বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৮

এখন সবাই বলে শিক্ষার্থি--


প্লেটো



এখন সবাই ছাত্র ছাত্রীকে বলে শিক্ষার্থী। মেধাবী শিক্ষার্থীও বলে কেউ কেউ।বিদ্যার্থী কিংবা বিদ্যান বলেনা কেউ।অতচ এক সময় শিক্ষার্থীকে বিদ্যান বলা হতো। সে সময়ে সমাজে বিদ্যান ব্যক্তির সন্মানই ছিল আলাদা। মুরুব্বিরা বলে থাকেন আগের জমানার ক্লাশ ফাইভ পাস আর এখনকার এম এ পাশ সমান।কথাটা একেবারে উড়িয়ে ফেলে দেওয়া যায়না।
এখন বিদ্যালয়ে শুধু শিক্ষা দেওয়া হয়, দীক্ষা দেওয়া হয় না।এক সময় শিক্ষার সাথে সাথে দীক্ষাও দেওয়া হতো।বহুমুখি দীক্ষা।
বি সি পুর্বে প্রাচীন গ্রীসে জন্ম নিয়েছিলেন অসংখ্য দার্শণিক।তাদের মধ্যে তিন জনের নাম সবার আগে। সেই তিন মহারথি হলেন সক্রেটিস,তার শিষ্য প্লেটো,এবং প্লেটোর শিষ্য এরিস্টেটল।এই তিন দার্শনিকের দর্শণ স্বাস্ত্র আজো সমগ্র পৃথিবীতে প্রভাব বিস্তার করে আছে । এদের মধ্যে সক্রেটিস কোন বই পুস্তোক না লিখলেও তার শিষ্য প্লেটো অনেক বই পুস্তোক লিখে গেছেন। তিনি গ্রীসে একাদেমি নামে একটি বিদ্যালয়ও প্রতিষ্টা করেছিলেন।তার লেখা বগিুলির মধ্যে অন্যতম হলো the Republic এবং  Laws পুস্তোকটি।এই বই দুটি বাংলা অনুবাদ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শণ স্বাস্ত্রের অধ্যাপক প্রয়াত সরদার ফজলুল করিম।  



এরিস্টেটল
প্লেটো তার রিপাব্লিক গ্রন্থে লিখেছেন একটা দেশে কোন শিক্ষা ব্যবস্হাই রাখা উচিত নয়। সাধারণ পাব্লিকের লেখা পড়া বা শিক্ষার কোন প্রয়োজন নেই।স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে শুধু ফাল্টু খরছ করা হয়।জন সাধারণের দরকার শুধু কাজ করা।তারা কাজ করে সুখে স্বাচ্ছন্ধে বসবাস করবে।
 লেখা পড়া শিক্ষাদীক্ষা করা প্রয়োজন আছে শুধু সরকার প্রধান আর মন্ত্রি বর্গের।তাদেরকে ও গৃহে বসে শিক্ষা দীক্ষা গ্রহন করতে হবে। পাঠশালার কোন প্রয়োজন নেই।তাদের নির্দেশেই রাষ্ট্র এবং জনগন চলবে।
গুরুর এই বাণীকে সমর্থন করেছেন শিষ্য এরিস্টেটল।আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যেমন তেমন শিষ্য নয়, এই শিষ্য মহাবীর আলেকজান্ডারকে শিক্ষা ও দীক্ষা দিয়েছেন।







রুসো
তারপর রেনেসাঁর যুগের রুসোও প্লেটোর এই বাণীকে সমর্থন করলেন।ফ্রান্স বিপ্লবের জনক এবং সমাজ বিজ্ঞানের প্রবক্তা ভাবা হয় এই জা জাঁক রুসোকে।তিনিও অনেক বই পুস্তোক লিখে গেছেন।তার মধ্যে সমাজিক চুক্তি বইটি অন্যতম। এই বইটিও অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম বাংলায় অনুবাদ করেছেন। রুসো বললেন লেখাপড়া করার উদ্দেশ্য হলো একটু নিষ্টাবান হওয়া আর কিছু নয়।নিষ্ঠাবান হতে না পারলে  লেখা পড়ার তেমন একটা প্রয়োজন নেই।
দার্শণিকদের দন্ধের কথাবার্তা বুঝা মুশকিল।এই রকম কথাবার্তার জন্য অনেক দার্শণিককে মৃর্ত্যুর মুখোমুখিও হতে হয়েছে।আমি নিজেও অনেক দার্শণিকের সাথে অনেক সময় একমত হতে পারি না।তবে এটাও সত্য যে বিসি ৪-৫শত শতাব্দির কিংবা তারও আগের অনেক দার্শণিকের মতবাদ আজো রুঢ় সত্য এবং আধুণিক সমাজে প্রযোজ্য।
দার্শণিকের কাজ মানুষকে দিক নির্দেশনা দেওয়া।পৃথিবীর অনেক দেশে অনেক জাতির মধ্যেই বিখ্যাত বিখ্যাত দার্শণিকের জন্ম হয়েছে,কিন্তু একমাত্র বাংলাদেশে কিংবা বৃহত বাঙ্গালী জাতির মধ্যে তেমন কোন বিখ্যাত দার্শণিকের জন্ম হলো না।নোবেল পেয়ে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব বিখ্যাত হলেও তাকে দার্শণিক বলা যায় না।তিনি আপাদ মস্তক অস্তিত্ববাদী সারা জীবন নিজে নিজেরই গুনগান করেছেন।সেই গুনগানেই আমরা মুগ্ধ ও ধন্য,এবং সে কারণেই আমরা তাকে ভালবাসি।
স্বাধীনতার পর গত সাতচল্লিশ বছরে বাংলাদেশে অনেক স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হয়েছে।সমগ্র বাংলাদেশে যেখানে মাত্র ছয়টা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, আজ সেখানে প্রায় ছিয়াশিটা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার হার বেড়েছে শিক্ষর্থীর হার বেড়েছে কিন্তু শিক্ষার মান বাড়েনি মোটেও, বরঞ্চ কমেছে।আজ সবাই ভার্সিটির সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেয় শুধু একটা ভালো চাকুরি নেওয়ার জন্য। সরকারি আমলা সচিব হওয়ার জন্য।ডাক্তার ডাক্তারি পাশ করে শুধুই চাকুরি করার জন্য।ইঞ্জিনিয়ার ইঞ্জিনিয়ারি পাশ করে শুধুই চাকুরি করে কাড়ি কাড়ি পয়সা কামানোর জন্য।তারা নিয়ম নীতি ন্যয় সৎ সততার তোয়াক্কা মোটেই করেনা।লেখা পড়া করে মানুষ যে নিষ্টাবান হয়,নিষ্টাবান কি জিনিস তা তারা মোটেই যেন জানেনা।
শিক্ষিত মানুষরা সব সময় অনগ্রসর কিংবা নিরক্ষর মানুষকে জ্ঞানের আলো বিদ্যার বাণী দেখায়।সমাজকে জাতিকে দিক নির্দেশনা দেয়।কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো স্বাধীনতার এত বছরেও আমাদের দেশে তেমন শিক্ষীত সমাজ গড়ে উঠেনি।এখানেই আমাদের দুঃখ।
যে সব বৈশম্য ও দুর্নীতির কারণে আমরা পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছি।সে সব বৈশম্য ও দুর্নীতি আজ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুটি দেশেই বিদ্যমান। বরং প্রচন্ড আকারে বিদ্যমান।দুটি দেশেই গনতন্ত্র নাই এ কথা মিথ্য হলেও দুটা দেশই যে দুর্নীতিগ্রস্ত তা শত ভাগ সত্য।দুই দেশকেই সমান ভাবেই লজ্জা করা উচিত।






















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

alles gute

গীত লতা Lyricism. : কবিতা

গীত লতা Lyricism. : কবিতা :                                                                                               ...