Monday, March 2, 2015

আমার পরম শ্রদ্ধেয় মা- বাবা



“আমার মা-বাবা,, 





 
আমার বাবা 













(এক) 
মারহাবা মা মারহাবা, মারাহাবা মা মারহাবা/
তুমি  আমার গঙ্গা যমুনা,তুমি
আমার মক্কা মদিনা,
তুমি আমার কৈলাশ কাবা//
আমি ঘরে বসে হজ্ব করি মা তোমার চরন ধরি/
আমার বুকের ঘরে বসত তোমার কে বলেগো গেছ মরি/



আমার প্রিয় জান্নাত বাসি মা-বাবা
দেখগো মা আজ কত গন্ধ বিলায় তোমার রক্তজবা//
মা হয়েই এলে তুমি আরশেরই পরশ মণি/
যার জীবনে এলে তুমি তারেই করেছ ধনি/
নিজে না দেখা দিয়া তোমাকে দেখালেন দয়াল রাব্বা//



  ১০ই মে খ্রিষ্টান বিশ্ব পালন করছে  Father Day আর ১৩ই মে পালন হলো Mother Day.
খ্রিষ্টানরা পালন করে এই কারণে যে ঈশ্বর পুত্র  যিষুখ্রিষ্ট নাকি এই দিনে তার পিতা মহান ঈশ্বরের সাথে দেখা করতে আকাশে পাড়ি জমান।আর মাদার ডে একেক দেশে একেক দিন পালন করে থাকে।কেন করে থাকে তার বর্ণনাও আছে নানা রকমের।আসলে সত্য ঘটনা হলোগ্রীক পৌরানে পাওয়া যায় প্রাচীন গ্রিসীয়রা তাদের দেবী মায়ের নামে মাদার ডে পালন করতো।
সে যাই হউক ফাদার মানে পিতা,আর পিতা মানে বুঝায় প্রতিপালক।অনুরুপ জনক শব্দের অর্থ বুঝায় জন্মদাতা। এই জগত সংসারে রক্তমাংসের পিতাই আমাদের প্রতিপালক এবং জন্মদাতা।এই পিতাকে আমরা আদর করে আব্বা বা আব্বু বলে থাকি।মর্ডার্ন ছেলেমেয়েরা অবশ্য পাপা পাপি কিম্বা ড্যাড ও বলে থাকে।আমরা ভাই বোনেরা সবাই আমাদের পিতাকে বাবা বলেই ডাকতাম।
 আবার ইংরেজি মাদার মানে মাতা হলেও মাতাকে আমরা বাঙ্গালীরা বেশির ভাগ মা,বা আম্মু বলেই বেশি ডেকে থাকি।এখনকার ছেলেমেয়েরা মামা মামি বলেও ডেকে  থাকে।আসলে এই মামা বা মামি পশ্চিমা বিশ্বে মৃত মমিকেই বলা হয়।            

১০ই মে আন্তঃর্জাতিক ফাদার ডে হলেও ১০ই মে ২০০৫ সালে আমার বাবা এই পৃথিবীর মায়া মমতা ছেড়ে আকাশের পথে পাড়ি দিয়েছেন। সেই থেকে আমরা সকল  ভাই বোন চিরদিনের মত এতিম হয়ে যাই।
আজ বাবার ১৯তম প্রয়ান দিবস। আমি মহান আল্লাহর দরবারে  দুহাত তুলে আমার বাবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি,হে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার বাবার সকল গুনা মাপ করে তাঁকে জান্নাত বাসি করুন আমিন!


আজ আমাকে নষ্টাল জিয়ায় পেয়ে বসেছে। মা-বাবার কথা মনে করে পলাতক সৃতিগুলি বারবার উথলি উঠছে হৃদয় মোক্তবে।মোটা মোটা জলে চোখ দুটি ঝাপসা ঝাপসা হয়ে গেছে নিজের অজান্তেই।এই মুহুর্তে আমি কাঁদছি বোবা কান্না, এই অজানা অচেনা  পাষান প্রবাসে বসে। এখানে নেই  কোন মাতা পিতা স্বজন পরিজনের আদর মমতা স্নেহ প্রেম ভালবাসা।আগুন্তক সৃতিগুলিই তো শুধু বেঁচে থাকার একমাত্র প্রেরণা ও শান্তনা।
 


পৃথিবীর সব সন্তানের মতই আমার মা-বাবা ও আমার কাছে সবার চেয়ে বেশি প্রিয়।শুধু প্রিয় বললে কম বলা হয়। আমার মা-বাবা আমার আদর্শ ও চিত্ব শক্তির প্রধান উৎস। তাঁরা আমার জীবনের অন্ধগলির ঝলমল আলোক রশ্মি।

সত্যিই আমার মা-বাবা দুজনই ছিলেন আদর্শ পিতা-মাতা।আমাকে চিরতরে এতিম করে অনেক আগেই তাঁরা দুজনই  এই  পৃথিবী চেড়ে চলে গেছেন কোন এক পৃথক  পৃথিবীতে। এই নিদারুন প্রবাসে অবস্হানের কারনে তাঁদেরকে শেষ বারের মত দেখার  সুজোগ হয়নি আমার। একমুটো শুকনো মাটি তাঁদের কবরে দেওয়ার সৌভাগ্য বা তৌফিক  হয়নি আমার।সে কথা মনে পড়লে শোকে দুঃখে কষ্টে কলিজাটা পেটে যেতে চায়।  আমার প্রিয় মা.বাবাকে মনে করে আমি প্রায়ই ঠুকরে ঠুকরে কাঁদি অবুঝ শিশুটির মত।
 



 
আমার বাবা কোন রাজনীতিবীদ কিংবা তেমন কোন বিদ্যানী ব্যক্তি ছিলেন না। কিন্তু তিনি স্বশিক্ষিত সহজ সরল প্রজ্ঞাবান  জ্ঞানি একজন অসাধারণ মানুষ  ছিলেন।আমি তাঁকে বলি এ যুগের সক্রেটিস কিংবা কনফুসিয়াস।মায়ের কাছ থেকেই তাঁর অক্ষরজ্ঞান দস্তখত ও সুরা কেরাত নামাজ শিক্ষা।কারণ আমার প্রিয় মা মনি বাংলা আরবি ভালো লেকাপড়া জানতেন।বাবা দেশ বিদেশের জটিলতা ও জায়গা জমিনের হিসেবের ব্যপারে ছিল তাঁর প্রচুর অভিজ্ঞতা।ফরিন শিপে চাকুরি করার সুবাধে তিনি অনেক দেশে ভ্রমন করার সুজোগ পেয়েছেন।অনেক জাতি অনেক ভাষা বাসির মানুষের সাথে মিশেছেন,হয়তো সেই কারণেই এত অভিজ্ঞ হতে পেরেছিলেন।

 
আমার জীবনে যত টুকু শিক্ষাদীক্ষা, বা যত টুকু নিজেকে  পৃথিবীকে  প্রকৃতিকেও নিজের পারিপার্শিকতাকে চিনেছি সব টুকুই মা-বাবার কাছেই শিখেছি।আমার লেখাপড়ার হাতে খড়িও মা এর কাছে হয়েছে।গৃহ শিক্ষক স্কুল শিক্ষক কিংবা বড় ভাই বোনেরা কেউ আমাকে অক্ষরজ্ঞান শিক্ষা দিতে পারেনি।মা এর কোলে বসে বসে আমি শিখেছি।মা আমাকে একবার যে টা পড়াতেন সেটা আমার সাথে সাথে মুখাস্ত হয়ে যেত।মা-বাবাই আমার প্রকৃত শিক্ষাগুরু।মা-বাবাই আমার পীর-মোরশেদ।শুধু আমার কাছে নয় অনেকের কাছেই আমার মা ছিলেন দৃস্টান্ত সরুপ তেমনই একজন।

 
আমার মা মপস্বলে জন্ম গ্রহন করলেও তিনি আরবি এবং বাংলাতে ভালো লেখা পড়া জানতেন। নগরের এক ব্যস্ততম সংসারে এসেও তিনি আজীবন জ্ঞ্যন চর্চা করে গেছেন, এবং তার নাড়ি চেঁড়া সন্তানদেরকে নিয়মিত জ্ঞ্যান দান করে গেছেন।শুধু সন্তানদেরকে নয়, আমাদের পুড়ো বংশের এবং প্রতিবেশি ছেলে মেয়েদেরকে  সুশিক্ষা দিয়ে গেছেন।প্রতিদিন আমাদের উঠোনে বাড়ির এবং প্রতিবেশির প্রায় পন্সাশ ষাটটি ছেলে মেয়ে এসে আমার মা এর কাছে আরবি শিক্ষা গ্রহন করতো। আমি নিজেও খুব অল্প বয়সে আমার মায়ের কাছেই  প্রবিত্র কোরআন সরিফ শিক্ষা গ্রহন করেছি।
 
অনেক মুরুব্বির মুখে অনেকবার শুনেছি সংসারে একজন পুরুষ শিক্ষিত হলে নাকি কিছু যায় আসেনা, কিন্তু একজন নারি শিক্ষীত হলে নাকি পুরো সমাজই শিক্ষিত হয়ে উঠে। আমার মা ছিলেন সেই রকমই এক দৃষ্টান্ত কারি মহিষী।

 
আমার মা এর সংগ্রহে ছিল বাংলা আরবি মিলায়ে অনেক গুলি বই পুস্তোক,তন্মধ্যে কয়টা গল্পের বই এবং পুঁথিরও ছিল।এই বই গুলিকে আমার মা বিশেষ সম্পদ হিসেবে যত্ন করে রাখতেন।কোন ভাবে কারো অবহেলা করা দেখলে বা অযতনে পড়ে থাকা দেখলে বকেচকে উঠায়ে সালাম করে ‍চুমো খেয়ে যত্ন করে রেখে দিতেন।সেই সমস্ত বই পুস্তক সেই সময় বাংলাদেশে পাওয়া যেতনা।বেশির ভাগ বই আমার নিরক্ষর বাবা কলিকাতা থেকে কিনে এনে মাকে উপহার দিয়েছিলন।মা অবসরে মনের আনন্দে পড়তেন, অনেক সময় রাত জেগে জেগে পড়ে বাবাকে শুনাতেন এবং বুঝাতেন।মাঝে মধ্যে বাড়ির অনেক লোক এসে মাকে গিরে ধরতেন, গল্প কবিতা, আর পুঁথি শুনতেন।আর আমি যখন পড়তে শিখেছি, তখন আমাকেও পড়তে  দিতেন। আমাকে দিয়ে পড়াতেন।আমি মা এর অনুকরনে শব্দ করে সুর ধরে পড়তাম। অনেক সময় বড়দের সামনে পড়তে  লজ্জাবোধ করতাম,কারন পুঁথি বা কবিতায় মানব জন্মের পুরো বর্ননা তুলে ধরা হতো, যেটা আমারা বড় হয়ে বাইয়োলজিতে প্রজনন তন্ত্রে পড়েছি একেবারেই সে রকম।
(এখানে কবিতা বলতে সেই সময় দ্রৌপদি ত্রেপদি বা চৌপদি সুরে আট বা ষোল পৃষ্টার কবিতা পাওয়া যেত, তাকেই সবাই কবিতা বলতো)

 
ঠাকুরমার ঝুলির গল্পগুলি তো মা এর কোলে থেকে শিশু বেলা থেকে শুনছিলাম। মা ওরকম গল্পগুলি শুনায়ে শুনায়ে আমাকে গুম পাড়াতেন।একটু বড় হবার পরে  একদিন তাকের মধ্যে মলাট বিহিন ঠাকুর মার ঝুলি বইটা আমি আবিষ্কার করি।তখন বুঝতে পারি মা এর ছালাকি। মা এই সব গল্প কত্থেকে শিখেছেন। আরেক দিন সিলিং এর উপর পুরানো টিনের সুটকেসের ভিতর আবিষ্কার করি গুনে ধরা বিষাধ সিন্ধু এবং নকসি কাঁথার মাঠ সহ আরো বেশ কয়টা টা বই।আগের দিনের গল্পের বা উপন্যাস গুলির কি ধারুন কাব্যিক ভাষায় লিখা হতো।ঠিক গদ্যকেই মনে হত পদ্য। পয়ার দোপদি তৃপদি চৌতুসপদি মিলে কি সুন্দর চন্দের ঝংকার।নকসী কাঁথার মাঠ মা তো পড়তেন একেবারে পুঁতির সুরে।  মা এর কাছ থেকে সর্বশেষ আমার বই পড়া হয়েছে সম্ভবত মনোয়ারা উপনাসটি। আর বইটি লিখেছেন বোধ হয় ফরিদুর রেজা সাগরের মা সুলেখিকা রাবেয়া খাতুন।
 

আমার বাবা ছিলেন নিরক্ষর, কিন্তু তিনি ছিলেন অসাধরন জ্ঞ্যানের অধিকারি এক জন মানুষ। আমি বাবাকে যতটুকু কাছ থেকে জেনেছি, তার চেয়ে বেশি শুনেছি অন্যের কাছ থেকে।আটানব্বেই সালে আমি দেশে যাবার পর জমিন সংক্রান্ত ব্যপারে মাইজদীতে একজন  বিজ্ঞ উকিলের  সাথে আলাপ করতে যাই।তাঁর নাম ছিল সম্ভোবত সামছুল হক উকিল, ঠিক নামটা মনে নেই। তখন বাবাও জিবীত ছিলেন।অবশ্য  আমার বড় ভগ্নিপতি সাজাহান তহশিলদারই আমাকে নিয়ে যান তাঁর কাছে।উকিল সাহেব আমার বাবাকে খুব কাছ থেকে জানতেন।তিনি বললেন, আপনার বাবার মত এমন এক জন জ্ঞ্যানী লোক আমি আর দেখি নাই। উনি অসাধরন জ্ঞানী।বেশ কিছু দিন ধরে উনাকে দেখিনা, উনি কি এখনো বেঁচে আছেন?

সামছুল হক উকিলের বিশ্ময়কর প্রশ্নের জবাবে বললাম, হ্যাঁ বাবা এখনো বেঁচে আছেন।বেশ সুস্হও আছেন।
তিনি বললেন, আপনার বাবার বয়স শত বছরের উপরে হবে।
হ্যাঁ সত্যিই এই রকম বয়সেই আমার বাবা এ পৃথিবী চেড়ে চলে গেছেন।কিন্তু শেষ দিন পর্যন্ত উনার স্মরন শক্তি ছিল তরুন বয়সের মত।

এরকম অনেক দৃষ্টান্ত আমার বাবাকে নিয়ে দেওয়া যায়, যা মানুষের মুখে শুনেছি।এক কথায় বলতে গেলে পৃথিবীর সব মানুষের মতই তিনি ছিলেন দোষগুনে মিলে একজন মানুষ,আমার আদর্শ পিতা।

আমার বাবা ধন সম্পদের দিক দিয়েও সফল মানুষ ছিলেন।তিনি সারা জীবন ফরিন সিপে চাকুরি করেছিলেন।তিনি যত সম্পদ রেখে গেছেন তার সন্তানদের জন্য, আমরা চার ভাই আজ ইউরোপ আমেরিকা আফ্রিকাতে যুগের পর যুগ কাটিয়েও তার সমপরিমান  জোড়াতে পারছিনা। তার কেনা জমিনেই আমরা চার ভাইকে পাকা বাড়ি বানাতে হয়েছে।আমি শুনে বিশ্মিত হয়েছি,আমার জন্মেরও পুর্বে আমার বাবা নাকি একবার এরেষ্ট হন।তাঁকে অভিযুক্ত করা হয় তাঁর কাছে নাকি টাকা বানানোর মেশিন আছে এই বলে।

আমার মা-বাবাকে নিয়ে লিখলে বিশাল একটা বই হয়ে যাবে,কোন দিন সুযোগ হলে পারিবারিক সংগ্রহের জন্য হলেও লিখার আশা রাখি। আমার মা-বাবার কাছে যা কিছু শিখেছি  আজ পরিপুর্ণ বয়সে এসে সে সব কথা মহামানব বা দার্শণিকের জীবনীতে খুঁঝে পাই।মা তো সব সময় ছড়া ক্ষনার বচন,এবং সোল্লক দিয়ে আমাদেরকে শাসন করতেন।

আমার মা-বাবার দুজনেরই মন ছিল স্নেহ মমতায় পরিপুর্ন।বলা যায় দুজনই ছিলেন ভালবাসার কারখানা।  আমরা ছোট তিন ভাই বোনকে চাড়া বাবাতো খেতেই বসতেন না, বা খেতেই পারতেন না।দিদার আর মায়া ছিল আমার ছোট, তাদের নাক দিয়ে পানি পড়ছে, মাঝে মধ্যে মা চাপ করে দিচ্ছে, বাবা ভাতের লোকমা ছোট করে করে তাদের  মুখে তুলে দিচ্ছে আর নিজেও খাচ্ছে।আমার অবশ্য বসা কমই হতো। মা অনেক সময় বলতো,অত কুয়ারা করার দরকার নাই তুমি খাও, তবুও বাবা বসাতেন খাওয়াতেন।আবার সাথে নিয়ে গোসল করাতেন।

একবার তো বাবা গোসল করাতে নিয়ে গিয়ে ডুবেই মরতে বসেছিলেন। আমার খুব মনে পড়ছে। আমি দিদার তখন খুব ছোট।তখনও নেংটা বাঁদর। আমাদের বাড়ির সামনে এবং পিছনে দিগীর মত বড় দুটা পুকুর ছিল।বর্তমানে জেলখানার সিমানায় পড়ায় বেশি অংশ ভরাট হয়ে গেছে।বাবা আমাকে এবং দিদারকে দু পাঁজরের কোলে  বসায়ে  সে পুকুরে  গোসল করাতে নিয়ে গেলেন।বাবা আমাকে আর দিদারকে গোসল করায়ে উপরে রেখে তিনি নিজে গোসল করতে ছিলেন।এমন সময় আমার চোখ পড়ল পুকুরের স্বচ্ছ জলের উপর একটা লাল পদ্ম ফুটে আছে।শুধু একটাই ফুল।
আমি ঠ্যাং নাচিয়ে নাচিয়ে বায়না ধরলাম বাবা ফুলটা  আমাকে লয়ে  দাও।বাবা ছিলেন মোটা মানুষ, সাঁতার জানতেন না, তাই  ফুলটা তুলতে গিয়েই ডুবে যাচ্ছেলেন।তবু ফুলটি চাড়েননী কয়ডোক পানি খেয়ে ফুলটা লয়ে ঠিকই উপরে এসে আমার হাতে দিলেন।আমার চোখে মুখে সেকি আনন্দ। পরে বাড়িতে   এসে মাকে বললেন যে তিনি ফুল উঠাতে গিযে পানি খেয়ে মরেতে যাচ্ছিলেন।মা তো শুনে অবাক হলেন।

আমার মা- বাবা সব সময় সৎ পথে চলার জন্য প্রেরনা দিতেন।হারামে কোন দিন আরাম নাই, পরের সম্পদ কোন দিন লুটে পুটে খেয়না।,বিদ্যাবুদ্ধির কোন দিন ভাগ বাটোয়ারা  হয়না, ইত্যাদি।তরুন বয়সে একবার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে  গিয়ে নিশী রাতে চোরের উপর বাটপারি করে কিছু চুরি বা ডাকাতির মাল  ঘরে নিয়ে আসি।আমার মা-বাবা এবং বড় ভাই তিন জনই আমাকে মারতে আসলেন, এই বলে যে, আমি নাকি চুরি করে নিয়ে এসেছি।আমার কথা কিছুতেই তারা বিশ্বাস করতে চাননি। বিস্তারিত বলার পর  তারা বললেন, জিনিস গুলি যেখানে পেয়েছ,ঠিক সেখানে গিয়ে পেলে আস।আমি তাই করলাম।পরে শুনলাম পুলিশ লাইনের আরাই সাহেবের বাসা নাকি চুরি হয়েছিল।হয়তো ওগুলো আরাই সাহেবের মালামাল ছিল।

আজ সংসারে, সমাজে,রাষ্টে এমন কি পৃথিবীতে আদর্শবান মা-বাবার সংখ্যা অতি নগন্য।আর সে কারনেই সমাজে হচ্ছে এমন অন্যায় অনিয়ম অশৃঙ্খল। সে কারনেই  নিত্য নতুন হচ্ছে ভয়াবহ খুন খারাবি ধর্ষন লুটপাট।সে কারনেই সমাজের এত অবক্ষয়।

আজ সারা বাংলাদেশে যে ভাবে সন্ত্রাসিরা রাজনিতীর নামে সাধারন নিরীহ মানুষকে পেট্রল বোমা মেরে জালিয়ে পুড়িয়ে মারছে, সন্ত্রাসির বাবা মা ভাই বোনরা কি কিছুই জানেনা ?তার সন্তানের চরিত্র কেমন,? জানে সবাই জানে অল্প বিস্তর।কিন্ত তারা সন্তানদের সেরকম শিক্ষা দেননা বোধ হয়।
আসলে মা-বাবা কোথাও চলে যান না,কিম্বা মারা যান না। মা-বাবা চিরদিনই বেঁচে থাকেন তাঁদের সন্তানের
মাঝে।
 
আজ মা দিবসে মাকে নিয়ে গান---
১,আমার বেঁচে থাকার কোন মানে নেই,
আমার বেঁচে থাকার অনেক মানে আছে।
আমার জীবনে কত স্নেহমায়া মমতা
দিয়ে আমার মা চলে গেছে//
এ জীবন তো তারি দেওয়া, এ দুটি চোখে চাওয়া/
এ সুন্দর পৃথিবীতে এখনো তো বহে সুনিল হাওয়া/
আমার শ্বাসেপ্রশ্বাসে শরিরে শিরায় মাতৃগন্ধ মিশে আছে//
স্বশরিরে মা নেই অশিরিরে তিনি আছেন আমার মাঝে/
চিত্বের চেতনায়, বিপুল ভাবনায় ছুটে যাই সদা তাঁর কাছে/
আমার বুকের বিবরে আমার মা বেঁচে আছে//
২, মা তোমার বিরহ ব্যদনা আমাকে করেছে উদাসী ফকির/
একবার আওয়াজ তুলি ডুগডুগির, আবার করি জিগির//
মা-গো তুমি রুদ্র তুমি সমূদ্র তুমি আমার বিশ্ব ভ্রম্মান্ড/
তুমি আমার সুখ দুঃখ ব্যদনা,তুমি হাসি কান্না আনন্দ/
তোমার সাধনায় আমি স্বাধ পাই গো মা অমর জিন্দিগীর//
মা-গো তুমি অসিম তুমি সশীম তুমি চাঁদ সুরুজ তুমি রাতদিন/
বুকের ভিতরে তুমি বসত কর বলেই মনে হয়না দিনহীন/
অভাগাকে করেছ তুমি লাকির কি ফকির//


মানুষ হত্যা করে যদি রাজনিতী করতে হয় তবে সে রাজনিতীর নেতাকে আমি ঘৃনা করি।
মানুষ হত্যা করে যদি পুলছেরাত পার হয়ে জান্নাত যেতে হয়, তবে সে জান্নাত এর চেয়ে 
নড়কই আমার কাছে উত্তম,যেখানে যেতে কোন পুলছেরাত  পড়ে না।
 
--------ফারুক,
 




                                                       ( দুই)

 

আমার বাবার মৃর্ত্যু রহস্যজনক---!

১০ই মে আমার বাবার ১৯তম প্রয়ান দিবস। ২০০০ সালের ১০ই মে তিনি পরলোকে গমন করেন।বাবা যখন মারা যান তখন আমি জার্মানে। মাত্র তিনদিন আগে প্রায় ছয় সপ্তায় বাবার পাশে থেকে সুস্হ বাবাকে দেশে রেখে আমি এলাম।কিন্তু আমি চলে আসার পরে হঠাত করে তিনদিনের মাথায় তিনি কি ভাবে বাবা মারা যান?বিশ্বাস করতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে।তবু কি করা মির্ত্যু তো সবার জন্য অবধারিত।মেনে নিলাম।বাবার মৃর্ত্যুর খবর প্রথম খুলনা থেকে ভাগিনা বাবুল ফোন করে আমাকে জানাল। অতচ রহস্য জনক ভাবে আমার তিন ভাই আমাকে একটুও জানালো না।কেন জানালেন না তার কোন সদুত্তর আমি তাদের কাছ থেকে কোন দিন পাইনি।তারা তিন জনের দুজন তো পরিবার নিয়ে পাশেই ছিল। 


 আজ অনেক বছর পরে এসে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন আমার বাবার মৃর্ত্যু নাকি রহস্য জনক।আমার বাবার নাকি স্বাভাবিক মৃর্ত্যু হয় নাই তাঁকে নাকি স্বাস রুদ্ধ করে সুপরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে।বাড়ির কয়জন লোকজন এবং শেষ সময়ে যারা বাবার হাড়া খেদমত করেছেন, তারাই তুলেছে এই সব প্রশ্ন।গতকাল একজনের সাথে ফোনে কথা বলার সময় সে এই কথাই বার বার আমাকে বলছে।আমি শুনে অবাক বিশ্মিত হলাম।
বার বার একি প্রশ্ন মাথায় গুরপাক খাচ্ছে, কেন কে কিসের জন্য আমার বাবাকে হত্যা করলো ওরা।কেন কিসের জন্য তারা আমার বাবাকে হত্যা করতে পারে?
বাবার অসুখের কথা শূনে আমি তাড়াতাড়ি চাকুরি চেড়ে জার্মান থেকে ছুটে যাই বাংলাদেশে বাবার পাশে।মুরুব্বিরা কেউ বলছেন তিনি আর বাঁচবেননা, আবার কেউ বলছেন তিনি সহজে মরবেনও না।আমি বাড়িতে নাফিত ডেকে এনে বাবার চুল দাঁড়ি কাটায়ে গা গোসল ধোয়ায়ে আমার নতুন বাসায় মুলবি ডেকে মিলাদ সরিফ পড়ায়ে বাবাকে তোওবা করালাম।মা তো তখন হুইল চ্যায়ারে চলাফেরা করলেও একেবারেই সুস্হ।বাবাকেও আমি দেখেছি টন টনে সুস্হ মানুষ।হুঁষ জ্ঞান সবি ঠিক আছে।তখনো তিনি সব কিছু খেয়াল রাখতে পারেন।আমি বাবার হুঁষ জ্ঞান দেখে বিশ্মিত হতাম।একদিন আমার সালা জাহাঙ্গির ঢাকা থেকে বাড়ি আসলো। বাবা বলছে, তোমরা কেউ ছেলেটাকে পানিকাঞ্জি দাও নাই,কতদুর থেকে এল ছেলেটা।দাও ছেলেটাকে একটা কিছু খেতে দাও।

 আমার পাশে বসে বাবা মুনাজাত ধরে তার ছোট ছেলের জন্য দোওয়া করলেন।আমাকে বললেন তোমরা বড় তিন ভাইয়ের তো একটা লাইন হয়ে গেছে, তোমরা পাকা বাড়ি বানিয়েছ, কিন্তু দিদারের কিছু হলো না। জানিনা কোথায় কি অবস্হায় আছে পোলাটা। আমি তখন বাবাকে অবয় দিয়ে বলেছিলাম, বাবা আপনি দিদারের জন্য কোন চিন্তা করেনন না।দিদার ভালো আছে। দিদারের সাথে আমার কথা হয়েছে সে বাড়ি আসতেছে, সেও পাকা বাড়ি বানাবে, উঁচা বিল্ডিং বানাবে।আসলে মিথ্যে বলেছি বাবাকে সাহস দেওয়ার জন্য।দিদারের সাথে আমার ফোনে কোন কথা হয়নি।তবে দিদারের সব খবরা খবর নিয়েছি আমেরিকায় অবস্হানরত দিদারের বড় ভায়রা ও তার বড় ভাই খোকনের কাছ থেকে।তখন সাউথ আফ্রিকায় ফোন করে আজকের মত সহজে লাইন পাওয়া যেতনা, সেই কারণে।

আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম আমার কথা শূনে বাবার মুখে শান্তির রেখা ফুটে উঠেছিল।বাবার এক চাচাতো ভাই তখন বললো, তোমরা চিন্তা করো না উনার সহজে কিছু হবেনা।আল্লাহ উনাকে লম্বা হায়াত দিয়েছেন।
মিলাদ শরিফ পড়ার  পরে বাবাকে হুইল চ্যায়ারে বসায়ে আমি বাহিরে গুরাতে নিয়ে যাই।তারপর কথার মাঝে বাবাকে জিজ্ঞেস করি, বাবা আপনাকে কোথায় মাটি দেব? আপনার কি ইচ্ছা? 
বাবা বললেন,তোমাদের যেখানে খুশি সেখানে দিবা।তাতে কি?
বললাম, খোকন ভাই মিন্টু ভাই ওরা বলছে নতুন বাড়ির এক কোনে আপনাকে কবর দিতে।বাবা বললেন যেখানে খুশি সেখানে দাও তোমাদের ইচ্ছে।
আমরা তখন হাঁটতে হাঁটতে ঠিক এখন যে জায়গায় মসজিদটা হয়েছে সেই জায়গায় দাঁড়ানো।আমি তখন বাবাকে আমাদের তিন ডিসিং জমি দেখায়ে বাবাকে বললাম, বাবা আমি প্লান করেছি এখানে একটা মসজিদ বানায়ে তার পাশে জেলখানার ওয়ালের সাথে আপনার এবং মায়ের কবর বাড়ি বানাবো।এই কথা শুনে বাবা খুশিতে আটখানা হয়ে গেলেন।নিমীশে বাবার মুখে হাঁসির রেখা ফুটে উঠলো। বললেন এটাই সব চেয়ে ভালো হবে। তোমার মায়েরও ইচ্ছা ছিল একটা মসজিদ দেওয়ার।সাথে সাথে বাবা বললেন, তাহলে আমি আল্লাহ ওয়াস্তে এই তিন ডিসিং জমিন মসজিদের জন্য দান করে দিলাম।আমি বাবাকে বললাম, মসজিদটার নাম হবে নুর জামে মসজিদ।কারণ বাবার ডাক নাম ছিল নুর, পুরো নাম নুরুল হক নুর।আমাদের চার ভাইয়ের নামের সাথেও নুর শব্দটা আছে। এক কথায় বলা যায় প্যামিলি নাম।বাবা শূনে দারুন খুশি হলেন।

ঠিক এর পরের দিনই ওয়ালের পাশে গাছগাছরা ও জঙ্গল চাপ করে মেপে কবরের জায়গা বানিয়ে ওয়াল টেনে দিলাম।ঐসময় আমার বাড়িতে রাজমিস্ত্রিরা কাজ করছিল। আমার ভাগিনা বাবুল থেকে এক হাজার ইট কিনে কবরের দেয়াল পাকা করে ভিতরে মাটি পালায়ে ভরে দিলাম।আমার ছোট চাচা পাটোয়ারি একদিন আমাকে কাজ করতে সে জায়গায় দেখলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি করবা এখানে?আমি আমার প্ল্যনের কথা চাচাকে বললে চাচা বললেন ভালো হবে খুব ভালো হবে।একটু বড় করে করো যেন তোমরাও শুতে পারো।আমি বললাম চাচা সে হিসেবে মেপেঝুঁকেই করেছি।আবার আমার জেটাতো ভাই হোরনকে বলার পরে সে তো তাচ্ছিল্যের সাথে বললো, এখানে কিসের মসজিদ হবে?সডানমডান বানায়ে দাও। কোন রকমে মানুষে নামাজ পড়তে পারলেই হবে।আরো বেশ কয়জন মানুষ তাচ্ছিল্য ভাবেই কথা বলেছে। আমি সবাইকে বলেছিলাম, দেখবেন এখানে একদিন বড় এবং সুন্দর একটা মসজিদ হবে। ইশআল্লাহ।বেশ কয় বছর আগেই সেখানে বেশ সুন্দর একটা মসজিদ নির্মিত হয়েছে।প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ আজ সেখানে জামাত বেঁধে নামাজ পড়তে পারে।
বায়তুল নুর জামে মসজিদ পাশে শুয়ে আছেন আমার মা-বাবা



পরে অবশ্য আমার আরেক মৃত চাচা মরহুম হাবিব উল্যার ছোট ছেলেরা অর্থ্যাত আমার কাজিন ভাই মিলন ও কামাল নাকি তাদের ভাগের আরো তিন ডিসিং জমিন মসজিদের জন্য দান করে দিয়েছে।তার বড় ভাই কাইয়ূম নাকি প্রথমে রাজি ছিলনা।সে নাকি এই ও বলেছিল অন্যের মা-বাবার কবরের পাশে আমরা কেন মসজিদের জন্য জায়গা দেব? পরে অবশ্য কাইয়ুমও রাজি হয়ে দান খরছও দিয়েছে।

আমি জার্মানে ফিরে আসার সময় বাবার কবর ও মসজিদের পুরো প্ল্যান পোগ্রাম দিদারকে বাতায়ে দিয়ে এসেছি।বলেছি মসজিদটা হবে আমাদের মা-বাবার নামে।পরের বছর আমি মসজিদ বানাতে গিয়ে দেখি দিদার মসজিদের জায়গার সব মাটি তুলে পুকুর কাটিয়ে রেখেছে।আমি দিদারকে জিজ্ঞেস করলাম কিরে এটা কি করলি?দিদার বললো সে ভরাট করে দিবে।সে বছর আর ভরাট করা হলোনা।পরের বছর দিদার আমেরিকায় যুক্তি করে আমার প্ল্যান পাল্টিয়ে মসজিদের নাম রাখলো ইসলাম হাজি বায়তুল নুর জামে মসজিদ।এই ব্যপারে দিদার ও আমেরিকায় বড় মিঞাকে জিজ্ঞেস করলে তারা বললো,নুর তো আছে।তাদের কথা আমার মোটেও পছন্দ হলো না।
সে যাই হউক, আমার টিনের ঘর দিয়েই তারা প্রথম মসজিদের কাজ শুরু করেছিল।তারপর ধীরে ধীরে দুরদুরান্তের মানুষের দান খয়রাতে মসজিদটা পাকা হয়েছে। অবশ্য আমাদের পরিবারের সদশ্যরাই বড় একটা দান করেছে।আমার রফিক চাচা, আমার চাচাতো বোন রাজিয়া ভিজার স্বামী সহ সবার সহযোগিতায় মসজিদটি নির্মিত হতে পেরেছে।তার জন্য সবাইকে কৃতজ্ঞচিত্তে ধন্যবাদ জানাই।


যাক মুল কথায় আসি।
বাবা মারা যাবার এক সপ্তাহ আগে দিদার আসে সাউথ আফ্রিকা থেকে।আমি বাবুল বোন বিবির বর মান্নান ভাইসহ আমরা মাইক্রো নিয়ে এয়ারপোর্টে গিয়ে দিদারকে নিয়ে আসি।দিদার আমার অনুজ। প্রায় আঠার বছর পরে দিদারের সাথে আমার মোলাকাত হলো।পিইড্যাপিইডি দু ভাইয়ের বুকের ভিতরে অনেক দু:খ কষ্ট বা খোব লুকায়ে থাকলেও সেদিন আমরা পরস্পরে সেগুলি লুকায়ে রেখেছিলাম। কারণ দিদার কাউন্টার থেকে বাহির হওয়ার পরে দেখলাম কয়জন দুষ্ট লোক তাকে গিরে ধরে রেখেছে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে আমি নিয়ে এলাম।এবং তাড়াহুড়া করে মাইক্রোতে বসে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।

দিদারকে দেখার পরতো বাবার মনোবল আরো শক্ত হয়ে গেলো।বাবাকে চাঙ্গাবস্হায় দেখে দিদারের হাওলায় রেখে আমি জার্মানে ফিরে এলাম।আমি আসার তিনদিন পরেই হঠাত করে বাবা মারা যান কি করে? এখন অনেকেই এই প্রশ্ন করছে আমাকে।সবার একি কথা সম্পত্তির লোভে সুপরিকল্পিত ভাবে বাবাকে হত্যা করা হয়েছে।

ধন সম্পত্তি কিংবা জায়গা জমিনের লোভে তারি প্রিয় সন্তান কিংবা পুত্র বধুরা বা নাতি নাতকুররা মিলে আমার বাবাকে হত্যা করতে পারে এ কথা বিশ্বাস করতে আমার খুবি কষ্ট হচ্ছে। ছি: ছি: এমন নিষ্ঠুর সন্তান যেন কেউ জন্ম না দেয়।এমন জগন্য সন্তান কেউ যেন গর্ভে না ধারণ করে। সামান্য সম্পত্তির লোভে যদি কোন সন্তান তার জন্মদাতা পিতাকে হত্যা করতে পারে, তো এর চেয়ে বড় জগন্য কি আর হতে পারে? এর চেয়ে বড় খুনি আর কি হতে পারে?এমন ভাই কিংবা বোনকে আমি ঘৃনা করি। এমন ভাগিনা ভাগিনিকে ও প্রচন্ড ঘৃনা করি।শুধু ঘৃনা নয় সামনে পেলে আমি তাদেরকে হত্যা করতেও কুন্ঠিত হবনা।

তাদের জানা ও বুঝা উচিত ছিল, যে আমার বাবা কুঠি কুঠি টাকার ধন সম্পত্তি রেখে শূন্য হাতে চলে গিয়েছেন।তোমাদেরকেও শূন্য হাতেই চলে যেতে হবে।বাবা যেমনি কিছুই সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন নাই, তোমরাও কিছুই নিয়ে যেতে পারবেনা।এই পৃথিবীতে সবাই খালি হাতে আসে আবার খালি হাতেই চলে যায়।










                                              (তিন)

বাবার মৃর্ত্যু কেন রহস্য জনক--?


এখন শূনছি একমাত্র ধন সম্পত্তির লোভেই বাবাকে  হত্যা করা হয়েছিল।আরো দুটা অঝুহাত তুলেছিল আমার বাবার বিরুদ্ধে।সে গুলি খোঁড়া অঝুহাত।প্রধান কারণ সম্পত্তির জন্য।

দু বোন ও ভাগিনা ভাগিনীরা মিলে আমার বাবাকে নির্মম ও নিসংশ ভাবে হত্যা করেছে। তাদের কে সহযোগিতা করেছে আমার দু ভাগিনা।সে ভাগিনাদেরকে লোভ দেখানো হয়েছে আমেরিকা নিবে বলে। এখন সে ভাগিনারাই বলছে নিজ মুখে বলছে আমার বাবাকে যে ভাবে হত্যা করা হয়েছে ঠিক আমাকেও সে ভাবে হত্যা করা হবে।।তাদেরকে আমেরিকা কেন নেওয়ায় হয় নাই তাদের নামে কেন জমিন দেওয়া হয় নাই?সে কারণে তারা এমন লোমহর্ষক ঘটনা ঘটিয়েছে।

প্রত্যক্ষ দর্শির মতে বিদেশি একটা কম্বলের জন্য ক্ষুদ্ধ হয়ে তারা সে কম্বল চেপে আমার বাবাকে হত্যা করেছে।বিদেশি কম্বলে নাকি আমার বাবা পায়খানা করে দিয়েছিল। বাবার পায়খানায় নাকি ভীশন দুর্গন্ধ ছিল।সে অজুহাত তুলে তারা ক্ষুদ্ধ হয়ে স্বাস রুদ্ধ করে বাবাকে হত্যা করেছে।কি ভয়ানক ও নি:সংশ ঘটনা।

এই নির্মম ঘটনা ঘটানোর সব প্ল্যান পোগ্রাম করেছিলেন আমেরিকা প্রবাসি আমার বড় ভাই, নুর নবী,এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রি।তার বড় স্ত্রি বিউটি বেগমকে তালাক না দিয়েই সে দ্বিতীয় বিবাহ করে আমেরিকায় পাড়ি জমান।দু কুঠি টাকা মুল্যের পিতৃ সম্পত্তি দ্বিতীয় বউয়ের নামে লিখে দিয়ে তিনি মোহরানা শোধ করেছেন।
বাবার সাথে আমি 
কোর্টের বারান্দায় বারান্দায় গুরেছি। কিছু কাগজ পত্রে এখনো বাবার হাতের টিপ এবং দস্তখত আছে।বাবার দস্তখত জাল  জায়গা জমিনের হস।আমি একজনকেও চাড়বো না। সবাইকে আদালতের কাঠঘোঁড়ায় দাঁড় করাবো ইনশআল্লাহ।


এত ধন সম্পত্তি তারা নিজের নামে লিখে নেওয়ার পরও বাবার নামে তারা অকল্পনিয় নানা কুতসা ও বদনামি রটায়েছে।যা আমার এখানে বলা সম্ভোব হচ্ছেনা।প্রয়োজন বোধে একে একে আমি সব সত্য ঘটনা প্রকাশ করবো।

তাদের মতে বাবা তার মেঝ ছেলে মিন্টু ও তার স্ত্রিকে পছন্দ করেন না বলে বাবা তাদেরকে কোন জমিজামা দেন নাই। এটা তাদের একটা খোঁড়া অজুহাত।তাহলে বাবা কি তার সেঝ ছেলে এই আমাকেও বুঝি পছন্দ করতেন না। আমার নামে কেন কোন জমিজামা রেজেষ্ট্রি করে যাননি।আমাকেও কি আমার বাবা মা পছন্দ করতেন না?আমাকেও কি তারা ভালোবাসতেন না?তাঁরা কি আমার বাবা মা--না?পৃথিবীর সকল মা-বাবাই তার সকল সন্তানকে সমান চোখে দেখে,সমান ভাবে ভালোবাসে।সন্তানের প্রতি মা- বাবার ভালোবাসা নি:সর্ত ও নি:সার্থ। অনাদি কাল থেকে নিরন্তর চলে আসছে এই ধারা।

আমি আমার মা-বাবাকে খুব কাছ থেকে জেনেছি এবং বুঝেছি।তাদের কোলে পিটে খেলে দুলেই তো আমি হাঁটি হাঁটি পাঁয়ে বড় হয়েছি।তাদের কাছ থেকেই তো আমি চিনেছি এই জগতও জগত স্রষ্টাকে।তাদের কাছ থেকেই তো আমি শিখেছি এই পৃথিবীর জটিলতা।তাদের কাছ থেকেই তো আমি চিনেছি এই আমাকে।

বাবা সব সময় চেয়েছিলেন তার চার সন্তানরা তার সম্পত্তিতে সুখে শান্তিতে বসবাস করুক। সবাই মিলে মিশে থাকুক।কেউ যেন কারো সাথে ঝগড়া ফ্যাসাদ না করুক।সংযুক্ত সংসারে থেকে মিন্টু তার নামে সব সম্পত্তি ক্রয় করেছে, তার জন্য বাবা আমার কাছে স্পষ্ট বলেছে তোমরা তার সম্পত্তির প্রতি কোন লোভ করিও না।আল্লাহ তোমাদেরকেও দিবে।বাবার সেই ভবিষ্যত বাণীই আজ সত্যে প্রমানিত হয়েছে।আজ মিন্টুর চেয়ে অনেক গুন বেশি সম্পত্তি দিদার ও খোকন ভাইয়ের হয়েছে।এলাকায় দিদার আজ গাঁড়ি বাড়ির মালিক।খোকন ভাই চারতলা দুটা বাড়ির মালিক,আমেরিকাতেও নাকি দুটা বাড়ি আছে। দিদারও চারতলা বাড়ি করেছে, তিরিশ লাখ টাকায় নাকি নতুন গাঁড়ি কিনেছে। ভালো কথা, এটা খুশি ও আনন্দের বিষয়।আমি এনজয় করি, গর্ববোধ করি,আল্লাহ তাদেরকে আরো দেক, আরো বড় লোক করুক।আমার কোন হিংসা বিদ্বেষ নেই।

দিদার ছোট ছেলে বলে নাকি তাকে সব কিছু লিখে দিয়ে গেছে:--
এটা সম্পুর্ন মিথ্যা ব্যানোয়াট একটি কথা। ইসলামি আইনে বাবা মারা যাবার পরে ছোট ছেলে শুধু মাত্র বসত ঘরটা পাওয়ার রেওয়াজ আছে।জায়গা জমিন ইসলামি আইন মোতাবেক প্রত্যেকটি ওয়ারিসের মধ্যে যার যার হক অনুযায়ি সমবন্টন হবে।বসত ঘর ব্যতীত আর কোন সম্পদ কোন ওয়ারিস একা ভোগ দখল করিতে পারিবেনা।
কিভাবে দিদারের নামে সব সম্পত্তি লিখে দিয়ে যায়?ছোট ছেলে হলেও দিদার সব চেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে বাবাকে।বাবা ঠিকই আদর করে দিদারকে পাশে শোয়াতেন।
 কিন্তু দিদারই সব সময় বাবার পকেট মেরে পালিয়ে যেত।বাবা জমিন বেচে কিংবা গরু বিক্রি করে টাকার বান্ডেল বালিশের তলায় নিয়ে গুমাতেন।দিদার সেখান থেকে কত বার যে টাকার বান্ডেল নিয়ে উদাও হয়ে যেত। একটি টাকাও চা খাবার মত বাবার জন্য রেখে যেত না।কতবার যে টাকার জন্য বাবা পাগল হয়ে যেত, কত বার যে বাবা টাকার জন্য বেঁহুষ হয়ে যেত।সেই সময় বাবা পাগল হয়ে বড় মসজিদের ঈমাম সাহেবের কাছে চলে যেত।

মা তখন আমাকে বলতো,যারে বেটা একটু তোর বাবাকে দেখ ও তো গাঁড়ির তলে পড়বে। আমি সাইকেল নিয়ে বাবার পিছু পিছু যেতাম।বাবা সিদা বড় মসজিদে গিয়ে বড় হুজুরের কাছে পরমর্শ নিতেন। আমি স্বচক্ষে দেখেছি বাবার দু:খ কষ্ট।দিদারের কারণে বাবা অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল।সেই দিদারকে কিভাবে বাবা সব সম্পত্তি লিখে দিয়ে যায়?আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছেনা। যদি ফেরেশতা এসেও বলে আমি বিশ্বাস করবো না।

খোকন বলে সে নাকি বড় ছেলে বলে তাকে জমিজামা সবকিছু লিখে  দিয়ে গেছে:-- 
ইসলামি আইন মোতাবেক ছেলেরা সবাই সমান ভাগ পায়।এখানে বড় ছোট কারো মধ্যে কোন ভেদাভেদ নাই।বড় ছেলে হিসেবে মা বাবার কাছ থেকে একটু বেশি স্নেহ মমতা পেয়ে থাকে, তা স্বাভাবিক।কিন্তু তাই বলে জায়গা জমিন সব তার নামে লিখে দিবে সেটা মোটেই সঠিক না।সে কথা আমি মানতে পারিনা। আমার মোটেই বিশ্বাস হচ্ছেনা।
সংসারে বড় ছেলে হয়েও খোকন ছিল টোটালই নিকর্মা মানুষ। দিদারও তাই।সংসারে খেত খামারে সকল কাজকর্ম করতাম আমি আর মিন্টু মিলে।খোকন বিকম পাশ করে শুধু রাস্তায় রাস্তায় গুরেছে।ঢাকায় বসে বসে তার বুন্ধু খায়েরের বোনের সাথে প্রেম করেছে। বাড়ি থেকে জমিন বিক্রি করে করে টাকা পয়সা নিয়ে চাকুরির নামে সেখানে উড়ায়েছে বেশ কয় বছর ধরে।খোরাকির চালডাল বাড়ি থেকে নিত সব সময়।একানে হয়ে যাচ্ছে ওখানে হয়ে যাচ্ছে আসলে চাকুরি বাকুরি কিছুই না।খামাকা ঢাকায়  বসে বসে টাকা পয়সা উড়ালো। পরে বাবা দেশে এনে দিনে  দিনে কথা বলে দশ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে তাকে সদর হাসপাতালে চাকুরি ধরায়ে দেয়।শেফালির জামাইকে ভাই ডেকে সে বাবার থেকে জমিন রেজেষ্ট্রি করায়ে দেয়। চরের আমার ও দিদারের নামে দেওয়া সোনার থালের মত আড়াই একর জমিন খোকন সৌদি আরব যাবার জন্য বিক্রি করে দেয়।তখন আমরা ছিলাম নাবালক।সংসারে সব অকর্মের হোতা এই খোকন মিঞা।
কাজ সেই একটাই করতো।আর সেটা হলো মাছ ধরতো মাঝে মধ্যে। মাছ ধরার প্রচন্ড নেশা ছিল তার।মাছ আমিও ধরতাম। আমারও নেশা ছিল।



                                                (চার)




No comments:

Post a Comment

অজ্ঞসব জনপ্রতিনীধি,

সত্যই শক্তি, সত্যই সুন্দর,