাপ হাল চালাতো পারতো, কিন্তু খেতে মই দিতে পারতো না।মাঝেমধ্যে তিনি গোল্লাকে হাল চাষে সাহায্য করতো, কিন্তু মই দেওয়ার সময় চঙার উপরে দাঁড়াতে পারতো না, ভয় পেত।সমস্যা দেখা দিল গোল্লা ছিল একটি কিশোর বালক, ওজন হবে কিলো তিরিশেক।এই ওজনে কি আর চষা খেত মই দেওয়া চলে?রেজিয়ার বাপ কি করলো দুটা বস্তার মধ্যে মাটি ভরে মইয়ের দুদিকে রেখে দিয়ে খেতে মই দিতো।অনেক সময় সাইজ্যা মিয়াও গোল্লার সাথে সেই মইয়ের উপরে গিয়ে বসতো।মনের আনন্দে দুজনই সময়সময়ে কাজকর্ম করতো।ইতিমধ্যে গোল্লা হয়ে উঠলো সাইজ্যা মিয়ার ঘনিষ্ট বন্ধু ও সহপার্টি।
 
গোল্লা রাতে ঘুমাতো সাইজ্যা মিয়াদের কাছারি ঘরে।বেশ বড় ছিল কাছারি ঘরটা।চারছালা টিনের ঘর ডুলির বেড়া। একদিকে বড় একখাটে থাকতেন সাইজ্যা মিয়ার বড় ভাই আর মাষ্টার সাহেব। অন্যদিকে একখাটে ঘুমাতো গোল্লা একাই। মাঝখানে সাইজ্যা মিয়ারা তিনচারজন বসে লেখাপড় করতো।এই কাছারি ঘরে মাঝেমধ্যে মাষ্টার সাহেবের বন্ধু বান্দবরা এসে আড্ডা জমাতো।মাষ্টার ও সাইজ্যা মিয়ার বড় ভাই ছিলেন ক্লাশমিট, তারা সরকারি কলেজে একসাথে পড়তেন। মাঝে মাঝে এই কাছারি ঘরে তাদের সাত আট জনের আড্ডায় হাসি তামসায় মুখরিত হয়ে উঠতো।রাজনীতি কৌতুক কবিতা এমন কি মুরুলি বাঁশি ও বাজাতেন আমাদের এমরান ভাই।আমাদের সেই এমরান ভাই কি সুন্দর  সুরেলা কন্ঠে বাঁশি বাজাতেন।আহা!  সেই এমরান ভাই আর্কিটেক্টের ফাইনাল পরিক্ষা দেওয়ার পরে হটাৎ হার্ট এর্টাক করে মারা গেলেন।পরে রেজাউল্ট আউট হলে জানা গেল তিনি ফাস্টডিবিশনে পাশ করেছিলেন।তা ছিল এক মর্মান্তিক  ট্রেজেডি।
গোল্লা ছিল চরের পোলা।সেই সময় চর ছিল অজপাড়া গাঁ থেকেও অনুন্নত।শহরের মডার্ন জিনিস পত্র কাপড় চোপড় বই পুস্তোক মানুষের চালচলন খাওয়া দাওয়া পোষাক পরিচ্ছেদ পাকা ঘরবাড়ি স্কুল কলেজ এগুলো গোল্লা কোনদিন দেখেনি।গোল্লার বয়সি পোলাপাইনরা যে লেখাপড়া করে, স্কুল মাদরাসায় যায়, এমন কি সার্ট পেন্ট পরে এইসব গোল্লার জানা ছিলনা।গোল্লা এসেছিল পরনের একটা লুঙ্গি আর দুটা যুগ্গাই গামছা নিয়ে।এখানে আসার পরে সে লুঙ্গী গেঞ্জি সার্ট জুতা সবি পেল।অল্প কয়মাসের মধ্যে সে খাপখাওয়ায়ে নিল এলাকার লোকজনের সাথে। ছোট বড় সবাই তাকে এক নামেই চিনে গোল্লা।
গোল্লার জানা ছিলনা, ইলিক্ট্রিকের বাতি কিভাবে জ্বলে?
একদিন সে সাইজ্যা মিয়াকে বললো, আন্নেরা শহুরয়া মানুষ কি ছালাকরে ভাই,তারের ভিতরে তেল দিয়া বাত্তি জলান কেন্নে।আঁরে একটু শিখাই দেন না।
সাইজ্যা মিয়া বললো, আরে বেক্কল তেল দেওয়া লাগেনা, শুধু এই বটমটা টিপে দিলেই জ্বলে বুঝলি।ঐ তারে করে কারেন্ট আসে খবরদার কখনও তার ধরবি না।
 
তার ধরলে কি হইবে?
কারেন্টের সর্ট খাইয়া তুই মারা যাবি বুঝলি? 
 

 

 

 

 

 

 

 

 

 





                                      বড়দের কৌতুক
 
১,এক গ্রামে একজন চতুর এবং জগন্য শিখারি বসবাস করতো।শিখারি একে একে বনের সব জংলি জানোয়ার বাঘ ভল্লুক সিংহকে হত্যা করে বনটাকে মুক্ত করে ফেলল।তার ধারনা বনে আর কোন বাঘ সিংহ  বেঁচে নেই।তাই তিনি এক বিকেলে বন্দুকটাকে ঘরে রেখে খালি হাতেই বনে বেড়াতে গেলেন।কিন্তু তার ধারনা মিথ্যে হয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া একটা বাঘ এসে তার সামনে  চক্ষু লাল করে দাঁড়ায়ে বলল।
 কি হে শিখারি ভাই আজ তো দেখি খালি হাতে এসেছ, আজ তোমার রক্ষা নাই এক্ষুনি  ঘাঁড় ভেঙে তোমাকে খেয়ে ফেলব।
শাহসি শিকারী বিন্দু মাত্র বিচলিত না হয়ে বুদ্ধি খাটিয়ে  বলল, আরে বোকা বাঘ আজ কাঠের বন্দুক আনিনি সত্যি, কিন্তু চামড়ার একটা ডেঞ্জারেস বন্দুক নিয়ে এলাম,  শিখারী তার ধনেটাকে দেখিয়ে বললো, এই দ্যাখ ।
ডেঞ্জারেস বন্দুকটা  দেখে বাঘটা ভয়ে লেজ তুলে দৌড়াতে লাগল।দৌড়াতে দৌড়াতে বাঘটা এক জায়গায় গিয়ে দেখল একজন আশি বছরের বৃদ্ধা পেশাব করিতেছে ।বাঘটা  বৃদ্ধাকে গিয়ে বিনয় ভাবে জিজ্ঞেস করল,হেই দাদি  মা সত্যি করে বল্ তো বেডা মাইনষের  কাপড়ের নিচে যে একটা চামড়ার বন্দুক থাকে সেটা  কি সত্যিই বেশি ডেঞ্জারেস ?
বুড়ি চোখটাকে চানা বড় করে বলল, ওরে বাবা আর বলিস না, বলিস না ভাই ভাগ তুই, জলদি করে ভাগ,  ঐ চামড়ার বন্দুকটা এতই ডেঞ্জারেস যে   দেখ সত্তর বছর আগে একটা গুতা খেয়েছি আজ পর্যন্ত পানি ঝরতেছে।
বুড়ির মুখে এই  কথা শুনে বাঘটা আতঙ্কিত হয়ে লেঁজ তুলে দৌড়াতে লাগল।
 
 
২,নানী আর নাতিন ঘরে গুমায়ে আছে।নাতিন জামাই গেল সান্ধ্য বাজারে । জামাইয়ের ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে পড়শি এক বদমাশ ঘরে ডুকে নাতিনের সাথে লাবডাবু শুরু করলো । নাতিন তো ঘুমে অচেতন, চৌকির কেঁতর কুঁতুর শব্দ শুনে নানির গুম ভাঙল । নানি জেগে নাতিনকে ডাকছে, ও নাতিন নাতিনরে জামাই আসছে বুঝি ঘরে।
নাতিন এবং জামাইর কোন রা শব্দ না পেয়ে নানি উঠলেন।
পড়শি বদমাইশটা নানি উঠার টের পেয়ে মাল আউট না হওয়ার আগেই ধনটাকে খুলে দিল দৌড়। ।দৌড়ার সময় বদমাশটার মাল  আউট হয়ে সারা ঘরে পড়লো ।
নানী উঠে এসে ছেরাগ ধরায়ে দেখে মনে করল তার কদুর তেলের বতল কাত হয়ে না কোন তেল গুলি পড়ে গেল। নানী ফ্লোর থেকে বির্যগুলি কাঁচায়ে কাঁছায়ে লয়ে মাথায় মাখছে আর বলছে আ হা হা রে বদমাশটা আমার কদুর তেল গুলি সব ফেলে দিয়েছেরে--আ হা হা হারে এখন আমি কি করি।
ঐ সময় নাতিন উঠে এসে চোখ ডলতে ডলতে বলল, না গো নানী না এডা তোমার কদুর তেল না এডা ঐ বদমাসটার হেডা বুজছ।
 
৩,একজন প্রস্টিটিউট মহিলা  সার্জারিকেল ডাক্তারের কাছে গিয়ে  অনাবৃত হয়ে শুয়ে বললো, ডাক্তার সাহেব আপনি আমাকে আরেকটা সুরাক করে দিন ।
ডাক্তার সাহেব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, কেন আপনার তো একটা সুরাক আছে ।
মহিলা বললো, ডাক্তার সাহেব আজ কাল ব্যবসাটা ভাল যাচ্ছে, আরেকটা সুরাক হলে ডাবল ইনকাম হয় না ?
 
৪, এক দুষ্ট  নাতি  শিশুকাল থেকেই দাদির সাথে  এক বিছনায়  শুয়ে আসিতেছিল ।এতদিন কোন অশুধিা হয়নি । ভেজালটা লাগল নাতিটা সেয়ানা হবার পরে ।এক গভির রাতে নাতিটা দাদির সাথে আকাম করে বসল । নাতিটা ভেবেছিল কেউ জানবেনা । কিন্তু সকাল হতে না হতে এক কান দুকান করে সারাটা মহল্লা হয়ে গেল ।বেলা বাড়ার সাথে সাথে চাচা জেটা বাড়ির মায়মুরুব্বী সবাই মিলে পাঞ্চাত ডেকে নিয়ে সালিস দরবারের আয়োজন করলো ।
নাতি হঠাৎ এত লোকের সমাগম দেখে মনে মনে ভাবছে ।না জানি কি হলো, কেন আজ এত লোক আমাদের উঠানে জড় হলো?কি জন্যে সালিস দরবার বসলো?
বিজ্ঞ এক পাঞ্চাত নাতিকে ডেকে কাছে নিয়ে  তার বাবাকে দেখায়ে কানে কানে  জিজ্ঞেস করলো, হেই মুর্খ, তুই ঐ ব্যটার বুড়ো মাকে কাল রাতে এমন আকাম করলি কেন রে পাগল ?এটা কি মাইনসের কাম?
নাতি এবার তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বললো, ও আচ্ছা আপনেরা এর লাইগ্যা এখানে সালিসে বসলেন । এবার বুঝলাম আপনাদের মতলব।তারপর তার বাবাকে দেখায়ে বললো, হেই বেডা যে প্রত্যেক দিন  আমার মায়ের সাথে আকাম করে আমি কি কোন দিন সালিস মিলাইছি । হ্যাঁ কন  দেহি আমি কি কোন দিন সালিশ মিলাইছি?আমি তো শুধু  তার বুড়ো মাকে একদিন করছি, এর লাগি কি সালিস মিলাতে হয় ?

৫, দুজন প্রাপ্ত বয়ষ্কো মহিলা নগ্ন হয়ে পাশাপাশি গ্লাস কেবিনে স্নান করিবার সময় একজন আরেক জনকে দেখে বললো, আরে তোর জমিনে দেখি বড় বড় ঘাস জন্মিছে।
মহিলাটি বললো, হ্যাঁ আজ পর্যন্ত কোন ষাঁড় দেখে নাই তো তাই, কিন্তু তোর জমিনটা দেখি একেবার মরুভূমির মত ক্লিন, 
আরে বলিস না সই, সারাক্ষন একটা বুনো ষাঁড় এখানে কুদাকুদি করে,বলে ঘাঁস গুলি বড় হতে পারছেনা।

৬, বাড়ির ভাবিকে দেবর সকাল দুপুর বিকেল কিংবা সন্ধ্যে বেলায় যে কোন সময়ে  দেখলেই দুস্টোমি করে  বলে উঠে সূভ সন্ধ্যা ভাবি।
দুষ্ট দেবরটার এমন কান্ড দেখে ভাবি ভিতরে ভিতরে জ্বলে, কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা। 
 একদিন  রাঙা সকাল বেলায় ভাবিকে দেখে দেবরটি বললো,সূভ সন্ধা ভাবি।
ভাবি তো রেগে বললো, বেক্কল কোথাকার, এখন সন্ধা নাকি সকাল, কি বলছিস সূভ সন্ধা, সূভ সন্ধা?
দেবরটা মুছকি হেসে বললো, রাগ করো না ভাবি, তোমাকে দেখলে যে সকালকেও আমার সন্ধ্যা বলে মনে হয়।

৭,এক গ্রামে ছিল এক কৃপন বা কৃপ্টা। একেবারেই হাঁড় কিপ্টা।সে খবর পেল তার পাশবর্তি গ্রামে তার চেয়েও বড় একজন কঞ্জুস বাস করেন।হাঁড় কৃপ্টা একটা কাগজে একটি খরগসের ছবি এঁকে নিয়ে গেলেন পাশের গ্রামের সেই কঞ্জুসের বাড়িতে। লোক জনকে জিজ্ঞেস করতে করতে একসময়  এসে বাড়ির দর্জায় টোঁকা দিতেই একটি যুবক বাহির হয়ে জিজ্ঞেস করলো; কি চাই`? কৃপটা লোকটা বললো শুনেছি এই বাড়িতে নাকি বড় একজন কঞ্জুস বাস করেন তিনি কি বাড়িতে আছেন?
যুবকটি বললো, ও আচ্ছা উনি তো আমার বাবা, বাবা এখন ঐ দুর গাঁয়ে বেড়াতে গেছেন।বলুন আপনার কি খেদমত করতে পারি।
কৃপ্টা বললো, না না কোন খেদমত করতে হবেনা।সাথে নিয়ে আসা খরগসের ছবিটা বাহির করে দিয়ে বললো, আপনার বাবা আসলে আমার উপহারটা কিন্তু দিবেন। আচ্ছা তাহলে আমি যাই।
কঞ্জুসের পোলা দেখল লোকটি তো দেখছি ভারি কৃপ্টা,বিখ্যাত কঞ্জুসের পোলা হিসেবে তাকে তো একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার।সে বললো, না না আপনি এভাবে কেমনে খালি হাতে চলে যাবেন। বাবা শুনলে আমাকে বকবেন। একটু দাঁড়ান।যুবকটি ভিতরে গিয়ে সাদা কাগজে একটি আমের ছবি এঁকে এনে কৃপ্টা লোকটির হাতে ধরিয়ে দিলেন।ছবিটি দেখে কৃপ্টা লোকটি মনে মনে বললো, দেখছনি কারবার, কঞ্জুসের পোলাও তো দেখি কত বড় কঞ্জুস।
কিছুক্ষন পরে কঞ্জুস বাড়ি এল।তার পোলা এসে খরগসের ছবিটা দিয়ে বললো, অমুক গ্রাম থেকে একজন কৃপ্টা আপনার সাথে দেখা করতে এল, সেই লোকটি এই উপহারটি আপনার জন্য নিয়ে এল।কঞ্জুস লোকটি বললো, লোকটাকে তুই খালি হাতে যেতে দিলি কেন?
সে বললো,না না বাবা আমি তাকে খালি হাতে যেতে দিইনি। আমিও তাকে একটি আমারে ছবি এঁকে দিয়েছি।
এবার কঞ্জুস পোলার উপর রাগ হয়ে বললো, হারামজাদা আমের ছবি দিয়েছত ভালো কথা কিন্তু এত বড় কেন?
 
৮,কোন এক অজ্ঞাত লোক একটি পাকা আম চুইচাট্টি খেয়ে আমের বারাট রাস্তার পাশে ঘাঁসের উপর পেলে দিয়ে গেল।একজন হাঁড় কৃপ্টা লোক আমের বারাটা লয়ে চাটতে চাটতে বলতে লাগলো, কেমন কৃপ্টার কৃপ্টারে বাবা এমন খাওয়া খেল একটু রসও মোর জন্য রাখলো না।পাশে কয়জন পথচারি শুনে হো হো করে হাঁসতে লাগলো।

৯,মুখিত নামে একজন বাঙ্গালী দু-যুগ ধরে পাকিস্তানের করাচি শহরে বসবাস করে।কিন্তু ঠিকমত উর্দু ভাষায় কথা বলতে পারেনা।সে বাংলা উর্দু মিলায়ে কথা বলতো। সবাই বলে এটা নাকি সোলেমানী উর্দু।সে যাই হউক মুখিতের নিম্নঙ্গে বিচিপেঁছরা উঠাতে খুবি কষ্ট পাচ্ছিল।অসহ্য হয়ে একদিন মুখিত গেল ডাক্তার দেখাতে।ডাক্তার ছিলেন মহিলা।
 ডাক্তার সাহেবা মুখিতকে জিজ্ঞেস করলো,আপকা কেয়াহুয়া ভাই কিঁউ আয়াহে?
মুখিত বললো, ম্যাডাম হামারা বিছামে বিছি হুয়া হে।
ডাক্তার সাহেবা,জিজ্ঞেস করলো বিছা কেয়া ছিছ হে?
এবার মুখিত হাতের মুষ্টি বন্ধ করে উপর নীচে দেখায়ে বললো, ম্যাডাম কাপরা কা আন্দার এছা এছা করতা হায় জো ছিছ,উসকো বিছা কইতা হে, ছামাচগিয়া----

১০,মুখিত ছিল একেবারেই গন্ডমুর্খ।মোটেই লেখাপড়া করেনি, অঝপাড়া গাঁ থেকে উঠে আসা একজন মানুষ।তার এক চাচার সাথে জেকেট সেলাইয়ের কাজ শিখছে।চাচার বয়স তার চেয়ে কম।একদিন মুখিত একটু আন্ধকারে  বসে সেলাই করছিল।সেপ এসে বললো,বটম খুল দাও মুখিত।
মুখিত স্ক্রুড্রাইবার দিয়ে ইলেক্ট্রিকের সুইচটা খুলতে গিয়ে ইলেক্ট্রিক সর্ট খেয়ে পড়ে গেল।সেপ দৌড়ে এসে বললো, কেয়া হুয়া মুখিত?
মুখিত চেঁছিয়ে বললো,আপনি না বলা বটম খোলনেকা।
সেপ হা হা করে হেসে বললো চুতিয়া আদমি সুইচ অন করনেকি লিয়ে বলাথা।
 

 

No comments:

Post a Comment

অজ্ঞসব জনপ্রতিনীধি,

সত্যই শক্তি, সত্যই সুন্দর,