শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৭

নষ্টমাথার নষ্টরাজনীতি --৩














 

    

                                            জাসদ,    




নষ্ট মাথার নষ্ট রাজনীতির রোশানলে পড়ে আমাদের জন ও জাতীয় জীবনে যে বিপর্যয় নেমে আসে, তার সুচনা পর্ব শুরু হয বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশ ছাত্র লীগের কয়জন উশৃঙ্খল ছাত্র নেতা আর বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত কয়জন নেতার হাতেই।বলা বাহুল্য নির্বোধ অবিবেচক নেতারা সবাই আজ ইতিহাসের আবর্জনা হিসেবেই পরিণত হয়েছে।

আর বঙ্গবন্ধু হয়েছেন ইতিহাসের মহানায়ক।তিনিই বাঙ্গালী জাতীর ইতিহাসে হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী। এটা আমার মুখের কথা নয় আন্তঃজাতিক ভাবেই সিকৃত ।বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা, তার পরে আবার তিনি বিশ্ব নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, এবং পেয়েছেন বিশ্বের স্বতন্ত্র স্বিকৃতি।

নিন্দুকেরা ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট খেয়ে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসকে বার বার বিভিন্ন ভাবে বিকৃত করেছে। তারা মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান ও তাঁর অবদানকে খাটো করার অপচেষ্টা করতে গিয়ে নিজেরাই খাটো কীটে পরিনত হয়েছে।নতুন প্রজন্ম আজ স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে স্বাধীনতার সত্য ইতিহাস।চিনতে পেরেছে ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে।

১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট পাকিস্তান ভারত দ্বিধাভিবক্ত হবার পরেই তরুন ছাত্র নেতা শেখ মজিব কেলকাটা থেকে ঢাকায় ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। মাত্র সাড়ে চার মাসের মাথায় অর্থ্যাৎ ১৯৪৮ সালের ২০ই জানুয়ারি তিনি গঠন করেন পাকিস্তান ছাত্র লীগ নামে একটি ছাত্র সংগঠন।দলে দলে ছাত্ররা যোগ দিতে লাগলেন নতুন এই সংগঠনে।তরুন নেতা শেখ মজিব নেতৃত্বের অগ্রভাগে।তিনি একদিকে ভাষা আন্দলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, আরেকদিকে ভার্সিটির তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারিদের দাবি দাওয়া নিয়ে।এই আন্দলনের কারণে তৎকালিন পাকিস্তান সরকার তাঁকে বন্দি করেন।যার কারণে ভার্সিটি কতৃপক্ষ তাঁকে বহিষ্কারও করেন।জেলখানায় বসেই তিনি আন্দলনের নেতৃত্ব দিতে থাকলেন।

১৯৪৯ এর ২৯ই জুন হোসেন শহীদ সরোয়ার্দীর নির্দেশে  মাওলানা ভাসানি  ও শামসুল হক ইয়ার মোহাম্ম খান মিলে ঢাকার রোজ গার্ডেনে পুর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নামে  একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ভাসানী হন দলের সভপতি, শামসুল হক হন সাধারন সম্পাদক, আর শেখ মজিব জেলে বন্দি অবস্হায় যুগ্ন সম্পাদক নির্বাচিত হন।জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি রিাজনীতিতে পুরোদমে সক্রিয় হয়ে  ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিতে লাগলেন।এরি মাঝে বার বার তিনি জেলে যান আবার ছাড়া পান, কিন্তু তাঁর হাতে গড়া  সংগঠনের নেতাদেরকে গোপনে দিক নির্দেশনা দিতে থাকলেন।মাত্র অল্প কয় বছরের মধ্যেই সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্টানে গড়ে উঠলো ছাত্র লীগ। সারা বাংলায় শুরু হলো ছাত্র আন্দলন।

১৯৬৩ সালে এসে সেই সুসংগঠিত ছাত্রলীগের একটি কাউঞ্চিল অধিবেশনে   সুস্পষ্ট হয়ে দেখা দিল কোন্দল।একদিকে অবস্হান নেয় ছাত্রলীগের সভাপতি কে এম ওবায়েদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম খান ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর আপন ভাগিনা তরুন ছাত্রনেতা শেখ ফজলুল হক মনির মধ্যে।শেখ মনির পছন্দের ছিল ফেরদৌস আহম্মেদ কোরেশীর প্রতি।পরে সাধারণ ছাত্রের সমর্থন থাকলেও কাউঞ্চিলদের ভোটে সিরাজুল আলম খানের প্যানেলই নির্বাচিত হয়।

১৯৬৩ সালের শেষের দিকে কথিত আছে যে  সিরাজুল আলম খান তৎকালিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি কাজি আরেফ আহম্মদকে নিয়ে তিন বন্ধু আঙ্গুল কেটে সফত নেন যে পুর্ব বাংলা স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তারা বিয়ে শাদীও করবেন না আন্দলন চালিয়ে যাবেন।

গন আন্দলনের মুখে   বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে ছাড়া পেয়ে ফিরে আসলে তারা তিন বন্ধু নাকি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে এ ব্যপারে অবহিত করেন। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবি পরিষদের ব্যপারে বঙ্গবন্ধু নাকি আগে থেকে জানতেন।এবং এটা নাকি ভারতের র এর তৈরি। চিত্য রঞ্জন সুতার ও কালিদাস বৈদ্যের মাধ্যমে এই পরিষদের সুত্রপাত হয়।ডাঃ কালিদাস বৈদ্যকে বঙ্গবন্ধু কবিরাজ নামেই ডাকতেন।

( উল্যেখ্য এই ডাঃ কালিদাস বৈদ্যের রচিত বাঙ্গালীদের মুক্তিযুদ্ধের অন্তরালে শেখ মজিব নামে একটি বই লিখেছেন বর্তমানে)

১৯৭০ সনের ২১শে আগষ্ট এক সন্ধ্যায় ঢাকার ৪২নং বলাকা বিল্ডিং এ সিরাজ পণ্হিদের এক মিটিং এ চট্ট্রগ্রামের ছেলে স্বপন কুমার চৌঃ নামে এক অখ্যাত ছাত্র স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ ইপস্তাপন করে কিছুক্ষন এর উপর আলোচনা করা হয়।পরে এক পর্যায়ে ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়।সেখানে নাকি ৪৫ জন ছাত্রের মধ্যে ৩৬ জনই এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।পরে সবাই মিলে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেন।

বঙ্গবন্ধু সবাইকে নাকি বললেন---- স্বাধীনতা চাস ভাল।কিন্তু রেজুলেশন নিয়ে তো স্বাধীনতা হয় না।গ্রামে যা, কাজ কর।

১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে আসেন।অল্প কিছু দিনের মাথায় এসে সিরাজুল আলম খান ও আবদুর রাজ্জাকের মধ্যে দন্ধ প্রতিধন্ধ দেখা দিল।সিরাজুল আলম খান নাকি লাল সালাম এবং সমাজ তন্ত্রের কথা বেশি বলতে লাগলো, এটা রাজ্জাক সাহেবের মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।এরি মাঝে সংযুক্ত ছাত্রলীগের মাঝে এলো এক নতুন মতবাদ।আর সেটা হলো মজিববাদ।সিরাজুল আলম রব রাজ্জাক তোফায়েল, নুরে আলম সাজাহান সহ সবাই যেখানে সেখানে শ্লোগান দিত, আমার তোমার মতবাদ, মুজববাদ মুজববাদ।

কিন্তু কিছুদিন পরে সিরাজুল আলম পণ্হিরা  হঠাৎ এই শ্লোগান বন্ধ করে দিল।তাদের উদ্যেশ্য নাকি অন্যকিছু। তারা লাল বাহিনী তৈরির ঘোষনা দিল।সিরাজুল আলম খান বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত বুন্ধু  তাজউদ্দিনের সাথে গোপনে গোপনে সলাপরামর্শ করতে লগলো নতুন দল গঠনের ব্যপারে।তাজউদ্দিন আহম্মদও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্টার পক্ষে ছিলেন।

১৯৭২ সালের ৩০ অক্টোবর তাজউদ্দিনের বাসায় সারারাত ধরে সিরাজুল আলম ও আবদুর রবের মধ্যে আলোচনার পর ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তারা দল গঠন করবেই করবে।জনাব তাজউদ্দিন সাহেব তাদেরকে কথা দেন সর্বোত ভাবে সহযোগিতা করার।পরের দিন ৩১শে অক্টোবর মেজর জলিলকে সভাপতি আর রবকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় জাতিয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ।

হায়রে নষ্ট মাথার নেতারা হায়রে দুষ্টচক্র বেঈমানের দল বিশ্বাঘাতকের ও একটা সিমা আছে।যে ছাত্রলীগের ছাত্ররা ছিল ববঙ্গবন্ধুর অতি আদরের সন্তানের মত। যে ছাত্ররা এক বিছানায় গুমাতো, এক সাথে খেত, এক সাথে খেলত, পড়তো,সেই ছাত্ররা হয়ে গেল দ্বিধাভিবক্ত।তাও আবার এই সময়।দেশের এই ধংশযজ্ঞের উপর দাঁড়িয়ে?

সুচনা হলো বাঙ্গালীর দুর্বিসহ জীবনের নতুন অধ্যায়।জাসদ গঠন করেই তারা বৈজ্ঞানিক সমাজ তন্ত্র কায়েমের নামে শুরু করে দিল সারা বাংলাদেশে এক ভয়াবহ অরাজকতা।তাদের সন্ত্রাসি কর্মকান্ডে কায়েম হলো ত্রাসের রাজত্ব। মুক্তি যুদ্ধের সময় পাওয়া কোন অস্ত্র তারা জমা দেয়নি।একি বছর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে তারা গোপনে গঠন করলো বিপ্লবি গন বাহিনী।যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।পৃথিবীর কোন দেশে নিয়মতান্ত্রিক সেনা বাহিনী থাকতে এরকম গন বাহিনী গঠিত হয়নি। জাসদ তাহাই করে দেখালো।সেই অস্ত্র নিয়ে তারা ব্যাংক লুট থানা লুট মিলকারখানায় পাঠের গুদামে আগুন দিতে লাগলো।তারা নির্বিচারে হত্যা করলো আওয়ামী লীগের নেতা কর্মি ও এমপিকে।

১৯৭৩ সালের ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে তারা হাজার হাজার কর্মি বাহিনী মিছিল নিয়ে স্বারষ্ট মন্ত্রি আবুল মনসুরের বাড়িতে আক্রমন করে বসে। সেখানে পুলিশ ও রক্ষিবাহিনীর সাথে তাদের গোলাগুলি হয় কয়েক ঘন্টা ধরে।সেখানে বিশ পোঁচিশ জন লোকের প্রাণ চলে যায়। পরে জাসদের ্হাবিবউল্লা নামে এক নেতা বলেছেন আজকের তত্ব মন্ত্রি হাসানুল হক ইনুই নাকি প্রথম গুলি চালায় ।তাদের মুল উদ্যেশ্য  যে কোন মুল্যে  বঙ্গবন্ধুকে উৎখাত করে   রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা।

১৯৭৫ সালে এসে এই জাসদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তৎকালিন সকল গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও বাম দলের মনি মোজাফ্ফর গ্রুপের সাথে জাসদ ব্যতীত সর্বসন্মতিক্রমে গঠন করেন  বাকশাল।দেশ গড়ার উদ্যেশ্যে এই রাজনৈতিক প্লাটফরম গঠন করার পর কেউই প্রকাশ্যে এটার বিরুধিতা তো করেই নাই, বরঞ্চ জিয়া মওদুত মঞ্জু গনরা সদস্য হওয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে পড়েন।

১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট জাসদের তাহের, জেনারেল জিয়া, আর বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত বন্ধু  মোস্তাক মিলে কর্নেল রশিদ ফারুককে দিয়ে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মম ভাবে হত্যা করে বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে রচনা করে এক কলঙ্কিত অধ্যায়।তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি গর্বভতি নারি শিশু এমন কি বঙ্গবন্ধুর পোশা পাখিরাও।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সকাল ৯টা বাজেই কর্নেল তাহের খুনি রশিদ ডালিমকে নিয়ে বেতার কেন্দ্রে যান বিবৃতি দিতে। পরে জেনারেল জিয়াও সেখানে গিয়ে সামিল হন।একদিকে বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত নিথর দেহ ৩২ নম্বর বাড়ির সিড়ির মাঝে পড়ে থাকে। অন্যদিকে খুনিরা বার বার বিবৃতি দিয়ে দেশের মানুষকে বিব্রান্ত করিতেছে।

দুদিন পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নঈম জাহাঙ্গির নামে এক ছাত্র নারায়ন গঞ্জে তাহেরে বাসায় জান।তাহের নাকি ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, মজিবকে কবর দেওয়া ঠিক হয়নি, এখন সেখানে মাঝার হবে। উচিত ছিল মজিবের লাশটা বঙ্গপসাগরে ফেলে দেওয়া।

যে তাহেরকে বঙ্গবন্ধু অত্যান্ত স্নেহ করতেন। যে তাহেরকে বঙ্গবন্ধু জার্মানে পাঠিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। সে তাহেরের মুখে এমন অকৃতজ্ঞ কুৎসিত কথা।

তাহের সিরাজ, রব, ইনু আরেফরা যে কুৎসিত খেলা খেলেছিল।সে খেলায় বুমেরুং হয়ে জাসদ ও তার হাজার হাজার কর্মি বাহিনীসহ হাজার হাজার প্রকৃত মুক্তি যোদ্ধাকেও প্রাণ দিয়ে দিতে হয়েছে চরম মুল্য।তাহেরকেও ফাঁসির কাস্টে ঝুলে কঠিন মুল্য দিতে হয়েছে।এটাই চরম সত্য। 

সেই ক্ষমতা লোভি জাসদ আজ আর সেই জাসদ নেই। এখন তারা ইতিহাসের আবর্জনা, ক্ষমতার উচ্চিষ্ট কাউয়া কিড়া।১৯৮০ সালে এসে জাসদ বেঙে বাসদ হলো।তার আবার জাসদ রব ইনু দুভাগে ভিবক্ত হলো। ১৯৮৮ সালে এসে জাসদ একদিনে আটভাগে ভিবক্ত হয়ে গেল।এটাই বোধ হয় রাজনৈতিক ইতিহাসে বিশ্ব রেকর্ড।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

alles gute

গীত লতা Lyricism. : কবিতা

গীত লতা Lyricism. : কবিতা :                                                                                               ...